নন্দিত নগরে - পর্ব ১ (লাক্সেমবার্গ)

মইনুল রাজু এর ছবি
লিখেছেন মইনুল রাজু [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৭/০৩/২০১৩ - ৯:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু অদ্ভুত লোক্জন অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। কোনো এক আজগুবি কারণে এক্কেবারে সহজ সরল জিনিসটি বুঝতেও রাজ্যের সময় ব্যয় করে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতেই থাকেন তারা। অবশ্য আমাদের মত উপমহাদেশিয়দের সব জিনিস সহজে বুঝতে পারাটা সহজ কর্ম নয়। যেমন, তিনজন বাংলাদেশি স্টুডেন্ট যখন একসাথে আবেদনপত্র জমা দিতে কোনো অফিসে যায়, তখন কোন সে স্বর্গীয় কারণে যে তাদের সবার জন্ম তারিখটি হয় ঠিক জানুয়ারির এক তারিখ, সেটা বুঝতে পারা কার সাধ্যি!

ব্যাক্তিগতভাবে আমি এই অফিস সহকারীদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু, কিছুদিন পূর্বে (মার্চ, ২০১৩) প্রয়োজন পড়ে লাক্সেমবার্গ শহরে যাবার। সেখানে যাওয়ার জন্য আবার ইউনিভার্সিটির সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটতে হবে আমাকে। কি আর করা, বাধ্য হয়েই হাজির হই আমার ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারী মিস্ শেরিস এর দরবারে। সে-ই আমার টিকিটের বন্দোবস্ত করবে। কোন দেশে যাব তার উত্তরে লাক্সেমবার্গ জানাতেই প্রশ্ন করে কোন শহরে? আমি জানাই, “লাক্সেমবার্গ সিটি”। শেরিস বলে, “আমি বুঝতে পারছি লাক্সেমবার্গের একটা সিটি, কিন্তু, কোন সিটি”। আমি বলি, “সিটির নামই লাক্সেমবার্গ সিটি”। সে বলে, “আমি কনফিউজড্”। মনে মনে বলি, সেটাইতো স্বাভাবিক।

কনফিউজড্ হওয়া মোটামুটি তার একটা শখ বলা চলে। তাকে যদি কেউ ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করে লাঞ্চ করেছে নাকি, তাতেও সে তিনবার কনফিউজড্ হয়। শেরিস বলে চলেন, “ক্লিয়ারলি বলো দেশের নাম লাক্সেমবার্গ নাকি শহরের নাম লাক্সেমবার্গ”। আমি বলি, “দেশের নাম লাক্সেমবার্গ আর শহরের নাম লাক্সেমবার্গ সিটি”। সে বলে, “আমি এখন আরো বেশি কনফিউজড্”। আমি বলি, “ব্যাপারটা মেক্সিকো আর মেক্সিকো সিটির মত। দেশের নাম মেক্সিকো আর রাজধানী মেক্সিকো সিটি”। এবার নিশ্চিন্ত হয়ে সে বলে, “এতক্ষণ ধরে এটা বলছো না কেন?” আমিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি, যেমন করেই হোক অবশেষে তাকে বুঝানোতো গেলো।

কিন্তু, সে যে আসলে কি বুঝেছে সেটা টের পাওয়া গেলো পরের দিন। শেরিস আমাকে ইমেইল পাঠিয়েছে - “সরি। আমি সব এয়ারলাইন্স খুঁজে দেখলাম। আনফরচুনেইটলি, কোনো এয়ারলাইন্সই মেক্সিকোর লাক্সেমবার্গ শহরে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে না। তোমাকে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।”

কি আর করা, পরের দিন আরো মিনিট দশেক ব্যয় করে মিসেস শেরিসকে ব্যাপারটা বুঝানো সম্ভব হলো। অবশেষে, বিশেষ ভাব-গাম্ভীর্য আর তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা অবলম্বন করে, তার ক্রেডিট কার্ডটি যথাসম্ভব আমার দৃষ্টি সীমানার বাইরে নিয়ে, সেদিনের মত মিস শেরিস সাফল্যের সাথে আমার জন্য লাক্সেমবার্গের টিকেট কেটে ফেললো।

