আঙুল-কাটা ইচ্ছে-কথা (২)

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি
লিখেছেন মাসুদা ভাট্টি (তারিখ: রবি, ১৬/০৩/২০০৮ - ৬:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকে লন্ডনে আসছেন বাংলাদেশ কর্পোরেশনের সিইও – ফখরুদ্দিন আহমদ। ওআইসি নামের একটি আন্তর্জাতিক সঙ-গঠন থেকে তিনি আসছেন লন্ডনে। উদ্দেশ্য, ব্রিটেনের করুণা-সংগ্রহ। ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগেই লন্ডনে এসে বসে আছেন। ফখরুদ্দিন সাহেবকে ব্রিটিশ রাজপুরুষদের সান্নিধ্য পাইয়ে দেওয়ার জন্য। কতোটা সফলকাম হয়েছেন জানি না, তবে এটুকু জেনেছি যে, ফখরুদ্দিন সাহেবকে গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে একান্তে মিনিট দশেক আলাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি জোর তদ্বির করছেন। কে জানে, আনোয়ার চৌধুরী এই মিশন-আলাপচারিতা থেকে কোন্ দিকে কতোটা লাভবান হবেন!

বাংলাদেশ নিয়ে এখন ব্রিটেনে আলোচনা এখন অনেকটাই থিঁতানো। কারণ ব্রিটিশ রাষ্ট্রপক্ষ বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে গোপন গিঁট্‌ঠুতে আবদ্ধ। তারা ব্রিটিশ স্বার্থকে বাংলাদেশে নিরাপদ রাখতে এই গিঁটকে দীর্ঘস্থায়ী করতেও কোনও ভাবেই দ্বিধান্বিত নয়। এসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার কিংবা গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি কোনও ব্যাপারই নয় – এটা দীর্ঘ কালের বেনিয়া প্রাকটিসের অঙ্গ।

সে যাক, ফখরুদ্দিন সাহেবের কী লাভ হবে ব্রিটিশ সরকারের খানিকটা করুণা লাভে? একটি ধারণা এমন করা যেতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ব্রিটেনের সম্মিলিত ঔরসে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভূমিষ্ঠ হয়েছিল তার সিইও নিযুক্তি পেয়েছিলেন সাবেক বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন। বছর ঢলেছে, বাঙালি চরিত্র যতোটা ব্রিটিশরা বোঝে ততোটা অন্য কেউ বোঝে কিনা সন্দেহ, সেই বোধ থেকেই ব্রিটিশদের পক্ষ থেকেও কিছুটা চাপ পৌঁছে থাকবে। সেটা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যতোটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্রিটিশ স্বার্থকে আরও নির্ঝঞ্ঝাট করার। এক্ষেত্রে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই করে দেখাতে পারেননি তাদের নিয়োজিত সিইও সাহেব। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত তো খানিকটা গোয়ার্তুমি ইতোমধ্যেই দেখিয়ে ফেলেছে। অতি শীঘ্রই মার্কিন মুলুক থেকে উড়ে আসছেন হোমড়া-চোমড়া বস-রা। সিইও সাহেবের নির্ঘাত মাথা খারাপ অবস্থা। এই মাথা খারাপে ব্রিটেন হতে পারে মোক্ষম এক ডাক্তার। ফখরুদ্দিনের লন্ডন সফরের উদ্দেশ্য বোধ করি সেটাই।

না হয়, আরও কিছুকাল এইভাবে সমর্থন, সহযোগিতা এবং গোপন তদ্বির খয়রাত করে ফখরুদ্দিন সাহেব তার নামের মাহাত্ম বজায় রাখলেন কিন্তু কিছুদিন পরেই জনগণ যখন জোর গলায় বলতে শুরু করবে,
“দিবি বলে কাল কাটালি
জানি তোর জারিজুরি”
তখন? তখন বিষয়টাকে সামাল দেওয়া হবে কি দিয়ে। শোনা যাচ্ছে যে, অনেকগুলো পক্ষকে সে জন্য তৈয়ার রাখা হচ্ছে। যেমন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের একচ্ছত্র ঠিকেদার, সিইও হিসেবে ফখরুদ্দিন সাহেব যেসব রাজনৈতিক দলকে নতুন করে কোম্পানী খুলতে দিয়েছেন এবং তাদেরকে একটি ছাতা-সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন তারা, আর সেই সঙ্গে সেনা বাহিনীতো আছেই, আছে সুশীল সমাজের কতিপয়-রা; এর সঙ্গে যদি যোগ হয় জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মতো ব্যুহ। তাহলে হয়তো আরও কিছুকাল কাটানো যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

