রূপকথার দুপুর

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: রবি, ১৪/১০/২০১২ - ১২:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুপুর বড় একলা। চারদিকে যখন সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা আর রাতের জয়জয়কার দুপুর তখন সৎ ভাইয়ের মত একলা দাডিয়ে। স্নিগ্দ্ধ সকাল, শেষ বিকেলের আলো, সন্ধ্যার আবছায়া আর রাতের রহস্য এইসব চমৎকার উপমা যখন বরাদ্দ বাকীদের জন্য দুপুরের ঝুলি তখন শূণ্য খাঁ খাঁ। লেখকেরা তখন ভয় দেখায় রৌদ্রদগ্দ্ধ তপ্ত, ক্লান্ত দুপুরের। তবুও কেন জানি এই দুপুর কে বেশ লাগে আমার। টুপ করে শেষ হয়ে যাওয়া শীতের দুপুর নয় বরং গ্রীষ্মের রৌদ্রদগ্দ্ধ, তপ্ত, অলস ঘড়ির কাটার ক্লান্ত দুপুর।

জীবনের বেশ একটা বড় অংশে আমাদের রুটিনে দুপুরের একটা নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ ছিল ঘুমের জন্য। ছোটবেলায় খাওয়া দাওয়া শেষে আম্মাজান মার্শাল ল জারি করতেন- যা, ঘুমাতে যা। না ঘুমালে সন্ধ্যায় পড়তে পারবি না। তাই মার্শাল ল মাথায় নিয়ে আমরা ছোট দুই ভাইবোন চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতাম আর চীফ মার্শাল ল এডমিন্সট্রেটর হিসেবে পর্যবেক্ষণে মোতায়েন থাকতেন আম্মাজান। পত্রিকা পড়ার ফাকে ফাকে নজর দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেন সত্যিকারের ঘুমের কতদূর। ঘুম নিয়ে এই লুকোচুরির মাঝে চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করতে করতে কখনো ঘুমিয়ে যেতাম আমরা আবার কখনো পর্যবেক্ষণে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেত আম্মাজান।

কখনো কখনো ঘুমের অভিনয় করে ক্লান্ত হয়ে আম্মাজানের কাছে বলতাম- ঘুম আসে না। আম্মাজান পত্রিকা উল্টাতে উল্টাতে বলতেন- চুপ করে শুয়ে থাক, এমনিতেই ঘুম আসবে। তখন মিনমিন স্বরে আবার অনুরোধ- পেপার পড়তে দিলে হয়ত ঘুম আসতে পারে। মন ভাল থাকলে তখন বরাদ্দ হয় ইত্তেফাক বা বাংলা বাজারের খেলার পাতা আর মেজাজ খারাপ থাকলে ধমক। খেলার পাতার্যা তখন ঢাকা লীগের ৪৫ ওভারের ম্যাচ, রাণী হামিদ, নিয়াজ মোর্শেদ আর আসলাম, মোনেম মুন্নারা দাপিয়ে বেড়ায়। কোন কোন দিন সেখানে উঁকি দেয় আগাসী, সাম্প্রাস, মাইকেল চ্যাং। এর মাঝে কোন কোন দিন চোখ পিটপিট করে ছোট বোনও দাবি জানায়- ভাইয়া কে পেপার দিলে আমাকেও দিতে হবে। যদিও তখন পড়বার বয়স হয় নি তবুও পত্রিকায় তার বরাদ্দের অংশ নিয়ে বাকীদের মত গম্ভীর মুখে পাতা উল্টায় ছোটবোন।তারপর একসময় লুকোচুরি আর পত্রিকার পাতার ভীড়ে আমাদের চোখে নেমে আসে রাজ্যের যত ঘুম।

