মিডিয়ায় এপ্রিল ফুল!!!!

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: শুক্র, ০২/০২/২০০৭ - ৪:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সুইসদের স্প্যাগেটি চাষ

হঠাৎ করে যদি টিভি নিউজে দেখেন সিলেটের এক ভদ্রলোক বাসার টবে নুডুলস চাষ করেছেন আর উঠোনে সিঙারা; আর সেই গাছগুলোয় দিব্যি থোকে থোকে ঝুলে আছে নুডুলস কিংবা সিঙারা,তাহলে কেমন লাগবে আপনার ?

ঠিক এধরনেরই এক অবাক কান্ড খুজে পেয়েছিল বিবিসি। জি্ব,লন্ডনের বিবিসির কথাই বলছি। 1957 সালে তাদের সংবাদ ভিত্তিক শো 'প্যানারোমা'তে দেখা গেল সেই সাড়া জাগানো সংবাদ। বিবিসি দাবী করলো সে বছর সুইজারল্যান্ডে শীত পড়েছে কম আর তাই বাম্পার ফলন হয়েছে স্প্যাগেটির ! (স্প্যাগেটি হচ্ছে নুডুলস জাতীয় খাবার,যেটি বেকারিতে তৈরী হয়)

এ নিয়ে এক বিষদ প্রতিবেদন প্রচার করল 'প্যানারোমা'। সুইজারল্যান্ডের গাছে গাছে থোক থোক স্প্যাগেটি ঝুলে থাকার দৃশ্য দেখে ভিমরি খেল ইংল্যান্ডের জনসাধারন। বিবিসির শোতে সুখি সুখি চেহারা নিয়ে সাক্ষাতকার দিলেন সুইস স্প্যাগেটি চাষীরা।তারা তাদের ফলন নিয়ে মহাখুশি।

অনুষ্ঠান প্রচারের পরপরই,আগ্রহী বৃটিশদের টেলিফোনের অত্যাচারে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ল বিবিসির স্টুডিও। সবাই জানতে চায় ,ব্রিটেনে কিভাবে স্প্যাগেটি চাষ সম্ভব। বিবিসির জবাবটা ছিল কৌশলী। তারা বলল,টমেটোর সসে স্প্যাগেটি ঢালুন,ফল পাবেন। বলা বাহুল্য এটি আসলে স্প্যাগেটি রান্নার একটা পদ্ধতি মাত্র।

আসল ঘঠনা অন্য। প্রতিবেদনটি প্রকাশের তারিখ ছিল 1লা এপ্রিল আর বিবিসি তার দর্শকদের করেছিল এপ্রিল ফুল।

ছবির মতো দেশ সান শেরিফ

টু্যরিস্ট আকর্ষনের জন্য কতো তোড়জোড়ই না করে বিভিন্ন দেশের সরকার। কতো সুবিধাই তো দেয়া হয়। তবে টু্যরিস্ট আকর্ষনের জন্য এক চমৎকার বুদ্ধি ফেঁদেছিল ভারত সাগরের ছোট্ট দ্বীপদেশ 'সান শেরিফ'।1977 সালে গার্ডিয়ানের মতো বহুল প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তারা 7 পৃষ্ঠার এক বিশাল ক্রোড়পত্র বের করে। এতো বিশাল ক্রোড়পত্র বের করতে কতো টাকা যে লেগেছিল আল্লাহ মালুম।
কিন্তু সুন্দর ডিজাইনের এই ক্রোড়পত্রে পুরো দেশটির পরিচয় ভালো ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে।

যেমন ধরা যাক,দেশটির মানচিত্র অনেকটা দেখতে সেমিকোলন (চোখ টিপি ধরনের। অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপের সমাহার দেশটিতে। দেশটি আবার 'আপার কেস; আর 'লোয়ার কেস' এই দুইটি প্রশাসনিক প্রদেশে বিভক্ত। মানচিত্রের ওপরের দ্বীপগুলো নিয়ে 'আপার কেস' আর নিচের দেশগুলো নিয়ে 'লোয়ার কেস' অঞ্চল গঠিত।সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল পিকাহ এই সুন্দর দেশটি কঠোর ভাবে শাসন করেন,তাই টু্যরিস্টদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোন সমস্যাই নেই।আর রাজধানী 'বডোনি' তো ক্যালেন্ডারের ছবির মতোই ছিমছাম।