কিন্তু একটি প্রশ্ন জনমনে থেকেই যাবে, “ভোটের সরকার যদি কুড়ি টাকা দর চাইল খাওয়ায়, তাইলে আ-ভোটের সরকারের হাতে ক্যান আমরা বিয়াল্লিশ টাকা দরে চাইল খামু? এর চাইয়া তো ভোটের সরকারই বালো আছিলো। গরু বেইচ্যা তাঁত কিননের এই বেবুশ্যেগিরি তো আমাগো পোশাইবো না”। বছর দশেক আগে, পাকিস্তানের লাহোরে একটি সম্মেলনে গিয়েছিলাম, দক্ষিণ এশিয়ায় সেক্যুলার রাজনীতি নিয়ে সেই অনুষ্ঠানে এক আফগানিস্তানের সাংবাদিক বলেছিলেন, “উপমহাদেশে সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন জাতি হচ্ছে বাঙালি, তারা রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে ছাড়ে, প্রয়োজনে তারা অপেক্ষা করে, যেমন তারা অপেক্ষা করেছিল, বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত”। অনেকদিন সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। ইরতাজ রাহিম, নামের সেই ভদ্রলোক বেঁচে আছেন কিনা জানি না, যদি থাকতেন তাহলে তাকে জিজ্ঞেস করতাম, “বলুনতো এবার বাঙালি আর কতোদিন অপেক্ষা করবে?”

এদিকে গতকাল একজন বললেন, উত্তরপাড়ায় নাকি গোলমাল শুরু হয়েছে, ভাগের বখ্‌রা নিয়ে। কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না, এই ডিসক্রিমিনেশন নাকি সহ্য হচ্ছে না অনেকেরই। ম.উ আহমদ নাকি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না কোনো দিক, তাই তিনিও এখন বেশ রিলাকট্যান্ট। বিশেষ করে মেজরদের পদোন্নতি হচ্ছে না, তারা দিনের পর দিন মেজর থেকে যাচ্ছেন, যদিও জেলা শহরগুলো এখন তাদেরই নিয়ন্ত্রণে, তারাই রাজ করছে কিন্তু রাজদণ্ড যার হাতে তারা তো সব সময়ই “ডিভাইড এ্যান্ড রুল” করে থাকে, ফলে যারা রুলি-ত হচ্ছে, তারা কি বসে বসে আঙুল চুষবে, আঙুল-ও একদিন চুষতে চুষতে চিকন হয়ে যায়, তখন আঙুল যে কতো হিংস্র হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ তো সাম্প্রতিক কিংবা অতীত ইতিহাসে কম নেই, কি বলেন?


মন্তব্য

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

লেখার জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি

উপমহাদেশে সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন জাতি হচ্ছে বাঙালি, তারা রাজনৈতিক অধিকার আদায় করে ছাড়ে, প্রয়োজনে তারা অপেক্ষা করে, যেমন তারা অপেক্ষা করেছিল, বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত- আফগানিস্তান সাংবাদিকের এই মন্তব্যই হতে পারে শেষ বাক্যের প্রশ্নটির যথাযথ উত্তর।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এবার মলে সাহেব হবো.....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

সুমন,
হলো না, সাহেব হয়ে কী হবে?

তারচেয়ে বরং দেখুন, উত্তরপাড়ায় নবজন্ম লাভ হয় কি না?
দেশ-জাতি নিয়ে পিংপং খেলার এরকম সুবর্ণ সুযোগ ওখানকার বাসিন্দা না হলে পাওয়া যাবে না হে!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

উহু..তাতে দরদাম ওঠানামার ফিকিরে নিজেরই পিংপং হবার সুযোগ থেকে যায়...সাহেব হতে পাল্লে পিংপং তোমার ডিপ্লোম্যাসী আমার...দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

গীতা দাস এর ছবি

ভোটের সরকার যদি কুড়ি টাকা দর চাইল খাওয়ায়, তাইলে আ-ভোটের সরকারের হাতে বিয়াল্লিশ টাকা দরেই চাইল খাইতে হইব। না খাইলে ঠেসে খাওয়ানোর জন্য তো উদ্দিনরা রয়েছেনই।

'আঙুল-ও একদিন চুষতে চুষতে চিকন হয়ে যায়' -- এ চিকন আঙুলে দিয়ে কিন্তু শক্ত মুষ্ঠি করা যাবে না।
শুভস্য শীঘ্রম। জনগণকে না খাইয়ে ---- হাড্ডিসার বানিয়ে ---- দুর্বল করে তো শুরু করলে হবে না।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ঠিক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।