দুপুর বেলা আমাদের ঘুমের রুটিন ভংগ হত রোববার আর শুক্রবার। কারণ রোববারের কার্টুন আর শুক্রবারের তিনটা বিশের বাংলা সিনেমা। কার্টুন আমাদের দারুণ প্রিয় তবে আমাদের বেড়ে উঠা মফস্বল শহর গুলোতে তখনো ডিশের চ্যানেল গুলো জাঁকিয়ে বসে নি। তাই ডোরেমন-পোকেমন আমাদের অজানা আর তার বদলে রোববারের উডি উড প্যাকার, বৃহস্পতিবারের টম এন্ড জেরি এবং পরে হিম্যান, শুক্রবার সকালের মোগলী- গোগ্রাসে গিলি সব। কোনদিন ত্রিপিটক, কোনদিন গীতা আর কোনদিন বাইবেল পাঠ শেষে ঠিক তিনটা বিশে শুরু হয় উডি উড প্যাকার। কিন্তু মার্শাল ল অনুযায়ী আমাদের তখন ঘুমে থাকার কথা। তাই প্রতি রোববার স্কুল শেষে বাসায় এসেই আম্মাজানের সাথে দেন দরবার শুরু হয়ে যেত- প্লিজ আজকে কার্টুন দেখতে দাও। মাত্র বিশ মিনিট। এরপর ঘুমায়ে যাব। আমার সাথে সাগরেদ হিসেবে ছোটবোনও এসে ঘ্যানঘ্যান করে- আম্মু, মাত্র বিশ মিনিট। এক সময় বিরক্ত হয়ে আম্মাজান তার মোক্ষম অস্ত্র বের করেন- এসব করেই তো পড়া লেখার বারটা বাজল। গত ষান্মাসিকে কত পেয়েছিস? এরপর বেড়ালের মত আমরা মিউমিউ করি। একটু পরে যখন বুঝি অবস্থা সুবিধার না তখন আমরা একেকজন ক্ষুদে রাজনীতিবিদ হয়ে যাই। কথার ফুল ঝরাই। বার্ষিক পরীক্ষায় অবশ্যই ভাল করব। মাগরিবের আযানের আগে আগেই মাঠ থেকে বাসায় চলে আসব, সন্ধ্যায় মন দিয়ে পড়তে বসব ইত্যাদি, ইত্যাদি। ক্ষুদে রাজনীতিবিদদের এইসব রঙ্গীন আশ্বাসে মাতাজান প্রায়ই বিভ্রান্ত হন। আর আমরা মনের সুখে টিভির সামনে তিনটা বিশ থেকে তিনটা চল্লিশ বসে থাকি। মন্ত্রমুগ্দ্ধের মত আমরা তখন উডি উড পেকারের গা জ্বালানো হাসির সাথে হাসি, তার কাজকর্মে মুগ্দ্ধ হই।এভাবেই ঘুরে ঘুরে চলে যায় একেকটা রবিবার।

আমি যখন ঘড়ি দেখতে শিখি নি তখনো ঘড়িতে খালি একটা সময় ঠিক করে বলতে পারতাম- তিনটা বিশ। তিনটা বিশ বিটিভির বাংলা সিনেমার স্টার্টিং টাইম। এক সময় আমার ধারণা ছিল এভাবে তিনটা বিশ বুঝি খালি আমিই বুঝতাম কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম তিনটা বিশের বাংলা সিনেমা দেখে বড় হওয়া প্রজন্মের অনেকের জন্যই ঘটনাটা এক। শুক্রবার ছিল আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। সেদিন আব্বাজান সারাদিন বাসায় থাকে, ঘুম আর পড়াশুনার বালাই নাই। তাই বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সংগী তিনটা বিশের বাংলা সিনেমা। সেখানে কোন কোন দিন রাজ্জাক-কবরী, কোন দিন জসীম, ওয়াসিম, জাফর ইকবাল কিংবা মৌসুমী, অঞ্জু ঘোষ। প্রতিবারই নায়ক নায়িকার প্রেম হয়, গান হয়, ভিলেন নায়িকা কিংবা নায়কের মা কে ধরে নিয়ে যায় গারো পাহাড়। প্রতিবারই দেয়াল ভেঙ্গে, গার্মেন্টেসের খালি কার্টন বা ড্রাম উড়িয়ে হাজির হয় নায়ক আর শেষ দৃশ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া পুলিশ। তবুও আমরা মুগ্দ্ধ হই প্রতিবার। হয়ত মুগ্দ্ধ হওয়াটা খুব সহজ ছিল সেই সময়।

