সৌদি-কুয়েতের এই বর্বরতা ঠেকানোর উপায় কি?

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি
লিখেছেন মাসুদা ভাট্টি (তারিখ: শুক্র, ০১/০৮/২০০৮ - ১:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জোর করে দেশে ফেরত পাঠানোর কারণটা কি হতে পারে? প্রসংগটি তুলতেই একজন কলিগ, জিনি সম্প্রতি অক্সফামের হয়ে সৌদি ঘুরে এসেছেন, বললেন, আসলে যতোই তেলের বড়াই করুক না কেন, তেল তো ফুরুবে কোনও না কোনও দিন। তার চেয়েও বড় কথা হলো, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির যে মন্দা তা থেকে সৌদি কিংবা কুয়েত তো বাইরে থাকতে পারে না। তেল কেনার সামর্থ যদি বড়লোক দেশগুলির না থাকে তাহলে তাদের তেলোত্তলন, বিক্রি এবং সেই পয়সার ফুটানি সবইতো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আগে থাকতেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। দেখবে, আগামি বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে প্রায় সব বিদেশি শ্রমিক বিশেষ করে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হবে। জিজ্ঞেস করলাম, পাকিস্তানী, ভারতীয়, ফিলিপিনো শ্রমিকদের বের করবে না কেন? বললেন, তাদেরও যে করবে না তা নয়, তবে তাদের সংখ্যা বাংলাদেশের মতো হবে না। কারণ, ভারতে ও ফিলিপাইনে বাইরে শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারটি দেশটির শ্রম, প্রবাসী ও পররাষ্ট্র এই তিন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। সৌদি আরব এবং কুয়েতের সঙ্গে দেশজ পর্যায়ে চুক্তি রয়েছে। আরও বড় কথা হচ্ছে, এই দু’টি দেশের বিশেষ করে ভারতের বড় বাজার সৌদি আরব, ভারতের সঙ্গে কোনও হ্যাংকি-প্যাংকিতে সৌদি এই মুহূর্তে যাবে না। কারণ ভারত-অক্ষ এখন সত্যি সত্যিই শক্তিশালী। তাহলে পাকিস্তানী? পাকিস্তানীদের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশীদের মতো এতোটা নির্দয় হতে পারবে না সৌদি বা কুয়েত কর্তৃপক্ষ, কারণ পাকিস্তানে এখনও তাদের বিনিয়োগ ভালো, এবং সেই সঙ্গে এই দু’টি দেশই মনে করে যে, মুসলিম বিশ্বকে পরমাণু শক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে পাকিস্তান, অতএব এখন তাদের দিকে নজর দেবে না।
অক্সফামের এই ভদ্রলোকের বিশ্লেষণ কতোটা যুক্তিযুক্ত বলতে পারছি না। তবে সম্প্রতি যে কথাটি বেশ জোর দিয়ে বললেন একজন ভারতীয় বিশ্লেষক তাহলো, সৌদি আরব খুব জোর দিয়ে চেয়েছে বলেই নিজামীকে ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়াও সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র। তাকে এবং তার ছেলেকে আটকে রাখাটা সৌদি আরব খুব ভালো চোখে দেখছে না। আরও বড় কথা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিয়েছে সরকার, আর খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া, যারা ক্ষমতার শেষ দিকেও পঞ্চাশটির মতো স্যুটকেশ ভর্তি করে কী(?) যেনো নিয়ে গিয়ে সৌদি ঘুরে এসেছিলেন। কেউ কিন্তু প্রশ্ন করেনি যে, পঞ্চাশটি স্যুটকেশের কতোটি ফিরে এসেছিল। যাহোক, এহেন মিত্রের মুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগে যদি কয়েক হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করতে হয়, জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাতে সৌদি আরব কিংবা কুয়েতের মতো দেশের খুব বেশি কিছু এসে যায় কি?

যাহোক, এগুলিতো একেকজনের ব্যাখ্যা। আপনারা কি ভাবছেন? কেন হঠাৎ সৌদি এবং কুয়েত এরকম খেপে গেলো?

