বল দাও মোরে বল দাও : - ফুটবল শিক্ষা দর্শন

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/১০/২০১১ - ৯:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঠে নিমগ্ন হইয়া বালক নিবিড় কন্ঠে উচ্চারণ করিতেছে = ‘বল দাও মোরে বল দাও…’
প্রত্যূষের কুমারী আকাশে আবছা আলো ফুটিয়াছে, নীলাভ সুন্দর। মৃদুমন্দ সমীরনে ভর করিয়া বালকের এই নিষ্পাপ উচ্চারন প্রার্থনা সঙ্গীতের মত আকাশে আকাশে বাজিয়া উঠিয়াছে। বালকদের প্রতি স্নেহ এবং মমতায় আপনার হৃদয় স্বভাবতই আর্দ্র, তার উপর ঊষালগ্নের মৌন প্রহরে এই হৃদয়উত্থিত হাহাকার ধ্বনিতে আপনি সুস্থির থাকিতে পারিলেন না। আপনি তাহার নিকট অভিগমন করিলেন - এবং তাহাকে আপনার সংগ্রহের একটি ফুটবল আগাইয়া দিয়া বলিলেন -
‘লও বৎস্য, এই বলখানা গ্রহন করিয়া চিত্ত প্রশান্ত কর।’
বালকটির চক্ষুদ্বয় আনন্দে উদ্বেলিত হইয়া প্রশস্ত হইয়া উঠিলে আপনার হৃদয় পরিপূর্ণতায় ভরিয়া উঠিল। প্রফুল্ল চিত্তে আপনার নিজ কাজে ব্রত হইবার জন্য আপনি প্রস্থানের উদ্যোগ গ্রহন করিলেন, ঠিক সেই মূহূর্তেই আপনি স্তম্ভিতনেত্রে আবিস্কার করিলেন - স্বয়ং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাগপূর্ণ আয়তলোচনে আপনার দিকে তাকাইয়া আছেন। আপনার হৃদয়যন্ত্র বিকল হইয়া গেল, স্নায়ুসকল বিবশ হইয়া উঠিল- আপনার কেবলি মনে হইতে লাগিল –
‘বালককে বলের জায়গায় ফুটবল দিয়া কি ভ্রমই না করিলাম…’।
আত্ম ধিক্কার এবং তীব্র অনুশোচনায় দেহযন্ত্রই অসাড় হইয়া গেল। আপনি সকরুণভাবে ধূলিশয্যা গ্রহণ করিলেন, ভাবিলেন- তাতেও যদি গুরুদেবের সুকঠিন তিরস্কার থেকে পরিত্রান মেলে। আপনি যদি কাহারও ব্যথিত মনের সাথী হন- আপনিও তিক্ত সময়ে অন্যের কোমল সাহচর্য্য মথিত হইবেন, এমনটিই প্রথা। ঐ বালকের আকুল ধ্বনি যেমন আপনাকে টানিয়া লহিয়া আসিয়াছিল, তেমনি আপনার এই ভূশয্যাপিড়িত ব্যথিত মনের বেদনার নিরব যন্ত্রনা সহ্য করিতে না পারিয়া, সুদুরলোক থেকে হাজির হইলেন - উইলিয়াম সেক্সপিয়র। তিনি ভূতলের শরশয্যা থেকে নিজ হস্ত দিয়া আপনাকে উঠাইলেন, অতঃপর গুরুদেবের সম্মুখে আপনাকে স্থাপিত করিয়া কহিলেন - গুরুদেব, এইজন আপনার বাণী শিরোধার্য বিবেচনা করিয়া আপনার আদেশ পালন করিয়াছে। একে আশীর্বাদ করুন।

