কসম!আমি একবার ক্রিকেট খেলিয়াছিলাম!!!(আরিফ জেবতিকের রম্য)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ০৯/০৪/২০০৭ - ১:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমাদের শৈশবে পাড়ায় পাড়ায় না না ধরনের খেলাধুলার প্রচলন ছিল। আজ হকি (আচ্ছা,হকি খেলাটা কি বিলুপ্ত হয়ে গেছে?),কাল ফুটবল তো পড়শু ক্রিকেট। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে তোপখানা এলাকার ছেলেদের সাথে চ্যালেঞ্জ করে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলাও হতো।পাড়ার ছেলেদের নিয়ে একটি ক্লাব ছিল,'হোয়াইট মোহামেডান',সেটি আবার সিলেট প্রথম বিভাগ লীগে হকি আর ক্রিকেট খেলত।

কোন এক অদ্ভুত কারনে এই খেলাগুলোতে আমার পারদর্শিতা ছিল সাংঘাতিক রকম খারাপ। আমি একবার প্র্যাকটিসে পাড়ার এক বড়ো ভাইয়ের পায়ে হকিস্টিক দিয়ে জোরে বাড়ি মেরেছিলাম,খেলাধুলায় আমার লক্ষ্যভেদ বলতে এতোটুকুই সাফল্য।(পাড়ার আমাদের জুনিয়ার গ্রুপের অবশ্য ধারনা, সেই বড়ো ভাইয়ের ওপর আমাদের দীর্ঘদিনের রাগ মিটাতে গিয়েই আমি সুযোগ নিয়েছিলাম,কিন্তু সচেতন পাঠক এই কথায় বিভ্রান্ত হবেন না প্লিজ।)

তো একবার কিন্তু আমি কুমিল্লা বোর্ডে ক্রিকেট খেলে ছিলাম।
বিশ্বকাপের এই ডামাঢোলে সেই ঘটনাটা বলি।

প্রতিবছর,কুমিল্লা বোর্ডের আয়োজনে আন্ত: কলেজ ক্রিকেট ম্যাচ হয়ে থাকে কুমিল্লায়। তো ,আমরা যখন ফর্াস্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম,তার কিছুদিন পরেই কলেজ দল গঠনের তোড়জোড় শুরু হলো।

আমাদের কলেজ এই টুর্নামেন্টে বরাবরই শক্ত প্রতিদ্বন্ধি।এ বছর কলেজ টিমও খারাপ হওয়ার কথা না। বেশ কিছু ফার্স্ট ডিভিশনের প্লেয়ার আছে, লীগের বাইরের খুব ভালো কিছু বোলারও আছে।সেই প্লেয়ারদের নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে। তারাঁ গম্ভীর মুখে সহপাঠিনীদেরকে বলছে,'না রে,আইজ আর কোচিংয়ে যাইতে পারমু না। কলেজ টীমের প্র্যাকটিস আছে । কয়েকজনকে কিছু প্র্যাকটিস করাতে হবে,আমি ছাড়া স্যার আবার ভরসা পান না।'আমি গভীর বেদনায় খেয়াল করি,ক্রিকেট টীমের এই খেলোয়াড়দের বাজার দর,ওফ সিজনের কাচাঁমরিচের মতোই হঠাৎ বেড়ে গেছে, এবং শহীদ আফ্রিদির অভাবে এই সব ছোট ছোট আফ্রিদির বাচ্চাদেরকেই 'প্লিজ মেরি মি' বলার ব্যাপারে ক্লাসের অনেক ললিত ললনারাই চিন্তা ভাবনা করছেন।
এর আগে দুই মাস খেটে কলেজের নাটক নামিয়ে যে বাজারদর সৃষ্ঠি করেছিলাম,হেলাল হাফিজের কবিতাগুলোকে নিজের কবিতা বলে চালিয়ে সহপাঠীনিদের উৎসর্গ করে যে ক্যাসেট ফ্যাসেট গিফট পাচ্ছিলাম,সেগুলো হঠাৎ করেই ম্লান হয়ে যেতে লাগলো।শালার আমার মাসের পর মাসের চেষ্টা,এখন ক্রিকেটারে মারে দই! ঠিক হ্যায়,আমাকেও ক্রিকেট খেলতে হবে। দেখা যাক,কলেজের টীমে জায়গা পাই না কেমনে।

আমি সোজা ক্যান্টিনে গিয়ে ধরলাম ইমরান ভাইকে। তিনি তখন এম.সি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি। এর আগে কয়েক মাস ঠেঙিয়ে আমরা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে মোটামুটি আধমরা করে ফেলেছি,শুধু শিবির বাদে আর কোন সংগঠন আমাদের ঘাটায় না।(শিবির আমাদের ঘাটানোর সাহস পায় না,আমরাও ওদের ঘাটাবার সাহস পাই না।)