কারণ যাই-ই হোক, বাঙালি শ্রমিকদের সৌদি ও কুয়েতে ভয়ঙ্কর নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করে এমনিতেই থাকতে হয়, তার ওপর যদি এভাবে বেধড়ক পিটিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে এই দুর্মূল্যের বাজারে সাধারণ মানুষতো বটেই সেই সঙ্গে দেশের জন্যও তা মংগলজনক হবে না। তার মানে এর একটা সমাধান হতেই হবে এবং সেটা যতো দ্রুত সম্ভব। সমাধানটি তবে কি, সেটাই এখন খুঁজে বের করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, সরকার দ্রুত সৌদি এবং কুয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে হঠাৎ এই বজ্রাঘাতের কারণটি সঠিক জেনে নিয়ে তার প্রণিধান করতে পারলে।
আমার নিজের মনে একটা প্রশ্ন প্রায়ই আসে, প্রশ্নটি আগেও বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করেছি, মক্কা সৌদি আরবে অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মক্কায় যায় হজ্ব করতে। তারা যে বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে তার পুরোটাই যায় সৌদি সরকারের থলিতে। তেলতো আছেই, এর সঙ্গে উপরি এই হজ্ব, সম্ভবতঃ আবুল বারাকাতই বলেছিলেন যে, একটি মাত্র হজ্বের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের দুই অর্থ বছরের বাজেট হয়ে যায়। সন্দেহ নেই এতে বাঙালি হাজিদের অর্থও রয়েছে। ইসলাম যদি সবার হয় তাহলে এই হজ্বের আয়ও পৃথিবীর সকল মুসলিমের। সন্দেহ নেই সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী ওয়াহাবিজম প্রমোট করার কাজে এই তেল এবং হজ্বের আয়ই ব্যয় করে থাকে। এখন কি তবে সময় এসেছে এই হজ্বের অর্থও দাবী করার? বাংলাদেশ নিজেকে মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত হতে চাইছে, এখন দাবী করা হোক ইসলামের আয়-এর ভাগও, কি বলেন?

পুনশ্চঃ লন্ডনে সৌদি দূতাবাসের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের কথা চলছে। অন্ততঃপক্ষে এটাতো জানানো যাবে যে, ওই নির্যাতিত শ্রমিকদের পাশে কেউ না কেউ তো আছে। লন্ডন প্রবাসী ব্লগারদের উপস্থিতি এতে থাকতে আশা করি। স্থান এবং সময় ঠিক হলে জানানো হবে সবাইকে।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি


পুনশ্চঃ লন্ডনে সৌদি দূতাবাসের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের কথা চলছে। অন্ততঃপক্ষে এটাতো জানানো যাবে যে, ওই নির্যাতিত শ্রমিকদের পাশে কেউ না কেউ তো আছে। লন্ডন প্রবাসী ব্লগারদের উপস্থিতি এতে থাকতে আশা করি।
এই লাইনগুলো ছাড়া পুরা লেখাটাই বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা।

আপনার লেখা মাঝে মাঝে মন দিয়েই পড়ি। কিন্তু এই লেখাটি পড়ে খুবই হতাশ হলাম। অটোসেভ না থাকায় বিশাল মন্তব্য যা লিখেছিলাম তা মুছে গেল। মন্তব্যটা আর লিখতে ইচ্ছে করছেনা। তবে একটু বলি, আপনার পোস্টটা ধান ভানতে শীবের গীতের মত হয়েছে।

