আমাদের পরিবারে এগারোজন দেবদূত (রাজনৈতিক পোস্ট।দুর্বল চিত্তের পড়া নিষেধ।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ০৭/০২/২০০৭ - ৫:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অবতরণ পবর্

অত:পর একরাতে হুট করেই তারা নামলেন। সেই গভীর রাতে আমরা ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আধো আলো,আধো ছায়ায় কয়েকজন দেব দূত আমাদের বিছানার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের সবার পরনে সাদা কাপড় ,তাদের মুখ,বাহু,গলা সব কিছুই সাদা সাদা।তাদের মাঝে কোন মলিনতা নেই।

আমার ছোট ভাই ভয়ে কেঁদে ফেলল। আমি ভয়ে ভয়ে গুনে দেখলাম তারা এগারো জন। একজন একটু বড়ো সড়ো,তিনি হয়তো প্রধান দেবদূত,বাকি দশজন একটু ছোট ছোট।

তারা এসেছেন আমাদের শুদ্ধ করতে। আমরা কেউ তাদের ডাকিনি,তবু তারা এসেছেন। আমরা দুই ভাই আজ সকালে একটা আম নিয়ে ঝগড়া করেছিলাম। আমি গোপনে এক টুকরো আম বেশি খেয়েছি,আর তাই দেবদূতরা এসেছেন আমারে কালিমামুক্ত করতে।

শান্তি পবর্

বড়ো দেবদূত বললেন 'তোমরা দুইজন বড়ো খামচা খামচি করো। তোমাদের নখ কেটে দেয়া জরুরি।' আমার বয়েস সাত বছর,আমার ভাইয়ের বয়স পাঁচ।মা আমাদের নখ কেটে দেব,একটুও ব্যথা লাগে না। দেবদূতের কথায় তাই আমরা আপত্তি করলাম না। আমাদের নখ কেটে দেয়া হলো।

এবার কথা বলে উঠলেন একজন ছোট দেবদূত।তিনি বললেন ,'আমরা স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে।বার বার এসে তোমাদের নখ কাটতে পারব না। আবার পনের দিন পরে নখ উঠবে আর তোমরা দুই ভাই খামচা খামচি করবে।' অন্য দেবদূত তার কথায় সায় দিলেন।

একটা বড়োসড়ো চিমটা এনে আমাদের নখ গোড়া শুদ্ধ উপড়ে ফেলা হলো এবারে। প্রচন্ড ব্যথায় আমার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম। প্রস্তাবকারী দেবদূতকে এবার বেশ হৃষ্ট মনে হলো। তিনি প্রসন্ন গলায় বললেন,ব্যস আর কোনদিন নখও উঠবেনা,খামচা খামচিও করতে পারবে না।

অন্য এক দেবদূত তার এই প্রসন্নতায় ঈর্ষান্বিত হলেন। তিনি বললেন, 'নখ নেইতো কী হলো,পিচ্চিদের দাততো আছে। কামড়া কামড়ি করবে।' এবারও বাকি দেবদূতরা হই হই করে সায় দিলেন। এবার নোড়া এনে আমাদের দুই ভাইয়ের সবগুলো দাত ভেঙ্গে দেয়া হলো। আমাদের কচি মুখ রক্তে ভেসে যেতে লাগল।

তারপর আরেক দেবদূত বললেন,' মারামারি না করতে পারলে কি হবে,গালাগালি তো করবে। এদের জিব কেটে ফেলা দরকার্'।ব্যস,একজন কেচি দিয়ে ঘচাং করে আমাদের জিবও কেটে নিলেন। আমার ছোট ভাই ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে পড়ল।

পরবর্তী কয়েকঘন্টা ছিল নিদারুণ কষ্টের।
কেউ বললেন,ঝগড়া করার মূল কারন,তারা একে অন্যকে দেখে। তাদের চোখ গেলে দিলেই সমাধান হবে। একটা গরম শিক ঢুকিয়ে আমাদের চোখ গেলে দেয়া হলো এবারে।

আরেকজন বললেন,কানের পর্দা ফুটো করা দরকার ।তাহলে আর গালাগালি শুনবে না,রাগও করবে না;ঝগড়াও লাগবে না।

আবশেষে ঈশ্বর

সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমাদেরকে শান্ত করতে একে একে কেটে ফেলা হয়েছে জিব,কান,দাত,নখ...।

এবারে প্রধান দেবদূত যোগাযোগ করলেন ঈশ্বরের সাথে। 'মিশন কমপ্লিট হে মহামহিম।' তিনি রিপোর্ট করলেন।

হো হো করে হেসে ওটার আওয়াজে আমাদের ছোট্ট ঘরটা গমগম করে উঠলো।

ঈশ্বর বললেন,'হে মূর্খ দেবদূত সমাজ,তোমরা কোনই কাজের নও। এদের শান্ত করলে কী হবে,এরপর আসবে এদের উত্তরপুরুষ,তারাও একই ভাবে ঝগড়া বিবাদ করবে। এরচেয়ে কি এই ভালো নয় যে,তাদের জন্ম প্রক্রিয়াই বন্ধ করে দেয়া। নিশ্চয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।'

দেবদূতরা অধোবদনে ঈশ্বরের বাণী শুনলেন।

তারপর ঘ্যাচ করে কেটে দিলেন আমাদের যৌনদন্ড।

আমি আর আমার ভাই নিথর হয়ে পড়ে থাকলাম।
সারা ঘরে শান্তি বিরাজ করছে...আর সেই সুখে এগারোজন দেবদূত মহাআনন্দে ঘুমাতে গেলেন....

শিরোনাম : হুমায়ুন আজাদের 'আমাদের শহরে একদল দেবদূত' অবলম্বনে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।