আমি যেবার ক্রিকেট ফাইনালে কাপ জিতলাম।(আরিফ জেবতিকের কীবোর্ডে আরেকটি রম্য স্মৃতিকথা)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৪/২০০৭ - ৭:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


পোস্ট উৎসর্গ: সহব্লগার 2 মাহবুব(মাহবুব সুমন ও এস.এম মাহবুব মুর্শেদ

আমি একবার ক্রিকেট দলের টুয়েলভথ ম্যান হয়েছিলাম বলে সবাই আগের পোস্টে খুব হাসাহাসি করলেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অবদানে যে একবার ক্রিকেট কাপ জিতেছিলাম,সেটা আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে।কাহিনীটা তবে খুলে বলা যাক।

সিলেট রেজিস্টারি মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। মাঠটা আবার আমাদের পাড়ার মাঠ। ওখানেই আমরা খেলাধুলা করি।খেলা হচ্ছে সিলেটের বিভিন্ন পাড়ার মধ্যে। জামতলা,মাছুদীঘির পার,শেখঘাট,জল্লারপার,তোপখানা,খুলিয়াপাড়া,মনিপুরি রাজবাড়ি আর আমাদের তালতলা এই টিমগুলো নিয়ে একেবারে সুপার এইট পর্ব। টেনিস বলে 30 ওভারের খেলা।

তো কেমনে কেমনে যেন আমরা ফাইনালে উঠে গেলাম। ফাইনালে উঠার ব্যাপারে অবশ্য আমার অবদান খুব বেশি নেই,কারন আমি একটা ম্যাচও খেলিনি।তবে গ্যালারিতে বসে বিকট গলায় চিৎকার করে প্রতিপক্ষের ব্যাটস ম্যানকে নাস্তানাবুদ করা, প্রতিপক্ষের ফিল্ডারকে 'সাইজ করে দেয়ার' ভয় দেখানো,এ গুলোকে যদি আপনি অবদান বলেন,তবে এই বিজয়ে আমার বেশ অবদান আছে।

তাছাড়া,স্কোর লেখার খাতায় কিছু ক্যারিশমা দেখানো,যেমন প্রতিপক্ষের 2 রানকে 1 রান লিখা,আমাদের 1 রানকে 2 রান লিখা,এসব করেও আমি আমার দলের জন্য কিছু রান করেছিলাম।

সে যাই হোক,ফাইনাল পড়লো জল্লারপারের সাথে। জল্লারপার একটা বড়োসড়ো পাড়া,তাদের খেলোয়াড় বেশি আর সেই খেলোয়াড়দের মাঝ থেকে বাছাই করে তারা দল করেছে। সুতরাং তারা টুর্নামেন্টের ফেবারিট।

দুই পাড়ায় সাজ সাজ রব লাগলো। দুই দলই স্কুল ফাকি দিয়ে জোরেশোরে প্র্যাকটিস শুরু করলো। আমাদের সাথে এসে যোগ দিলেন পাড়ার কলেজ পড়ুয়া বড়ো ভাই রা। তাদের সৌজন্যে প্র্যাকটিসে মাঝে মাঝেই ডালপুরি ,সিঙ্গারা এ সবের সাপ্লাই চলতে থাকলো। একদিন হাফ বোতল করে কোকও খাওয়া হলো (প্রতি 2 জনে এক বোতল বরাদ্দ ছিল,'বিশেষ কারনে' আমার সঙ্গে যার নাম ছিল,সে নিজে না খেয়ে পুরো বোতলটাই আমাকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছিল।)

এভাবে চলে এলো পরের শুক্রবার। বহু প্রত্যাশিত ফাইনাল শুরু হবে বিকেল সাড়ে 3টায়।

জুম্মার নামাজ শেষ করে পাড়ার সবাই দলবেধে বাসায় ফিরছি, এসময় তুলাই ভাই (বিশ্বাস করেন,তার নাম আসলেই 'তুলাই'!!) বোম ফাটালেন। তিনি ঘোষনা দিলেন, নিজ পাড়ায় খেলা হবে,সুতরাং এটা পাড়ার মান সম্মানের প্রশ্ন।কোনভাবেই কাপ হাতছাড়া করা যাবে না। আমরা যদি কাপটি পাড়ার জন্য ধরে রাখতে পারি,তিনি পরের দিন আমাদের সবাইকে চাইনিজ খাওয়াবেন। চাইনিজ খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেল। আমরা কেউ কোনদিন এর আগে চাইনিজ খাইনি,সুতরাং সামান্য কাপ এর বিনিময়ে এত্তোবড়ো সুযোগ হাতছাড়া করার কোন উপায় নেই।
--------------------------------------

খেলা শুরু হলো। জল্লারপার করলো 162 রান। 30 ওভারে চেজ করার জন্য অত্যন্ত বেশি। তবু আমরা ভালো ভাবেই শুরু করলাম। মুশকিল হলো মাঝখানে এসে । বিনা উইকেটে 47 রান থেকে 5 উইকেটে 89!!! ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয় যাকে বলে আর কী!

আমরা দেখলাম,আমাদের চায়নিজ যায় যায় অবস্থা।স্কোর বোর্ডেও কোন তেলেসমাতি করা যাচ্ছে না,কারন ফাইনাল উপলক্ষে মাইক আনা হয়েছে।সেই মাইকে স্কোর ঘোষনা করা হচ্ছে, বড়ো একটা ব্ল্যাক বোর্ডে সেই স্কোর লিখে দেয়া হচ্ছে।টেবিলের ওপর সুন্দর করে রাখা হয়েছে পিতলের কাপটা ।প্রধান অতিথি কমিশনার কামরান ভাই (বর্তমানে সিলেটের মেয়র বদরুদ্দিন কামরান) চলে এসেছেন। এই ভয়াবহ অবস্থায় ইজ্জত বাচাঁনোর উপায় দেখা যাচ্ছে না।

-----------------------
আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেললো।ফিসফিস করে কথা বললাম আমার বন্ধু সুমন আর জাহেদের সাথে। তাদের সম্মতিও মিললো। প্ল্যান বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলো আমির নামের একজনকে। আমির ভালো এথলেট,পেটানো শরীর,খুব ভালো দৌড়াতে আর লং জাম্প দিতে পারে।(নামে আমির হলেও,সে ছিল মুবিন ভাইদের বাসার কাজের ছেলে।সে যুগে আমরা বাসার কাজের ছেলে মেয়েদের সাথে খেলার ব্যাপারে কোন বাধা নিষেধ ছিল না।)

তো,বাকি আছে আর মাত্র 6 ওভার।
আমরা আস্তে আস্তে গিয়ে প্যান্ডেলের কাছে দাড়ালাম। তারপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই টেবিল থেকে কাপটি ছো মেরে নিয়ে ভোঁ দৌড়....।

-----------
যে কোন মুল্যে কাপ রাখার কথা,আমরা সেই কাপ রেখেছিলাম।
কিন্তু তুলাই ভাই তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছিলেন পরে।তিনি নাকি 'এভাবে' কাপ রাখার কথা ভাবেন নাই,তিনি ভেবেছিলেন 'খেলা জিতে' কাপ রাখার কথা।

শোন কান্ড,তার মনে কী ছিল,আমরা কিভাবে জানবো..


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।