আপনি কিভাবে পত্রিকায় লিখবেন-২

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৪/২০০৭ - ১০:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঝোকের মাথায় সিরিজটি শুরু করে পরে আর লিখে উঠতে পারি নি।স্যরি।

তো,আজ আমরা আলোচনা করব ,কিভাবে প্রদায়ক হবো। প্রদায়করা লিখে থাকেন ফিচার পাতায়,এ জন্য মোটামুটি নিয়মিত লেখালেখির অভ্যাস দরকার।আমি তাই সাজেস্ট করবো,ছাত্র কিংবা বেকার ছাড়া কেউ নিয়মিত প্রদায়ক হওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো,অন্যদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা আলাদা আলোচনা করব।

ওয়েল ,এখন আপনি একজন প্রানচ্ছোল কিশোর কিংবা তরুণ।আপনি প্রদায়ক হওয়ার জন্য রেডি। এখন আপনার জন্য নিচের ধাপগুলো।

পত্রিকা নির্বাচন করুন:
কোন পত্রিকায় লিখবেন ,সেটা আগে ঠিক করুন। মনে রাখবেন,যে পত্রিকার সাথে আপনার মানসিক মিল আছে,সে পত্রিকায় লিখতে চেষ্টা করাই মঙ্গল। প্রগতিশীল মানুষ হলে ইনকিলাবে না যাওয়াই ভালো।তবে এটাও খেয়াল রাখবেন,প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় স্থান করে নিতে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হবে। সেখানে আগে থেকেই থাকা প্রদায়করা সহজে আপনাকে স্থান দিতে চাইবে না। আর আপনি যদি আমার মতো মফস্বল থেকে আগত হয়ে থাকেন,তাহলে তো আপনার ঝামেলাটা একটু বেশিই।তবে একটা কথা মনে রাখবেন,পৃথিবীর সব জায়গায়ই প্রথমে স্থান করে নিতে কষ্ট হয়।হাল ছাড়বেন না প্লিজ।

বিষয় নির্বাচন করুন:
প্রথমেই আপনি সব বিষয়ে লেখতে যাবেন না। এতে গুলিয়ে ফেলতে হবে সব।( পরে অবশ্য আপনি ডাক্তারি পাতায়ও লেখতে পারবেন,নিজে ডাক্তার না হয়েও।)ধরা যাক,আপনার উৎসাহ কম্পিউটারের বিভিন্ন বিষয়ে,সেক্ষেত্রে আপনার জন্য তথ্য প্রযুক্তির পাতা। সাংস্কৃতিক বা বিনোদন ধর্মী পাতায় আপনার উৎসাহ থাকলে আপনি সেটাতেই ফোকাস করুন। উন্নয়ন আর নারী অধিকারের জন্যও আলাদা পাতা আছে..এভাবে আপনার স্পেশালাইজেশনের ক্ষেত্র বেছে নিন।(প্রবাসীরা লিখতে পারেন সেখানকার বিভিন্ন খবর..এ বিষয়ে পরে আসছি।)

মোক্ষম একটা লেখা চাই এবারে:
তো,আপনার বিষয় নির্বাচন,পত্রিকা নির্বাচন এসব শেষ। এবার আপনার লেখা শুরু করার পালা।যে পত্রিকার যে পাতায় লিখবেন ভাবছেন,সেই পত্রিকার সেই পাতার লেখাগুলো এখন সাবধানে খেয়াল করুন। তারা কোন কোন বিষয়কে হাইলাইট করে খেয়াল করে দেখুন।শব্দ সংখ্যা খেয়াল করুন। মনে রাখবেন ,পত্রিকায় আপনাকে আপনার দৈর্ঘ প্রস্থে মাপবে না,আপনাকে মাপবে শব্দ সংখ্যায়।প্রায় সময়ই বলে দেয়া হয়,এখানে একটা তিনশ শব্দ মেরে দাও,এর মানে আপনাকে তিনশ শব্দের মাঝে লেখা দিতে হবে। আপনি ২৮০ থেকে ৩২০ শব্দের মধ্যে লেখা না দিলে লেখা ছাপা হবে না।

তো,আপনি এখন লেখার স্টাইল ধরতে পেরেছেন। এখন এই স্টাইলে ২/৩টি লেখা রেডি করুন। লিখবেন ঝকঝকে সাদা কাগজে,শুদ্ধ বানান আর বাক্যে,কাটাকুটি করবেন না।কাগজের এক পিঠে লিখুন(অপর পিঠ সাদা থাকবে)।)লেখা কম্পু কম্পোজ করে দিলে তো খুবই ভালো ইম্প্রেশন দেবে।
এগুলো হলো আপনার ডামি লেখা,এগুলো ছাপা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য,তবু এগুলোই আপনাকে পত্রিকা অফিসে পরিচিত করবে।সুতরাং ...।

