দাগী (বাকি অংশ)

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী (তারিখ: সোম, ১৬/০৬/২০০৮ - ৩:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমাংশ

জেলখানার ভেতর যদিও অনেক আইনের ব্যবহার আছে, তবুও এখানকার সম্রাট হচ্ছে জেলার। তার মর্জিমাফিকই সব হবে এখানে। বাইরে থেকে সারা দেশ চ্যাঁচালেও তার কিছু যায় আসে না। বেশি বেগতিক দেখলে বলে দেবে- 'ঠিক আছে, এক্ষুনি ব্যবস্থা নিচ্ছি!' ব্যাস, সবার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। মিডিয়া চোখ ঘুরিয়ে নিলো অন্য দিকে। যে সেলটিতে আব্দুল জলিল বন্দি হয়ে আছে, সেখানে থাকার কথা তিনজন। কিন্তু জেলখানার নিয়ম তো কাগজে কলমেই। বাইরের কে আর তদন্ত করতে আসছে? কাজেই আসামীদের নিয়ে মাথা ব্যথা কারো নেই। তবুও নয়জন চেষ্টা করে যাচ্ছে কোনোরকমে মিলেমিশে কাটিয়ে দিতে। কিন্তু রাতে শোয়ার সময় হলেই কারে না কারো সঙ্গে লাগবেই। চলবে তর্কাতর্কি-খিস্তি-খেউর। এটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় নিজে নিজেই যেন থেমে যায় বিতর্ক। ক্লান্ত আর শ্রান্ত হয়ে যেন প্রত্যেকেই ঘুমিয়ে পড়ে গুটিসুটি হয়ে। রাতভর প্রতিযোগিতা চলে কে কত জোরে নাক ডাকতে পারে।

আব্দুল জলিল ছাড়া বাকি সবাই দাগী। কোনো না কোনো অপরাধ করেই জেলে আসে ওরা। চার’ছ মাস বা বছর খানেক বিশ্রাম নিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যায়। পুরোনো কেস শেষ না হতেই একই অপরাধে ফের জেলে আসে। এখানে আসা যাওয়া ওদের জন্য ডাল-ভাতের মত। কিন্তু আব্দুল জলিলের প্রতিদিনই দম বন্ধ হয়ে আসে। রুদ্ধ শ্বাসে তখন মনেমনে জপে নিসুর নাম। ধ্যান করে নিসুর মুখ।

এই যে এগার মাস ধরে সে জেলে বন্দি হয়ে আছে, নিসু কি একবার ভাবে না তার কথা? তার কি ঘুম আসে? সেই যে বলতো, একদিন তাকে না দেখলে রাতে ঘুমই হয় না। তাহলে কি নিসু এই এগার মাস ধরে রাতে ঘুমায় না? আসলে মেয়েদের মন সন্দেশের মত। একটি সন্দেশের গায়ে যেমন হাজারো আলগা গুঁড়ো নিয়ে পিঁপড়ের দঙ্গল মারামরি ধাক্কাধাক্কি করে কিন্তু সন্দেশ নিজে তার কিছুই টের পায় না, তেমনি হয়তো নিসুদের মনের হাজারো খেয়ালের গুঁড়ো নিয়ে আব্দুল জলিলের মত হাজারো মানুষ বিভ্রান্ত হলেও তাদের মনের ধারে কাছেও গিয়ে তা পৌঁছায় না।

একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবদুল জলিল কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিলে হাশেমও শোয়া থেকে উঠে পাশে এসে বসে। এভাবে প্রায়ই সে পাশে বসে একটি সিগারেট নিজে ধরিয়ে আরেকটি তার হাতে দিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে ধরে। আগে সিগারেটের অভ্যাস ছিলো না। হাশেমের পাল্লায় পড়ে এখন বলতে গেলে অনেকটা নেশার মতই হয়ে গেছে। সিগারেটের গন্ধ পেলে একটি সিগারেটের জন্য মনটা কেমন উশখুশ করতে থাকে।