রবীন্দ্রনাথ অন্তরের পূজারী। প্রেম, মায়া, স্নেহ তার স্বভাব। অসীম ক্ষমায় আপনার এই ছেলেমীকে তিনি প্রশ্রয় দেবেন এটা অনায়াসেই বলা যেত। কিন্তু অনাহূতের মত সেক্সপিয়র আসাতে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম হয়ে গেল। বালকের দুষ্টুমীকে সীমার মধ্যে রাখার জন্য বাবাকেতো একটু রাগের ভান করতে হয়ই, কিন্তু প্রতিবেশি তখন যদি সেই ছেলের উমেদারী করে, বাবার মন একটু শক্ত হয়েই ওঠে। এও ঠিক তেমনি। মানুষের মন, সেক্সপিয়র বুঝতে পারবেন না এটা হয় না।
আচার্য্য, আপনি বাংলা এবং বাঙালীর জন্য যতটা করেছেন, আমি হয়তো ইংরেজী ভাষা এবং ইংরেজের জন্য ততটা করি নি, কিন্তু এর ইতিহাসে আমারও একটু অবদান আছে এতটুকুতো আপনি স্বীকার করবেন
রবীন্দ্রনাথ লজ্জ্বা পেলেন। ছিঃ ছিঃ - এ কি কথা বলছেন আপনি? যে ইংরেজ রাজত্বে সূর্য অস্ত যায়না, সেই রাজ্যের রাজার রাজা আপনি -
সেক্সপিয়র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাটা শেষ করতে দেন না।
তাহলে আমার বিবেচনারতো একটা মূল্য আছে?
রবীন্দ্রনাথ মাথা নাড়েন। নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই।
আমার বিবেচনায় - এই জন বালকটিকে ফুটবল দিয়ে ভাল কাজই করেছেন।
গুরুদেবযে সেক্সপিয়রের কথায় ভেতরে ভেতরে আপনার উপর আরও রেগে যাচ্ছেন, আপনি তা ভালভাবেই টের পাচ্ছেন। ‘ইস কাজটা কেন যে করতে গেলাম’ - মনে মনে এই কথাটা আপনি বারবার যেমন ভাবছেন, আবার সেক্সপিয়রের কারনে আপনি যে এ যাত্রায় গুরুদেবের কঠিন ভর্ৎসনা থেকে বেঁচে যেতে পারেন - এই আশাটাও আপনাকে একটা ভরসা দিচ্ছে।
একমূহূর্ত। কেউই কোন কথা বলে ওঠেন না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন ভাবছেন, সেক্সপিয়র কি বলতে চাইছেন। ফুটবল যে একটি উত্তম খেলা, শরীরে বল এবং মনে প্রফুল্লতা আনে - এটা ঠিকই। কিন্তু এই গানটি তো শুধু এইটুকুই না, এর চাইতে বেশি কিছু। এটি পূজার গান- প্রাণের ব্যাপার। প্রকৃতির সাথে একটা মানুষের সন্মন্ধ্যের ব্যাপার। শরীরচর্চার উপকারিতার সাথে এর কোন মিল নেই। রবীন্দ্রনাথ যে এমনটা ভাবছেন সেক্সপিয়র এটা জানতেন। সেক্সপিয়র একটু হাসলেন।
গুরুদেব, আমি জানি আপনি কি ভাবছেন। আমি শুধু বলতে চাই- ফুটবল শুধু শরীরচর্চার ব্যাপার নয়, আপনার সঙ্গীতের মতই ফুটবল অনেক গভীর। আপনি যদি অনুমতি দেনতো বলি-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমরা নই। যেভাবেই হোক, নিজেই যে ঠিক - এটা প্রমান করার মতো একচোখা নন। সেক্সপিয়রের কথায় তিনি আগ্রহ বোধ করেন।
- বলুন রাজর্ষি’
রবীন্দ্রনাথের কথায় সেক্সপিয়র তার রঙ্গমঞ্চ ফিরে পেলেন। তার কন্ঠে হ্যামলেট, ওথেলো, ম্যাকবেথ খেলা করে যায়।
: হ্যা, ফুটবল! আপনার শব্দে গুরুদেব - মহত্তর জীবনে যার অধিকার। মহিমাময় ঐশ্বর্যের আধার। প্রজ্জ্বলিত যৌবনে প্রাজ্ঞতার অভিজ্ঞান। ফুটবলল পায়ে আপনার ছন্দে যেন যোদ্ধার উন্মত্ত শক্তি অস্থিমজ্জায় প্রবাহিত- তারই স্ফূরণে কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে আপনি যখন দ্বিবিদিগ ছুটে যাচ্ছেন সবকিছু ভূলে - অকস্মাৎ তখন বাঁশি বেজে ওঠে। ঈশ্বর যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন - প্রকৃতির বিধান। বাসনার দূর্বিনিত প্রতিজ্ঞা প্রকৃতির আকাঙখা নয়। আপনি সহস্র লক্ষ কোটি পথে বল নিয়ে ছুটতে পারেন- কিন্তু শেষপর্যন্ত আপনি একটা নিয়মের অধীনে ।
