বৃষ্টিস্নাত এই সব দিবারাত্রি

ইরতেজা এর ছবি
লিখেছেন ইরতেজা (তারিখ: শনি, ১৩/১২/২০০৮ - ১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Photobucket

ছুটির দিন, অলস দুপুর। বৃষ্টি দেখতে দেখতে গরম চা খাচ্ছি। খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি ছিটা এসে লাগে। ছিটাছিটি ফোঁটাগুলো আমার টেবিল, ল্যাপটপ, এলোমেলো বইপত্র ভিজিয়ে দিচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দেখলেই কেমন জানি আনমনা হয়ে যাই।

বৃষ্টি-বাদল দিনে আমাদের বাসা থেকে থেকে ইয়ারা নদী দেখতে খুব সুন্দর লাগে। ইয়ারা নদী সর্পিল ভাবে মেলবোর্ন শহরের উপর দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে বয়ে গিয়ে পোর্ট ফিলিপ সাগরে পরেছে।

গত কয়েক দিন ধরে ভিক্টোরিয়া স্টেটে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে হঠাৎ ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয় কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার থেমে যায়। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার নামে। দূর! বৃষ্টি-বাদলেও আজকাল কেমন যেন ভেজাল, দুই নম্বরী। পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর বৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। আহা! কি সুন্দর ঝুমঝুম বৃষ্টি।

এখানে লোকজন বৃষ্টি একদম পছন্দ করে না। লন্ড্রী রুমে আমাকে দেখে পাশের বাসার বুড়ি নাক সিট্‌কে বলল, “দেখছ? কি বাজে আবহাওয়া।” আমিও তার সাথে গলা মেলালাম। আহত গলায় বলি, “আসলেই খুব জঘন্য আবহাওয়া।” সীড়িতে স্বর্ণাকেশী স্টেসি বলল, “ উফ! বাহিরে কি বৃষ্টি, আজ ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে একটু বাহিরে হাঁটব, তুমি কি দেখেছ বাড়িতে থাকতে থাকতে থাকতে বেচারী্র চর্বি জমে গেছে।” আমিও ওর পিচ্চি তুলতুলে সাদা কুকুরের দিকে তাকিয়ে বলি, “আহারে! আসলেই ত।”

কিন্তু আমার মনে আজ অনেক ফুর্তি। আহারে কি আনন্দ! কি সৌন্দর্য, বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সব কিছু ভেসে যাক। বান ডাকুক ইয়ারা নদীতে...

গত রাতে মেলবোর্ণ সেন্ট্রালে প্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খানের নতুন ছবি এর প্রিমিয়ার শো দেখে বাসায় ফির ছিলাম। মাল্টিপ্লেক্স থেকে বের হয়েই দেখি প্রচণ্ড বৃষ্টি। স্টেট লাইব্রেরীর সামনে ট্রামে উঠবার পর মনে হল বৃষ্টি বোধ হয় একটু কমতি দিকে । বোটানিকাল গার্ডেন আসতে আসতেই দেখি আবার আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে। রাত দেড়টা বাজে। আসে পাশে কোন কফি শপও খোলা নেই যে বসে বসে গরম গরম সয় মিল্ক ক্যাপাচিনো বা কফি ল্যাটে পান করতে করতে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করব। আশে পাশে কোন ছাঊনিও খুঁজে পেলাম না। কি আর করা । জিন্স হাঁটু অবধি গুটিয়ে নিলাম। শার্ট খুলে কোমরে শক্ত করে বাধলাম। ধুমিয়ে একটা দৌড় দিলাম ।

ঝড়-বৃষ্টির রাতে রাস্তার মাঝখানে একজন জগিং করতে করতে যাচ্ছে এই ফাজলামী অনেক বেরসিক গাড়ি চালকের পছন্দ হল না। আবাসিক এলাকা তারপরও কয়েক জন হালকার উপর পাতলা হর্ন দিয়ে আমার পাগলামীর তীব্র প্রতিবাদ জানাল। একজন ট্যাক্সি চালক গতি কমিয়ে গ্লাস নামিয়ে বলল “ ইউ অলরাইট মাইট”। আমি বললাম, “ আই এম ওকে মাইট, তুই তোর রাস্তা মাপ”। ভাড়া পাবার আশা নেই দেখে সেও একটু হতাশ হয়ে তুরাগ রোডের দিকে টার্ন নিয়ে চলে গেল। ভিজে ভিজে জবজব হয়ে বাসায় আসলাম।

