নিজ এলাকায় বউয়ের সাথে রিক্সা চড়িতেছি...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/০৩/২০০৭ - ৪:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আম্মা বাসায় নেই বেশ কিছুদিন ধরে।সুতরাং আমাদের বাসায় এই মার্চ মাসে পুরোপুরি স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়েছে। আমরা সকাল 8টায় বেরিয়ে পড়ছি এবং প্রায় মাঝরাতে বাসায় ফিরছি।

আমাদের পিচ্ছি দুই গৃহকর্মী ,রোকসানা আর হালিমাও সেই স্বাধীনতার পুরো ব্যবহার করছে। তারা নিয়মমতো সকাল 9টায় টিভি অন করছে এবং তাদের খাওয়া দাওয়া সহ যাবতীয় কাজ টিভি দেখতে দেখতেই করে যাচ্ছে। ছাদে মেলে দেয়া কাপড় গত 3/4 দিন ধরেই ছাদে আছে,আমার গোল্ডফিশগুলো খাদ্যাভাবে রোজা রাখছে,টবের গাছ গুলো পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে...বিড়ম্বনার শেষ নেই। তবে স্বাধীনতা বলে কথা,ওটা উপভোগে আমরা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছি না।

তো প্রতি সন্ধ্যায় আমার অন্যতম কাজ হচ্ছে বউকে গাড়ি চালানোর বিদ্যা দেয়া।ফেল করা ছাত্র পরবর্তীতে উচ্চ শ্রেনীর গৃহশিক্ষক হয়, সুতরাং আমার নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাক আর না থাক,গাড়ি চালানো বিদ্যা শিক্ষা দিতে আমি আপত্তি করি নি।

মুশকিল হচ্ছে, আমার বউ অতি খানদানি মেয়ে। গাড়ি চালানোর থেকে বিমান চালানোতে তার উৎসাহ বেশি।তাই সে কিছুক্ষন সোজা ভাবে গাড়ি চালায়,তারপর পরম উৎসাহে গাড়িকে পাখি মনে করে রাস্তার পাশের গাছের ডালে চড়তে চায়। দুর্ভাগ্য বশত: আমার গাড়ি উড়তে শিখে নি,তাই বেচারা বিকট শব্দে গাছে গিয়ে গুতো মেরে নিজের নাকের বারোটা বাজিয়ে ফেলে। এতে অবশ্য আমার,বউয়ের,কিংবা গাড়ির কারোই কোন আপত্তি ছিল না,কিন্তু এভাবে দ্রুত ঢাকাকে গাছ শুন্য করে ফেলার ব্যাপারে পরিবেশবাদীরা আপত্তি করতে পারেন ভেবে, গাড়ি চালানো শিক্ষা আপাত: স্থগিত করা হয়েছে।

কিন্তু ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগের আর কোন উপায় নেই। রাস্তায় যে জ্যাম,তাতে করে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে লোপ পায়। আশেপাশের বন্ধু বান্ধবদের বাসায় গত কুড়ি দিনে অন্তত পনের বার যাওয়া হয়েছে,তারা এখন দরজার কী হোল দিয়ে দেখে কাজের বুয়াকে দিয়ে বলে পাঠায়,'বাসায় নেই।' কাজের বুয়াও অম্লান বদনে এসে বলে ভাইয়া বলেছে,উনারা আজ বাসায় নাই।

তো এবার আমাকে গ্রেট জয় চন্দ্রের সাহায্য নিতে হলো।জয়ের ব্যাপারে এখানে একটু গৌরচন্দ্রিকা টানা যাক।জয় হচ্ছে একজন সকল কাজের কাজী রিঙ্া ড্রাইভার। সিলেটে যখন আমি আর বালিকা ঘন্টার পর ঘন্টা চক্কর দিয়ে বেড়াতাম তখন সে আমাদেরকে অম্লান বদনে বহন করত। আমি ঢাকা থেকে গেলে পরদিন ঘুম ভাঙবার আগেই জয় এসে বাসায় হাজির আর কয়েকদিনের ঘুরাঘুরি শেষে আমাকে একেবারে স্টেশনে তুলে দিয়ে তার ছুটি।

তো আমরা যখন সপরিবারে সিলেটের পাট চুকিয়ে ঢাকা চলে এলাম,জয়ও সিলেটের পাট চুকিয়ে ঢাকায় এসে হাজির। তাকে ঢাকায় একটা রিঙ্া কিনে দেয়া হলো। সে এখন ঢাকা শহরে রিঙ্া চালায় এবং কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আমার নিত্য দিনকার বাজারটা করে দেয়।(আরে মিয়া, ও'র পয়সায় নয়,আম্মার পয়সায়)।
-------------------
তো যা বলছিলাম,গাড়ি চালানো এবং বেড়ানোর প্রজেক্ট ফ্লপ মারার পর,আমি আর বউ এখন জয়ের রিঙ্া চড়ে ঘুরে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উঠব,রাত 9টা পর্যন্ত চক্কর।

আজ প্রথম রিঙ্ায় উঠেছি। চমৎকার আবহাওয়া। মৃদু বাতাস বইছে। রাস্তায় ভিড় ভাট্টা নেই। বউ গুনগুন করে গান ভাজছে।

আমি জয়কে বললাম,'জয়,ঐ রাস্তা দিয়ে চালা।'
আমার বউ মুখ কালো করে বলল,'ঐ রাস্তায় কেন?'

:কেন আবার,ঐ রাস্তাটা নিরিবিলি।
:কেন ,পার্কের দিকের রাস্তাটা নিরিবিলি না?

:হু,তা আছে।তবে আমি ভাবছিলাম..
:তুমি ভাবছিলে মানে!! এই রাস্তায় গাছ পালা কিছু নেই। এদিকে যাওয়ার কারন কী?

:আরে বাবা ,আমি কি এতো ভেবে বলেছি নাকি?
:ভাবো নি মানে!এই মাত্র বললে,ভাবছিলে!!ঐ রাস্তায় কে থাকে আমি জানি না?

:কে থাকে?
:কে থাকে তোমার বুঝার দরকার নেই।আমাকে বোকা ভাববে না।

:আরে যেই থাক। আমাকে সবাই সম্মান করে। আমি সকলের বড়ো ভাই।
:বড়ো ভাই গিরি ফলাবে না। আমিও তো তোমাকে 'আরিফ ভাই' ডাকতাম এক সময়ে,ডাকতাম না?

আমি আমতা আমতা করতে থাকি। বউ এবার জয়কে ঝাড়ি মারে।'এই জয়,রিঙ্া ঘুরা। বাসায় যা।' ্

আমি চুপচাপ। আমার স্বাধীনতা ফুরালো।সে ফুরাক আপত্তি নেই।
কিন্তু শুধু মনে মনে ভাবছি,'আচ্ছা,আমার এলাকায় কে এমন থাকে?'আর যে ই থাকুক,সে খবর আমার বউ পাইল কেমনে ?ঘটনাটা কী'?

----------------------------------------
নিছক রম্য। সত্য মিথ্যা প্রমানের ঠ্যাকা আমারে দিয়েন না রে ভাই।কোন ঘটনার সাথে মিল থাকলে লেখক দায়ী নহেন। কোন রকম উস্কানি দেয়া হলে,খাইছি কিন্তু...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।