বাচ্চারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী এ বক্তব্যের সাথে আমি সব সময় একমত। তবে আমাদের এই অনুসন্ধিৎসু মনের প্রকাশ ঘটত দুপুর বেলা আম্মাজান ঘুমিয়ে যাওয়ার পর। কারণ যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সেই সময়টাই নিরাপদ। দুধে চিনি মিশিয়ে কীভাবে আইসক্রীম করা যায়, চুলার আগুনে লবণ ফেললে কেন কটকট শব্দ হয়, সিড়ির গোড়ায় লাল পিঁপড়াদের কলোনিতে আগুন দিলে ঠিক কী ঘটে এ জাতীয় কিছু নিরীহ ও কিছু নিষ্ঠুর কৌতুহল নিয়ে গড়ে উঠেছিল আমাদের অনুসন্ধিৎসু মন। তো একবার আম্মাজান দুপুর বেলা ঘুমিয়েৎ পড়লে শুরু হল আমার আইসক্রীম মিশন। রান্নাঘর থেকে পরিষ্কার করে ধোয়া ঔষুধের এক বোতলে চুরি করা দুধ আর তিন চার চামচ চিনি ভালভাবে মিশিয়েৎ ঝাকানোর পর বোতলটা রেখে দেওয়া হল ডিপফ্রিজে। এরপর চুপচাপ ভাল ছেলের মত এসে বিছানায় ঘুম। এর মাঝে ঘুম শেষে উঠে আম্মাজান কোন কারণে ডিপফ্রিজ খুলে আবিষ্কার করেন ঔষুধের বোতল আর তার ভিতর জমাট বাধা সাদা পদার্থ। একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর আম্মাজান বুঝতে পারেন এটা আসলে আইসক্রীম বানানোর এক অপচেষ্টা এবং প্রথম সন্দেহভাজন হিসেবে কেসে নাম আসে আমার। কারণ কয়েকদিন আগেই আমি আম্মাজান কে আইসক্রিম এর রেসিপি জিজ্ঞেস করেছিলাম। এরপর ঘুম থেকে উঠার পর আম্মাজানের জেরার মুখে কোন প্রকার রিমান্ডে নেওয়া ছাড়াই আমি স্বীকার করে নেই এই অপকর্মটা আমার। এরপর কিঞ্চিৎ উত্তম মধ্যমের পর আমাকে প্রতিজ্ঞা করানো হয় ভবিষ্যতে যেন এরকম কাজ আর না করি। তবে আম্মাজান এত বছর পরেও জানতে পারেন নাই যে এরপরেও আর দুইবার দুধ চিনি দিয়ে আমি আইসক্রীম বানানোর চেষ্টা নিয়েছি এবং চেটেপুটে পরে সমস্ত প্রমাণ বিলোপ করে দিয়েছি।

আমার দুপুর বেলার স্মৃতির আরেকটা উজ্জ্বল অংশ হল আমাদের কালো রঙের ফাইভ ব্যান্ডের ন্যাশনাল রেডিওটা। কোন এক স্টেশন থেকে বদলি হয়ে আসার সময় আব্বাজান কে ফেয়ারওয়েলে গিফট হিসেবে দেওয়া হয়েছিল এই রেডিওটা। নানাজান বেড়াতে আসলে বিবিসি বাংলা আর ভয়েজ অব আমেরিকা শোনার সময়টা ছাড়া বাকি সময় এটা ছিল আমার খেলাধূলার অংশ। বিশেষ করে তখন দুপুর দুইটার সময় ঢাকা রেডিওতে শুরু হত অনুরোধের আসর, হেনোলাক্স সুরের ধারা, মেরিল ছন্দে ছন্দে নামে একই জাতীয় কিন্তু ভিন্ন নামের অনেকগুলো অনুষ্ঠান। কেন জানি এই অনুষ্ঠান গুলো ছিল আমার প্রিয়। বেশি আকর্ষণীয় ছিল মাযহারুল ইসলামের (অথবা আনোয়ার) ভরাট গলার ঘোষণা- সুজন কি পারবে তার সাথী কে বাঁচাতে? তারা কী পারবে পরিবার আর সমাজের শত বাধা ছিন্ন করতে? হ্যাঁ ভাই, জানতে হলে দেখুন সামাজিক এ্যকশন ধর্মী রোমান্টিক সিনেমা সুজন সাথী। আর কত শত জায়গা থেকে আসা শতশত চিঠি, কত শত নাম। দিনাজপুরের বিলকিস, সিলেটের এখলাস আর বাগেরহাটের চামেলি। শুনশান দুপুরে বেতার তরঙ্গে ভেসে আসা ভরাট কন্ঠ জানিয়ে দেয়া এই সাপ্তাহে যশোরের মণিহার, সিলেটের রজনীগন্ধা, ঢাকার রাজমনিতে মহাসমারোহে চলছে কোন ছবি। চোখের সামনে ভেসে উঠে যেন সব। কী অদ্ভুত জাদু কালো বাক্সটার। শুধু শব্দ দিয়ে জীবন্ত করে তুলে সব।