শৃঙ্খলার মধ্যে এমন স্বাধীনতার স্বাদ আপনি এমনভাবে আর কোথায় অনুভব করতে পারবেন। আপনার পায়ে যখন বল - যৌবনের আবেগে আপনি ছুটে চলতে পারেন সামনের দিকে, আপনি দেখবেন আপনাকে থমকে দেবে শত্র“র চোয়ালবদ্ধ প্রতিরোধ। বাধভাঙা বন্যার মত আপনি এগিয়ে যেতে গিয়ে দেখবেন বলটা আপনার পায়ে নেই। শত্রু কোন মূহূর্তে যে আপনার কাছ থেকে বলটা ছিনিয়ে নিয়েছে আর – এই বেদনাকে আরো তীব্রতায় ভেঙেচুড়ে আপনাকে হতাশায় ডুবিয়ে বেজে উঠেছে বাশি। গো-ও-ল। শুষ্ক ভাঙা হৃদয়ে আপনি অনুভব করবেন, আপনি পিছিয়ে পড়েছেন।
মাঠের মধ্যবিন্দু থেকে আবার যখন খেলা শুরু হবে আপনি অনুভব করবেন, অতীত থেকে যেভাবে মানুষ শিক্ষা নেয় – আপনার ক্ষেত্রটা শুধু সামনে নয়, পেছনেও। গোল দেওয়া শূধূ শূধূ লক্ষ্য হতে পারে না, গোল খাওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করাও সমান কর্তব্য। এভাবে পুরো মাঠটাই হয়ে উঠবে আপনার বিস্তৃতি। জীবনের মতই।
আপনি আবিষ্কার করবেন - আপনার পায়ে যখন বল, এগারো জন শত্রুর রক্তচক্ষুর লক্ষ্য আপনি। কিন্তু একা আপনি যদি তাদের বিরুদ্ধে বাধভাঙা দেবতাতূল্য রণনৈপূণ্যও প্রদর্শন করেন - তবু পরাজয়ই আপনার নিয়তি। আপনি আবিষ্কার করতে পারবেন - মানুষ ঈশ্বরের মত একা জয়ী হতে চেষ্টা করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে তাকে শুধু পরাজিতের যন্ত্রনাই ভোগ করতে হবে।
জয়ী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বলটাকে দিতে হবে অন্যজনকে - যে বলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনারই হয়ে। জীবনের মতই। আপনি বুঝতে পারবেন আত্ম স্বার্থ আপনাকে আটকে ফেলবে একটা বলয়ে যেখানে শুধু খেলা করে বিনাশ আর মৃত্যু। আপনি ধমণীতে টের পাবেন রক্তের টান- সে আপনাকে নিয়ে যাবে বন্ধুর কাছে- যে বন্ধূ - আপনার জন্য লড়ছে- আপনিও তার জন্যই লড়ছেন। মাঠের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে অনেকগুলো মানুষ যে লড়াই করছে তা নিঃসঙ্গ নয় - তা দলবদ্ধ। এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত বল নিয়ে, বলের পেছনে ছুটে যেতে যেতে আপনি বারবার অনুভব করবেন - মাঠের সেই মধ্যরেখা। সে যেন জীবনকেই দুটুকরো করে ফেলে। একপাশে আপনার অতীত - অন্যদিকে ভবিষ্যত। একপ্রান্তে বিজয়ীর গৌরবের হাতছানি অন্যপ্রান্তে পরাজয়ের গ্লানির সুকঠিন শঙ্কা। প্রতিমূহূর্তে পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকে সময় আর আপনার নিজের অবস্থান। আপনার
খেলা আর আপনি নিজে আলাদা কিছু নয়।
আর এরমধ্যে নির্মেঘ আকাশে অগুণতি তারার মত ফুটে ওঠে বিন্দু বিন্দু জেদ, ঈর্ষাপরায়নতা, সাহচর্য্য, শত্র“তা, বন্ধুত্ব, লক্ষ্য, অশ্র“, অলিখিত সন্ধি, প্রবাহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষমাহীন ক্লাšিত।

