মনজান বিবির বিরাশি বছর

জাহেদ সরওয়ার এর ছবি
লিখেছেন জাহেদ সরওয়ার (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৮/২০০৭ - ৭:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আসমানে সটাং করে দাঁড়ানোর পর সূর্য যখন ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলতে থাকে তখন তার আলোটাও নরোম গাঢ় সোনালী হতে থাকে। শীতকালে এই নরম রোদ্দুর কেমন এক রূপালি মায়ার জাল বিস্তার করে। এইসব রূপালি বিকেলে গ্রাম বাংলার উঠোনে উঠোনে শিশুরা যেন নিজেদের অজান্তে উম্মত্ত হয়ে উঠে। তারা মাটিতে আঁক কষে ঘর বানায় কুত্কুত্ খেলে, এ ওকে ধাক্কা মারে, মারামারি করে, চিল্লাচিল্লি করে ধুলো ওড়ায়। কেউ যদি বসে, মনজানবিবি যেভাবে বসে লাঠিতে ভর দিয়ে, উবো হয়ে উঠোনে এক কোনায়। তবে দেখতে পাবে ধুলোগুলো উড়ে উড়ে যেন সূর্যের দেশে ধায় আর ধুুলোগুলোর ভেতর সূর্যরশ্মি যেন এক পবিত্র চিত্র রচনা করে। সেদিকে তাকিয়ে মনজান বিবি কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। যদিও শিশুদের হট্টগোল তাকে সঙ্গ দেয় তবু সে মাঝে মাঝে হাঁক পাড়ে। এ য়ে য়ে ই আছাড় খাই পড়িবা। সু-দীর্ঘ বিরাশি বছর বয়সের ভার আর দীর্ঘদিন রোগে ভোগার ফলে এ দিয়ে শুরু হলেও সমষ্টির প্রতি জোর দেয়ার কারনে ‘ই’ টা টানা কান্নার মত শোনায়। ছেলেমেয়েদের দল তার কথায় কান দেয়না। তবুও সে দুঃখ পায়না, এ ব্যাপারটা সে একটা বাগধারার আন্ডারে ফেলে দেয়। ‘বোরার কথা কোরায় ন ফুনে’। বাচ্চাদের এসব চীৎকার চেঁচামেচি তার স্মৃতিতে জমে থাকা ধুলোগুলো যেন উড়িয়ে নিয়ে যায়। যুগান্তরের সৃষ্ট মাকড়সার জাল ছিঁড়ে সে যেন হাজির হয় তার শৈশবে। চোখ বুঁজে বুঁদ হয়ে থাকে। শৈশবের নিজেকে সে যেন ঘষে ঘষে জাগিয়ে তোলে। এক ধরনের সুখ আর শোক তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তখন তার ডান চোখের ডান কোনায় আর বাম চোখের বাম কোনায় পানির কনা ঝরে আর মানুষ ঘুমের ভেতর অতি সুখের স্বপ্ন দেখলে যেমন ধীরে ঠোঁট জোড়াকে প্রসারিত করে হাসে, তেমনি হাসে। তারপর সে চোখ খুলে ছেলেমেয়েদের দিকে তাকায়। দীর্ঘ অতীত যাত্রার রেশ তাকে গম্ভীর করে রাখে। ডিসেম্বর, শীত এখন মনজান বিবির কাল হয়েছে। সূর্য ডুবে গেলে ঠান্ডা চাদর বিছিয়ে যখন নেমে আসে। মনজান বিবিকে তখন বাধ্য ছেলেমেয়ের মত কাঁথার হাতে নিজেকে সঁপে দিতে হয় অথবা বসে থাকতে চাইলে প্রস্তর যুগের গুহামানবদের মত আগুন জ্বালিয়ে নিতে হয় অথবা কুমোরদের তৈরী একটা আইল্লাতে আগুনের কয়লা আর তুষের সমন্বয় সাধন করে সেটা শালের ভেতর শরীরের সাথে নবজাতক সন্তানের মত জড়িয়ে রাখতে হয়। তবুও মাঝে মাঝে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে, পোকায় খাওয়া, য়ে