যুক্তরাষ্ট্রের হাইওয়ে পুলিশ ও তারেক রহমান:একটি গল্প,একটি আশংকা

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: রবি, ১১/০৩/২০০৭ - ৬:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রথমে গল্পটি বলে নেই :
সাঁই সাঁই করে আটলান্টার হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছে একটি গাড়ি। গাড়ি চালাচ্ছেন এক হাল ফ্যাশনের তরুন। গাড়ির স্পিড মিটারের কাটা 110-130-140-180 পেরিয়ে 200 মাইলের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে।
টহল পুলিশের টনক নড়ল গাড়িটির এই বেদম ছুটে চলা দেখে। এই রাস্তায় সবের্াচ্চ স্পিড লিমিট 130 মাইল,অথচ গাড়িটি চলছে 200 মাইল গতিতে!! নির্ঘাত চালক বেটা মাতাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। যে কোন মুহুর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ব্যস,টহল পুলিশ সাইরেন বাজিয়ে পিছু নিলেন গাড়িটির। অনেক্ষন ধাওয়া করে সামনের গাড়িটিকে থামাতে পারলেন তিনি। এবার গাড়ির চালকের কাছে এসে বললেন,

: আপনি যে ওভার স্পিড এ গাড়ি চালাচ্ছেন,সে খেয়াল আছে ?
:স্যরি,আমি খেয়াল করিনি। আমার মাথা কাজ করছে না।আসলে আজ অতিরিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছি। জবাব দিল তরুন ড্রাইভার।

:কী সর্বনাশ!! আপনি ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছেন ! আপনার লাইসেন্স তো বাতিল করে দেব আমরা।
:কিন্তু স্যার,খুনটা করার পর আমার মাথা তো ঠিক নেই। একটু মাল টাল না টানলে লাশগুলোর গতি করব কেমনে? তরুণের পাল্টা জবাব।

: আপনি খুন করেছেন ?কী ভাবে ?কেন ? এবার পুলিশ জানতে চাইল।
:এমি্নই করলাম। শখ বলতে পারেন। পিস্তলটা আমার ড্যাশবোর্ডে রাখা আছে।দেখাবো ?

বেচারা টহল পুলিশের আত্মা খাচাছাড়া হয়ে গেল।শখ করে খুন করে এমন পাগলের সাথে তার আগে কখনো দেখা হয় নি।আমতা আমতা করে জানতে চাইলো,

:ইয়ে ,লাশটি কোথায় লুকিয়েছেন ?
:লাশ তো একটা নয়,দুইটা। আমার গাড়ির বুটেই রাখা আছে।কোন সমস্যা আছে আপনার ?

এবার টহল পুলিশ দ্রুত তার গাড়িতে ফেরত গেল।ওয়্যারলেস দিয়ে মুহুর্তেই খবর পাঠালো আশেপাশের সবগুলো পুলিশ স্টেশনে। এক বিরাট উম্মাদ খুন ধরা পড়েছে। একে সামলানো তার একার কম্ম না। দ্রুত সাহায্য পাঠানোর আবেদন জানাচ্ছে সে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই হেলিকপ্টার আর পুলিশের গাড়িতে গোটা এলাকা সয়লাব হয়ে গেল।
এক উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা খুব সাবধানে গেলেন ঘিরে রাখা গাড়িটির পাশে।কথা বললেন তরুনের সাথে।

: আপনি কি ড্রিংক করে গাড়ি চালাচ্ছেন ?
:কী আশ্চর্য!!ড্রিংক করে গাড়ি চালাবো কেন ? তরুনটি অবাক হয়ে জানতে চায় এবার।

পুলিশ কর্মকর্তা তরুনটিকে সাবধানে নামিয়ে আনেন গাড়ি থেকে। তরুনের মুখ শুকে দেখেন,সেখানে মদের গন্ধ নেই।সুন্দর মিষ্টি গন্ধ।

:আমরা আপনার গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে আপনার পিস্তলটি বের করব।আপনি দূরে থাকুন। পুলিশ কর্মকর্তা তরুনটিকে আদেশ দেন। চোখ কপালে উঠে তরুনটি।
:কী বলছেন আবোল তাবোল। আমার গাড়িতে পিস্তল থাকবে কেন ?