কখন থেকে যে আলবেয়ার কাম্যু এসে চুপ করে দাড়িয়ে আছেন সেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ কিংবা আপনি কেউই খেয়াল করেন নি। বহিরাগত অতিথির মত চুপচাপ, একটু বিনত। রবীন্দ্রনাথ সেক্সপিয়রের কথা শুনছিলেন। সেক্সপিয়র একদমে একটানা এত কথা বলে একটু ক্লান্ত। একটু নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য তিনি থামলেন আর আলবেয়ার কাম্যূও আগমনের ব্যাপারটাও ধরা পড়লো।

: আমি আর কারো কথা বলতে পারি না। আমি শুধু আমার কথাই বলতে পারি। একসময় ফুটবল খেলতাম। গোলরক্ষক । ১ নম্বর জার্সি পরে নামতাম মাঠে। জীবনমানেতো টিকে থাকা। আপনি জিততে চাইলে হারতে পারেন না। এই টিকে থাকার খেলায় নিজেদের রক্ষায় শেষজনও বলতে পারেন, প্রথম জনও বলতে পারেন। জীবনের দৌড়ে যে নৈতিকতা আর যা মেনে চলতে হয় আমি তা ফুটবল থেকে শিখেছি।
কাম্যূর কথা শেষ করতে দেন না নিৎসে। নাটকে অভিনেতার হটাৎ আবির্ভাবের মত তিনি আসেন।
: সাধারন শিক্ষা। একটা হ্যা। একটা না। সোজা একটা রেখা। গোল। তুমি যদি সুখী হতে চাও।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতক্ষন চুপচাপই শুনছিলেন। কোন কথা বলছিলেন না। এবার তিনি নিরবতা ভাঙেন।
: মহতীসকল। আপনাদের কোন কথাই আমি অস্বীকার করছি না। আপনাদের অনুভূতি এবং শিক্ষা জাতির জন্য মহামূল্যবান। কিন্তু ব্যাপারটি ফুটবল নিয়ে নয়। কথা হচ্ছে, একজন মানুষ যখন ঈশ্বরের কাছে সে যেন সুপথে চলতে পারে সেই শক্তির জন্য প্রার্থনা করছে।
: আমি কিন্তু কবিগুরুর সাথে একমত। সুপথে থাকার জন্য প্রত্যেকেরই তার নিজের ভেতরে একটা শক্তি অর্জন করা খুবই দরকার। না হলে সে তার লক্ষ্য থেকেই হারিয়ে যাবে।
সুরেলা কিন্তু স্পষ্ট নারীকণ্ঠে সবাই চমকে ওঠে। সিমোন দ্য বোভেয়র সিরিয়াসভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছেন। এই বিখ্যাত নারীবাদি মেয়েটা জগৎজুড়ে নারী স্বাধীনতার একটা বিরাট প্রেরণা। একটা বিপুল প্রাণশক্তি। - কি বলো অস্কার? সিমোনের কথায় অস্কার মাথা নাড়েন।
: হ্যা। কোমলমতি ছেলের চেয়ে কঠিন প্রকৃতির মেয়েরাই ভাল ফুটবল খেলতে পারে।
অস্কার ওয়াইল্ড রাইট উইং পজিশনে যখন ফুটবল খেলতেন তখন তার নিজেকে পাখি মনে হতো। আর মাঠটাকে আকাশ। আকাশের এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ডানা মেলে উড়ে যেতে তিনি ভালবাসতেন। বাতাসে ভর করে ডানা মেলে পাখি যেমন উচু নিচু হয়ে একে বেকে উড়ে চলে তেমনি তিনিও সেইভঙ্গিতে প্রতিপক্ষকে স্তম্ভিত করে দিতে চাইতেন। সোজা এবং সরলভাবে পোষ্টের দিকে যাওয়া তার ভীষন অপছন্দের ছিল।
: অষ্কার! কপট রাগের ছোয়া সিমনের গলায়। মেয়েদের অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। যদি তারা তাদের চাওয়াটাকে পূর্ণ করতে চায়।
: নিশ্চয়ই। তোমার মত মেয়েদেরও সেক্ষেত্রে ফুটবলটা আরো বেশি করে খেলা উচিত। অকস্কার ওয়াইল্ড হাসেন।
রবীন্দ্রনাথের গলায় মুগ্ধতা।
সিমন কি ফুটবলও খেলতে নাকি?
: তা আর খেলতো না। ফুটবল ওর প্রিয় খেলা।
জা পল সার্ত্রে!
আপনি এতক্ষনে একটু হাফ ছেড়ে ভাবতে শুরু করেছেন - কথার তোড়ে আপনার বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ হয়তো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন। একটু হালকা মনে হয় নিজেকে। চারপাশের কথায় কান দেয়ার চেষ্টা করেন। সার্ত্রে সিমোন সম্পর্কটা জগতের একটা অন্যতম আলোচিত সম্পর্ক। তারা বিয়ে করেন নি। কিন্তু আজীবন সঙ্গী ছিলেন। স্বাধীন অথচ একটা দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্কে তারা বিশ্বাস করতেন। সঙ্গিনী সম্পর্কে
: খেলাতে প্রতিপক্ষকে হিসেবের মধ্যেই আনতো না। নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাসই ওর দর্শন। নিজেদের শক্তিতেই ওর ভরসা।
: কিন্তু প্রতিপক্ষকে জানাটা কিন্তু ভালো। নিজেদের জানলে - সাথে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে জানলে শতভাবে চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করা যায়, কোন ঝামেলা ছাড়াই। শুধু নিজেকে জানলে প্রতিটি জয়ের সাথে পরাজয়ও লেখা থাকে। আর নিজের শক্তি আর প্রতিপক্ষ সম্পর্কে কোন ধারনা না থাকলে প্রতিবার খালি পরাজয়ের স্বাদই নিতে হয়।
চৈনিক চেহারার লোকটিকে চিনতে কষ্ট হয়। একখন্ড নিরবতার মধ্যে চিনেম্যান দাড়িয়ে থাকেন। কিন্তু তার শব্দগুলো সবার মাথার মধ্যে অচেনা চেহারাটাকে মূর্ত করে। ইনিই তাহলে সান যু। আর্ট অব ওয়ার নামে একটামাত্র রচনা। কিন্তু কি তীব্র তার আলো। সার্ত্রে নিরবতা ভাঙেন।
: আসলে প্রতিপক্ষই খেলাটাকে জটিল এবং আকর্ষনীয় করে তোলে। আমি অবশ্য ফুটবল নিয়ে যখন ভাবি তখন এও ভাবি আমি নিজেই যেন ফুটবল না হয়ে উঠি। আমি এবং আমি না এর দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে ঈশ্বরকে অনুভব করা যায়।
সার্ত্রে কথাগুলোর সময় সেই সময়ে ফিরে যান যখন তিনি এই শব্দগুলোই লিখছেন। এই শব্দের সাথে আরও অনেক অনেক শব্দ যোগ হয়ে অবিষ্মরনীয় বইয়ে পরিণত হবে - Being and Nothingness.
লুদভিগ ভিডগেইনষ্টেইন সার্ত্রের কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। দর্শন আর বিজ্ঞানের দুই সূতোকে একই সুইয়ের মাথায় পরিয়ে নক্সা কাটতে ভালবাসেন। তার মত একাধারে দার্শনিক বিজ্ঞানীর সংখ্যা পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকজন হলেও ফুটবল তিনি ভালবাসেন আর সবার মতই । সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার পজিশনের এই খেলোয়াড়টি দলের প্রতিরক্ষাবূহ্যের স্থপতি হিসেবে প্রতিপক্ষের আক্রমন ঠেকানোই ছিল মূল কাজ। ছুটে আসা বলটাকে যেকোনভাবেই হোক শূণ্যে পাঠিয়ে তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন আকাশের দিকে।
তিনি এখনও সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলটাকে দেখতে পাচ্ছেন। স্বগোক্তির মত শব্দগুলো তার নিঃশ্বাসের সাথে বের হয়ে আসে।
: খুবই মজার একটা ব্যাপার। লক্ষ্যহীনভাবে বাতাসে বলটাকে ছুড়ে দেয়া আর বলটাকে কেন্দ্র করে একজন আরেকজনের মুখোমুখি হওয়া। পুরোটা সময় নিয়মের মধ্যে থেকে নিজেরা খেলা তৈরী করা। খেলে যাওয়া। এটা কি এরকম নয় এভাবেই আমরা বাচি আর একসাথে এগিয়ে যাওয়ার নিয়ম তৈরী করি?

