আফগানিস্তানের মোল্লা ওমর থেকে দিরাই থানার শহিদুল: মানুষ ইতিহাসের গতি কি আর পশুর পালে আটকাতে পারে ?

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ১২/০৩/২০০৭ - ৬:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এক.
1500 বছর আগের কথা বলছি।
রুক্ষ আফগানিস্তানের সুউচ্চ পাহাড়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা হলো নিরেট পাথরের বৌদ্ধ মুর্তি। 175 ফিট উচু একটি ,আরেকটি 120 ফিট। পাহাড়ের নিচ থেকে দেখলে মনে হতো মহাপুরুষ গৌতম বুদ্ধ আকাশ আর মাটিকে একসাথে ছুয়ে দাড়িয়ে আছেন।
তারপর বহু কাল গত হয়েছে। আফগানের অন্ধকার গিরিপথ পেরিয়ে তৈমুর লং,নাদির শাহ এসে বারংবার লুন্ঠন করে নিয়ে গেছেন ভারত ভুমি।এসেছে মাৎস্যনায় যুগ,পাল বংশ থেকে মোগল রাজবংশ।

রুক্ষ র্ববর আফগানে ইসলাম তার শান্তির পতাকা তুলে দিয়েছে ঘরে ঘরে।রাজা গেছে,মানচিত্র বদলেছে ,বদলেছে ভাষার গতিপথ এমন কি ধর্মও।

তবু সেই কালের গতিপথকে ধারন করে আকাশসম বৌদ্ধ মর্ূির্তগুলো ঠাই দাড়িয়ে ছিল সেই ধুলিময় পাহাড়ে;মানুষের বিপুল ভালোবাসা,বিশাল সৃজনশীলতাকে ধারন করে।

দুই.
তারপর আফগানিস্তানে হুট করে একদিন এলো তালিবানি শাষন।
তালিবান হিংস্র পশুরা মাতলো ধ্বংসের উৎসবে। তারিখ ঘোষনা করা হলো সেই মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলার।
সারা পৃথিবী থেকে অগনিত মানুষ আবেদন জানালেন মুর্তিগুলো রক্ষার।প্রবাসী আফগান প্রকৌশলীরা প্রস্তাব করলেন ,মুর্তিগুলোকে দেয়াল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যেতে।অসংখ্য বিদেশি সংস্থা যে কোন মুল্যে মুর্তিগুলো কেনার প্রস্তাব দিল।
আবেদন জানালো জাতিসংঘ,ফ্রান্স,জার্মান,অষ্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড,জাপান,ভারত সরকার।

সব আবেদন নিবেদন অগ্রাহ্য করে মোল্লা ওমরের নির্দেশে বোমা মেরে ধ্বংস করে ফেলা হলো বৌদ্ধের এই বিশাল মুর্তি। হারিয়ে গেল হাজার বছরের দুইটি ঐশ্বর্য।

তারিখটি 2001 সালের 1লা মার্চ।
---------------------------------------------------------------

এক.
সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা সদরে রয়েছে 400 বছর পুরোনো একটি মুর্তিশীলা।
সেই কবে সেটি স্থাপন করা হয়েছিল,কারা সেটি স্থাপন করেছিলেন সে ইতিহাস এখন আর পরিস্কার নয়।

তবু আমরা স্বপ্ন দেখি ,একদিন আমাদের দেশেও ভোর হবে।আমাদের উত্তর প্রজন্ম জ্ঞানে বিজ্ঞানে টেক্কা দেবে পৃথিবীর মানুষদের সাথে। আর সে দিন এই সব মুর্তিশীলা খুটে খুটে তারা বের করবে পূর্বপুরুষের ইতিহাস।সেই অনাগত উত্তরপুরুষের জন্য তাই গভীর মমতায় আমরা এই স্থাপনাগুলো আগলে রাখি।

কিন্তু তত্বাবধায়ক সরকারের এই ডামাডোলে আজ চারিদিকে শুধু ধ্বংসের উৎসব।
দিরাই উপজেলার মাননীয় টি.এন.ও শহিদুল সাহেব তার কাজ দেখানোর জন্য বড্ড উৎসুক। ছোট্ট উপজেলা সদরে ভাঙ্গার মতো আর কয়টা জিনিষই বা থাকে। সুতরাং তিনি চোখ ফেললেন 400 বছর পুরোনো সেই মুর্তিশীলাটির দিকে।

প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন রহমান মিজান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি।
শহিদুল সাহেবের সাথে পারবেন,এমনটা সাধ্য কি তার। বহু বুঝানো,আবেদন নিবেদন,প্রত্মতত্বের দোহাই, কোন কিছুতেই মন গলেনি টি.এন.ও মহোদয়ের। উল্টো মিজানকে আটকে রাখা হলো,সিজ করা হলো তার মোবাইল ফোন।
আর ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে সরকারের 30 হাজার টাকা খরচ করে সেই মুর্তিশীলাটি ভেঙ্গে ফেললেন আমাদের টি.এন.ও সাহেব।

তারিখ টি 10 ফেব্রুয়ারি ,2007।

স্বপ্ন আর আফসোস

মোল্লা ওমরের তালিবানি শাষন আর নেই।
আমার বুকের গভীরে জানি ,শহিদুল সাহেবের শাষনও নশ্বর কিছু নয়। তাকেও যেতে হবে।

তবু হায়,
একজন মোল্লা ওমর কিংবা একজন শহিদুল আমাদের যে ক্ষতি করে গেলেন,সেই ক্ষতি আর হাজার বছরেও পূরণ হবে না...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।