দুপুর বেলা আমাদের আরেক সংগী ছিল গল্পের বই। আম্মাজান ঘুমিয়ে পড়লেই বের হয়ে আসত বালিশের নিচে লুকানো বোতল ভূত, ফেলুদা কিংবা শাহারিয়ার কবীরের অ্যাডভেঞ্চারেরা। একদিকে সতর্ক দৃষ্টি যাতে আম্মাজান জেগে গেলেও টের না পায় আর অন্যদিকে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলা হানাবাড়ির রহস্য। সেই সময়টা যেন স্থির হয়ে যেত, অলস হয়ে যেত ঘড়ির কাঁটাটা। মাথার উপর ঘড় ঘড় করে ঘুরতে থাকা সরকারী কোয়ার্টারের ন্যাশনাল ফ্যান, বাইরে শুনশান দুপুর আর হাতে ধরা অ্যাডভেঞ্চার।ধরা পড়ার ভয় কিংবা অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণ অথবা ঝিম ধরানো দুপুর, সব মিলে যেন আমাদের শৈশবের এক জাদুর জগত।

সিলেট থেকে বদলি হয়ে আসার সময় কেনা হয়েছিল এক জোড়া বেতের রকিং চেয়ার। যার একটার স্থান হয়েছিল দোতলার বারান্দায়।দুপুর বেলার রোদ সামনের কাঁঠাল গাছটার জন্য হালকা হয়ে যেত বারান্দায়। তাই দুপুর বেলা বাসার সবাই যখন ঘুমে তখন লুকিয়ে বই পড়ার জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা বারান্দার রকিং চেয়ারটা। একটু সময় দোল খেলেই সেখানে কেমন যেন ঝিমঝিম লাগে। সেই ঝিমঝিম চোখে সুকুমার আর তার বিড়ালের সাথে শুরু হত ভ্রমণ। কখনো পাগলা দাশু, কখনো প্রফেসর হেশোরাম হুশিয়ার আর কখনো পম্পেই এর ধ্বংসস্তূপ। পড়তে পড়তে সামনে চোখ গেলেই চোখ পড়তে মাঠের কোণায় দাঁড়ানো তাল গাছ দুইটার মাথায় বাতাসে ঝুলতে থাকা বাবুই এর বাসাগুলো। এর মাঝে কোন কোন দিন আসে সুনীলের ছুটির ঘন্টা আবার কোন দিন লুইসা মে অলকটের অনুবাদ ডানা মেলার দিন। পাগলা দাশু, মেগ,জো, বেথ, এমি অথবা বগা ভাই সবাই যেন আবার আগের মত সময়ের রাশ টেনে ধরে।

আজকে দুপুরে কোন কাজ ছাড়াই টেবিলে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। বৃষ্টি শেষে আকাশে তখন রোদ। হাতে অফুরন্ত সময়। অলস সে সময়ে হঠাৎ যেন উঁকি দিয়ে যায় আমাদের শৈশবের দুপুর। ক্লান্ত, তপ্ত, ঝিম ধরানো দুপুর। সাথে থাকে ন্যাশনালের কালো রঙের রেডিও, বারান্দার রকিং চেয়ার, উডি উড পেকার আর আম্মার চোখ রাঙ্গানি। রূপকথার মত জীবন্ত হয়ে উঠে যেন আবার সব।স্মৃতির ঝোলায় সব রূপকথা, সব গল্প ভরে বড় হয়ে যাই আমরা। আর শৈশব, কৈশোর পেছনে ফেলে বড় হয়ে যাওয়া আমাদের সব পুরাতন স্মৃতির নিশান আকড়ে আগের মত একলা দাঁড়িয়ে থাকে শুনশান দুপুর, স্মৃতির দুপুর।


