স্মৃতি তুমি বেদনা

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: বুধ, ১৫/০৩/২০০৬ - ৯:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাট হাতে ওয়া

খালি বিন ওয়ালি ব্যথাতুর চোখে তাকান দেয়ালের ছবিটার দিকে। আব্বাজানের ছবি। যুবা বয়সে তোলা। মাথায় দাগী টুপি, গায়ে ডোরা পিরান।

আব্বাজান নাকি জোয়ান বয়সে প্যান্ট পরতে চাইতেন না, লুঙ্গি পরতেন সবসময়, বলতেন প্যান্ট নাসারাদের পোশাক, আমি ওটা পরতে পারি না। আম্মাজানই পীড়াপীড়ি করে ছবি তোলানোর জন্য দর্জি ডাকিয়ে একটা শাদা প্যান্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন আব্বাজানের জন্যে। তারপর আবার কী কান্ড, ক্যামেরাইনসান ছবি তুলতে এসে মুচকি তাবাসসুম দিয়েছিলো বলে আব্বাজান গুসসা করেছিলেন, ব্যাট তুলে মারতে গিয়েছিলেন ব্যাটাকে, আম্মাজান ওখানে না থাকলে ক্যামেরাইনসানের কপালে দুঃখ ছিলো, আব্বাজান কি ব্যাট নিয়ে কম গুন্ডামি করেছেন? শুধু ব্যাট কেন, কিরীচ, চাপাতি, ওগুলোও অহরহ চালাতেন তিনি।

খালি বিন ওয়ালির সিনা গর্বে প্রসারিত হয়। তিনি আবার সসম্ভ্রমে তাকান ছবির দিকে। আহা, শেষমেশ আব্বাজান ব্যাট হাতেই ছবি তুলেছেন। কী নূর ওনার দুটি চোখে, চারদিক রওশন হয়ে যায়!

খালি বিন ওয়ালি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। কাছে এসে দেখেনে, ছবির কোণায় লেখা, মার্চ ২০০৬। কতই বা বয়স ছিলো তাঁর তখন, তেইশ চব্বিশ, অথচ কী হিম্মৎ, কী তাকৎ, কী এক জেহাদি জজবা তাঁর রোমে রোমে! খালি বিন ওয়ালির খায়েশ হয়, আব্বাজানের মতো ব্যাট হাতে সব কটা মোশরেককে পেঁদিয়ে খাল তুলতে। কিন্তু পুলিশি হুজ্জতের কথা ভেবে একটু সংকুচিত হন তিনি।

তার আপসোস হয় আজকালকার জমানার কথা ভেবে। কী যুগ ছিলো তখন আব্বাজানদের, আর আজ কী অবস্থা চারিদিকে! আজ যদি এই দুর্দিনে আব্বাজানের মতো পালোয়ান চিন্তাবিৎ আরো দু'দশজন থাকতেন, যাঁরা কথায় ও কর্মে যুগপৎ কামেল, যাঁরা বিদ্যায় বাহাদুর আর রদ্দায় রৌশন ছিলেন, মূর্খ জাহেলদের যাঁরা বাতেনী যুক্তি আর জাহেরী জঙ্গে কাবু করে ফেলতে পারতেন!

খালি বিন ওয়ালি বাষ্পরূদ্ধ কনেঠ মুনতাকাল আব্বাজানের প্রতি দুয়া তেলাওয়াৎ করেন। ছবিতে দন্ডায়মান ব্যক্তি যেন পরম স্নেহ চোখে মেখে তাকিয়ে থাকেন তার দিকে।


মন্তব্য

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

টেরিফিক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।