সেগুন বাগিচায় রাগ ইমনের সাথে কাউয়া দেখিতেছি...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ১৯/০৩/২০০৭ - ৮:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমার পাশে বসেছে কামরুল আহবাব (ইনি নজমুল আলবাব সাহেবের বড়ো ভাই।) আর তার মিসেস। বেচারা নাটক দেখে আরাম পাচ্ছে না। উসখুশ করছে।উহু,নাটকের দোষ নয়।দোষটা তার।

আমি আর আমার বউ বসেছি 50 টাকা দামের গ্যালারিতে।কিন্তু কামরুল কেটেছে 2টি 200 টাকা দামের টিকেট। অথচ,হলে ঢুকে আমাকে পিছনের দিকে দেখে পিছনে চলে এসেছে। এখন পাকা ব্যবসায়ী কামরুল চিন্তা করে দেখেছে,তার পাক্কা লস 300 টাকা।মিনমিন করে বলল,'শালারে কইলাম 50টাকা দামের টিকেট দে,শালায় কয় টিকেট নাই।এখন তো দেখি পুরা পিছন খালি!!'

আমি কথা বাড়াই না। আমার পুরো মনোযোগ নাটকের দিকে। দেশ নাটকের নাটক,ভালো প্রোডাকশন ,দেখে মজা পাওয়া যায়। তবে আমি নাটক দেখছি না,আমি মনে মনে খুজছি রাগ ইমনকে। রাগ ইমন এই নাটকে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রেখেছে ,সেই ভুমিকাটা কি বোঝার চেষ্টা করছি।

নাটকের প্রধান চরিত্র অনেকগুলো কাক।কা কা করে তারা পুরো স্টেজ দখল করে নিয়েছে। কাকদের প্রায় সবার গায়ে একই ধরনের পোষাক,সুতরাং এদের মাঝে কোনটা যে রাগ ইমন সেটা বুঝতে পারছি না।

এ দিকে বউটাও উসখুশ করছে। মোবাইলের নীরব এস.এম.এস এ বাংলাদেশ ভারতের খেলার আপডেট পাওয়া যাচ্ছে আর কতোক্ষনে গিয়ে টিভির সামনে বসবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছে।

প্রথম অংশ শেষ। বিরতির ঘন্টা বাজলো। এদিকে মঞ্চে রাগ ইমনের দেখা নেই। আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে আমি স্টেজে ডিম মারতে পারি,এই হুমকিতে ভয় খেয়ে বেচারা আর অভিনয় করতে আসে নি। মনে মনে একটু খারাপও লাগলো, আহারে বেচারার প্রথম নাটক,দিলাম আমি ভেস্তে।

কামরুল আহবাবের বউ ক্রমাগত ঘ্যান ঘ্যান করছে,ছাতার এক হল করেছে,চিপসের প্যাকেট নিয়ে ঢুকতে দেয় না।

এ দিকে নাটকটা জমে উঠেছে খুব ।শেষ না করে উঠতেও পারছি না।

এই নাটকের মুল থিম হচ্ছে,এক দরিদ্র কাঠুরে পরিবারের ঘরের চালে একদিন এসে বসে দুইটি কাক। সেই কাক দেখার পর থেকেই তাদের জীবনে আসে না না বিপদ আপদ। বাস্তুচু্যত হয়ে শহরে আসে,মিথ্যা অপবাদে জেল খাটে আর এভাবেই একদিন তারা পুড়ে মারা যায় এই কাকদের জন্যেই।
---------------------------

অত:পর নাটক শেষ হলো। মঞ্চে সার বেধে দাড়ালেন কলাকুশলিরা। ঝুনা চৌধুরী তাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাবেন। ও মা!! হঠাৎ দেখি ব্যাকস্টেজ থেকে চুপি চুপি বেরিয়ে আসছেন এক মহিলা,এসে লাইনে দাড়ালেন সবার সাথে।

হঠাৎ আমার বউ আমাকে কনুই দিয়ে গুতো দিল।
:'আচ্ছা,ঐ যে ডানদিকের একেবারে শেষে শাড়ি পরা মহিলা,উনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে না ?'
:'কই,হু,একটু চেনা চেনা লাগছে মনে হয়। আচ্ছা বাদ দাও।' আমার জবাব।

বউ আরো তীক্ষ চোখে তাকায়। তারপর চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে মাথা ঘুরায়। 'আরে এই তোমার ব্লগের সেই ডাক্তার বান্ধবী না?'

আমিও গভীর ভাবে তাকিয়ে বলি,'হু,তাইতো মনে হচ্ছে।'

:মনে হচ্ছে কথাটার মানে কি ?তুমি জানো না ?
:ইয়ে না মানে জানতাম না ঠিক না,মানে..

:তাই তো বলি হঠাৎ করেই নাটক দেখার শখ হলো কেন ?
:হঠাৎ করে কোথায়!! আমরা নাটক দেখি না নাকি ?
:দেখি ,তবে বাংলাদেশের খেলার দিন খেলা বাদ দিয়ে নাটক দেখতে আসছ এর আগে কোনদিন ,আসছ?

আমি এবার মিনমিন করে কী যেন বলার চেষ্টা করি। উত্তরটা ঠিক যুৎসই মনে হয় না।এই বার আমার উপর অনেক কল্পিত অভিযোগ বর্ষিত হয়। কেন আমি ব্লগিং করতে গিয়ে দেরি করে বাসায় ফিরি ইত্যাদি ইত্যাদি...।আজ বাসায় যাওয়ার পর...্
---------------------------------------------

বাড়ি ফেরার পথে আমি আশু বিপদ থেকে বাচার বিভিন্ন ফন্দি ফিকির করতে থাকি। মেঝো ভাইয়ার বাসায় আমাদের সারা গুষ্টি জমা হয়ে খেলা দেখছে। রাতচুক্তি ব্যাপক খাওয়া দাওয়া,দল জিতলে আনন্দে ভেঙ্গে ফেলার জন্য কিছু কাচের জিনিষপত্র, সবই মজুত আছে।

আমি ঠিক করি রাতের মতো সেখানেই আস্তানা গাড়বো। সকালে সোজা অফিস...চবি্বশ ঘন্টা পরে যা হওয়ার তা হবে।

পাশের সিট থেকে ফিসফিস করে কামরুল। 'দোস্ত,দূ:খ করিস না।নাটকে দেখিস নি,কাউয়া দেখলে বিপর্যয় হবেই।তুই শালা কেন যে কাউয়ার নাটক দেখতে এলি...'
...........................................................................

এই পোস্টের কোন সত্যমিথ্যার দায় লেখকের নয়। এর কোন পরবর্তী কিস্তিও নাই।এটি নিছক রম্য।


মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ইহা অন্য কোথাও দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয়...... চিন্তিত

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

মনের মুকুরে কতো কিছু জানা যায়!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।