হাশেমের পেশাটা চোর-ডাকাত বা লুটেরার দলে পড়ে কি না এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তার মনে। তার পেশা হচ্ছে তালা ভাঙা। বিভিন্ন গ্রুপ তালা ভাঙার জন্য তার সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে। পুরো টাকা অগ্রীম না পেলে কাজে হাত দেয় না সে। আগের দিন পার্টির কাছ থেকে টাকা বুঝে পেয়ে ঘরের আলমারিতে রেখে পরদিন ভোর হবার আগে আগেই স্পটে গিয়ে নিজস্ব কৌশলে সাটাসাট তালাগুলো খুলে দিয়ে মটর সাইকেল হাঁকিয়ে সটকে পড়ে।

পরিবারের লোকজন তার এ কুকর্মের কথা কিংবা মাঝেমধ্যে জেল খাটার কথা জানে না। তার ছেলেমেয়ে দুটি মাত্র। দুজনেই পারদানা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মালয়েশিয়ায়। অথচ সে একজন পেশাধার অপরাধী হয়েও স্বপ্ন দেখে যে, পৃথিবীর সব জেলখানা একদিন ভূতুরে বাড়িতে পরিণত হবে।

কথায় কথায় একদিন হঠাৎ আব্দুল জলিলের মুখের দিকে তাকিয়ে হাশেম বলে উঠেছিলো, 'পুলিশ হলারা তো দেখলেই মানুষ চিনে! আপনেরে ধরলো কি কামে বুঝি না। কোর্টে প্রসিক্যুট করনের কেউ না থাকলে জিন্দেগিতে বাইর হইতে পারেন কি না সন্দ আছে!'

কী আর বলবে আব্দুল জলিল? বলে যে, কপালের ফের! কপালে যা আছে হইবো!

হাশেম বলেছিলো, 'এই কপাল হালা এমন বজ্জাতের বজ্জাত, কহন যে কোনদিক গইড় খাইবো বুঝন বড় মুশকিল!'

তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ সিগারেট টানতে টানতে সে বলেছিলো আবার, 'কপাল-নসিব আর ভাইগ্য যাই বলেন, কোনোদিন বিশ্বাস করি নাই। যহন দেখলাম এমপির মাইয়া বোরখা পিন্দা আমার ডেরায় আইয়া উঠলো। তহনই বুঝলাম যে, মানষ্যের চেষ্টা আর তদবিরের বাইরেও কিছু একটা আছে। আপনেরা যেইটারে কপাল-টপাল বলেন!'

হাশেমের ভাগ্য সত্যিই বদলে গিয়েছিলো। এমপির মাইয়া যখন কইলো, 'হাশেম মিয়া, আমি খবর পাইছি তুমি তালা ভাঙ্গার কম করো। আমারে যদি একটা কাম কইরা দিতে পারো তো তোমারে আমি বিয়া করমু! আর তালা খোলার এমন এক ম্যাজিক হিকাইয়া দিবো যে পাঁচ মিনিটেই দশটা তালা কোনো ব্যাপার না। এই ম্যাজিকের কাছে দুনিয়ার কোনো তালাই মুখ বুইঞ্জা থাকতে পারবো না!'

তারপর হাশেম নাকি অবাক হয়ে বলেছিলো, 'মাইয়া মানুষ আবার তালা ভাঙ্গনের কি হিকাইবো? এই কাম করতে করতেইত্ত বড় হইলাম!'

এমপির মেয়ে রুশা বলেছিলো, 'আমি কেমিস্ট্রির ছাত্রী! কিসে লোহা গলে জানি!'

হাশেম মোটামুটি লেখাপড়া করেছে বলে কেমিস্ট্রির ব্যাপারটা তার মনে ধরেছিলো। রুশা যদি তাকে তালা ভাঙার কৌশল না শিখিয়ে বলতো যে, এই খারাপ কাজ ছেড়ে অন্য কোনো ছোটখাট কাজ করতে, তাও সে রাজি হয়ে যেতো। কিন্তু রুশা এসেছিলো তার কাছে নিজেরই একটি স্বার্থে। আর বিয়ে বিয়ে নাটকটা করে তার চিন্তাকে ব্যস্ত রেখেছিলো ভিন্ন খাতে।

কথাগুলো যদিও হাশেম এক নাগাড়ে বলেনি। তবুও আব্দুল জলিল যেভাবে শুনেছিলো, তা মোটামুটি এ রকম- 'চিন্তা কইরা দ্যাহেন! মাইয়া মানুষ হইয়াও তার ব্রেন ক্যামন! কাজী অফিসে গিয়া আমারে বিয়া কইরা কইলো তুমি ভয় পাইও না। কিন্তু আমার কিন্তু ডরে কইলজা-গুর্দা সবই শুকায় গেছিলো। বাঘের লগে দৌঁড় পাড়লে বান্দরের জান শ্যাষ। তা ছাড়া তার বাপের গুন্ডাপান্ডার অভাব আছিলো না। কইলাম, ভয় তো কিছুডা করতাছে! কই রাজকইন্য আর কোই নাও বাওইন্যা!

