আমার ২১ শে ফেব্রুয়ারী

রাহা এর ছবি
লিখেছেন রাহা (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০২/২০০৮ - ২:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২১১·
আচ্ছা পাড়ার ফুলচোরেরা কি এখনও আছে ?? এখন কি দল বেধে কিশোরেরা ফুল চুরি করে , পাড়ার ফুলবাগানওয়ালা বাড়ি থেকে, ভোররাতে শহীদমিনারের বেদীতে ফুল দেবে বলে ?? জানি না । জানা নেই । সেই মফস্বলের সেই স্মৃতিময় ২১ শে ফেব্রুয়ারী কি এখন তেমনি ??
আমার জীবনের দেড়যুগের কাছাকাছি সময় কেটেছে মফস্বলে । তারপর জীবনের তাগিদেই রাজধানীর বুকে ,রাজধানীতে আরো একটি মাথা বাড়াতে চলে আসা । দেখতে দেখতে এখানেও একযুগেরও বেশী সময় কেটে গেল । এখন ইচ্ছে হলেই শহীদ মিনারে যাওয়া যায় । একবারে আসল শহীদ মিনার । মফস্বলের ছোট শহীদ মিনার কিংবা প্রতি ২০ ফেব্রুয়ারী কয়েকটা ইট আর পাঠকাঠি দিয়ে শহীদমিনারের আদলে গড়ে তোলা শহীদ মিনার নয় ।কিন্তু শৈশবের সেই ২১ ফেব্রুয়ারীর মতো আর লাগে না । মানুষ বোধহয় এমনি হয় ।
২১ শে ফেব্রুয়ারী । আমার চোখে একটা অদ্‌ভুত ইমেজ এনেদেয় । খুব ।ভোররাতে, ঘরের অন্ধাকারে শুয়ে আছি আর ভেনটিলেটর গড়িয়ে ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলো আর বাইরে মাইক নিয়ে প্রভাতফেরী আর সমস্বরে গেয়ে চলছে "আমার ভাইয়েল রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী ....." আমি ও যাবো । কিন্তু মায়ের বারণ আর আমার বয়স এই দুই আমায় আটকে রাখে । আমার আর ভোররাতে যাওয়া হয়না । আমি যখন যাই তখন ২১ শে ফেব্রুয়ারী আর ২১ শে ফেব্রুয়ারী থাকে না । দিনের আলোয় ফুলশোভিত শহীদ মিনার আমার কাছে আর ২১ শে ফেব্রুয়ারী লাগে না ।
স্কুলে ভর্তি হলাম নার্সারীতে । ক্লাস ওয়ানে ওঠার পর প্রভাত ফেরীতে যাবার অনুমতি হলো কিন্তু সেই ৭টাতে আমার কাছে আর ২১ শে ফেব্রুয়ারীর মতো লাগে না । আমার স্মৃতিতে ২১ শে ফেব্রয়ারী মানেই একবারে রাতের আধারসহ ভোররাত, সাদা পজামা-পানাবী আর মেয়েরা সাদা শাড়িতে রিকশায় মাইক বেধে সমস্বরে গাইতে গাইতে চলা " আমার ভাইয়ের রক্তে........."

২.
আমার ধারণা মফস্বলে খুব কম শিশুই আছে যারা শৈশবে ইটের পর ইট দিয়ে শহীদ মিনার বানাতে পারে না । আমি ব্যতিক্রম নই । ২০ ফে"বুয়ারী মানেই বাসায় ইটের পর ইট দিয়ে আর পাঠ কাঠি কিংবা এমন বিকল কিছু দিয়ে উপরের ইট দুটো আটকিয়ে শহীদ মিনার বানানো । আর সন্ধ্যের আগে আগেই প্রভাতফেরী শেষ করে ফুল দেয়া । আচ্ছা এখনও কি শিশুরা এভাবে শহীদ মিনার গড়ে ??


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- না রাহা, গড়ে না। এখনকার শিশুরা এসব বর্ণময় জীবন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তারা সকালে শহীদ মিনারে যায় আর কুৎসিত উচ্চারণে বন্ধুকে ডাকে অশ্লীল বাংলায়। একুশে ফেব্রুয়ারী, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া তাদের কাছে একটি ফ্যাশন। দুপুরে গার্লফ্রেন্ড সহযোগে চিলিসে রাজকীয় খাবার খেয়ে রাতে মোজাইক করা সিঁড়ির বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে নিউইয়র্কবাসী কাজিনকে জানায়, "জানিশ, আজকে মনুমেন্টে ফ্লাওয়ার দিতে গিয়েছিলাম।... না না ড়াতে যাই নি। দুফুরে গিয়েছিলাম। মিরান্ডা চিলিস-এ লাঞ্চ কড়ালো। আড়ে আড়ে না না, ওরকম কিছু না। উই আর জাস্ট ফ্রেণ্ডস।"
আমাদের শিশুদের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারী এভাবে মিরান্ডার গল্পের কাছে হারিয়ে যায়। আঁধা আলো আঁধা অন্ধকারে প্রভাতফেরী করতে তারা জানে না। তারা জানে না 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারীর মাহাত্য।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।