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

এইটা ঠাট্টা না নিবিড়।

এইরকম লিখতে পারার জন্য আমি সবকিছু ছাড়তে রাজি আছি

নিবিড় এর ছবি

যদিও ঠাট্টা না তাও ঘর কাপায়ে ঠাঠা করে হাসি দিলাম দেঁতো হাসি

এত কিছু ছাড়াছাড়ির দরকার নাই, আসেন একদিন আড্ডা দেই আবার হাসি

স্যাম এর ছবি

অনেক ভাল লেগেছে!

স্যাম এর ছবি

দুপুরের ঘুম ভীষন কমন পরল - এখন খুব মিস করি - এত ঘুম পায় - মা ও পাশে নাই - ঘুমানোর সময় ও নাই ---- অথচ ঐ সময়ে মনে হত মা কেন রানী সরকার -----

নিবিড় এর ছবি

দুপুরের ঘুম মনে হয় একটা সময় সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।

মেঘা এর ছবি

এতো চমৎকার করে লেখা পড়লে নিজেদের সেইসব দিলগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠে। স্মৃতির ঝোলাতে সব এখন রূপকথা হয়ে গেছে ঠিক তবে সেই স্মৃতিই বাঁচায়। ভীষণ বড় হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। হঠাৎ কোন এক দুপুরে খুব একা হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নিবিড় এর ছবি

এই জন্যেই মাঝেমাঝে রূপকথা নিয়ে নাড়াচড়া করি হাসি

পড়াচোর এর ছবি

দিবানিদ্রায় যাবার জন্য মায়েদের অজুহাতগুলো খুব অদ্ভুত হয়। খুব ছোটবেলার একটা কথাই মনে আছে এটি নিয়ে, আমাকে আম্মা বলছেন, "আব্বু, এখন 'সোয়া' চারটা বাজে, এখন শুয়ে থাকতে হয়, শুয়ে পড়"।

লেখাটা খুব ভাল লাগলো ।

নিবিড় এর ছবি

আমাদের টাইম ছিল তিনটা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দুপুরের বেশ কয়েকটা স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তবে বিশ্বাস করেন আপনার মত করে এগুলো লেখা হয়ে উঠত না। মন ছুঁয়ে গেল। একটানে পড়ে গেলাম।

অমি_বন্যা

নিবিড় এর ছবি
তিথীডোর এর ছবি

ছাতের পাঁচিল বলছে আয়, ছুটে আয় খালি পায়...
আকাশ বলছে গলা খুলে গাও।
দুপুর বলছে কান্না পেলে ছাতে উঠে গিয়ে, সবাই যা বলছে ভুলে যাও।' ♪♪

চমৎকার নস্টালজিক লেখা। একটানে পড়লাম....
থাম্বস আপ। চলুক
তবে এতদিন ধরে লেখালেখির পরও এত টাইপো দেখে আপনাকে আমার মাঝেমাঝে পিটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নিবিড় এর ছবি

আমি কী আর কাউরে ডরাই খাইছে

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দারুন একটা লেখা। চলুক

নিবিড় এর ছবি

থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু

মর্ম এর ছবি

দুপুরের লেখাটা সকালটা কী সুন্দর করে দিল!