তাও রুশা কইলো, কেউ টের পাইবো না। সবতে ইলেকশনের মিটিঙ নিয়া ব্যস্ত আছে। তারপরে আমারে কইলো পাইকারি তালা কই পাওয়া যায়? কইলাম নয়াবাজার। তখন হ্যায় ট্যাকা বাইর কইরা দিয়া কইলো দশ রকমের দশটা বড় তালা আনতে। লগে একটা কাগজের লিস্টি দিয়া কইলো আওনের সময় মিটফোর্ড থাইক্যা জিনিস কয়ডা আইন্যা দিতে।

গ্যান্ডারি বইল্যা আমার পরিচিত এক লোক আছিলো, যে মিটফোর্ডের এক কেমিক্যালের দোকানে কম করতো। তারে যাইয়া ধরলাম। ভাই য্যামনে পার এই জিনিস কয়ডা আমারে যোগাড় কইরা দ্যাও। নাইলে আমার আইজগাই মউত। রুশার কথাডাও কইলাম। হ্যায় জানতো যে আমি দুই নম্বর কাজ করি। টাকা নিয়া মাল বুঝাইয়া দিয়া কইলো, পুলিশে ধরলে এমপির মাইয়ার নাম কইয়ো।

তারপরে রুশারে সব বুঝাইয়া দিয়া কাছেই বইয়া রইলাম। হ্যায় জিনিসগুলা একখানে কইরা প্লাস্টিকের সিরিঞ্জে অল্প কিছু লইয়া তালার ফাঁকে ফাঁকে দেয় আর কড়া ধইরা পট কইরা টান দিয়াই খুইল্যা ফালায়। আমি ইমানে কইতাছি! রুশারে কইলাম আপনেরে আমি ওস্তাদ মানি! তার পাও দুইডা চাইপ্যা ধইরা কইলাম, আপনে যা কইবেন আমি তাই হুনমু!

তখন হ্যায় কইলো, আজকের মধ্যেই আমার একটা কাজ করতে হইবো। আমি শার্টের হাতা গুটাইয়া কইলাম কী এমন কাজ?

তখন সে কইলো তাগ বাড়ির ছাদের উপরে একটা ঘর আছে। দরজায় পাঁচটা তালা দেওয়া। সেই তালা ভাইঙ্গা ঘরের ভিতর থাইক্যা একটা মহিলারে পাশের বাড়ির ছাদে পৌঁছায় দিতে হইবো। এই কাম না পারলে আমিও বাঁচতে পারমু না। হ্যায় পিস্তল বাইর কইরা দেখাইলো।

আমি মনে মনে ঠিক কইরা ফালাইছি যে, হ্যায় যা কয় তাই মানমু! যদি কয় গলায় ফাঁসি দিয়া মরতে তাও করতে রাজি। আমি আইজও বুঝতে পারি না যে, হেদিন আমার হইছিলো কি? মানুষরে ভুতে ধরে হুনছি। যাদু কইরা সব কিছু ভুলায় ফালায়। কিন্তু আমার যে কি হইছিলো আইজতক হেইডা রহস্যই থাইক্যা গ্যাল!