: ব্যক্তিনির্ভর সমাজের একটা মডেল হচ্ছে ফুটবল। উদ্যোগী উদ্যম, প্রতিযোগিতা আর সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়, কিন্তু একটি অনির্বচনীয় মঙ্গলময়তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়।
আন্তোনিও গ্রামসি যোগ করেন। ইতালির এই সাম্যবিদ এর কথায় সার্ত্রে যোগ করেন - ব্যক্তিকেতো অস্বীকার করা যাবে না। সমাজে ব্যক্তির অবস্থান চিরকালীন।
হয়তো কথাটা চলতোই .. চলতেই থাকতো। কিন্তু চলে না। কারন কথার থেকে সঙ্গীত অনেক শক্তিশালী। সব তর্ক থামিয়ে গিটারে সুর বেজে ওঠে। গিটার বাজাতে বাজাতে বব মার্লে আসতেই সব কথা থেমে যায়। টুংটাং গিটারের ধ্বনি, শব্দের পেছনে শব্দ। সবাই বুদ হয়ে থাকেন বব মার্লের গানে । রবীন্দ্রনাথ, সেক্সপিয়র, কাম্যূ, সীমন, সার্ত্রে, অস্কার, ভিডগেনষ্টাইন, নিৎসে, সান যু সবাই।
ফুটবল সেতো আমি - যে আমি তোমাকে শত ঝড় থেকে রাখে বহু দুরে ।
সকালের সতেজ দৌড়ের মত প্রতিদিন তুমি জন্ম নেবে।
তুমি জন্ম নেবে সেই সাথে পৃথিবীও উঠবে জেগে।
ফুটবল তোমার জন্য
তুমি শূণ্যে ভেসে যেতে পারো, আর সে ও নেমে আসতে পারে আকাশ থেকে।
শুধু তুমি ওকে তোমার করে রেখে দাও আর ভিড়ের মধ্যে তোমার পথ করে নাও
জাগো। দাড়াও। বলটা ধর। বলটা দাও।
আবার দৌড়ে যাও তোমার জায়গায়-
ও ফিরে আসবে আবার কেননা ও জানে না থামতে।
সবাই মগ্ন । স্বয়ং গুরুদেব চক্ষুদ্বয় বন্ধ করিয়া সুরের ভেতরে আকীর্ণ হইয়া আছেন। আর আপনি গুরুদেবের ধ্যানমগ্ন চেহারায় দিকে তাকাইয়া ভাবিতেছেন - এইতো সূযোগ মিলিয়াছে। এই মূহূর্তে আপনি যদি এই আসর হতে প্রস্থান করিতে পারেন তবে গুরুদেবের তিরস্কার হইতে পরিত্রাণ মিলিবে। ঠিক সেই মূহূর্তে গুরুদেবের চক্ষুপাপড়িদ্বয় খুলিয়া গেল - আপনার দৃষ্টির সহিত তার দৃষ্টি পড়িয়া গেল। আপনি কাপিয়া উঠিলেন, কিন্তু অবাক আনন্দে আপনি অনুধাবন করিলেন, গুরুদেব আপনাকে ক্ষমা করিয়াছেন। এই ক্ষমার কতখানি এই জ্ঞানী রথী মহারথীদের অখন্ড যুিক্তজালে আর কতকখানি সঙ্গীত রসে আপনি তা অনুভব করিতে পারিলেন না - তবে এটুকুই আপনার জন্য যথেষ্ট হইলো - গুরদেব যেন দুষ্টুমীর ছলে হোক আর বিশ্বাসের গাম্ভীর্যে হোক - গুরদেব আপনাকে আশ্বস্ত করিতেছেন, বলিতেছেন- যা, এবাারের জন্য বলটা না হয় ফুটবলই হইল । এখন তুই তোর কাজে যা- এখানে বড়দের মধ্যে থেকে আর কাজ নেই।
আপনি আনন্দে নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিলেন- হাটিতে হাটিতে রাস্তার ভিড়ে হারাইয়া যাইতে যাইতে নিজের অজান্তেই গান গাহিয়া উঠিলেন
ফুটবল দাও মোরে ফুটবল দাও।