নির্দিষ্ট দিন এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাই। শিকাগোর ও’হেয়ার এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্ট এর নাম যে কি করে ও’হেয়ার হতে পারে, সেটা কোনোভাবেই আমার মাথায় আসে না। নরমালভাবে হলেও একটা কথা ছিলো। ও-এর উপর আবার একটা নক্তা দিয়ে তার পরে দেয়া হয়েছে হেয়ার, সব মিলিয়ে ও’হেয়ার। চেক ইন করতে গিয়ে দেখি, এয়ার লাইন্সের কাউন্টারের মেয়েটি নতুন। সুপারভাইজার তাকে শেখাচ্ছে, কিভাবে প্যাসেঞ্জার আসলে চেক ইন করাতে হবে। প্রথম পাঠটি মনে হলো সে ভালোই নিয়েছে। প্যাসেঞ্জার দেখলেই অযথাই মাত্রাতিরিক্তভাবে হাসছে, পারলে খুশিতে লুটোপুটি খায়। মনে হচ্ছে, এইমাত্র উচ্চতর গণিতে লেটার মার্কস সহ ১৯৯৬ সালের মেট্রিক পাস দিয়েছে।

তার সুপারভাইজার আমার পাসপোর্ট দেখে তাকে বলে দিলো ম্যানুয়েল পাসপোর্ট। এই বলে সুপারভাইজার পাশের কাউন্টারে চলে গেলো। আমার সমস্ত পাসপোর্টের ভিতরে মোটামুটি একটা থিসিস সম্পন্ন করে আনাড়ি মেয়েটি জানান দিলো, “সরি স্যার, আপানার নামে কোনো রিজার্ভেশান দেখতে পাচ্ছি না”। মনে মনে ভাবছিলাম, শেরিস যে ক্রেডিট কার্ড লুকাতে লুকাতে আবোল তাবোল কি করেছে সেই জানে। কাউন্টারের মেয়েটিকে আরেকটু ভালোভাবে খুঁজে দেখার জন্য অনুরোধ করি। আবারো খুঁজে দেখে অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে মেয়েটি বললো, “না, খুঁজে পাচ্ছি না, সরি মিস্টার ঢাকা”। এ-পর্যায়ে আর হাসি আটকে রাখা সম্ভব হলো না। অনভিজ্ঞ মেয়েটি কি দেখতে গিয়ে যে কি দেখলো, তাকে ব্যাখ্যা করে বলতেই সরি বলতে বলতে আরেকবার পাসপোর্টে চোখ বুলিয়ে বোর্ডিং পাস বের করে দিলো।

শিকাগো থেকে আমাস্টার্ডাম হয়ে কানেকটিং ফ্লাইট ধরে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। লাক্সেমবার্গ। পৃথিবীর অন্যতম ধনী রাষ্ট্রগুলির একটি। ১৮৩৯ সালে লন্ডন চুক্তির মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। আয়তন প্রায় এক হাজার বর্গ মাইল; বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন ভাগের এক ভাগ। লোক সংখ্যা পাঁচ লক্ষের খানিকটা বেশি। চারদিক থেকে ঘিরে আছে ফ্রান্স, জার্মানি আর বেলজিয়াম।

আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে ৯৬৩ সালে তিনপাশে আলজেত নদী (River Alzette) দিয়ে বেষ্টিত সুউচ্চ পাথুরে ভূমিতে কাউন্ট সিগফ্রয় তৈরী করেন তার সুরক্ষিত প্রাসাদ। উদ্দেশ্য ছিলো সুবিধাজনক সুউচ্চ অবস্থানে থেকে জমিদারী দেখাশোনা করা। কালের বিবর্তনে সে প্রাসাদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে আজকের দিনের আধুনিক লাক্সেমবার্গ শহর।