তারে কইলাম, পাশের বাড়ির ছাদে আমার মানুষ নিয়া গেলে অসুবিধা আছে কি না। আর ছাদে কোনো পাহারা আছে কি না। সে কইলো মেনগেট ছাড়া পাহারা নাই। আর কি, আমি তো পুরান চোরই। আরো কয়ডা ছোটখাট চোর নিয়া কামে নাইম্যা পড়লাম। সিনামার কায়দায় দুই ছাদে দড়ি বাইন্ধা দারজার তালা কয়ডা ভাইঙ্গা মহিলার হাত-পাও আর মুখ বাইন্ধা বস্তায় ভরলাম। তারপরে বস্তার মুখ বাইন্ধা ডাবের ছড়ির মতন আটকাইয়া দিতেই ছরছর কইরা বস্তা নাইম্যা গ্যাল গিয়া। আমার লোকজন বস্তা সামলাইয়া ধরলো। আমি পরীক্ষায় পাশ করলাম। পরে জানছি মহিলা আমার শাশুড়ি আছিলেন। শাখারীপট্টি নতুন বাড়ি ভাড়া নিয়া আমরা দশদিন সংসার করলাম। একদিন ঘুম ভাইঙ্গা দেখি ঘরে আমিই একলা আছি। তার বাদে তাগোরে কত খুঁজলাম। আইজও কোনো খবর নাই। সেই যে হ্যায় আমারে ম্যাজিকটা শিখাইয়া দিছিলো, তার জোরেই কইরা খাইতাছি বিশ বছর ধইরা। এইবারই পরথম ধরা খাইলাম। এইডা কি ভাগ্যের ফের না?'

হাশেমের কথার জবাব দিতে পারেনি আব্দুল জলিল। ভাবে, ভাগ্য কখনো কখনো এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে যে, সে একভাগ হয়েও মানুষের নিরানব্বই ভাগ প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে! কেউ কেউ যাকে বলে নিয়তি!

আব্দুল জলিল সেলের ভিতর একা বসে ঝিমুতে ঝিমুতে নিজের অদৃষ্ট আর অন্যদের অদৃষ্ট মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলো। সকালের দিকে তার চোখের সামনে দিয়েই একে একে আটজন মানুষ প্রিজনভ্যানে গিয়ে উঠেছে। আজ ওদের হাজিরার দিন। ভাগ্য ভালো হলে জামিন পেয়েও যেতে পারে। ওদের ভাগ্য আরো ভালো এ জন্য যে, বাইরে ওদের পক্ষে উকিল লাগানোর মত লোক রয়েছে। যে কারণে তারিখে তারিখে ওরা কোর্টে হাজিরা দিতে যাচ্ছে। আব্দুল জলিলের জন্য সে কেবল নিজেই আছে পৃথিবীতে। যে কারণে তার কেস কোর্টে মুভ হয় না। আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে ম্যাজিস্ট্রেককে বুদ্ধু বানাবার কৌশল প্রয়োগ করার কেউ নেই। হাশেমের কথা অনুযায়ী বাকি জীবন হয়তো এখানেই কাটিয়ে দিতে হবে তাকে।

বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে। অন্যান্য সেলের বন্দিরা সব হাঁস-মুরগির মত কলরব করতে করতে ফিরে এসেছে। কিন্তু আব্দুল জলিলের সহবন্দি বাকি আটজন এখনো ফিরে আসেনি। টহল পুলিশ একজনকে জিজ্ঞেস করেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। ঠোঁট উল্টিয়ে লোকট জানিয়েছিলো- 'মনে কয় আরেক সেলে নিছে।'

আব্দুল জলিল তার সেলে মুলত: এখন একা। হয়তো রাতে ভালো ঘুম হবে। কিংবা দিনের বেলাতেও ঘুমিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবে এতদিনকার ক্ষতিটা।

সামনের করিডোরটার বিপরীতে একটা সেল খালি পড়ে ছিলো মাসখানেক ধরে। সন্ধ্যার পরপরই দু'জন দশাসই লোক এনে ঢোকানো হলো। ওরা কিছুক্ষণ অদৃশ্য কারো উদ্দেশ্যে গালাগালি করলো।

তারপর একজন মুখে আঙুল ঢুকিয়ে খুব জোরে শিঁস বাজায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খানিকটা দূরের কোনো সেলের ভেতর থেকে বা বাইরের কোথাও থেকে একই রকম শব্দ ভেসে আসে। তখনই একজন আব্দুল জলিলের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ পরনের লুঙ্গি উঁচিয়ে ধরে। জিভ বের করে ভ্যাংচায়। কিছুক্ষণ নেচে নেচে জেলখানার সম্বল, থালাবাটি কম্বল গানটা সুর করে গেয়ে উঠে। সঙ্গিটি থালায় বোল বাজাতে বাজাতে মাথা নাড়ে।

এরা পুরোনো আসামী। হয়তো কারো সঙ্গে গন্ডগোল পাকিয়েছে বলে স্থানান্তর করেছে।
হঠাৎ গান গাওয়া থামিয়ে লোকটা আব্দুল জলিলের দিকে ফিরে বললো, 'দাগী নাহি? কয় বছর হইলো?'