গ্রন্থ ও তথ্যপঞ্জী
1. France Football, 1957 -Albert Camus
2. The Second Sex - Simone de Beauvoir
3. The Comedy of Errors- William Shakespeare
4. Twilight of the Idols - Friedrich Nietzsche
5. Philosophical Investigations- Ludwig Wittgenstein
6. Being and Nothingness - Jean Paul Sartre
7. Epigrams of Oscar Wilde
8. The Art of War - Sun Tzu
9. Avanti!, Aug. 27, 1918 - Antonio Gramsci


মন্তব্য

কর্ণজয় এর ছবি

একটা সময় ছিল-
আড্ডা আর ফুটবল এই নিয়ে তবেই বাঙালী।
ছেলেরা বাড়ির আঙিনার ভেতরেই ফুটবলে লাথি মারতে মারতে বড় হতো, তারপর যেত পাড়ার মাঠে। পড়ায় ফাকি দিয়ে ফুটবল খেলা নিয়ে গুরুজনেরা যতই বকাঝকা করুন না কেন তারাও জানতেন ফুটবল একটি খেলা - তা শুধু বিনোদনের মত মনে হলেও সেই খেলার মধ্য দিয়ে তার ভেতর দিয়ে অনেকগুলো শিক্ষা সে অর্জন করবে যা তার জীবনগঠনে সুন্দর একটা প্রভাব ফেলতো। ফুটবল নিয়ে কিংবদন্তী কৌতুকাভিনেতা ভানুর একটা কৌতুক খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এক লোক গেছে মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে। খেলাটা দেখে সে বুঝতেই পারে না, কেন একটা বলের পেছনে বাইশ জন দৌড়াদৌড়ি করতে হবে? প্রত্যেকে একটা করে ফুটবল নিলেইতো ল্যাঠা চুকে যায়।