ছবি- উঁচু পাথুরে এই অংশটিকে কেন্দ্র করেই হাজার বছর আগে গোড়াপত্তন হয় এই শহরের

ছবি- দূর্গের মত উঁচু অংশের গায়ে দেখতে পাওয়া কামরাগুলোতে বসানো হতো কামান

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মধ্যযুগ থেকে প্রচলিত হয়ে উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত ইতালিয়ান কিংবা জার্মান ছোট ছোট রাজ্যগুলোর শাসনের ভার দেয়া থাকতো ডিউকদের (Duke) উপর। ডিউক এর অর্থ করতে গেলে দাঁড়াবে “লিডার” বা “কমান্ডার”। ডিউকের স্ত্রীদেরকে কিংবা মহিলা প্রশাসকদের বলা হয় ডাচেস (Duchess)। ডিউক বা ডাচেসদের অবস্থান রাজা কিংবা যুবরাজদের পরপরই। তাদের শাসিত সার্বভৌম ভুখণ্ডগুলোকে বলা হয় ডাচি (Duchy)। ডিউকদের খানিকটা উপরে (কিং/কুইন এর নীচে) অবস্থান গ্র্যান্ড ডিউকের এবং তাদের প্রশাসিত ভূখণ্ডগুলো হলো গ্র্যান্ড ডাচি।

ছবি- শহরের উঁচু অংশ থেকে (আপার সিটি) এভাবেই ধরা পড়ে উপত্যকাময় নীচু অংশ (লোয়ার সিটি)

এক সময় ফিনল্যান্ড, রাশিয়ার মস্কো কিংবা জার্মানির ফ্রাংকফুর্টের মত সুপরিচিত জায়গাগুলোও গ্র্যান্ড ডাচি ছিলো। কিন্তু, বর্তমানে সারা বিশ্বে একমাত্র অবশিষ্ট গ্র্যান্ড ডাচি লাক্সেমবার্গ। মানে দাঁড়ালো, গোটা দুনিয়ায় এখন মাত্র একজন গ্র্যান্ড ডিউক আছেন। অতএব, অবধারিত্ভাবে লাক্সেমবার্গ শহরের বিশেষ আকর্ষণ গ্র্যান্ড ডিউকের প্যালেস। যদিও গ্র্যান্ড ডিউক (হেনরি) শহরে অবস্থিত প্যালেসটিতে শুধুমাত্র অফিস করে থাকেন, থাকবার জায়গাটা শহরের বাইরে। স্বাভাবিকভাবেই, শহরের প্যালেসটিতে যাওয়ার সময় কিছুটা উত্তেজন অনুভব করি। না জানি কতশত বীর যোদ্ধা সে প্রাসাদের সিংহদ্বার পাহারায় নিয়োজিত।

গ্র্যান্ড ডিউকের প্যালেসের সামনে গিয়ে দেখা গেলো, যে বিপুল পরিমাণ সৈন্য-সামন্ত তার সিংহদ্বার রক্ষায় নিয়োজিত, সংখ্যায় তারা মাত্র একজন। আমি সেই এক্জনের ডানে গিয়ে, বামে গিয়ে দেখলাম কোনো ধরণের সাড়া-শব্দ নেই। ঘুরে ফিরে নিশ্চিত হলাম, সেটি কোনো ভাস্কর্য নয়, জলজ্যন্ত মানুষ। তার নীরবতা ভাঙ্গানোর ইচ্ছে হলো না, হাতে একে-৪৭ মার্কা কিছু একটা আছে বৈকি। তবে, এক্জন হলে কি হবে, ঐকিক নিয়মের কল্যাণে শতকরার হিসেবে সে-এক্জনই বিশাল অংশ। লাক্সেমবার্গের কোনো এয়ার ফোর্স বা নেভি নেই, পুলিশ আর্মি মিলিয়ে যে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তাদের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে ৯০০ জন। সে ৯০০ জনের মধ্যে একজন কিন্তু সংখ্যার বিচারে উল্লেখযোগ্যই বটে।