আব্দুল জলিল কিছু বলতে পারে না। তার একবার ইচ্ছে হয় বলে, যতদিন এই দেহে আছে মোর প্রাণ...

কিন্তু ইচ্ছে করেই চুপ হয়ে থাকে। মোটা রুচির মানুষেরা এ সমস্ত কথা বুঝতে পারে না।

তার নিরবতায় হয়তো ওরা বিরক্ত হয়। তাকে শুনিয়ে বলে, 'হালায় বয়রা নাহি?'

আব্দুল জলিল, মনে মনে বলে, বয়রা হলেও তো অনেক ধরনের কষ্ট কম হতো!
(সমাপ্ত।)


মন্তব্য

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

প্রথম অংশ পড়ে মন্তব্য করা হয়নি, ভেবেছিলাম পুরোটা পড়ে একবারেই ভাল-লাগাটা জানাই।
সত্যি বলি সিদ্দিকী ভাই, প্রথম পর্বের সেই জমাট টানটান ভাবটা শেষ পর্বে সেভাবে পাইনি। হাশেমকে নিয়ে হয়তো আলাদা গল্পই হতে পারত। তারপরও কিছু বর্ণনায় আপনার মুন্সিয়ানা যথারীতি স্পষ্ট:

একটি সন্দেশের গায়ে যেমন হাজারো আলগা গুঁড়ো নিয়ে পিঁপড়ের দঙ্গল মারামরি ধাক্কাধাক্কি করে কিন্তু সন্দেশ নিজে তার কিছুই টের পায় না, তেমনি হয়তো নিসুদের মনের হাজারো খেয়ালের গুঁড়ো নিয়ে আব্দুল জলিলের মত হাজারো মানুষ বিভ্রান্ত হলেও তাদের মনের ধারে কাছেও গিয়ে তা পৌঁছায় না।
বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে। অন্যান্য সেলের বন্দিরা সব হাঁস-মুরগির মত কলরব করতে করতে ফিরে এসেছে।
পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে অনেকবার জেলখানায় যেতে হয়েছিল... আপনার বর্ণনায় সেখানকার পরিবেশের চিত্র সঙ্গত কারণেই খুব বিস্তৃত নয়; তবে যেটুকু দিয়েছেন, তা নিখুঁত। ধন্যবাদ।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

তাহলে আমি ব্যর্থ।
একজন মনোযোগী পাঠক একজন লেখকের জন্য অনেক বড় পুরষ্কার। কিন্তু আসল কথা পত্রিকা পড়ে জেল সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে আরকি! আপনি তো নিজের চোখে দেখেছেন। কিন্তু আমাকে জেলে ঢুকতেই দেয়নি। পুলিশ পাশের জনদের অ্যারেস্ট করেছে- আমাকে পাত্তা দেয়নি। কাজেই যেটুকু জানা আছে তা দিয়েই একটি পরীক্ষা চালালাম।
আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লিখা ভাল লাগল।

মামুন

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

কীর্তিনাশা এর ছবি

আপনার লেখায় মুন্সিয়ানার ছাপ স্পষ্ট। খুব ভালো লাগলো পড়ে। আরো ভালো ভালো লেখা আশা করছি।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

পঁচা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আরেকটি উপন্যাসিকা (আমার মতে।) অন্যরা বড় গল্পের বেশি কিছু বলবেন না। সাতটি টুকরো করেছি। একজন বিপত্নীক বৃদ্ধ (বয়স ছাপ্পান্ন) অকস্মাৎ প্রেমে পড়ে চল্লিশের এক বিধবার। প্রেমে পড়ে দুজনই। এটাও নিরীক্ষামূলক। পাঠক কিভাবে নেয় বা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে সেটাই দেখতে চাই। আমি দেখাতে চেয়েছি মানব জীবন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যে কোনো সময় যে কোনো বাঁকে সে পরিবর্তিত হতে পারে।
মনোযোগ ও উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রায়হান আবীর এর ছবি

