মনিপুরিদের শানাম্যাহি ধর্ম ও 'রিভাইভেলিজম' (১)

কন্থৌজম সুরঞ্জিত এর ছবি
লিখেছেন কন্থৌজম সুরঞ্জিত (তারিখ: সোম, ৩১/১২/২০০৭ - ১২:১৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশকে মোটামুটিভাবে জাতিরাষ্ট্রই বলা হয়। এই জাতিরাষ্ট্রের প্রচলিত কাঠামোয় প্রান্তিকায়িত কিছু অপরাপর প্রতীক ও সক্রিয় মানুষের তত্পরতা আছে। এই সক্রিয়তা আবার কিছুটা অপরিচিত- অপরিচিত শুধু কেন্দ্রীয় সমাজের কাছেই নয়, কেন্দ্রাতীগ সেই সব সমাজের নিজেদের কাছেও। সেরকম কিছু প্রতীকের ধারক এবং জীবন যাপনে অপর এক জনগোষ্ঠীর নাম মনিপুরি। এদের আবার বিভিন্ন বর্গ। অপরতার অভিজ্ঞতা তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বকে অনেকাংশই কমিয়ে দেয়। সাথে যৌথ সমাজের স্মৃতি, ভাষা ও নিম্নবর্গ সমাজের ধ্যান-ধারণাগুলো 'আধুনিকতা'র সাথে দ্বান্দ্বিক অবস্থানের ফলে ওদেরকে আলাদাভাবে চিনে নেওয়া যায়।

'মণিপুরি' শব্দের সাথে মেইতেই, বিষ্ণুপ্রিয়া ও পাঙন শব্দগুলো জুড়ে দেওয়া বা আত্মপরিচিতিকে প্রমিতকরণের প্রতিযোগিতা বেশি দিনের নয়। বিশেষ করে, এদেশের যে অঞ্চলগুলোতে এখনো ওদের কলরোল শোনা যায় সেখানে মূলতঃ 'খায় বাঙ্গাল' ও 'ক্ষত্রিয় মণিপুরি' শব্দ দুটো প্রচলিত। আবার 'খায় মণিপুরি', লেমনায়, পাঙাল, 'মেইতেই-পাঙাল' শব্দগুলোও সক্রিয়। এখানে 'খায়' শব্দটিকে সাম্প্রদায়িক বিশেষণ হিসেবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, যারা সেসব শব্দ প্রকাশ্যে ও স্বতস্ফূর্তভাবে এখনো ব্যবহার করে তারা 'আধুনিক' সাম্প্রদায়িকতার মহত্ব বুঝে না। অবশ্য বিদ্বত্সমাজ যখন ব্যবহার করে তখন এর আবেদন ভিন্ন। 'ক্ষত্রিয় মণিপুরি' শব্দটি দিয়ে বিষ্ণুপ্রিয়া ও মেইতেই ভাষাভাষি বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের বুঝানো হয়। আর 'খায় বাঙ্গাল' বলতে বুঝানো হয় পাঙনদেরকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিষ্ণুপ্রিয়ারা মেইতেইদেরকে বলে 'খায় মণিপুরি', মেইতেই ও পাঙলরা বিষ্ণুপ্রিয়াদের বলে লেমনায়/নিংথৌনায়; মানে, রাজা বা রাণীর ভৃত্য!

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগে সেসব উঠতি 'আধুনিক' বিদ্বত্সমাজ শব্দটাকে প্রমিতকরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যেমন, আমরা দেখতে পাই 'বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি', 'মেইতেই মণিপুরি', 'পাঙল মণিপুরি' শব্দগুলোর উপর্যুপরি ব্যবহার ও প্রাণারোপনের প্রচেষ্টা। তবে এই তিনটি উপগোষ্ঠীকে এদেশে একত্রে 'মণিপুরি' বলার চল আছে। এর কারণ ঐতিহাসিক।

'মণিপুরি' শব্দটি 'মণিপুর' থেকে উত্সারিত। সামগ্রিকভাবে সিল্করূট, পোলো খেলা, সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা ও রাজনৈতিক দ্রোহ- এসবই মূলত মনিপুরকে, তাদের সমাজ-সংস্কৃতিকে সংলগ্ন করে ফেলে প্রচলিত সাংস্কতিক ঐতিহাসিক বিশ্বরুটের সাথে। অথচ খোদ 'মণিপুর' শব্দটি তাদের কোনো প্রাগঔপনিবেশিক দলিলাদি ও সাহিত্যে ব্যবহৃত হত না। মহাভারত নামক মহাআখ্যানের কারণে 'মণিপুর' বললেই মনে পড়ে মণিময় প্রকৃতিশোভিত ও নারীশাসিত সমাজের জৌলুস! এটা পরিষ্কার যে, সে অঞ্চলের মাটিলগ্ন প্রকৃতি, মানুষ ও তাদের কর্ম, শ্রম, চিন্তা, সমাজ, বিশ্বাস, আচার, কৃত্য, টোটেম, ট্যাবু ও ইতিহাস- সবকিছুকে উদ্ভাবন করার প্রয়াস চালাচ্ছে এই 'শব্দব্রহ্ম'টি।