অনেকদিন পর বিটিভির কার্টুনগুলার কথা মনে পড়ল, সাত দিনে আটটা কার্টুন হল এক সময়, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মত ব্যাপার।

নতুন কুড়ি হত শুক্রবার ১১টায়। আমার আবার স্কোর লিখে রাখার ব্যারাম ছিল, কোন কোন দিন নিজে 'ব্যস্ত' থাকলে আম্মুকে বসিয়ে দিতাম সে কাজে!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নিবিড় এর ছবি

আমার আম্মা একসময় জোর করে শুক্রবার নতুন কুড়ি দেখাত, উনার আশা ছিল ছেলেমেয়েরা একদিন দেখে দেখে চমতকার গান, আবৃত্তি শিখে যাবে কিন্তু আমরা অতিরিক্ত প্রতিভাবান হওয়ায় কিছুই শিখতে পারি নাই দেঁতো হাসি

শাব্দিক এর ছবি

ডে-শিফট স্কুলে পড়ার কারণে দুপুরের ঘুম কপালে জুটে নাই বেশি, কিন্তু ছুটির দুপুরে করা---

দুধে চিনি মিশিয়ে কীভাবে আইসক্রীম করা যায়, চুলার আগুনে লবণ ফেললে কেন কটকট শব্দ হয়, সিড়ির গোড়ায় লাল পিঁপড়াদের কলোনিতে আগুন দিলে ঠিক কী ঘটে এ জাতীয় কিছু নিরীহ ও কিছু নিষ্ঠুর কৌতুহল নিয়ে গড়ে উঠেছিল আমাদের অনুসন্ধিৎসু মন।

এই কাজগুলো খুব কমোন পড়ল।
লেখা চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নিবিড় এর ছবি

আপনিও পিপড়াদের বাসাবাড়িতে আগুন দিতেন!! আমি ভাবতাম পিচ্চি কালে বুঝি আমি একাই নিষ্ঠুর ছিলাম এখন দেখি দুনিয়াই নিষ্ঠুর

শাব্দিক এর ছবি

শয়তানী হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

রিফাত বিন সাদেক এর ছবি

দারুণ ......।

্তিথি ডোর, টাইপো থাকা ভাল। খাইছে

রিফাত বিন সাদেক এর ছবি

দারুণ ......।

্তিথি ডোর, টাইপো থাকা ভাল। খাইছে

রিফাত বিন সাদেক এর ছবি

দারুণ ......।

্তিথি ডোর, টাইপো থাকা ভাল। খাইছে

নিবিড় এর ছবি

বিন সাদের তোমারে এখানে দেখে মজা লাগল

অনিকেত এর ছবি

কী ভীষন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা---

মনটা স্মৃতি-মাতাল করে দিলেন রে ভাই

শুভেচ্ছা নিরন্তর!

নিবিড় এর ছবি
ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমি খুব হিংসুক মানুষ ভাই, কাউকে ভাল কিছু করতে দেখলেই হতাশ লাগতে থাকে। এত চমৎকার লেখেন ক্যাম্নে?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নিবিড় এর ছবি
খেকশিয়াল এর ছবি

হে ভদ্রলোক অনেক পুরান কথা মনে করায়া দিলা। মনটা উদাস হইয়া গেল।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নিবিড় এর ছবি
সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

লেখাটি পড়ে শৈশবের মন-কেমন-করা সময়গুলো মনে পড়ে গেল খুব!

নিবিড় এর ছবি

লিখে ফেলুন, আমরা পড়ি হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলাম। চলুক

নিবিড় এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ, প্রৌঢ় ভাবনা

তানিম এহসান এর ছবি

কি সুন্দর একটা লেখা, নস্টালজিক।

নিবিড় এর ছবি

লেখাটা লেখার সময় আমিও নস্টালজিয়া দ্বারা আক্রান্ত ছিলাম

পুতুল এর ছবি

ভাল লাগল অলস দুপুর।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নিবিড় এর ছবি
অরফিয়াস এর ছবি

স্মৃতিতে তো পুরাই মিলে !! বুঝছি একই আমলের মানুষ আমরা। একদিন আড্ডা দেয়া দরকার। সুখ, দুঃখের কথা বলা যাবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নিবিড় এর ছবি

হুম, একি সময়ের মানুষ আমরা। আসেন একদিন আড্ডা দেই তবে দুঃখের ব্যাপারে না সুখ শান্তির ব্যাপারে হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ওয়েলকাম ব্যাক টাইপোম্যান দেঁতো হাসি

... অনেক অনেক দিন পরে কেউ ৪৫ ওভারের ম্যাচ আর মাইকেল চ্যাং-এর কথা মনে করালো মন খারাপ

