বিশুদ্ধ উচ্চারণ

ঝরাপাতা এর ছবি
লিখেছেন ঝরাপাতা (তারিখ: মঙ্গল, ২২/০৭/২০০৮ - ১২:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাটন দেখিয়ো না, ওতে লাভ নেই।
তুমি আমার কন্ঠনালী ছিড়েঁ নিতে পারো
কিন্তু আমার হৃদয় হতে উৎসারিত বিশুদ্ধ উচ্চারণ
রোধ করতে পারবে না কিছুতেই, কোন অবরোধ,
কোন প্রতিবন্ধকতাই সেই উচ্চারণ স্তিমিত করতে পারবে না-
বিশ্বাস না হয়, তবে বন্ধ কপাটগুলো খুলে দেখ একবার,
মনে করে দেখো- সেই কিশোর ক্ষুদিরামের কথা,
ফাঁসির দড়ি গলায় পরা সেই হাস্যোজ্জ্বল অকুতোভয় মুখ,
কোন মৃত্যুভয়ই রুখতে পারেনি যার সত্যের পথচলা।
তুমি আমাকে ছুড়ে দিতে পারো কোন অন্ধকার প্রকোষ্ঠে,
এরকম হাজারোবার আমার পূর্বপুরুষদের ছুড়ে দিয়েছিলো
তখনকার জমিদারেরা, একই সনাতনী কায়দায় আমার পিতাকেও
বন্দী করে রেখোছিলো বার বার আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা।
তাতে কি লাভ হয়েছে?
হাজার বার জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন নুর হোসেন,
তারা তোমার কামান-বন্ধুক-বুট-গোলা-বারুদ আর
টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছে,
স্লোগানে স্লোগানে মুখর করেছে দশ দিগন্ত।
গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে বুক,
তবু কন্ঠ তাদের স্তিমিত হয়নি আজো।
দেখো-
সময়ের বর্ণহীন পৃষ্ঠায় আজ তুমিই নিক্ষেপিত হয়েছ আস্তাকুড়ে,
অথচ, বাংলার নদী-মাঠ-ঘাস, ভোরের শিশির টলমল জল,
ভোরের বাতাস আজো ডেকে যায়- নুর হোসেন, নুর হোসেন।
তাই বলছি, তুমি আমাকে স্তব্ধ করে দিতে পারো চিরতরে,
আমার হাড়-গোড় ভেঙ্গে পিস পিস করে খাওয়াতে পারো ওই
বিদেশী কুত্তাগুলোকে, জিভ টেনে ছিড়ে ফেলতে পারো
নির্মম সত্য বলার অপরাধে আদিম আক্রোশে।
কিন্তু আমার হৃদয় উৎসারিত বিশুদ্ধ উচ্চারণ,
শাশ্বত সত্য শব্দগুলি, সেই অগ্রন্থিত শব্দেরা,
তারা ঠিক চৌকাঠ পেরিয়ে, ব্যারিকেড পেরিয়ে,
তোমার সাঁজোয়া বহরকে উপেক্ষা করে ঢুকে যাবে
প্রতিটা অলিতে-গলিতে, প্রতিটা মেঠো পথের বাঁকে,
একদিন তারা সহস্র শব্দের ঝংকার হয়ে
যখন কাঁপিয়ে তুলবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল,
মহারাজ, সেদিন তোমার কানে তুলো গুঁজে দেয়ার
জন্য কেউ পাশে থাকবে তো !!


মন্তব্য

sahoshi এর ছবি

বাহ চমৎকার কবিতা। এরকম কবিতা যদি আমি লিখতে পারতাম!!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

ওহে, আর কতকাল আমি সইবো! চিল্লাচিল্লি করলেও কয় ধৈর্য ধারন কর! ধমক খাইয়া, উষ্টা লাত্থি খাইয়া চুপ থাকলেও কয় ব্যাডার মুরাদ নাই! তাইলে যাই কোই? দেঁতো হাসি

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

জিফরান খালেদ এর ছবি

আমি অনেক জায়গায় আটকালাম। অনেক জায়গায় চমতকার এগুলাম। বক্তব্যের চেয়েও কবিতার দিকেই আমার দৃষ্টি বেশি প্রখর থাকে বলেই হয়তো...

সবমিলিয়ে বেশ লাগলো...

ঝরাপাতা এর ছবি

বস, আপনে কবি আর আমি হইলাম কাব্যিক। মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক,দুঃসময়ে হলে ও ঝরাপাতার শব্দ শোনা গেলো ।
-------------------------------------
"এমন রীতি ও আছে নিষেধ,নির্দেশ ও আদেশের বেলায়-
যারা ভয় পায়না, তাদের প্রতি প্রযোজ্য নয় "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সৌরভ এর ছবি

ফিরলেন তাহলে।
এখন বড় দুঃসময় আমাদের।


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নিঘাত তিথি এর ছবি

শুধু দীর্ঘসূত্রিতা ঝরাপাতা।
শেষটা পড়ে বেশ একটা তৃপ্তি হলো মনে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ঝরাপাতা এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে।

হুম দীর্ঘসূত্রিতার জাল ছিড়ে যখন ফিরে এলাম, তখন দেখি আমার প্রিয় আবাসে হায়েনার ছায়া।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

ঝরাপাতা এর ছবি

- জয় বাংলা


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

দ্রোহী এর ছবি

ইয়া হাবিবি........


কী ব্লগার? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।