ভুরুঙ্গামারির হরিশ চন্দ্র :আপনাকে হাজার প্রণাম।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/০৩/২০০৭ - ৩:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় হরিশ চন্দ্র ,
আজ আমি কোন শোকগাথাঁ লিখব না ।
আপনার মৃতু্য এই দেশের বিচারে এতোই তুচ্ছ যে ,নেহায়েৎ সার সংকটের কথা বলে সরকারকে বিব্রত করতে না পারলে,দৈনিকের শেষ পাতার চার হাজার টাকা ইঞ্চির দামী স্পেসে আপনার প্রয়ানের কথা ছাপা হতো না কখনো।

আপনার বড়ো মান অপমানের ভয় ছিল। তার চেয়েও বড়ো ছিল পেটের দায়। মাঠের সোনালি ধানের ঝিলিকের প্রতি আপনার ছিল আশৈশব ভালোবাসা। আর সেই লোভে পড়ে আপনি এক বস্তা সার বেশি দিতে গিয়েছিলেন ক্ষেতে।

প্রিয় হরিশচন্দ্র,
বন্ধুকে না বলে নেয়া সেই সারই আপনার জন্য কাল হলো। আপনি সেই সারের দামটিও পরিশোধ করেছিলেন বটে।
তবু ,আপনার বন্ধু যোগেনেরও সেই সারের যে বড্ড প্রয়োজন ছিল। তার জমিও তো আপনারই মতো,মাঠের বুকে নুয়ে পড়ে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে তারও ফসল সন্তান।

আর তাই আপনার উপর শালিস ডাকার পুরো অধিকারই তার ছিল।

প্রিয় হরিশচন্দ্র,
আপনি বড্ডো বোকা।
এই দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেও দামী বাড়ি-গাড়ি-নারীতে আমরা কিভাবে বুক চিতিয়ে পথ চলি সেটা আপনার চোখে পড়ে নি।

এদেশে আমাদের কোন মান অপমান বোধ নেই।
এদেশে আমরা অজু করে এসে ঘুষের টাকা গুনতে বসি দ্রুত,পাছে নামাজটা কাজা হয়ে যায় পরে।
আমরা আঙুল উচিয়ে 'ভি' চিহ্ন দেখাই,এক সেলে বসে হাসি আর আর পাঙাস মাছের কোপ্তা খাই।
আমরা জানি একদিন আবার আমরা বের হয়ে আসবো;মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর আর লন্ডনে কিনে নেয়া আমাদের বাড়িগুলো তে তখন খুব বড়ো পার্টি করে সেলিব্রেট করব।

শুধু,আপনি, ভুরুঙ্গামারির দরিদ্র কৃষক হরিশচন্দ্র,আপনার কাছে এক বস্তা সার ব্যবহারই বেশি হয়ে গেল!!!

হরিশচন্দ্র শ্রদ্ধাভাজনেষু,
আপনার মৃতু্যতে এই দেশের ,এই সমাজের এই রাষ্ট্রের কিছুই যাবে আসবে না।

তবু ,এই অধম আরিফ জেবতিকের শেষ শ্রদ্ধাটুকু আপনি গ্রহন করুন।
এই দেশে এখনো যে বেহায়ার চারণভুমি হয় নি,এখনো যে কিছু লোকের মাঝে মান অপমান বোধ রয়েছে, সেটা আপনি জীবনের দামে আমাকে জানিয়ে গেলেন।

ভুরুঙ্গামারির দরিদ্র কৃষক হরিশ চন্দ্র,আমি পরম শ্রদ্ধায় তাই আপনার চরণ ছুয়ে দিচ্ছি।
আপনি এই শেষ যাত্রায় ,আমার প্রণতি গ্রহন করুন।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।