যোগাযোগের প্রথম ধাপ:
ব্যস,আপনি তো রেডি,কিন্তু সে খবর পত্রিকাওয়ালারা পাবে কেমনে ? সোজা পদ্ধতি। ফোন করে দিন (১১টার পরে করাই উচিত,এর আগে ফিচারের কেউ অফিসে আসে না।) আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন,যে দিন যে পাতা বের হয়,তার ২ দিন আগে থেকে সেই পাতার বিভাগীয় সম্পাদককে ফোন করা নিষেধ। (ঐ সময়ে তারাঁ পেস্টিং নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকেন।)অর্থাৎ,যে পাতা বৃহস্পতিবারে বের হয়,সেই সম্পাদককে মঙ্গল আর বুধ বারে ফোন না করাই উত্তম।

ফোন করার সব থেকে ভালো সময়,সকাল ১১টা থেকে ১টা । এসময় কাজের চাপ সাধারনত: কম থাকে।

তো,আপনি ফোন করে রিসিপশনে বলুন যে আমি ‘অমুক’ পাতার সম্পাদকের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।তারপর সেই সম্পাদককে সুন্দর করে বলুন যে আপনি তার পাতায় প্রদায়ক হিসেবে লিখতে চাচ্ছেন।এ জন্য আপনি তার সাথে দেখা করতে চান। এ সব ক্ষেত্রে সম্পাদকরা একটা সময় দিয়ে দেন,তখন আপনি আপনার লেখাগুলো সাথে নিয়ে তারঁ সাথে দেখা করুন।সময় থাকলে তিনি আপনাকে আপনার লেখাগুলোর ভুলত্র“টি ধরিয়ে দিবেন,নয়তো অন্য সময় আসতে বলবেন।

এ সময় আপনি তারঁ কাছে একটা এসাইনমেন্ট চান।সাধারনত: আপনার লেখা তাঁর ভালো লাগলে আপনাকে কোন একটা বিষয় দিয়ে তিনি এ বিষয়ে লেখার জন্য বলবেন। বড়ো বড়ো পত্রিকায় প্রত্যেক পাতার জন্য সপ্তাহে একদিন প্রদায়ক মিটিং হয়,আপনি সেটার দিন জেনে নিন। তারপর আপনার নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে সে মিটিঙে হাজির হয়ে যান।সেখানেই আপনাকে কোন একটা টেস্ট এসাইনমেন্ট দেয়ার কথা।

যাক,যেভাবেই হোক,আপনি একটা এসাইনমেন্ট পেয়ে গেলেন।এখন খুব খেটেখুটে,ভাবনা চিন্তা করে বিষয়টি লিখে ফেলুন। (সেই আগের মতোই এক পিঠে,পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে।)যতো বেশি সম্ভব তথ্য জোগাড় করে সেই তথ্য আপনার লেখায় দিন। ব্যক্তিগত কোন পর্যবেক্ষন দিতে যাবেন না।আপনার মতামত জানতে পাঠক আগ্রহী নয়,পাঠক চায় নিট তথ্য। মজা করে লিখতে চেষ্টা করুন। কাঠখোট্টা লেখায় পাঠকের বিরক্তি ধরে।

লেখা অবশ্যই নির্দিষ্ট ডেট লাইনের ভেতর জমা দিতে হবে। নইলে যতো ভালো লেখাই হোক,আপনার লেখা ছাপা হবে না।

লেখা জমা দেয়ার পর:
আপনার লেখা জমা দেয়ার পর আর এ বিষয়ে কোন উচ্চবাচ্য করতে যাবেন না। এটা ছাপা হবে কী না,এটার জন্য বিল হবে কী না,হলে কতো হবে..এ গুলো নিয়ে টু শব্দটি করবেন না। যদি অফিসে লেখা অন্যকারো হাতে জমা দিয়ে আসেন,তাহলে ফোন করে কনফার্ম হবেন যে সংশ্লিষ্ট পাতার সম্পাদক আপনার লেখাটি পেয়েছেন।

তারপর আপনি অপেক্ষা করতে থাকুন নির্দিষ্ট দিনে আপনার লেখাটি ছাপা হওয়ার,আর আমি এই ফাকে অন্য কাজগুলো সেরে নেই।
দেখা হবে পরের কিস্তিতে...

(পোস্ট কনভার্টেট বাই এস.এম মাহবুব মুর্শেদ এন্ড অরুপ কামাল)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।