তরুণের কথায় পাত্তা না দিয়ে সাবধানে ড্যাশবোর্ড খুলেন অফিসার। সেখানে পিস্তলতো দূরের কথা,একটি নেইল কাটারও দেখা যায় না।

একটু চিন্তায় পড়েন অফিসার। নিশ্চয়ই কোথাও ঘাপলা আছে। তবে দমে না গিয়ে তরুনটিকে বলেন 'আপনার গাড়ির পেছনের বুটটি খুলব। চাবি দিন।'
হা হা করে উঠলো তরুন।'দেখুন,এটা কিন্তু একজন নিরীহ নাগরিককে হয়রানি করা হচ্ছে।কী কারনে আমার গাড়ির বুট খুলবেন ?আমি কি ড্রাগ ডিলার?'

'তার থেকেও বেশি।আমাদের কাছে খবর আছে আপনি বুটে লুকিয়ে দুইটি মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছেন।' বলতে বলতে বুট খুলে ফেললেন অফিসার। কিসের কী,বুটে কোন মৃতদেহ তো নেইই ,একটুকরো কাগজ টাগজও নেই। একেবারে পরিষ্কার।

এবার তরুনটি হাউকাউ বাধিয়ে দিল। 'এ সবের মানে কী? আমাকে রাস্তায় এভাবে হেনস্থা করে,খুনি মাতাল ডেকে আপনারা কী বুঝাতে চাচ্ছেন ? আমি সাংবাদিক সম্মেলন করব,পুলিশ হেডকোয়ার্টারে নালিশ করব।' তরুনের চিৎকারে আশপাশ সরগরম হয়ে গেল।

পুলিশ অফিসারটি এরকম বিব্রত আর জীবনেও হননি।তিনি মাথা চুলকে বললেন,'স্যরি,নিশ্চয়ই কোথাও একটা বড়ো ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমরা আপনার কাছে মাপ চাচ্ছি। আমাদের এক টহল পুলিশ রিপোর্ট করেছে আপনি নাকি মাতাল হয়ে পিস্তল দিয়ে দুইজনকে খুন করে ,লাশ নিয়ে পালাচ্ছেন। এখন তো দেখা যাচ্ছে সে ভুল কথা বলছিল।'

তরুনটি ক্ষেপে গিয়ে বলল,' আপনাদের টহল পুলিশ তো সবসময়ই ভুল কথা বলে।ঐ ছাগলটা নিশ্চয়ই এখন বলবে আমি গাড়িও চালাচ্ছিলাম 200 মাইল স্পিডে ।'

সিনিয়ার অফিসারটি কাচুমাচু করে বললেন,' ওই টহল পুলিশটার বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা মাপ চাচ্ছি। আপনি নিশ্চন্তে চলে যান।'

এবার আশংকাটির কথা বলি:
আমাদের যুবরাজ তারেক রহমানকে আটক করা হয়েছে।তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন নিজ দলেরই এক নেতা!!!

আমার ধারনা,এভাবে আরো কিছু মামলা হবে তারেকের বিরুদ্ধে।সবগুলোই করবেন তারেকের খাতিরের লোকজন।

তারপর ,একসময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার উপক্রম হতেই,তারা একযোগে সবগুলো মামলা তুলে নেবেন। প্রেস কনফারেন্স করে বলবেন,' তত্বাবধায়ক সরকারের চাপে পড়ে মিথ্যা মামলা করেছিলাম।'

আর সেই ডামাডোলে আমরাও বিশ্বাস করব যে ,এতোগুলো মামলা যখন ষড়যন্ত্রের অংশ,তাহলে সরকারের করা অন্য মামলাগুলোও ষড়যন্ত্রই ছিল।

আর তখন আমরাও সেই পুলিশ কর্মকর্তার মতো মাপ চেয়ে তারেকের জন্য পথ ছেড়ে দেব...।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।