ছবি- ডিউকের প্যালেসের মহামান্য গার্ড

ছবি- ডিউকের প্যালেস

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রদত্ত জিডিপির হিসেবে লাক্সেমবার্গ তালিকার শীর্ষে, নাম্বার ওয়ান। ২০১১ সালের হিসেবে দেশটির জিডিপি (পার ক্যাপিটা) প্রায় ৮৯ হাজার ডলার। তালিকায় ১৫১ নাম্বারে থাকা বাংলাদেশের জিডিপি ১৭৭৭ ডলার। আমাদের চেয়ে সোজা পঞ্চাশগুণ বেশি। অবাক ব্যাপার হচ্ছে এই দশ বছর আগেও লাক্সেমবার্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো না। ২০০৩ সালে সর্ব্প্রথম যাত্রা শুরু করে ইউনিভার্সিটি অভ লাক্সেমবার্গ। দুষ্টু লোকেরা বলে, ২০১২ সালে, ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করার দশ বছরের মধ্যেই লাক্সেমবার্গের বেকার সমস্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় শতাংশে।

বর্তমানে লাক্সেমবার্গ সরকার গুরুত্ব দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তির উপর। আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে স্কাইপ কিংবা আমাজনের মত কোম্পানিগুলোর ইউরোপিয়ান হেড কোয়ার্টার লাক্সেমবার্গে। তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষকের সংখ্যা দুই থেকে তিন হাজার। কিছুটা “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, মানুষের চেয়ে গবেষক বেশি” টাইপ অবস্থা। মূলত বেশিরভাগ গবেষকই আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার কারণে অন্য দেশ থেকে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। লাক্সেমবার্গের উল্লেখযোগ্য কয়েকটা সিটির নাম বলতে গেলে প্রচলিত অর্থে সিটি না হয়েও তালিকায় প্রথম দিকেই চলে আসবে ‘সায়েন্স সিটি’র নাম। এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞানি, শহর-নগর-বন্দর নিয়েও পৃথিবীর বহু দেশ এখনো সায়েন্স সিটি গড়ে তুলতে পারেনি। ছোট্ট লাক্সেমবার্গ কিন্তু আসল কাজটি ঠিকই করতে শুরু করে দিয়েছে। তারা জানে ভবিষ্যতের পৃথিবী কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তারা জানে কাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিয়ে আসতে হবে তাদের আঙ্গিনায়।



ছবি- লাক্সেমবার্গ শহরের নানান প্রান্তে

মাধ্যমিক স্কুলে ইউরোপের খনিজ, বনজ, দেশজ, ভেষজ ইত্যাদি কি কি জানি সব সম্পদের হিসেব মুখস্ত করতে গিয়ে বহুবার এ-শহরের নাম পড়েছি। তবে, সেটা পড়েছি লুক্সেমবার্গ নামে। কিন্তু, এখানে এসে শুনি শব্দটা "লুক্সেম" নয়, "লাক্সেম"। অস্বাভাবিক শোনালেও এই লাক্সেমবার্গে যে জিনিসটা সবচেয়ে কম পাওয়া যায়, সেটা হলো লাক্সেমবার্গিজ, অর্থাৎ লাক্সেমবার্গের অধিবাসী। Amazon-এ কর্মরত এক অস্ট্রিয়ান মেয়ের সাথে কথা বলে জানা গেল, গত এক মাস ধরে সে এখানে আছে। এক মাসে মাত্র দুইজন লাক্সেমবার্গিজকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তার। কারণ, দিনের বেলায় এ-শহরে শতকরা ৮৫ জনই থাকে বিদেশী নাগরিক, বাকী ১৫ জন লাক্সেমবার্গিজ। এই ১৫ জনের এক বৃহৎ অংশ আবার মন্ত্রী-মিনিস্টার, তারা থাকেন সরকারি অফিসে। অতএব, লাক্সেমবার্গ এসে লাক্সেমবার্গিজের দেখা পাওয়াটা সৌভাগ্যই বলা যেতে পারে।


ছবি- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লাক্সেমবার্গিজদের স্মরণে এই স্ট্যাচুগুলো নির্মাণ করা হয়। উপরের স্ট্যাচুটির নাম গোল্ডেন লেডি, যেটি শহরের আইকন হিসেবে উপস্থাপিত হয়ে থাকে

