স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম কথিকা

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/১২/২০০৮ - ১২:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখি নাই তাই যখন বই পত্রে পড়ি বা কারো মুখে মুক্তিযুদ্ধাদের সাহসিকতার গল্প গুলো শুনি তখন অবাক হয়ে যাই। অবাক হয়ে ভাবি কি করে পারল ওরা সুশিক্ষিত পাকিস্তানি আর্মির বিরুদ্ধে মনোবল ধরে রাখতে। আস্তে আস্তে খোঁজ করি, আস্তে আস্তে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা আমার কাছে আর স্পষ্ট হয়। নেটে খোঁজাখুঁজি করি কিন্তু ভাল করে কোথাও কিছু পাই না। তাই ভাবলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথিকা গুলো, যা কিনা মুক্তিযুদ্ধাদের অসামান্য মনোবল এর রসদ ছিল তা সচলে সবার সামনে আরেকবার তুলে ধরি। শুরু করেছিলাম চরমপত্রের একটা সংখ্যা দিয়ে, আজ দিচ্ছি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রথম কথিকা। এটি পাঠ করেছিলেন বেলাল মোহাম্মদ।
...........................................................................................................

(পঠনে- বেলাল মোহাম্মদ)

দ্বাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গেছে। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী স্বাধীন জীবনের জয়যাত্রার পথে এগিয়ে চলছে। এই এগিয়ে চলার পথ দুর্গম, দুর্বার। এই পথে কোন শাসক শোষকের দমন নীতি, কোন অশুভ শক্তির বিধিনিষেধ সম্পূর্ন বিধ্বস্ত। জীবন জয়ের অভিযাত্রীদের কে বাধা দেবে? কে এই অভিযাত্রীদের পথ রোধ করে দাঁড়াবে? সেই সাধ্য কারুর নেই, সেই দুঃসাহস দেখাবার সকল পাকিস্তানি দাপট আজ ছিন্ন ভিন্ন, পর্যুদুস্ত।

ভাবতে অবাক লাগে, তেইশ-তেইশটি বছর কিভাবে সেই তথাকথিত পাকিস্তান সরকার বাংলার মা-বোন, বাংলার শিশু-বৃ্দ্ধ, বাংলার কৃ্ষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতি ,কামার-কুমার-মেহনতি মানুষের ওপর অত্যাচারের স্টীমরোলার চালিয়েছে। আমার সন্তানের দুধ ওরা কেড়ে খেয়েছে, আমাদের ক্ষেতের ফসল ওরা লুটে নিয়েছে, ওরা আমাদের মা বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে, তথাকথিত সংহতির ধুয়া তুলে ওরা আমাদের নিরীহ জনপদের ওপর শাসনের নামে চালিয়ে গেছে শোষণ। বাংলার মানুষকে ওরা লাঞ্চনা গঞ্জনা আর অবহেলা দিয়ে দিয়ে নিজেদের জাতিগত দুশ্চরিত্রেরই পরিচয় দিয়েছে।

আজকের স্বাধীন বাংলার পথে ঘাটে দেখতে পাওয়া যায় বীর জনতার গড়া স্বতস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যাবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তানি গুপ্তচর, বর্বর সৈ্ন্যদের প্রত্যেক প্রবেশপথ আজ রুদ্ধ। ওদেরকে যেখানেই দেখা যাচ্ছে , স্বাধীন বাংলার মুক্তিবাহিনীর রাইফেল গর্জে উঠছে, এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যাচ্ছে বুলেট। আজ ধরাশায়ী হচ্ছে এক একটি হানাদার দুশমন। এদের ক্ষমা নেই- ক্ষমা নেই।

স্বাধীন বাংলার প্রতিটি গৃহ এক একটি দুর্ভেদ্য দূর্গ। আমাদের মা-বোনেরাও আর নিষ্ক্রিয় হয়ে নেই। প্রত্যকেই সশস্ত্র। দুশমনকে উচিত সাজা দেবার জন্য নারী-পুরুষ-শিশু-বৃ্দ্ধ সবাই সদাপ্রস্তুত। বাঙ্গালী আজ জেগেছে। দ্বাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসেছে তারা -

এবার বন্দী বুঝেছে ,
মধুর প্রাণের চাইতে ত্রান
মুক্তকন্ঠে স্বাধীন বিশ্বে
উঠিতেছে এক তান ;
জয় নিপীড়িত জনগন জয়
জয় নব অভিযান ,
জয় নব উত্থান ।

জয় স্বাধীন বাংলা

প্রচারঃ ২৮-০৩-৭১


মন্তব্য

অভ্রনীল এর ছবি

চলুক
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

নিবিড় এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হা হা হা হা...
আমি আজকে ভাবছিলাম চরম পত্রের ১৬ ডিসেম্বর পত্রটা এখানে তুলে দিবো... বইটা সামনে নিয়ে বসেছিলাম। আপনার পোস্টটা তখনই চোখে পড়লো...

ধন্যবাদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিবিড় এর ছবি

নজরুল ভাই এইটা কিন্তু চরমপত্র না । অন্য একটা কথিকা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত প্রথম কথিকা । তাই সময় থাকলে দেন না তুলে চরমপত্রের ১৬ ডিসেম্বরের পত্র টা ।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভাই নিবিড়,
আপনার কাছে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অনেক তথ্য আছে বলে ধারণা করছি। আশা করছি, সচলায়তনে ক্রমশ সেসব প্রকাশ করবেন।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নিবিড় এর ছবি

না না , আপনি যেভাবে ভাবছেন সেই রকম অনেক তথ্য আমার কাছে নেই । তবে আমি এই ব্যাপারে আগ্রহী তাই কিছু জানলে সচলে সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করব । ভাল থাকবেন সন্ন্যাসীদা ।

একাকী [অতিথি] এর ছবি

সন্যাসী কে কেন 'দা'-ই হতে হবে? দিদি-ও তো হতে পারে, নাকি?

নিবিড় এর ছবি

একাকী আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন সন্ন্যাসী দা হবে দিদি না হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।