ইমরান ভাই সার্কুলার জারি করলেন, 'ছাত্রদলের কাউকে টীমে না নিলে,কলেজ টীম হতে পারবে না।ছাত্রদল মেধাবি ছাত্রদের সংগঠন,সুতরাং ছাত্রদলের ছেলেরা যে ভালো ক্রিকেট খেলে ,এ ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ নেই। আর কারো যদি সন্দেহ থাকে,তাহলে তারা সামনে এসে বলুক।'কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির কথায় সন্দেহ প্রকাশ করবে তেমন বেকুব কেউ আমাদের কলেজে তখন ছিল না, সে ছাত্রই হোক আর শিক্ষকই হোন।অতএব,আমাকে টীমে জায়গা দেয়ার ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি থাকলো না।

-----------------------------------
প্রথম দিন প্র্যাকটিসে আমার পারফরমেন্স দেখে সবাই মুগ্ধ। স্পোর্টস টিচার বললেন যে,আমার প্রতিভার ব্যাপারে তারঁ কোন সন্দেহ নাই,তবে প্রতিভাটা ক্রিকেট খেলা থেকে বেসবল খেলার ব্যাপারেই বেশি কাজে লাগবে। ভবিষ্যতে যদি দেশে বেসবল খেলা চালু হয়,অথবা আমেরিকান ফুটবল (ঐ যে ধাক্কাধাক্কির খেলাটা) তাহলে তিনি নির্ঘাৎ আমাকে দলনেতা বানাবেন,তবে এ যাত্রা যদি তাকে আমি রেহাই দেই,তাহলে তিনি রিটায়ারমেন্টে যাওয়ার আগের এই শেষ বছরটা আমাকে দোয়া করেই কাটিয়ে দিবেন।

শিক্ষকের দোয়া নেয়ার ব্যাপারে আমি কোন কালেই আগ্রহী ছিলাম না,সুতরাং আমি সগৌরবে কলেজ টিমে অবস্থান করতে থাকলাম।
-------------------------------------------

কুমিল্লা যাওয়ার দুই দিন আগে আমার বাসায় এসে জড়ো হলো বাকি সব খেলোয়াড়। আমাকে বিস্তর বুঝানো হলো যে,আমি যদি বাদ দেই,তাহলে তারাঁ আমার জায়গায় একজন ভালো খেলোয়াড় নিতে পারে। সেক্ষেত্রে টুর্নামেন্ট জিতলে কলেজের সুনাম।এই বার টুর্নামেন্ট জেতার একটা ভালো চান্স আছে,শুধু আমি সেক্রিফাইস করলেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

যে দল টুর্নামেন্ট জিতে যাবে,আমি সেই দলের সদস্য হতে স্বেচ্ছায় আপত্তি জানানোর কোন কারন দেখলাম না।
তখন,আমার বন্ধু রোকন (ও টীমে নেই,তবে ছাত্রদল করে বলে ওকে নিয়ে এসেছে বাকি বন্ধুরা।)বললো,তুই তাহলে টুয়েলভথ ম্যান হ।এটাই ভালো হবে।

আমি ক্রিকেটের পরিভাষা ভালো বুঝি না। জানতে চাইলাম,'টুয়েলভথ ম্যান বিষয়টা কী?'

দলের একজন জবাব দিল,'টুয়েলভথ ম্যান হলো দলের একজন খেলোয়াড় যাকে খেলতে হয় না।সে মাঠের বাইরে কোচের সাথে বসে থাকে।মাঠে কোন ভুল হচ্ছে দেখলে সে এসে দলের সবাইকে জানিয়ে যায়।'

আমি দেখলাম,ব্যাপার মন্দ নয়। নিজে খেলতে হবে না,ঘাসে গড়াগড়ি দিয়ে বল ধরতে হবে না,'ডাক' মেরে প্রতিপক্ষের হাসির পাত্র হতে হবে না; ফাকতালে নেতাগিরি চালিয়ে যাওয়া যাবে।টীম জিতলে বলতে পারবো,এই ছাগলগুলোকে তো আমিই বুদ্ধি দিয়ে জিতালাম।আর টীম হারলে বলবো,ছাগলগুলো তো খেলা চিনেই না। আমি নামলে না হয় আজ দেখা যেতো!

এই ভাবে ব্যাপারটার সুন্দর সমাপ্তি ঘটলো। আমি সিলেট এম.সি কলেজ ক্রিকেট দলের একজন গৌরবময় খেলোয়াড় হিসেবে দলে সুযোগ পেলাম..।
---------------------------------------

(এই লেখাটি শেষ করার পর খেয়াল করলাম,আমি আর হাবিবুল বাশার প্রায় এক ধরনের খেলাই খেলতাম। মাঠে গিয়েই প্যাভিলিয়নে ফেরত।কেন যে আমাকে কলেজ টীমের ক্যাপটেন বানানো হলো না তখন...আহা,আগে যদি বুঝতে পারতাম বিষয়টা!)
(সত্য ঘটনা।এই লেখায় কোন ভেজাল িিজনিষ দেয়া হয় নাই!)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।