দিনের হিসেবতো গেলো, এবার রাতের শহরটার কথা বলা যাক। যে-কোন শহরের রাতের রূপ অন্যরকম, সে আলাদা এক সৌন্দর্য। তুলনামূলকভাবে লাক্সেমবার্গ ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ শহর। তাই মাঝ রাত্তিরে পথ চলাটাও খুব বেশি একটা সমস্যার নয়। নীচের ছবিটি মধ্যরাতের লাক্সেমবার্গ শহরের মূল রাস্তাগুলোর একটি। প্রায় আধ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে রাস্তায় হেঁটেও কাউকে পাওয়া গেলো না; একটা পশুপাখির দেখাও পেলাম না। কোথাও কেউ নেই। মিনিট পাঁচেক-দশেক পরে মাঝে মাঝে হয়তো দুইটা-একটা দ্রুত গতির প্রাইভেট কার ছুটে যাচ্ছে, সে-পর্যন্তই।

ছবি- রাতের লাক্সেমবার্গ

লাক্সেমবার্গ ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। শত্করা ৮৭ ভাগ মানুষই রোমান ক্যাথলিক। তবে, ১৯৮০ সাল থেকে সরকারিভাবে নাগরিকদের কাছ থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়। এদের রাষ্ট্রীয় ভাষা তিনটি। ফ্রেঞ্চ, জার্মান আর লাক্সেমবার্গিশ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে এখানেও বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। তবে, এমনও নির্বাচনী এলাকা আছে, বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় যেখানে ভোট গ্রহণ চলতে থাকে, কিন্তু, সব মিলিয়ে ভোটারের সংখ্যা হয় দুইশো জন।

গ্রিন হার্ট অভ ইউরোপ নামে পরিচিত লাক্সেমবার্গের রাজধানী লাক্সেমবার্গ সিটি নামের ছোট্ট এই শহরটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেখে ফেলা যায়। রসিকজনেরা বলেন লাক্সেমবার্গ শহরের চেয়ে এর মানচিত্রই বড়। বিভিন্ন দেশ বা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে থাকে। আর, লাক্সেমবার্গের বেলায় গোটা শহরটাকেই ঘোষণা করেছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।

ছবি- সবুজের মাঝে ইউরোপের সবুজ শহর লাক্সেমবার্গ

ধনীলোকদের এই শহরে আছে অর্থ-বিত্ত-বৈভব, আছে টাকা আর টাকা। কিন্তু, সে টাকা রাখার জন্যও যে আরো একটা জিনিস থাকতে হয়। হ্যাঁ, আছে সেটাও। লাক্সেমবার্গ শহরের আছে দেড়শো এর বেশি ব্যাংক। ভদ্র, বন্ধুসুলভ, বিনীত মানুষজনের ছোট্র এই শহরটি বেঁচে থাকুক তার বিত্ত-বৈভব নিয়ে। বাড়ানোর দরকার না হোক তাদের ছোট্ট আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আকার। শান্তিতে থাকুক এই শহর, শান্তিতে থাকুক সমস্ত পৃথিবীর ছোট-বড় সব শহর।

আমার অন্যান্য ভ্রমণ কাহিনীগুলো পাবেন এখানে।

মইনুল রাজু


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

ভালো লাগলো। হাত-পা খুলে ভ্রমণকাহিনি লিখতে থাকুন।

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখার ইচ্ছে আছে। এই সিরিজটিতেও আরো বেশ কয়েক পর্ব লিখবো। হাসি

-
মইনুল রাজু

শুভায়ন এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কল্পনা আক্তার এর ছবি

খুবই ভালো লেগেছে আপনার ভ্রমন কাহিনী। লিখতে থাকুন আর আমরা পড়তে থাকি!

“না, খুঁজে পাচ্ছি না, সরি মিস্টার ঢাকা”

পড়ে হাসতেই আছি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। হাসি

ফালতু প্রোগ্রামার  এর ছবি

স্যার, অদ্ভুত লিখছেন... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নীল আকাশ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে, আপনি এপাড়াতেও লিখছেন আজকাল? খাইছে

আমেরিকার সর্বত্র তো বটেই, এই ইংল্যান্ডে এসেও আমি ডিপার্টমেন্ট স্টাফদের এরকমই হাবলা অবস্থা দেখছি। হাবলা হওয়া বোধহয় এই চাকরি পাওয়ার একটা ক্রাইটেরিয়া!