যাওয়া, ফোঁকলা দাঁতের উপরের মাড়ির সাথে নীচের মাড়ির সংঘর্ষ কেউ ঠেকাতে পারেনা। বুড়ো আর শিশু যেন বয়সের চালে এক হয়ে যায়। তাদের প্রতি যৌবনের একধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শিত হয়। শিশুদের হয়তো এটা বোঝার মতা নেই। মনজান বিবিকে সবচাইতে কষ্ট দেয় এই অবজ্ঞা। অথচ তার কিছু করারও নেই। চোখের সামনে আপন পেটের সন্তান। যাকে দশমাস দশদিন পেটে ধরে, জন্মদিয়ে, লালন পালন করে গড়ে তুলেছে। সে কেমন পর হয়ে যায় - পরইতো। মনজান বিবি সংসারের সব খবর জানতে চায়। কিন্তু ছেলের কথা হচ্ছে বুড়ো মানুষ এত কিছু শুনে কি হবে, আল্লা আল্লা কর এখন আখিরাত আর পুলসেরাত। তাকে বাতিলের খাতায় তুলে দিয়ে আপন স্ত্রী পুত্র নিয়ে ছেলেটা কি রকম এক বৃত্ত রচনা করেছে। মনজান বিবির যৌবনের দাপটময় দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। যখন ছেলেপিলে, গাউর, মাঝি সবাই এক ডাকে তার ভয়ে হুমড়ি খেত। চাবির গোঁছাটা ঝন করে আঁচল সমেত পিঠে ফেলে দিয়ে দম্ভ ভরে চলে যেত। কি রকম একা এক জনই একর ব্যাপী শাকসবজির শীতকালীন তেটার রনাবেন করতো। সকালে পানি বোরানো থেকে শুরু করে আগাছা বাছা পযর্ন্ত। চোখের সামনে কেমন করে বেড়ে উঠতো মুলা, পেকে উঠতো মরিচ, লম্বা হত বরবটি। সবুজ সবজির ঘ্রান এখনও তাকে কেমন যেন সুরতপ্ত করে দেয়। এবারে শীতেও যখন মনজান বিবি ছেলের কাছে প্রস্তাব করল সবজি তে করার। তখন ছেলে ‘কি দরকার’ ‘তুমি পারবনা’ জাতীয় কথা বলে তাকে বিরত করতে চাইছিল। হা আল্লা, সে কি করে বোঝাবে যে সবুজ শাকসবজি, ফলমুলের সাথে যোগাযোগ থাকলে প্রাণটা কি রকম সজীব থাকে। কিছু না করে রোদে শুকিয়ে শুকিয়ে শীতে কেঁপে কেঁপে সেকি চুপসে যাওয়া কিসমিস হয়ে যাবে নাকি। তার গোঁ ধরার কারনে অবশেষে সে তেটা করতে পারল। ছেলের ছেলে জাকি’র সাথে আবার বুড়ির খুব ভাব। জাকিকে যুতে পেলে বুড়ি তার শৈশবের আর কৈশোরের আর যৌবনের আর বাধর্ক্যের কত গপ্পো নিমিষে শুনিয়ে দেয়। একেকটা গল্প একাধিকবার শুনতে শুনতে জাকির শিশুমনে এগুলো জীবন্ত হয়ে উঠে। এগুলো সে আবার তার মতো করে বুড়িকে শুনিয়ে দেয়। বুড়ি শুধু হা হা করে। অবাক হয়, হাসে, ভয় পাবার ভান করে। জাকির সঙ্গে বোঝাপড়াটা আরো পাকা করে নেয়। জাকিও দাদিমা বলতে অজ্ঞান। দিনের বেশীর ভাগ সময় জাকি বুড়ির সঙ্গেই থাকে। বুড়োকালের পরিকল্পনাগুলোও বোধয় যৌবনের কাছে আর্শ্চয লাগে, বোকাসোকা লাগে, তা না হলে মনজান বিবির েেতর পুকুরের পাশে বাসা করার কাথাটা ছেলের কাছে আশ্চর্য লাগবে কেন! একদিন গাউর ডেকে ধানকাটা শুকনো খড় দিয়ে একটা বাসা করিয়েও দেয়। খড়ের বাসাটার দিকে তাকিয়ে বুড়ির সমগ্র জীবনের আশা