আদিত্য এর ছবি

@ প্রকৃতিপ্রেমিক সহমত জানাই আপনার সাথে। আসলেই ভাট্টি'র পোষ্টের অনেকাংশই ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়া। তিনি সর্বদাই অসমর্থিত সূত্র দিয়ে তলের বিড়াল খোজেঁন...হা হা হা। এতো বিশেষজ্ঞের মতামতেরতো কোন দরকার নাই, দরকার নাই তারেক-খালেদা-নিজামী গঙ্গের কথা বলে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর! সোজাসাপ্টা ঘটনা হলো, বাজারে সবকিছুর মূল্য বেড়েছে আর সৌদিও এর বাইরে নয়। কিন্তু তা হলে কি হবে আমাদের তো মাস শেষে যে পয়সা দেয়া হতো তা দিয়ে এমনিতেই টানাটানিতে থাকতে হতো; আর এখন এই অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ গতির কারনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই বাঙ্গালীসহ অন্যান্য শ্রমিকরা দীর্ঘ দিনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে হঠাত করেই ফুসে উঠেছে (এতে হিডেন কোন কারন নেই)। আর যেহেতু বাংলাদেশীদের অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওখানে গেছেন এবং অনেকেই আবার ইল্লিগ্যাল তাই ওদেরই আগে ধরা সহজ। তাছাড়া সৌদি বা কুয়েতের মতো আধা সামন্তীয় আর আধা পুজিঁবাদী রাষ্ট্র যে কম্মটি সবার আগে করতে পারে তা হলো সবচেয়ে দুর্বলকে আগে পিটিয়ে বাকীগুলোকে শিক্ষাদান করা। তাতে আপাতত আই ওয়াশের জন্য কিছু দাবী মানা হলেও আন্দোলনকে গলা টিপে হত্যা করা যায়। পুজিঁর এই বিকৃত ব্যবস্থা আর যাইহোক কোন ন্যায্য দাবী বা শ্লোগান সহ্য করেনা। আর সৌদি ও কুয়েতের মতো বেজন্মা রাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় বন্ধু তো আমেরিকা। ওরা যাই করুক আপাতত নিকট ভবিষ্যতে ওদের এই দাসত্ব থেকে আমাদের মুক্তি নেই। তবে এই মূহুর্তে সবচেয়ে যে জিনিষটা বেশী উপকারে আসতে পারে তা হলো আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংগকে এর সাথে ইনভলব্‌ করা। এদের বোঝানো দরকার, দেখ এরা যা করছে তা কেবল অন্যায়ই নয়; কোন সভ্য মানুষ এই আচরণ অন্য কোন মানুষের সাথে করতে পারেনা। সৌদি ও কুয়েতিদের যদি সাদা চামড়ার প্রশ্নের সম্মুখীন করানো যায়; তাও কিছুটা সম্ভাবনা আছে এই নির্যাতন হ্রাস করার।

ঐ হজ্বের টাকা চেয়ে ভিক্ষা করে কোন লাভ নেই। এই ভিক্ষা চাইতে চাইতেই আজকে আমাদের এই দশা। আমি মনে করি মরে গেলেও আর ভিক্ষা নয়; যথেষ্ট হয়েছে।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

খুব খারাপ লাগল শুনে। গভরনমেন্ট এর কিছু করা উচিত এ ব্যপারে, আমরা গরীবদেশ বলেই এমন করতে পেরেছে। আম্মুর কাছে শুনেছি ধর্মে আছে তোমার প্রতিবেশি বা কোনও আত্মিয় যদি গরীব বা না খেয়ে বা কোনও কষ্টে থাকে তাহলে তোমার আগে তাদের সাহায্য করা ফরয হবে হজ করার চেয়ে। দেশের সবাই যদি প্রতি বছর এমন করত তাহলে দেশে কোনও গরীব থাকত না। মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মন খারাপ

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

ধন্যবাদ প্রকৃতেপ্রেমিক এবং আদিত্য, আপনারা আমার লেখায় থাকা সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করে দিয়েছেন বলে। আর সত্যি বলছি কাউকে আপসেট করতে সত্যি সত্যিই চাইনি।

লেখাটিতে আমি কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বলেছি মাত্র, এবং সেই সঙ্গে মতামত আশা করেছি আপনাদের। এতে বিভ্রান্তি কোথায় ছড়ালাম জানি না, তারপরও কাউকে বিভ্রান্ত করার অপরাধ ক্ষমাহীন।
আদিত্যর ব্যাখ্যার সঙ্গে আমার লেখার মূল সূত্রটির পার্থক্য কোথায় তাও ধরতে পারিনি। আমারই ব্যর্থতা সেটা।

আর হজ্বের আয়? সেটা ভিক্ষে চাওয়া হবে কেন? মক্কার ওপর দাবি শুধু সৌদি আরবের কেন থাকবে? কেন তা সকল মুসলিমের সমান হবে না? যদি তথাকথিত মুসলিম উম্মাহর কথা বলা হয় তাহলে শুধু গলা কাটা আর বোমা মারার বেলায়ই এই উম্মাহ্ আর 'ভাগের বেলায় আমরা না আমরা না' কেন?

