শিক্ষক-শিক্ষার্থী মুক্তি প্রসংগঃ সংযম আর ধৈর্য্যেরও সীমা আছে! সংযমকে কি তবে সরকার দুর্বলতা ভাবছে ??

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: রবি, ১৩/০১/২০০৮ - ৫:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখনও মুক্তি পাননি । যদিও কিছুদিন আগেই সরকার আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন আর সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেবার অঙ্গীকার করেছিল ।
সবাই মেনে নিয়ে তখনকার মতন সকল আন্দোলন কর্মসূচি উঠিয়ে নিয়েছিল , সেটা ডিসেম্বরের শুরুতে কিন্তু শীতকালীন ছুটি ঈদ পেরিয়ে আরেকটি নতুন বছর এলা কিন্তু মুতক্তর কোন খবর নেই । কিন্তু কেন?? তবে কে অঙ্গীকার করল আর কেইবা সেই অঙ্গীকার ভুলে গেল ??
প্রশ্ন আছে উত্তর নেই !! কেননা উত্তর দেবার কেউ নেই ।
সরকার শর্ত দিয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিচার হবে, সাজা হবে এবং তারপর রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা বলে তাদের মুক্ত করে দেবেন । কি চমৎকার পরিকল্পনা, তাতে কি দেশের আইন কানুন ঠিক থাকে ?? বিচার বিভাগের সম্মান বাড়ে ?? কি অদ্ভুত যুক্তি , বুদ্ধিযে হাটুর তাতে কানো প্রশ্ন থাকে না ।
[সেই আইউবশাহী থেকে ইয়াহিয়া-টিক্কাখান-জিয়া-এরশাদ হয়ে মইন, এরা প্রতিবার এসেই আমাদের গণতন্ত্র শেখায়, আর শেখায় দেশের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ । সেটা সেই আমলে শেরে বাংলা, হোসনে শহীদ সোহরওয়ার্দী ভাসানী ছিলেন আর হাল আমলের রাজনীতিবিদরাও । আবার এই সামরিক জান্তারাই এইসকল রাজনীতিবিদদের নিয়ে দল গড়বেন , সামরিক উর্দি ছেড়ে বেসামরিক রাজনীতিবিদ হবেন । মাঝে নন্দঘোষ শুধু রাজনীতিবিদরা । এই খেলা নতুন নয় , এই ঘটনাও নতুন নয় । তার পরও একশ্রেনীর চাটুকার রাজনীতিবিদ, ব্যভসায়ীরা তাদের সাথে জোট বাধে ।তার সাথে আমরা ব্যাকল আমজনতাও বলি ঠিক ঠিক !! দেশের যা অর্জন যা প্রাপ্তি ভুলে গেলে চলবে না তার সবটুকুই দিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। তারা এদেশেরই মানুষ । দেশে যদি দুর্নীতি হয় , তাদেরও কেউ কেউ দুর্নীতি করবে সেটাই স্বাভাবিক, তারা তো ফেরেস্তো নয় !কিন্তু বরাবরই এই উর্দিধারীরা গাছের এবং তলার দুটো ফলই খেয়ে যাবে আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব ?? ]
যেকোন আন্দোলন হলেই সুশীল, সুধীজন খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন , তারা এই ভাংচুর প্রতিবাদ হরতাল পচ্ছন্দ করেন না । তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন শান্ত-মৌন-মানববন্ধন প্রতিবাদ করে যাচ্ছে তখন তারা কোথায় ?? তাদের কোন ভ্রুক্ষেপও দেখছি না ?? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ, ক্লাস বর্জন, মানব বন্ধন চলছে । আগামী কাল থেকে শুরু হবে আমরণ অনশন । সংযম আর ধৈর্য্যেরও সীমা আছে! সংযমকে কি তবে সরকার দুর্বলতা ভাবছে ??
সরকারের কি উচিত নয় সময় তাকতেই সমস্যার সমাধান করা ??
ভুলে গেলে চলবে না সংযম এর সীমা পেরিয়ে গেলে কোন শক্তি আর রুখতে পারবেনা , বন্দুকের নল কখনও গদি চিরস্থায়ী করতে পারে নি , পারে না ।
শক্তি যদি ক্ষমতার উৎস হয় তবে বন্দুর নল এর শক্তি সামগ্রিক শক্তির কাছে বাতুলতা মাত্র ।
তাই , শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংযমকে সম্মান করে সমস্যার সমাধান হোক । আমাদের প্রত্যাশ তাই ।


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

.