পূরণের মত সুখানুভূতি হয়। বুড়ির শীর্ন হাতখানি খড়ের ওপর বুলায়, কেমন কোমল অনুভূতি হয়। মাঝে মাঝে জাকি ভোস ভোস ঘুমায়। বুড়ির দুই প্রাগৈতিহাসিক চোখে ঘুম আসেনা। রাত যখন গভীর হয় জোৎøার প্লাবনে ছেয়ে যায় চরাচর। শীতের কুয়াশাøাত সবুজ মুলাপাতা পেঁয়াজের ডাঁটি চিকচিক করে। কোথাও দুরে কুকুরের ছেড়া ছেড়া ডাক শুনা যায়। বুড়ির তখন মরনের ভাবনা হয়। মৃত বুড়াকে মনে পড়ে। পুলসিরাতের কথা ভাবে। বুড়ির এখন কিছুই করার নেই। ভাবনা, ভাবনা আর কল্পনা। অতীতের সব স্মৃতিগুলো মস্তিস্কের স্মরণ চিত্র ঘেঁটে ঘেঁটে চোখের সামনে নিয়ে আসা আর মৃত্যু নামের অদ্ভুত আধাঁর আর হিসাবপত্র কল্পনা করা। নিজেকে সবার চাইতে সৎ ভাবতে ভাবতে বুড়ির জীবনে আর কোনো পাপকর্মের কথা মনে পড়েনা। সে ধরেই নিয়েছে যে তার গন্তব্য স্বর্গ। কিন্তু মাঝে মাঝে পৃথিবীর জন্য বড় মায়া হয়। হাজারো পদধ্বনি মুখর এই উঠোন, এই রাস্তা, এই ঘরবাড়ী এত আত্বীয় স্বজন, সন্তান, নাতি, প’তি, লতি। এই সব ছেড়ে কোন অজানায়, কার দুয়ারে কড়া নাড়া। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে তজবিহ গুনে আল্লা আল্লা করে সে এর কোনো সুরাহা করতে পারেনা। নিজের বিছানাপত্র, চাদর, তেল চিটচিটে বালিশটা পর্যন্ত এখন তার খুব প্রিয়।
প্রায়ই মাঝরাতে মনজান বিবির ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিস্তব্ধ রাত। বহু বহু দুর থেকে ভেসে আসে কুকুরের কান্না, শেয়ালের ডাক। নিজের শাদা টেট্রনের সুতার মত চুলগুলোতে হাত বুলায়। গর্তে ঢুকে যাওয়া চোখ, আমের আটির মত চোয়াল, সে বালিশে চুলের গন্ধ শুঁকে। বুড়ো বয়সে মানুষের মন বোধয় খুব সন্দেহ পরায়ন হয়ে উঠে। প্রায় তার মনে হয় উঠোন দিয়ে যেন কে হেঁটে যায়। সে বলে উঠে ‘কে যায়, কে যায়’। তার এই ভঙ্গুর ও ীন আওয়াজ মাটির মত নিস্তব্ধতায় আঘাত করে। মাঝে মাঝে নাতীরা ভয় পায়, বিরক্ত হয়। কত কিছু, কত কাউকে এই জীবনে সে হারিয়ে ফেলেছে। আলাদা ভাবে কাউকে মনে রাখতে পারেনা এখন। চিনচিনে এক কষ্টের ভারে নুয়ে পড়ে বুক। চোখ থেকে অঝরে ঝরতে থাকে অশ্র“। অশ্র“গুলো কুঁচকে যাওয়া চামড়ার ওপর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে মাটিতে মিশে যায়। শীতের সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে মনজান বিবি মোরগের ডাক শুনতে পায় কুককুরুকুক। কুয়াশায় ঘোলাটে হয়ে আছে উঠোন, আশে পাশে লোকজন জাগে কোলাহল শুনা যায়। এই সময়টা মনজানবিবি কাঁথার ভেতরেও কাঁপতে থাকে। তবুও সে বাধ্য হয়ে উঠে পড়ে। জাকি’কে জাগায়। সে ‘অহু আহা’ করে। ধীরে ধীরে কুইরগা থেকে খড় নিয়ে আগুন জ্বালে। শালের ভেতর হতে শীর্ন হাত দুটো বার করে আগুনে মেলে