গার্ডিয়ানের উৎসাহী পাঠকরা পত্রিকার অফিসে বার বার ফোন করে সান শেরিফ দেশটি সম্পর্কে আরো তথ্য জানতে চান। বিশেষ করে কোন কোন এয়ার লাইন দেশটিতে যায়,যেতে ভিসা লাগে কি না,হোটেল মোটেল গুলোর সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যায়,এসব তথ্য পেতে সবার আগ্রহের শেষ ছিল না।

হায়,অচিরেই সত্য উদঘাটিত হলো ।উৎসার্হ পাঠকদের উৎসাহে ছাই দিয়ে জানা গেল সান শেরিফ নামে আদতে কোন দেশই নেই। পুরোটাই 'গার্ডিয়ান' পত্রিকার রসিকতা।

প্রতিবেদনটি যে ছাপা হয়েছে এপ্রিলের 1 তারিখ,তা বুঝি খেয়াল করেন নি পাঠকরা!

পাদ্রী যখন বেসবল খেলোয়াড়

আমাদের দেশে একসময় আবাহনী-মোহামেডান এর ফুটবল নিয়ে যে রকম উম্মাদনা ছিল,ঠিক তেমনি উম্মাদনা আমেরিকায় বেসবলকে ঘিরে।কোন প্লেযার কোন টিমে যাচ্ছেন,কার পারিশ্রমিক কতো তা নিয়ে সমর্থকদের আলোচনার শেষ নেই।

1985 সালে বেসবল লীগ শুরুর আগে আগে প্রভাবশালী বেসবল ক্লাব 'মেটস' এর এক গোপন খবর ফাঁস করে দেয় বহুল প্রচারিত ক্রীড়া পত্রিকা 'স্পোর্টস ইলাসট্রেড'।

পত্রিকাটি জানায় যে 'মেটস' এবছর ভাগ্যগুনে এক অখ্যাত পাদ্রীকে পেয়েছে। সিড ফিন্চ নামের এই পাদ্রী ঘন্ঠায় 168 মাইল বেগে বেসবল ছুড়তে পারেন। তখন পর্যন্ত বেসবল ছুড়ার বিশ্বরেকর্ড ছিল 103 মাইল। সুতরাং সিডফিন্চ যে সর্বকালের সেরা একজন বেসবল খেলোয়াড় হতে চলছেন,তাতো বলাই বাহুল্য।

মজার ব্যাপার হচ্ছে সিড ফিন্চ যে এতো ভালো বেসবল খেলতে পারেন সেটা তার নিচেরই জানা ছিল না। বেসবল নিয়ে তার কোন উৎসাহ ছিল না কোনদিনই। নিভৃতচারী সিড ফিন্চ ধর্মযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তার মাস্টার্স করেছিলেন এক তিব্বতি ধর্ম ইন্সটিটিউটে আর তার থিসিসটি সুপারভাইজ করেছিলেন বিখ্যাত তিব্বতি ধর্মগুরু মিলারসপা লামা।

গোপন খবরটি প্রকাশের পর সারাদেশের স্পোর্টস ফ্যানদের মাঝে ঝড় বয়ে যায়। 'মেটস' এর ফ্যানরা শ্যাম্পেন ছিটিয়ে,রাস্তায় উল্লাস করে তাদের ফূর্তির কথা জানান দেয়।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তাদের সব শ্যাম্পেন আর বিয়ার,জল হতে সময় লাগে না যখন জানা যায় 'স্পোর্টস ইলাসট্রেড' এর এপ্রিল ইস্যুতে ছাপা হওয়া এই সংবাদটির উদ্দেশ্য ছিল পাঠকদের বোকা বানানো।আর এই ভূয়া গল্পটি সুন্দর করে ফেদেছিলেন রিপোর্টার জর্জ প্লিম্পটন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।