কিন্তু যে ফুটবলটা খেলতে নেমেছে সে বোঝে, একা খেলার মধ্যে কোন মজা নেই - সবাই মিলে খেলার মধ্যেই মজাটা আছে। ফুটবল খেলতে গিয়ে একটি শিশু প্রথম যেটা শেখে - তা হলো এটা বলটা খালি নিজের পায়ে রাখার জিনিষ না, খেলাটাকে ভালভাবে চালিয়ে নিতে হলে বলটাকে অন্যকেও দিতে হয়। অর্থাৎ, একা একা খেলাটা যায় না। সে খেলতে গিয়ে আবিস্কার করে - গোল বলে একটা ব্যাপারাছে। বাংলায় ফটবল খেলার গোল মানে গোলই , ইংরেজীতে সেই গোল মানেই লক্ষ্য। এটা শুধু খেলারই না, জীবনেরও। গোল দেয়া ফুটবলের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যটা অর্জন করতে গেলে - বলটাকে খালি এগিয়ে নিলেই হয় না- বলটাকে পেছনেও ঠেলতে হয়। ব্যাকপাস থেকে গোল-ফুটবলের একটা অতি স্বাভাবিক ঘটনা। ফুটবলে গোল দেয়াটা যেমন একটা ব্যাপার, প্রতি মূহূর্তে গোল খাওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে গোল রক্ষা করার জন্য পিছিয়ে এসেছে, গোল যে দিচ্ছে তার চেয়ে কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। পাস দেয়া, পাস পাওয়া দেয়া নেয়া দেয়া নেয়া করতে করতেই গড়ে ওঠে অন্যের সাথে একটা বোঝাপড়া - যার ভেতর দিয়ে অবচেতনেই একটা বোঝাপড়ার মনস্তত্ব তৈরী হয়। যা জীবনভর একটা শিক্ষা হয়ে বেচে থাকে। শুধু খেলার মধ্যেই নয়, খেলার বাইরের জীবনেও এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা একসাথে একটা কিছু করতে শিখি, একে অন্যকে নিজের কাজের অংশীদার ভাবতে শিখি। আমাদের দৈনন্দিনতায় ফুটবলের সাথে সাথে এই শিক্ষাটাও এখন অনেক ম্লান হয়ে গেছে। নিপাট সাধারন জীবনে, ফুটবলের জায়গা অনেকখানি নিয়ে নিয়েছে ক্রিকেট। প্রতিযোগিতামূলক স্তরের বাইরে সাধারন মানুষের খেলার জীবনে ক্রিকেটে আকর্ষনের বস্তু আসলে- দুইজন। প্রধান যে, সে ব্যাটসম্যান - আর বোলার। বাকীরা - ফিল্ডার হলে গৌন অথবা ব্যাটিং করা দলের হলে- অক্রীয়াশীল।
পাড়ার ক্রিকেটের সাধারন চিত্রটা হলো -টসে জিতলে ব্যাটিংটা নিতে হবে আগে। আর ব্যাটিং করবে কে আগে? অবশ্যই যার জোর বেশি সে (যে অর্থেই হোক , হতে পারে ব্যাটটার মালিক সে নিজেই ফলে গলার জোরটা বেশি, হতে পারে অন্যদের চেয়ে সে চৌকস একটু বেশি, নেতৃত্ব গুণ বেশি, কিংবা ব্যাটিংটা ভাল পারে ) - আর বিপক্ষ দলের শক্তিমান ছেলেটা চাইবে হাতে নেবে বল। অন্যরা অপেক্ষা করবে- কখন তাদের বল কিংবা ব্যাটের পালা আসবে। প্রথম পর্বের ব্যাটিংটা শেষ হলে - খেলার মজাটা অর্ধেক কমে আসবে। ব্যাটিং করা দল বল শুরু করবে কিন্তু একটু পরেই শুরু হবে গড়িমসি। এক পর্যায়ে হয়তো ঘোষনাই করে বসে - তোরাই জিতে গেছিস। প্রথমে ফিল্ডিং করা দলটা জয়টা মেনে নিতে রাজী নয়, কারন খেলার মুল আকর্ষন ব্যাটিং ই করা হয় নি। এই নিয়ে গোলমাল- খেলা পন্ড। আবার হয়তো নতুন করে খেলা শুরু হলো। অর্থাৎ ক্রিকেটে বৈষম্য, সেই থেকে বঞ্চনাজনিত হতাশা, ব্যক্তি মানসিকতাকে উসকে দেয় যেটি ফুটবলে ঘটে ঠিক উল্টোটা। এখানে সবাই সমান, সমান গুরুত্বপূর্ণ - প্রতি মূহূর্তেই। এই কারনেই সামাজিক শিক্ষার বাহন হিসেবে ক্রিকেট কোনদিক থেকেই ফুটবলের কাছাকাছি ভুমিকা রাখতে পারে না। ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবল আরেকটি দিক থেকে সামাজিকভাবে খেলা হিসেবে সহজ। একটি মাঠে কয়েকটি ছোট ছোট ভাগ কওে ফুটবল খেলা হতে পারে কিন্তু একটি মাঠে কয়েকটি ক্রিকেট খেলা জটিল। আমাদের মাঠের সংখ্যা এমনিতে অনেক কমে এসেছে, তখন অনেকে খেলার জন্য ফুটবলটাই একটা আদর্শ খেলা। সাস্থ্য এবং শরীরচর্চার দিক থেকে চিন্তা করলেও - ফুটবল ক্রিকেটের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। অল্প এবং নিদিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটি খেলা শেষ করে ফেলা যায়, এরকম আরও অনেক গুণ আছে ফুটবলের মধ্যে যার কারনে ফুটবল শরীর, মন এবং মনস্ততত্ব গঠনে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যে কারনে ফুটবল আমাদের দেশে জৌলুশ হারালেও সারা পৃথিবীর এটিই সবচেয়ে বেশি গৃহিত খেলা। এবারের বিশ্বকাপের থিমটিও শিক্ষা। যে শিক্ষা মানুষের সাথে মানুষের বোঝাপড়ার মনস্তত্বকে গড়ে তুলবে খুব সহজভাবে।
আমাদের এই বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় ফুটবলের জনপ্রিয়তার ঘাটতি শুরু হয়েছিল ৯০ এর দশকের পর থেকে। বাংলাদেশের মানুষের মনের একটা পরিবর্তনও শুরু হয়েছিল এই সময় থেকেই। বলতে গেলে - এ অঞ্চলের সুদীর্ঘ স্বৈরাচার এবং আধিপত্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন মানুষের মধ্যে যে ঐক্যবদ্ধ চেতনার জন্ম দিযেছিল ৯০ এর গলঅভ্যূত্থানের পরে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর একপেশে আচরনে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিল। আত্মকেন্দ্রিক একটা মনস্তত্ব সবার মধ্যে তরতর করে বেড়ে উঠছিল। সেই সময়েই এলো স্যাটেলাইট টিভি, কম্পিউটার। খেলা ভুলে সে নিজেই এই প্রযুক্তির বিনোদনের মধ্যে নিজের জন্য একটা জগত বানিয়ে তার মধ্যে ডুবতে শুরু করেছিল। ক্রিকেট - যতটা খেলার তার চাইতে বেশি দেখার। যে ফুটবল ভালবাসে- সে একটু আধটু ফুটবল খেলেই কিন্তু সারাটা দিন ধরে ক্রিকেট মানুষকে ডুবিয়ে রাখতে পারে। বাংলাদেশের ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশ নিশ্চয়ই একটি সুখকর ঘটনা, কিন্তু একে আশ্রয় করে সে যে ফুটবলকে ভুলে গেল তার মুলে সেই নিঃসঙ্গ আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি মনস্তত্বের বিকাশটাই কাজ করেছে। আত্মকেন্দ্রিক মনস্তত্ব আমাদের ক্লাব সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে মানুষের সামাজিকভাবে বেড়ে তোলার পরিবেশকে আরও সঙ্কুচিত করে ফেলে।
এ ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। কি ভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেবো?
কিভাবে নিজদের মধ্যে সহযোগিতামূলক বোঝাপড়ার মনস্তত্বকে গড়ে তুলবো?
ফুটবল এব্যাপারে একটা কার্যকরী শিক্ষা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে ফুটবল ফেডারেশন আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ওয়ার্ড কমিশনারদের মত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ফুটবল কাঠামোর সঙ্গে জড়িত করতে পারে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতিযোগিতা, মাঠ নিশ্চিত করার মত কাজগুলোতে তাদের সম্পৃক্ত করলে ফুটবলের চর্চাটা শেকড়পর্যায় থেকে আরও শক্তিশালী হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের মধ্যে ফুটবল চর্চা করলে প্রতিষ্ঠানের নিজেদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আরও বেড়ে যাবে তাতে কাজের উদ্দীপনা এবং পরিমানও বেড়ে যাবে।