ধরে, ধীরে ধীরে তার কাঁপুনি কমে যায়। জাকি উঠে পড়ে, একে একে সবাই উঠে পড়ে। অগ্নিকুন্ডের চারপাশে বসে আগুন পোহাতে থাকে। ওদিকে সূর্যও ততনে কিরণ প্রদান করতে থাকে। তখন মনজানবিবির পুত্রবধু চলে যায় ভাপা পিঠা বানাতে, রান্নাঘরে। গুড় আর কোরানো নারকেলের স্বাদ, শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠা, বুড়িকে অন্যরকম স্বাদ এনে দেয়। ভাপা পিঠাকে বুড়ি আবার আইল্লার আগুনে পুড়িয়ে লাল শক্ত করে ফেলে। তখন ভেঙ্গে ভেঙ্গে বুড়ির পিঠা খাওয়া দেখলে মনে হয় যেন সে অমৃত খাচ্ছে। এ জন্য জাকি মাঝে মাঝে বলে-দাদীমার পিঠা সবচাইতে বেশী স্বাদ। আজকে সকালে হঠাৎ কাঁপুনী দিয়ে জ্বর এল মনজানবিবির। জ্বরের ঘোরে সে উইব্যাতে লাগল আবোল তাবোল। সে তখন তার পুত্রবধুর সহায়তা সেবা কামনা করছিল। আর তার পুত্রবধু তখন হাতে গোবর আর মাটি মেখে তা দিয়ে ঘর লেপতে ব্যাস্ত ছিল। তখন তার মনে এই ধারনা বদ্ধমুল হয় যে আসলে সবাই তার মৃত্যু কামনা করে। সে যেন এই পরিবারে বোঝা সদৃশ। নিজের ওপর এক প্রকার প্রগাঢ় অভিমান চেপে বসল তার আর এতদিন সে যা করেনি আজ তাই করল। নিজের মৃত্যু কামনা করল। এতে নিজের প্রতি যৎসামান্য নিয়ন্ত্রনও সে হারিয়ে ফেলল আর তার অস্তিত্বের ভিত্তি নড়ে উঠল আর সে এত দুর্বলতার ভেতর অবগাহন করলো যেনো মোমবাতির জ্বলেপুড়ে নিভে যাওয়ার আগের কোমল মৃয়মান শিখা। সন্ধ্যার দিকে প্রচন্ড ঘাম দিয়ে জ্বরটা নেমে গেল। ততনে ছেলে বাড়ি ফিরেছে। এবং মায়ের কাছে এসে খাটে বসল। মনজানবিবির কপালে হাত রেখে সে গরম অনুভুতি পেল আর জিজ্ঞেস করল-‘এখন কেমন বোধ করছ’। এতে মনজানবিবির অবেগ আরো দৃঢ়ভাবে ঘনীভুত হল । তা একধরনের শক্তি যোগাল আর সে কোনো কথার জবাব দিলনা, চুপ করে থাকল। ছেলে উঠে গেলে সে নাতি জাকিকে ডাকল, তাকে খামার বাড়ীতে যাবার জন্য রাজি করাল। ছেলে বাধা দিল জ্বর নিয়ে ওখানে না যাওয়ার জন্য। এরপর সে সত্যি সত্যি গোঁ ধরল এবং চলে গেল।

খামার বাড়ীতে যাওয়ার আগে একমুঠো ভাত পর্যন্ত খেলোনা। ছেলে আর নিজের অপরাধকে ডিঙ্গিয়ে মাকে শাসানোর মতা পেলনা তাই বেশি কিছু না বলে তাকে যেতে দিলো। এটুকুতেই জাকি ঘুমিয়ে পড়ল। আত্মাভিমানী ডাহুকের মত মনজানবিবির চোখদুটো চকচক করতে লাগল। শীতের রাত তার উপর চাঁদটা জ্বলে উঠেছে তার পরিপূর্ন শক্তি নিয়ে। জোৎøায় যেন ভেসে যাচ্ছে চরাচর। মনজানবিবি তার ঝাপসা চোখে একবার বাইরের দিকে তাকাল। তার নিঃসঙ্গতা তাকে পিড়িত করলো। একটা অদৃশ্য আবেগের সীমার তার বুকের ওপর যেন বসে আছে। সে অনেন নীরবে কাঁদল। বস্তুত তখন সে বেঁচে থাকার সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। সে মাথাটা তুলে জাকির দিকে তাকাল। তারপর বিছানায় বসে