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শামীম এর ছবি

ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়গুলিকে দেখার বা বিশ্লেষন করার চমৎকার ক্ষমতা রয়েছে আপনার।

খবরের সূত্র থাকুক বা না থাকুক .... সৌদির সাথে নিজামি/গোলাপি কানেকশনের ব্যাপারটা আমার কাছে অসম্ভব মনে হয় না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

প্রবাসী এর ছবি

মাসুদা ভাট্টি আপনার লেখায় বিভ্রান্তি নয় বরং চরম তেতো সত্য কথাটাই সামনে চলে এসেছে প্রথম অংশে।
নিজামী খালেদা নিয়ে সৌদি রাজপরিবার কানেকশন নিয়ে আপনার ধারনা বলবো অনেকটাই ভুল।
সৌদির বর্তমান শাষকরা ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে খুব একটা সুনজরে দেখেন না বিশেষত তাদের নিজেদের ঘরে বোমা ফাটার পর থেকে।
এবং ৯/১১ এর পর থেকেই জামাতীরা হালে পানি পাচ্ছে না সৌদি আরবে তার সাথে রাজপরিবারে ডিসকো আব্দুল্লাহ ক্ষমতায় বসার পর নিজামীকে ছাড়ানোর কথা বলবে না সৌদী।
আর ৩য় বিশ্বের মিসকিন দেশ হিসেবে খালেদা আর মাসুদা একই চোখে দেখেন আরব শেখরা ।
আর কুয়েত থেকে এখন বাংলাদেশীদের বের করে দেয়ার আরেকটা বড় কারন হলো মাত্র কিছুদিন আগে বাহরাইন বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছিল অথচ বাংলাদেশ সরকার তখন বাহরাইনিদের এই সিদ্ধান্ত ঠেকানোর মত তেমন কোনো শক্তিশালী বা কার্যকরি পদক্ষেপ নেয় নি তাতেই আরবদের ধারনা হয়েছে সব কয়টা বাংলাদেশীকে ধরে পিটিয়ে বের করে দিলেও এদের পক্ষে বলার কেউ নেই।
এছাড়াও আপনি জানেন কিনা জানি না কুয়েত এর আগেও বাংলাদেশের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিলো তখনও কিন্তু বাংলাদেশ কিছু বলেনি ।
আর আপনি যেমনটা বলেছেন
ভারতে ও ফিলিপাইনে বাইরে শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারটি দেশটির শ্রম, প্রবাসী ও পররাষ্ট্র এই তিন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। সৌদি আরব এবং কুয়েতের সঙ্গে দেশজ পর্যায়ে চুক্তি রয়েছে।
আর বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারটি তত্ত্বাবধান করে আদম ব্যাপারি রা যাদের উপর বাংলাদেশ সরকার এর তেমন একটা নিয়ন্ত্রন নেই বললেই চলে উলটা সরকারের উপর আদম ব্যাপারিদের নিয়ন্ত্রন আছে।
আর তালি যেমন এক হাতে বাজে না তেমন আমার সোনার দেশি ভাইয়েরাও ধোয়া তুলসি পাতা নন ।
ইদানিং নানা রকম অপরাধ এর সাথে তারা জড়িয়ে পড়ছেন
আর আরব দেশগুলোতে রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিটি নাগরিকের গতিবিধি মনিটর করা হয়।
ছোট খাট সামাজিক অপরাধ একটা সীমা পর্যন্ত অনেকটা ইচ্ছা করেই বাড়তে দেয়া হয় তারপর এই অপরাধ দমনের ক্রেডিবিলিটি যখন তাদের কাজে আসবে তখনই সেটা দমন করে নাগরিক দের দেখানো হয় যে দেখো রাজপরিবার না থাকলে এই বাংলাদেশী রা তোমাদের কি করত।
আর মধ্যপ্রাচ্যের এই শ্রমিক সমস্যার একটাই সমাধান আছে আমার মতে আর সেটা হলো বাংলাদেশের শ্রম বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া।
আদম ব্যাপারী বা এজেন্ট প্রথা বাতিল করে দেয়া

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

মক্কার ওপর দাবি শুধু সৌদি আরবের কেন থাকবে? কেন তা সকল মুসলিমের সমান হবে না? যদি তথাকথিত মুসলিম উম্মাহর কথা বলা হয় তাহলে শুধু গলা কাটা আর বোমা মারার বেলায়ই এই উম্মাহ্ আর 'ভাগের বেলায় আমরা না আমরা না' কেন?
-এটা সমর্থন করছি আন্তরিক ভাবেই।