আমাদের রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীদের মধ্যে ফুটবল খেলাটা মাঝে মধ্যে আয়োজন করলে রাজনৈতিক সহনশীলতার সংস্কৃতি আর একটু গভীর হতে পারে।

আর মেয়েরা - যেহেতু আগের মত মেয়েরা শুধু ঘরকান্নার কাজে আটকে থাকবে না – তাহলে ফুটবলটা শুধু ছেলেদের খেলা হবে কেন? প্রমীলা ফুটবল নিয়ে সামাজিক আন্দোলন নারী পুরুষের বৈষম্যের সাংস্কৃতিক চেহারাটা পাল্টাতে সাহায্যই করবে।

এভাবে ফুটবল আমাদের মনকে শিক্ষিত এবং প্রসারিত করে তুলতে পারে। আর শরীরকেও করে তুলতে পারে সবল, উদ্দীপ্ত আর সাবলীল।
তাই আসুন ফুটবল খেলি, ফুটবল খেলতে বলি, ফুটবল দেখি আর ফুটবলকে ভালবাসি।

আরিফ_শ্রাবন এর ছবি

তালগাছটা আপনাকে দিলাম
গুরু ক্রিকেট বল চাই। দেবেন একখানা............

 তাপস শর্মা  এর ছবি

অসাধারণ, চমৎকার, যাই বলা যায় কম হবে।
জাস্ট স্যালুট ম্যান।

কল্যাণF এর ছবি

লেখা আর মন্তব্য দুইটাই হাততালি

বন্দনা কবীর এর ছবি

খেলাধুলোর ব্যাপারগুলো বুঝি কম। তবে লেখা বুঝি হাসি

গুরুদেবের "বল" নিয়ে রম্য পড়তে মজাই লাগলো।

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।