বৃষ্টিতে ভিজলে এখন আমার ঠাণ্ডা লাগে না। সর্দি কাশিও হয় না। শৈশবের একটা কথা বলি। আমি আর আমার দিদি তখন নন্দন কানন ফুলকি স্কুলে পড়তাম। হয়ত চতুর্থ শ্রেণি পড়ি। দুপুরে মায়ের ক্লাস থাকলে বাসায় নেবার জন্য বাবা স্কুলে আসত। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণেই হোক বা অন্য কারণেই হোক সেই দিন কোন রিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা আবদার করলাম আজ বৃষ্টিতে ভিজব। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পারে আমার বোনের কান্না থামাতে রাজি হয়ে গেল। আনন্দের লাফাতে লাফাতে ছোট বোন বলল, “কি মজা, কি মজা, আজ বিষতিতে দোছল কলবো।”

ফুলকি স্কুল থেকে লাভ লেইন বেশি দূরে না। কাকভেজা হয়ে বাসায় এসেই আমি আর আমার বোন ঠান্ডায় কাঁপুনি দিচ্ছি। ঘন ঘন হাঁচি দিতে লাগলাম। বাবা বুঝল সে একটা ভালো রকম ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে।

টাওয়েল দিয়ে আমাদের মাথা মুছতে মুছতে বাবা বলল, “ মা, বেশি শীত করতাছে?”
ছোট বোন আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বলল, “ না”
“মা, বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে ঠাণ্ডা লাগে না। বরং বৃষ্টিতে ভিজলে আল্লার কাছে কিছু চাইলে সেটা পাওয়া যায়।”
বোকা বোন প্রশ্ন করে,“কবে পাওয়া যায়?’
বাবা একটু চিন্তা করে বললেন, “ ঈদের আগের রাতে পাওয়া যায়।”
“ যা চাব তাই পাব।“
“ অবশ্যই”
ছোট বোন হাত তালি দিয়ে বলল, “পেঙ্গুইন খেলনা চাইলে সেটা পাব।”
বাবা বলল, “ অবশ্যই, পেঙ্গুইন খেলনাও পাওয়া যাবে।”

আমি আর আমার বোন কিছু দিন আগে বাবা মার সাথে একজন কাস্টম অফিসারের বাসায় গিয়ে ছিলাম। সেখানে আমাদের সম বয়সী তার মেয়ের একটা খেলনা আমার বোনের খুব পছন্দ হয়েছিল। আমার যতদূর মনে পড়ে খেলনাটি ছিল কিছু ছোট ছোট পেঙ্গুইন। ব্যাটারি চালিত সিঁড়ী দিয়ে একবার পেঙ্গুইন উপরে উঠত আবার নিচে নামত। সাথে এক ধরনের মিউজিক বাজত। নিউ মার্কেটে পরে খেলনাটা খুঁজে পাওয়া গিয়ে ছিল। সেই আমলে ৩০০ টাকা অনেক টাকা। একজন মধ্যবিত্ত সাংবাদিক পরিবারের এত দামী খেলনা কেনার সামর্থ্য ছিল না।

বৃষ্টি স্নান আমরা মায়ের কাছ থেকে সিক্রেট রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শত চেষ্টার পরো কীভাবে মা সিটি কলেজ থেকে আসতেই পাঁচ মিনিটে আমাদের সিক্রেট জেনে গেল। আসলে ভাগ্য আমাদের সাথে ছিল না। বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভিজতে ঠাণ্ডা লাগে না বাবার সেই থিসিস ভুল প্রমাণ করেই আমার বোনের জ্বর এল। । মা বাবাকে আচ্ছা মত বকা দিল। পরের কয়েক দিন বাবা বসার ঘরের সোফায় ঘুমিয়েছিল। ইস্‌! মা খালি বাবাকে বকত।


মন্তব্য

বিপ্রতীপ এর ছবি

ফুর্তিতে আছো...বৃষ্টিস্নান? আর আমি ঠান্ডায় জমে যাইতাছি...
তোমারে মাইনাস... মন খারাপ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

পুতুল এর ছবি

লেখা দারুন, তয় মেলাদিন বাদে!
আমার অবস্থা বিপ্রতীপ সম, কিন্তু প্লাস দিলাম!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

বিপ্রতীপ এর ছবি

ভুলে প্লাসে চাপ পড়ছে,
ফটুক দেইখা কই,
"নাহ্, ঠিকাছে"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ফটো কোলাজটা সুন্দর।
বৃষ্টি ভাল লাগে আমার। ভাল লাগল আপনার লেখাটাও।


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছবিগুলোর চেয়ে লেখাটা বহুগুন ভালো লাগছে। ৫।

স্পর্শ এর ছবি

অনেক অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম!
আমাদের এখানে শীত আসি আসি করছে। ব্রৃষ্টি ভিজতে এখনো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে মনে হয়। আপনার লেখাটা ভাল লাগলো। হাসি
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নিরিবিলি এর ছবি

দারুন লেখা :)।ছবিগুলো প্রানবন্ত।

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনি ফুলকিতে পড়তেন? দারুণ তো!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।