আর শ্রমিকদের বেলায় বাংলাদেশ সরকার এবং রাষ্ট্রদূতদের বিমাতা সুলভ আচরণই দায়ী বলে মনে করি। প্রবাসীদের আয়টার দিকে সরকার লোভী দৃষ্টি ফেলে রাখবে অথচ তাদের সুবিধা অসুবিধাটা দেখবে না তা তো হতে পারে না।

প্রবাসীর মত -
"আদম ব্যাপারী বা এজেন্ট প্রথা বাতিল করে দেয়া"
-সমর্থন করছি।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

ইবা এর ছবি

[-----আগামি বছরখানেকের মধ্যেই সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে প্রায় সব বিদেশি শ্রমিক বিশেষ করে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বের করে দেওয়া হবে। ]

নিচে উইকিপিডিয়া থেকে সউদিতে বিদেশি শ্রমিকের একটা তালিকা (আনুমানিক) দিলাম।

Indian: 1.4 million, Bangladeshi: 1 million, Filipino: 950,000, Pakistani: 900,000, Egyptian: 900,000, Yemeni: 800,000, Indonesian: 500,000, Sri Lankan: 350,000, Sudanese: 250,000, Syrian: 100,000 and Turkish: 80,000. There are around 100,000 Westerners in Saudi Arabia

কতটা আর্বাচীন হলে বলা যায় যে একটা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় যারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে, তাদেরকে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে বের করে দিবে। তেল মাটির নিচে জমা থাকার চাইতে উপরে তুলে বিক্রি করাটা বেশী জরুরী, সেটার জন্য শ্রম কিন্তু এই সব বিদেশীরাই দিয়ে থাকে।

[------এহেন মিত্রের মুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগে যদি কয়েক হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করতে হয়, জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাতে সৌদি আরব কিংবা কুয়েতের মতো দেশের খুব বেশি কিছু এসে যায় কি? ]

সউদি থেকে পিটিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, এমন তথ্য আপনি কোথায় পেলেন? যারা অৈবধ, অথবা পাসপোর্ট নেই, তাদের কে সৌদি থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আর আজই এ কাজটা করা হচ্ছে এমন তো নয়। এটা নিয়মিত একটা প্রক্রিয়া।

আর কুয়েতের কথা যদি বলেন, তাহলে তো বলতে হয় আপনি ওখানকার শ্রমিক আন্দোলনের কোন খবরই রাখেন না, অথবা ইচ্ছে করে চেপে যাচ্ছেন। আচ্ছা, বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনার দেশে কোন বিদেশী শ্রমিক পুলিশের গায়ে, গাড়ীতে পাথর ছুড়ে মারলে আপনি কি মাফ করে দেয়ার কথা বলতেন?

যারা ভাতের মাঝেও রাজনীতির গন্ধ খুজে বের করেন, তাদের মত তথা কথিত কলমজীবিদের জন্য সত্যিকারের লিখিয়েদের উপর আমাদের বিশ্বাসটাও মাঝে মাঝে দুর্বল হয়ে যায়। আমাদের মত সাধারনের শক্তি একটাই, আমরা এখনও রাজনীতের মাঠে বিক্রি হয়ে যাইনি।

মাসুদা ভাট্টি এর ছবি

ওয়াও, কতোরকম ব্যাখ্যা হচ্ছে, সাধু! সাধু!

কিন্তু ভাই এখানে বিক্রি-বাটার প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে? আপনি আপনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আমি আমার। আমরা কেউই জানি না, কারটা সত্যি আর কারটা মিথে্য। উভয় পক্ষের যুক্তির প্রাবল্য নিয়ে কথা তোলা যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে বেচা-কেনার প্রশ্ন তোলা কেন? যাহোক, আপনার জন্য শুভ কামনা, এরকম 'অবিক্রীত' থাকাটা এই যুগে সত্যিই কষ্টসাধ্য, কী বলেন? আপনার শক্তি অক্ষয় থাকুক, সে কামনা করছি।

পিটিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে কি হচ্ছে না সে প্রশ্ন তোলার অধিকার সবার আছে। কিন্তু যারা মার খাচ্ছে, পত্রিকার পাতায় তাদের রক্তাক্ত, বেদনার্ত ছবিতো প্রমাণ দিচ্ছে ভিন্ন সত্যের। তাদের পাসপোর্ট নেই, তারা অবৈধ এরকম কথাতো কেউ বলছে না। আর অধিকার আাদয়ের পথ কবে কোথায় ফুল বিছানো ছিল? পুলিশের গাড়িতে ইঁট-পাটকেল ছোঁড়ার কথা বলছেন? বন্দুকের বাট, বুটের লাত্থি এসবের সামনে সামান্য ইঁট-পাটকেল!! আর তার জন্য এরকম আধমরা করে দেশে চালান, জন্তু-জানোয়ারে আর মানুষে তবে কি কোনও পার্থক্য নেই!! আহারে পেট, আহারে ভাত; পেটে খেলে তবেই পিঠে সয়, পেট লাত্থি পড়েছে বলেই হয়তো পুলিশের গাড়িতে ঢিল ছোঁড়া, বেতন-ভাতার দাবীতে ধর্মঘট, আসলে এরা ভুলেই গিয়েছিল যে, মধ্যপ্রাচ্যে এসব চলে না, ওসব শুধুই মুসলমানের দেশ, মানুষের নয়, মানুষই না আরেক মানুষের ভাতের কষ্ট বোঝে।

যে কোনও দেশে, এমনকি নিজের দেশেও যদি কোনও বিদেশি শ্রমিক ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতো, তাদের ওপর পুলিশি অত্যাচার হতো, তাদেরকে গরু-ছাগলের মতো খোয়াড়ে পাঠানোর মতো করে দেশে ফেরত পাঠানো হতো, তাহলেও এরকমই প্রতিবাদ করতাম। নিজে একজন আন্তর্জাতিক শ্রমিক বলেই সৌদি এবং কুয়েত প্রবাসী শ্রমিকদের শরীরের ওপর আঘাত নিজেও নিজের শরীর দিয়েই বুঝতে পারছি।

ভালো থাকুন।

হ্যাকমাস্টার এর ছবি

আমরা সবাই সৌদি-কুয়েতী বজ্জাতদের দোষ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেউ একটি ব্যাপারে কথা বলছেন না - এই পরিস্থিতির জন্য আমরাও তো সমানভাবে দায়ী।

ইদানীংকালে আরব দেশগুলোয় অ্যান্টি-বাংলাদেশ সেন্টিমেন্ট বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে - এবং এর পেছনে জাতীবিদ্বেষ নয়, আছেন আমাদেরই সোনার ছেলেরা!

এক আরব তরূণীকে ধর্ষন করার পর হত্যা - এই সুকর্মতো আমাদের দেশী ভাইয়েরাই করেছিলেন মাস কয়েক আগে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবার আরেক মিশরীয় নাইটগার্ডকে পিটিয়ে হত্যা করলো আরেকদল বাঙ্গালী ভাইয়েরা। ওই গার্ডের অপরাধ? আমাদের দেশী ভাইয়েরা চুরি করার সময় বাধা দিয়েছিলেন!

যা কিছু ঘটছে, তার জন্য আমরাও দায় অস্বীকার করতে পারিনা। আমি আরব্দের সাফাই গাচ্ছিনা (ব্যক্তিগতভাবে মনুষ্যত্বের বিচারে নিকৃষ্টতম জাতী হিসেবে আরবদের সর্বোচ্চ স্থানে রেখেছি)। But let's call a spade a spade. আমাদের সোনার ছেলেরাও কোন ধোয়া তুলসী পাতা নন।

ভাতৃঘাতী আরবদের কাছ থেকে এরকম ব্যবহারই তো আশা করার কথা। যারা নিজের প্রতিবেশী ভাতৃসম দেশকে শায়েস্তা করার জন্য বহিরাগতদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেয় (ইরাক যুদ্ধে সৌদি, জর্ডান, কুয়েত, কাতার এবং অন্যান্য দেশ আমেরিকান-ব্রিটিশ সেনাদের এয়ারফোর্স এবং মিলিটারী বেইস ব্যবহার করতে দিয়েছিলো), তাদের কাছ থেকে কি ভালো কিছু পাওয়ার চেষ্টা করাই বোকামি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।