পড়ল। অনেন ধরে একইভাবে। তারপর উঠে দাঁড়াল। খামার বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে েেতর ভেতর আইল ধরে ধীরে ধীরে হাটঁতে লাগল। তার মনে হচ্ছিল এই মুহুর্তে সে চাঁদ এবং জোৎøার মত নিঃসঙ্গ। তার আর বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। মুলা পাতায় শিশির পড়ে জোৎøার আলোতে চিকচিক করছে। সে উবো হয়ে বসে একটা পাতা হাত দিয়ে মুছে ফেলল। একটা পেঁয়াজের ডাটা ছিঁড়ল। তারপর সে নেমে গেল পাশের ধান েেত। যেখানে ধানগাছ মানুষের মত লম্বা হয়ে তৈরী করেছে জঙ্গলের। সে প্রথমে তার চপ্পলজোড়া আইলের ওপর রাখল। তারপর ধানগাছের ভেতর বসে পড়ল একজন মদখোরের মত। তারপর আরেকবার তার জন্ম থেকে আজ অব্দি স্মৃতিগুলো কল্পনা করে দেখার চেষ্টা করল। সমস্ত জীবনটাকে তার দুঃখ ভারাক্রান্ত বলে মনে হল। সে বেচেঁ থাকার সমস্ত পথ যেন রুদ্ধ করে দিল নিজে। কোমর থেকে সে একটা বিষের বোতল বার করল। তারপর সেটা সে নিজের মুখে ঢেলে দিল আর জীব দিয়ে মুখ পর্যন্ত লেপে বোতলের সবটুকু বিষ সে টেনে নিল নিজের অভ্যন্তরে। সে একজন সুখী বুড়ির মত নীরবে বসে থাকলো কিছুন। তারপর শুরু হল তার হৃদয় নিংড়ানো যন্ত্রনার। আত্মহত্যা প্রচেষ্টার পর সম্ভবত প্রত্যক মানুষ শেষ বারের মত মা করে দিতে চায় পৃথিবীটাকে। সে সব ব্যর্থতাকে মেনে নিতে চায়। নিজের ভেতর যেন জেগে উঠে দ্বৈতসত্ত্বা। মনজান বিবির অভ্যন্তরে তেমনি একটা সত্তা বাঁচার জন্য তীব্র যুদ্ধ শুরু করলো কিন্তু সে ছিল শক্তিশালী বিষের দ্বারা আক্রান্ত। বিষ তখন তার ভেতরে তার সবটুকু প্রতিক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। তার মনে হল সমস্ত নাড়িভুড়ি একটা বিশাল হাত দিয়ে কে যেন টান মারছে। বুক দিয়ে যেন কি একটা সোজা বেরিয়ে আসতে চাইছে। সে বুক চেপে ধরল দুহাতে তারপর অভ্যন্তরীন যন্ত্রনার শারিরীক রূপ দিতে লাগল। সে তার শরীরটাকে একটা ধান মাড়াইকারী যন্ত্রের মত চালিত করলো ধানেেতর ভেতর। ধান তেটাকে সে অল্পনের মধ্যে একটা ঘাষের মাঠে পরিনত করলো। তার শরীরটা ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল। ঘন্টাখানেক বিষের যন্ত্রনায় নিজেকে তুলে দিয়ে সহ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত নিজেকে সে নিয়ে গেল। এক সময় তার শরীরটা নিথর হয়ে পড়ে রইল তার সৃষ্ট ঘাসের মাঠে। সারারাত তার লাশটা ওভাবে পড়ে রইল। যন্ত্রনাদগ্ধ মুখে শাদা ফেনা সহ জাকি সকালে আবিস্কার করলো তার দাদীকে। সে কেঁদেছিল একটা কান্নাদগ্ধ মানুষের মত অবিরাম ভাবে যা তার বাকী জীবনটায় প্রভাব রেখে গিয়েছিল। এবং যার জন্য জাকি তার বাবা মাকে কখনো মা করতে পারেনি।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।