অর্ধেকটুকু পড়লাম...ক্লাস করে আসি। সন্ধায় বাকিটুকু আয়েশ করে পড়া যাবে।

ভাইরে আমারও মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছা হয়, আচ্ছা ওই মানুষটা আমার সম্পর্কে কি ভাবছে? সেইটা যদি জানা সম্ভব হইতো... হাসি তবে এইটার একটা সমাধান আমি নিজেই খুঁজে বের করছি। সেটা হলো আমি নিজে যা ভাবি কেন জানি মনে হয় সেও একই রকম ভাবে। কাউকে শয়তান ভাবলে সেও আমাকে শয়তান ভাবে, কাউকে অনেক অনুভব করলে সেও আমাকে অনেক অনুভব করে। মনের স্বান্তনা আর কি...

---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আপনার যুক্তি শক্ত সন্দেহ নাই। তবে "সূতার এ প্রান্তে টান না লাগলে তো ও প্রান্ত সরবার কথা না!" (আপন-পর) আমার একটি উপন্যাসের শেষ লাইন। এখনো ফাইনাল করিনি।
আপনার ধারণার সঙ্গে আংশিক একমত। আমি দেখেছি- যাকে শয়তান ভাবছি, আসলে সে আমাকে নিপাট ভালোমানুষ বলে বিশ্বাস করে।
অনেক ধন্যবাদ।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কদিন খুব ব্যস্ত আছি... হিসাবে সচলে ঢোকাই অপরাধ... তাও ঢুঁ মারি... বড় লেখা দেখলে এড়িয়ে যাই... ছোটখাটো কিছুতে চোখ ফেলি... আপনার গল্পটাও জমিয়ে রাখলাম... পরে একসময় পড়বো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অনেকদিন পর এদিকটায় ঢুঁ মারলেন। ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

স্পর্শ এর ছবি

সন্দেশের উপমা টা ভাল লাগলো!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আসল কথা যখন ক্লাস ফোরে (১৯৭৫) পড়ি, তখন ঠাটারিবাজার যেতাম। মা একটি ছোট্ট লিস্ট ধরিয়ে দিতেন। আর ছোট্ট একটি ব্যাগ। পকেটে দিতেন বড়জোর পাঁচ কি সাত টাকা। তবুও সেখান থেকে পয়সা মেরে (দক্ষিণের) বটতলা থেকে সন্দেশ আর মাওয়া কিনে খেতাম। তাই সন্দেশটার উপমা দিতে পছন্দ করি। হা হাহাহা!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

পুতুল এর ছবি

১ম পর্বে মন্তব্য করিনি, পুরোটা পড়ার লোভ সামলাতে না পেরে। পড়লাম। পরিনতিটা একটু (কি বলবো) মেলাংকলিক বা নাটকীয়, জানিনা মানে একটু অন্যরকম হলে আরো ভাল হতো।
মাদক ব্যবসার বর্ণনা খুব বাস্তব লেগেছে। জেলের বর্ণনা, মাদক ব্যবসার মত একটু বিস্তৃত হতে পারতো।
সব মিলিয়ে একটি প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়া গল্প।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অনেক কিছুই হতে পারতো। নুশেরা তাজরিনও এমন কিছু একটা বলেছেন। আসলে সীমাবদ্ধতা। চারদেয়ালের জীবন।
এখন ভাবছি(আপনাদের মন্তব্যের কারণে।)আব্দুল জলিল জেল থেকে যেদিন বের হবে সেখান থেকে আরেকটা তৈরী করতে পারি কি না। তবে পাকা কথা দিচ্ছি না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

তারেক এর ছবি

পড়া হল দু পর্বই।

পৃথিবীর সব জেলখানা একদিন ভূতুরে বাড়িতে পরিণত হবে।
- আব্দুল জলিলদের নিয়ে প্রহসন যতদিন চলবে এই আশাবাদ কতটুকু ভরসা দেয়?
বহু আগে পড়া দু'টো চমৎকার উপন্যাসের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সেজন্য ধন্যবাদ আপনাকে হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।