এই যে এক জনগোষ্ঠীকে, সমাজকে পরিচিত আখ্যান দিয়ে জেনে নেওয়া অথবা তাকে ভাষিক সীমানার বাহিরে ঠেলে দেওয়া- এটা একটা প্রাথমিক দিক। তাই ২৫০ বছর আগে বসতি গড়ার সময় ওদের চিনে নেওয়ার জন্যে এ অঞ্চলের উঁচু তলায় 'মণিপুরি' মিথ তৈরিই ছিল। কারণ এরা মূলতঃ সেই রাজ্যের কোনো না কোনো রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে এদেশে বসতি স্থাপন করে।


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

পড়লাম। আগ্রহ জারি থাকল।
পরের কিস্তিগুলোও আসুক।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মাহবুব লীলেন এর ছবি

০১
মণিপুরীরাতো নিজেদের মৈতৈ হিসেবেই পরিচয় দেয়
যতদূর জানি মী থিস (চীনের মানুষ) থেকে মৈতৈ শব্দটি এসেছে
০২
আর মণিপুরী শব্দটি মূলত মণিপুরের বাইরের লোকদের ব্যবহৃত শব্দ। যারা এই শব্দ দিয়ে পুরো অঞ্চলের মানুষকেই চিহ্নিত করত
(গ্রিকদের ডাকা সিন্ধুর তীরের সব মানুষ= সিন্দ কিংবা হিন্দ যার থেকে আজকের হিন্দুস্তান এবং হিন্দু)
০৩
সব নামকরণেই মূল বৈশিষ্ট্যই হলো। যাকে ডাকা হয় সে তার নাম রাখে না
যারা ডাকে তারাই রাখে প্রত্যেকের প্রাচীন নাম
পরে কেউ কেউ বদলায়

মুজিব মেহদী এর ছবি

জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য।
..................................................................................
ছাগলের পৃথিবীতে কাঁঠালগাছ হয়ে পাতাহীন বেঁচে থাকা দারুণ শোকের, আমি বুঝে গেছি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

কন্থৌজম সুরঞ্জিত এর ছবি

০২
আর মণিপুরী শব্দটি মূলত মণিপুরের বাইরের লোকদের ব্যবহৃত শব্দ। যারা এই শব্দ দিয়ে পুরো অঞ্চলের মানুষকেই চিহ্নিত করত
০৩
সব নামকরণেই মূল বৈশিষ্ট্যই হলো। যাকে ডাকা হয় সে তার নাম রাখে না
যারা ডাকে তারাই রাখে প্রত্যেকের প্রাচীন নাম
পরে কেউ কেউ বদলায়

আপনি সহজ কিন্তু কঠিন কথা বলেছেন।

কন্থৌজম সুরঞ্জিত

manipuri এর ছবি

Mr. mahbub Lilen, For your infornamtion, there are 30 or more ethnic groups in Manipur, Meiteis are just one of them. The word Manipuri came to existance as a synonym of Meitei is very recent development and politically created confusion. Neither 'Meitei' has come from 'This' or China.

Please dont buy to biased and concocted history books and propaganda literatures.

কন্থৌজম সুরঞ্জিত এর ছবি

There have two sentenses I have tried to empasis in next post about the reason, the reason for which the colonial term 'Manipuri' came to existance as a synonym of 'Meithei'

কন্থৌজম সুরঞ্জিত

অতিথি এর ছবি

ভাই 'মণিপুরী',
মাহবুব লীলেন ভাই এর চাইতে আপনারে খুব শেয়ানা মনে হয়তাছে। আমি ভাই ইংরেজি তেমন জানি না। তবু আপনারে জিগাইতে চাই:আপনার 'মণিপুরী' হিসেবে মীতেইকে বুঝানোর প্রকৌশল যদি নূতন হয় তাহলে খোদ 'মণিপুর' শব্দটির ব্যবহার সম্পর্কে য়ে বলা হচ্ছে:

"খোদ 'মণিপুর' শব্দটি তাদের কোনো প্রাগঔপনিবেশিক দলিলাদি ও সাহিত্যে ব্যবহৃত হত না। মহাভারত নামক মহাআখ্যানের কারণে 'মণিপুর' বললেই মনে পড়ে মণিময় প্রকৃতিশোভিত ও নারীশাসিত সমাজের জৌলুস! এটা পরিষ্কার যে, সে অঞ্চলের মাটিলগ্ন প্রকৃতি, মানুষ ও তাদের কর্ম, শ্রম, চিন্তা, সমাজ, বিশ্বাস, আচার, কৃত্য, টোটেম, ট্যাবু ও ইতিহাস- সবকিছুকে উদ্ভাবন করার প্রয়াস চালাচ্ছে এই 'শব্দব্রহ্ম'টি। এই যে এক জনগোষ্ঠীকে, সমাজকে পরিচিত আখ্যান দিয়ে জেনে নেওয়া অথবা তাকে ভাষিক সীমানার বাহিরে ঠেলে দেওয়া- এটা একটা প্রাথমিক দিক। তাই ২৫০ বছর আগে বসতি গড়ার সময় ওদের চিনে নেওয়ার জন্যে এ অঞ্চলের উঁচু তলায় 'মণিপুরি' মিথ তৈরিই ছিল।"

সেইটার ব্যপারটাতে আগে আসেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।