নিবিড় এর ছবি

টাইপোম্যান শব্দটা শুনে মজা পাইলাম খাইছে
আর ৪৫ ওভারের আগে একসময় কিন্তু ৪০ ওভারের ম্যাচও হইছে

সত্যপীর এর ছবি

মাযহারুল ইসলামের (অথবা আনোয়ার) ভরাট গলার ঘোষণা- সুজন কি পারবে তার সাথী কে বাঁচাতে? তারা কী পারবে পরিবার আর সমাজের শত বাধা ছিন্ন করতে? হ্যাঁ ভাই, জানতে হলে দেখুন সামাজিক এ্যকশন ধর্মী রোমান্টিক সিনেমা সুজন সাথী। আর কত শত জায়গা থেকে আসা শতশত চিঠি, কত শত নাম। দিনাজপুরের বিলকিস, সিলেটের এখলাস আর বাগেরহাটের চামেলি। শুনশান দুপুরে বেতার তরঙ্গে ভেসে আসা ভরাট কন্ঠ জানিয়ে দেয়া এই সাপ্তাহে যশোরের মণিহার, সিলেটের রজনীগন্ধা, ঢাকার রাজমনিতে মহাসমারোহে চলছে কোন ছবি। চোখের সামনে ভেসে উঠে যেন সব। কী অদ্ভুত জাদু কালো বাক্সটার।

অসাধারন হাততালি

চলুক

..................................................................
#Banshibir.

নিবিড় এর ছবি
ধুসর জলছবি এর ছবি

শুধু রেডিওর স্মৃতি ছাড়া আর সব কিছুই মিলে গেল। তবে আমার জন্য শুক্রবার আর বৃহস্পতি বারটা ছাড়া বাকি সব দিনই ছিল ঈদের দিন। কারন বৃহস্পতিবার হাফ অফিস আর শুক্রবারে ছুটি ছিল আমার আম্মাজানের (দ্যা গ্রেট ডিক্টেটর ইন দিস সেঞ্চুরি মন খারাপ )। তাই এই দুদিন আমাকে দুপুরে ঘুমোতে হত , ভদ্র হয়ে চলতে হত। বাকি দিনগুলিতে ইচ্ছেমত গল্পের বই, খেলা, দুষ্টামি, পিপড়া পুড়ানোর মত নিষ্ঠুর খেলা , খেলনা পাতি ভেঙ্গে পরীক্ষা করা, কারেন্টের সুইচ গুলোর ভিতর গুঁতিয়ে দেখা কি হয়( অসংখ্যবার শক খেয়েছি আমি ), ছাদে চলে যাওয়া কাউকে না জানিয়ে(পানির ট্যাঙ্ক এর গায়ে হেলান দিয়ে বই পড়া ছিল নিত্যদিনের অভ্যাস) ইত্যাদি ইত্যাদি সবই করতাম আমার ভাই কে নিয়ে। উডিউডপেকারের গা জ্বালান হাসিটা কি মধুরই না শুনাত তখন কানে। আর টম এন্ড জেরি, মোগলি, দ্যা গার্ল ফ্রম টুমরো । হাসি আহ কি ছিল দিনগুলো। মন খারাপ
কয়েক সহস্র স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন একটা ব্লগ লিখে চলুক এখন তো আমারও ফেলে আসা রুপকথার দুপুরের গল্প লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। হাসি

নিবিড় এর ছবি

কারেন্টের শক আমিও খাইছি। সেজ মামা মাল্টিপ্লাক লাগায়ে কী যেন একটা কাজ করতাছিল আমি সেই মাল্টিপ্লাক নিয়ে নিয়ে কারিকুরি করতে গিয়ে শক খেয়ে এমন চিতকার দিছি যে মামা ছুটে আসছে। তারপর প্রথম দুই মিনিট উনি আমারে কিছুই বলে নায় এরপর দিছে রামধমক দেঁতো হাসি
আর আপনিও দেখি ছোটকালে নিষ্ঠুর ছিলন খাইছে

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ!!! সচলের শ্রেষ্ঠ লেখাগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিবে নিশ্চিত..................