সরকার শর্ত দিয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিচার হবে, সাজা হবে এবং তারপর রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা বলে তাদের মুক্ত করে দেবেন ।

জুতা মেরে গরু দানের এই পদ্ধতিটি বর্তমান সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার খুব সম্ভবত আইয়ুব শাসনামল থেকে ধার করেছে। শুনেছি, সে সময় নাকি শিক্ষকদের এ রকম ধরে নিয়ে আবার খত দিয়ে ক্ষমা করা হতো। ...

এই উদ্ধত্বের অবসান হোক!

(ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

মানুষ অতীত থেকেই শেখে দেঁতো হাসি
সেটা অশিক্ষা হোক আর কুশিক্ষাই হোক।
দরকার একটা পরিবর্তন-- চক্রাকারে ঘোড়া নয়, গোলকধাঁধা থেকে বেরুনোর একটা পথ কাউকে দেখাতে হবে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সর্বশেষ আপডেট --
সরকার ছাত্র - শিক্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে: ঢাবি উপাচার্য


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

রাহা এর ছবি

কিন্তু বিচারের রায় আগে দিতে হবে এবং রায় যাই হোক না কেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়া হবে !! বিষয়টা কেমন গোলমেলে , তবে তারা কি তাদের শক্তি-ক্ষমতার নমুনা দেখাতে চাইছে ??

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

শামীম এর ছবি

হয়তো টু দা পয়েন্ট হবে না.. তবুও একটু ভিন্নমত প্রকাশ করতে চাই:

নিয়ম ভাঙ্গাটাই আমাদের ঐতিহ্য। কারণ নিয়মগুলো তৈরী করা হয়েছিলই খুত রেখে। কার্ফ্যু ভেঙ্গে মিছিল .... অনেক উদাহরণ আছে।

এটার সুফল হিসেবে যেমন আমরা স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে এসে স্বাধীন হয়েছি তেমনি কুফল হিসেবে ... নিয়ম ভাঙ্গাটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়। এজন্যই সবক্ষেত্রেই অনিয়মের জয় জয়কার ... রাস্তায় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, মানুষের শান্তি নষ্ট করে যথেচ্চ মাইকিং (শব্দ দূষণ), অধিকার খর্ব করে অবরোধ, যেখানে সেখানে ধুমপান করে অন্যদেরকেও বিষে আক্রান্ত করা ... এসব খুবই স্বাভাবিক - যেন অপরাধই নয়।

জরুরী অবস্থায় যেগুলো নিষেধ সেগুলো করলে সেটা তো আইন ভঙ্গ করা হবে... সেটা তো অপরাধই । "জরুরী আইন মানি না" বললে এক কথা ... আর জরুরী আইন মানলে তো সেটার বিধিনিষেধ মানতে হবে। তা' নাহলে "বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার"-এর মত হয়ে যাবে ব্যাপারটা।

যা হোক, আইন সকলের জন্য সমান। এটা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণই পড়িয়ে থাকেন। .... এই সকলের মধ্যে কি শিক্ষক/ছাত্রগণ পড়েন না? তাঁরা কি আইনের উর্ধ্বে?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাহা এর ছবি