লেখা যথারীতি ফাটাফাটি হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পাড়ায় পাড়ায় রটিয়ে দেবো... খাইছে

এই চাকুরিটা ওদেরকে দিয়ে মনে হয় প্রতিষ্ঠানগুলো ডাইভার্সিটি আনে। অথচ, প্রথম দিকে না-জেনে এদেরকে বারাক ওবামার চেয়েও বেশি সমীহ করতে হয়েছে। দেঁতো হাসি

-
মইনুল রাজু

তারেক অণু এর ছবি

লোক সংখ্যা পাঁচ মিলিয়নের খানিকটা বেশি। সেটা আসলে ৫ লক্ষ মানে আধা মিলিয়ন হবে।

আপনার ছবিগুলোতে অনেক পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল এবং সেই সাথে মনে পড়ল যে এই পুঁচকে চমৎকার দেশটি নিয়ে আমার কোন লেখা নেই।
চলুক
পরের লেখার অপেক্ষা করছি, আর কিছু মনে না করলে এই পর্বে নিরেট তথ্য খুব বেশী হয়ে গেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ওহ্! পাঁচ লক্ষই হবে। উইকি অনুযায়ী ২০১২ সাল নাগাদ ৫২৪৮৫৩ জন। জানি না, অতথি লেখক হিসেবে এখন হয়তো আমি আর সম্পাদনা করতে পারবো না। কিন্তু, খেয়াল থাকবে। হাসি

আর কিছু মনে করারতো প্রশ্নই আসে না। বরং, বলবো যে, ব্লগে লেখার সুবিধাই এটা। ফিডব্যাক নিয়ে পরবর্তী লেখার ক্ষেত্রে চিন্তা করা যায়। তথ্যের ব্যাপারটা আরো একজন বলেছে। সত্যি বলতে কি আমি খুব কম সময়ের জন্য শহরটাতে ছিলাম, তাই অনেকটা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা তথ্যনির্ভর হয়েছে লেখাটা। তবুও শেয়ার করলাম সবার সাথে।

পরবর্তী পর্বে আমস্টার্ডাম অথবা আমেরিকার সিয়াটল নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি

কাজি মামুন এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে সবসময় আনন্দ পাই, আমি নিশ্চিত, সচলের পাঠকরাও আপনার লেখা পড়ে ভীষণ আনন্দিত হবেন। আপনার লেখায় থাকে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম হাসির উপাদান, এ লেখাতেও ছড়িয়ে আছে তা, যেমন: মিস সেরিস বা এয়ারলাইন্সের আনাড়ি মেয়ের সাথে আপনার কথোপকথন বা ডিউক অব প্যালেসের মহামান্য গার্ডের জায়গাটুকুতে! এছাড়া, লেখার স্টাইলটিতে রয়েছে হিউমারের ছোঁয়া! আপনার লেখার সাথে আমি সচলের চরম উদাস ভাইয়ের সাথে কিছুটা মিল খুঁজে পাই।
তবে অণু ভাইয়ের সাথে কিছুটা একমত। নিরেট তথ্য সামান্য বেশিই হয়ে গেছে মনে হয়, বিশেষ করে, ডিউকের বর্ণনাটা সামান্য ধীর করে দিয়েছিল লেখাটিকে।

যাহোক, অপেক্ষায় থাকলাম সিরিজের পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য দেখে, অনেক ধন্যবাদ। ডিউকের বর্ণনায় যেতে হয়েছিলো লাক্সেমবার্গ যে বর্তমান বিশ্বের একমাত্র ডাচি সেটা ব্যাখ্যা করার জন্য। হাসি যাই হোক, পরের পর্বে আপনাদের মন্তব্যগুলোর কথা খেয়াল রাখবো। দেঁতো হাসি

-
মইনুল রাজু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।