আজকে দুপুরে কোন কাজ ছাড়াই টেবিলে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। বৃষ্টি শেষে আকাশে তখন রোদ। হাতে অফুরন্ত সময়। অলস সে সময়ে হঠাৎ যেন উঁকি দিয়ে যায় আমাদের শৈশবের দুপুর। ক্লান্ত, তপ্ত, ঝিম ধরানো দুপুর। সাথে থাকে ন্যাশনালের কালো রঙের রেডিও, বারান্দার রকিং চেয়ার, উডি উড পেকার আর আম্মার চোখ রাঙ্গানি। রূপকথার মত জীবন্ত হয়ে উঠে যেন আবার সব।স্মৃতির ঝোলায় সব রূপকথা, সব গল্প ভরে বড় হয়ে যাই আমরা। আর শৈশব, কৈশোর পেছনে ফেলে বড় হয়ে যাওয়া আমাদের সব পুরাতন স্মৃতির নিশান আকড়ে আগের মত একলা দাঁড়িয়ে থাকে শুনশান দুপুর, স্মৃতির দুপুর। চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

onindita এর ছবি

আহা, অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম নিবিড়। হাসি
পড়তে পড়তে আমার নিজের শৈশবটাও যেন দেখে এলাম। এখন কতদিন সকাল, দুপুর, বিকেল ,সন্ধ্যা টা দেখা হয়ে উঠে না।
কীসের তাড়ায় যে ছুটে মরছি মন খারাপ

মামুন  এর ছবি

চমৎকার লেখা হাততালি
শৈশব এর অনেক সৃতি মনে পড়ে গেল। বিশেষ করে ছুটির দিনে বাংলা সিনেমা দেখাটা পরম আনন্দের ছিল। তবে মাঝে মাঝে হুযুর ( আমাদের চাচাতো ভাই) এসে খুজে যেতেন। যদি ধরা পরতাম তাহলে খবর ছিল।

নীলম এর ছবি

আম্মুকে কাজে হেল্প করার জন্য আমার চাইতে দু-এক বছরের বড় একটা মেয়ে থাকতো বাসায়। ওকে যে আমার সে কি হিংসে হত! ও মন চাইলে দুপুরে ঘুমুতো না চাইলে না, আমার মনে হত ও কত্ত সুখী!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এই লেখাটা পড়ে ক্যান জানি আপনাকে কঠিন মাইর দিতে ইচ্ছা করতেসে, নিবিড়... ইয়ে, মানে...

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিবিড় এর ছবি

কেন আমি আবার কী করলাম চিন্তিত

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লেখাটা পড়ার পর থেকে হাত চুলকাচ্ছে যে! (দেঁতোহাসি)

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিবিড় এর ছবি

সরকার আইন করে মাস্টারদের মারামারি বন্ধ ঘোষণা করছে, তাই হাত চুলকালেও লাভ নাই শয়তানী হাসি

poka এর ছবি

এই লেখা সম্পর্কে কিভাবে আমার অনুভূতি প্রকাশ করব, আমি জানি না। শুধু মনে হয়েছে যে এটা যেন আমার শৈশব। হো হো হো

নিঃসঙ্গ পৃথিবী এর ছবি

চলুক

কড়িকাঠুরে এর ছবি

আহারে আমার উডি উড পেকার... ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট... মাইকেল চ্যাং এর কথা অনেক দিন পর মনে পড়লো।

অন্যান্য সময় না হলেও গ্রীষ্মের খা খা দুপুরগুলোতে আম্মু জোর করে ঘুমোতে নিয়ে যেত। কত চেঁচামেচি করেও কোনো লাভ হতো না। তাই কুবুদ্ধিই ছিল ভরসা। ভাল ছেলেটির মতো কোনো কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতাম। আম্মুতো ভাবতো আমি ঘুমিয়ে পড়ছি তাই আম্মুও একসময় ঘুমিয়ে পড়তো। আর বদের বদ আমি আম্মুর হাত গলিয়ে বাইরে বের হয়ে যেতাম। অবশ্য ধরাও খেয়েছিলাম পরে।

নিবিড় এর ছবি

কাঠুরে সাহেব তাইলে আমাদের সময়ের মানুষ হাসি

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

দেরিতে হলেও পড়ে মুগ্ধ হলাম আর হলাম নস্টালজিক চলুক

নিবিড় এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।