শামীম, আপনার কথা ঠিক, কিয়দাংশ । আইন সবার জন্য সমান । যদি জরুরী অবস্থা ভাংগা নিয়ে মামলা হয় তবে তাতে শিক্ষার্থীরা জড়িত, শিক্ষকরা শুধু মৌন মিছিল করেছেন এবং তাতে জরুরী অবস্থা ভাঙ্গে না ।
কিন্তু সবকিছুর আগে প্রশ্ন হলো কোন প্রেক্ষিতে জরুরী অবস্থা ভঙ্গের কারণ হলো??
১.হ্যা একজন সেনাসদস্য যে আচারণ করেছে সেনাবাহিনী হয়তো তার বিচার করেছে , সেটা মুখ্য বিষয় নয়, কেননা সেনাবাহিনী তো আইনের উর্দ্ধে!!! ঠিক না!!! একই দেশে আমার আপনার জন্য আইন আছে আর তারা আইনের উর্দ্ধে তাদের নিজস্ব আইন আছে । কিন্তু ঘটনাটা সেনানিবাসে নয়, পাবলিক প্লেসে ।
২. সেই সেনাসদস্যের সাথে পুরো সেনাক্যাম্প যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পেটাল কোন আইনে ? প্রচলিত আইনে না সেনা আইনে ??
৩. সেই পুরো ক্যাম্পের সাথে পুরো সেনাবাহিনী যোগ দিয়ে তাদের সমর্থন করল এবং শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, শিক্ষকদের নির্যাতন করল কোন আইনে?? সামরিক টর্চার সেল এ একজন বন্দি কোন আইনে নিয়ে যাওয়া হলো কিসের ভিত্তিতে জবানবন্দি নেয়া হলো ??
কোন আইনে ??
৪.দেশের পুরো প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বেপরোয়াভাকে আক্রমন করল এবং তাদের উত্তেজিত করে দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করল, দোষ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের, কেন তারা প্রতিবাদ করল?? ঠিক না !!
কেননা আপনারা তো কোন প্রতিবাদ করতে জানেন না , কেননা সেই দণ্ডটা নেই । এখন শিক্ষার্থীদের সেই দন্ডটা বহন করতে হয়, শিক্ষকদের করতে হয়. তাই তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ।
৫. দেশে বিচারের "নির্ধারিত" রায় ঘোষনা করা ছাড়া বিচার বিভাগের কি কাজ হচ্ছে তাও প্রশ্নহীন নয় !!
আইন সবার জন্য সমান!! এখন বলুন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কোন আইনে বিচার করবেন ?? আগের পয়েন্টগুলো নিয়ে একে এক আসুন আমরা তবে যে কোন বিচারের মুখোমুখি হবো, কোন সাজানো ট্রায়েলের নয় ।

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

শামীম এর ছবি

আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল আপনার বক্তব্যের ২, ৩ এবং ৪ নং পয়েন্টগুলোই। সকলেই ফোকাস করছে শিক্ষকদের মুক্তির ব্যাপারে ..... সহ্যের সীমা, হুমকী ইত্যাদি ..... এগুলো মানুষের ক্রোধটাকে সুক্ষ্ণভাবে ভুল দিকে পরিচালিত করবে, আর সেই ভুলের সুযোগ নেবে অন্যেরা(?)।

তাই, আমার মনে হয় - ক্রোধ/হুমকীর ফোকাস হওয়া দরকার ছিল একপেশে বিচার মানি না ... শিক্ষকদের বিচার হউক, পাশাপাশি এটার গভীরে গিয়ে কারণ অনুসন্ধান করে একই সময়ে ঘটিত অন্য অপরাধগুলোর (২, ৩ এবং ৪) বিচার হউক। সবগুলো বাদ দিয়ে শুধু একটার বিচার করা যাবে না। আর বিচার হলে সবই এক আইনে হতে হবে ... সেই আইন আবার সকলের (?অধিকাংশের?) গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

অপরাধ হলে সবগুলোই অপরাধ, তা না হলে সবই ঠিক ... Cause and Effect। যে যা খুশি করতে পারবে ....

আর, আমি এখনও মনে করি যে, ঐ ভাঙচুরের ঘটনায় শিক্ষক/শিক্ষার্থী ছিল না ... ছিল কিছু গভীর জলের মাছ ... যারা গন্ডগোল উষ্কে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল। এবং ওদের জন্যই আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে অনেক বছর হারিয়ে গেছে।

চিন্তা করুন, ঐসময় ঐ ধরণের অভ্যুত্থান সফল হলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হত? (মোটিভ কী?)
-------------
শেষ যে বিষয়গুলি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই ....

ক) শিক্ষকদের বিরূদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কী কী? আর ঐ অভিযোগ সত্য হলে আইনের (কোন আইন, জরুরী নাকি প্রচলিত) ধারা অনুযায়ী কী শাস্তি হতে পারে?

খ) শিক্ষার্থীদের জন্য .... একই বিষয়গুলি.....?

গ) অন্য শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ঐ কয়েকজনকেই কেন ধরা হয়েছে?

ঘ) সেনাসদস্যদের তাণ্ডবের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গুলো কোন কোন ধারা ভঙ্গের দায়ে (মুখের কথায় হওয়ার চেয়ে ... আইনের ধারা বললে সেটা শক্ত অভিযোগ হবে)। এবং সেগুলোর শাস্তি কী কী? (খেয়াল রাখতে হবে যে সেই ধারা সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না।)

ঙ) সেনাসদস্যদের বিরূদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে চাইলে আইনগত কোন বাঁধা আছে কি না? না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ/মামলা করছে না?
---
বিচারে আবেগের চেয়ে যুক্তি বেশি দরকার।
---
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রাহা এর ছবি

ধন্যবাদ, শামীম ।

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।