আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি,কার তাতে কী ?-(প্রথম কিস্তি)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ৩০/০৪/২০০৭ - ৯:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
গরীব একটা দেশে থাকি,এখানে বিনোদনের সত্যি সত্যিই খুব অভাব।আধুনিক দেশে যাওয়ার সুযোগ হয় নি,তাই পাব,বার,নাইট ক্লাব ,পথের মোড়ে মোড়ে ধন্যধান্যে পুষ্পে ভরা পার্ক,এসবের কিছুই নেই আমাদের। উইক এন্ড কেটে যায় কোন্ বাজারে মাছ সস্তা সে খবর নিতে নিতে, ঠাসাঠাসি করা খোপের মতো বাসায় থাকি,বাসার পিছে ব্যাকইয়ার্ড বলে কোন ফাকা জায়গা নেই যে আয়েশ করে বসে বারবিকিউ করে খাবো। বিনোদনের মাঝে আছে বেইলিরোডে নাটক দেখা,আজিজ অথবা ছবির হাটের ফুটপাতে বসে বিড়ি ফুকে আড্ডা,বসুন্ধরা আর ইস্টার্ণ
প্লাজায় জানালা দর্শন শেষে কুড়ি টাকা প্লেটে ফুচকা খাওয়া।

পুওর মধ্যবিত্ত;গাড়ি কেনার মতো সামর্থ নেই,বাসের গাদাগাদি ভিড়ে ঠেলাঠেলি করতে অসুবিধা আর কালো ক্যাব আর স্কুটারকে বাপ ডেকে হয়রান হলেও আমাদের গন্তব্যে যেতে না চাওয়ার কারনে,এই সব বিনোদনও আমাদের পক্ষে নেয়া সহজ হয়ে উঠে না।বাকি থাকলো হুমায়ুনের চটি বই পড়া,টিভির খবরে দুই বিড়ালের ঝগড়া দেখা আর ইদানিং এই ব্লগ। ব্লগ তাই দ্বিতীয় জীবন হয়ে না উঠলেও,বিনোদনহীন জীবনের এক অনুষঙ্গ হয়ে উঠে বটে। এতে করে অনেক কিছু করনেঅলা মানুষরা আমাদের মতো মানুষকে নিয়ে আফসোস করতেই পারেন,আমার নিজেরও প্রায়ই নিজেকে নিয়ে আফসোস হয়,কিন্তু এ থেকে বেরিয়ে এসে আরো অনেক কিছু করার মতো সামর্থ না থাকায়,সহজলভ্য এই বিনোদনেই প্রতিদিন বিনোদিত হই।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবেশে এবং সমাজে বড়ো হওয়ার দরুন,সরকারি প্রাইমারী বিদ্যালয় আর সরকারী হাই স্কুলের কিছু তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে মোটামুটি যোগ বিয়োগ করতে শিখলেও,আমার সমাজ ব্যবস্থা,রাষ্ট্র,পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার অস্তিত্ব ধ্বংসী সংগ্রাম আমাকে আমার জীবনের অন্ধকার দিকে ক্রমাগতই টেনে নিয়ে যায়।

সেখানে আমার বন্ধু মতিউর,ইসমাইল কিংবা মুনিম যখন অবলীলায় অশ্রাব্য গালাগালি করে যায়, তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমাকে সেই গালি উচ্চারনে বড়োজোর একটু বাধো বাধো করে কিন্তু মুনিমের গালি যেহেতু আমার সমাজ ব্যবস্থারই অংশ,তার পোড় খাওয়া পরাজিত জীবনের একটা ক্রোধেরই বহি:প্রকাশ,তাই আমি কিছুই মনে করি না।প্রাতিষ্ঠানিক অপূর্ণ শিক্ষা আমাকে আমার সমাজ থেকে বেরিয়ে আসার মতো জোর দেয় না,আর সেই জোর পেতে আমি খুব একটা উদগ্রীবও না।

দুই.
আজ দশ বছর যাবত বিভিন্ন পত্রিকায় টুকিটাকি লিখি,পাচঁ মাস ধরে ব্লগিং করি,মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার একটাও লেখা নেই।মুক্তিযুদ্ধ আমি হৃদয়ে ধারন করি একভাবে,হাসান মোরশেদ ধারন করে আরেক ভাবে,তার প্রায় প্রতিটি লেখাতেই কোথাও না কোথাও মুক্তিযুদ্ধ ঝলসে উঠে।

বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজ্জল বিষয়টি কেউ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে,কেউ চোখের জলে নীরবে স্মরণ করে আর কেউ বা উচ্ছাসের সাথে বার বার বলে। আমি কোন অসুবিধা দেখি না।(আমি মাঝে মাঝে শুধু হাসান মোরশেদকে স্মরণ করিয়ে দেই যে তার কাছে আমি ভিন্নমাত্রার আরো কিছু লেখা আশা করি,কারন সেটি লেখার সামর্থ্য তার আছে বলে আমার গভীল বিশ্বাস।)যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়তে পড়তে,শুনতে শুনতে ক্লান্ত,তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে,কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বারবার বলে তাদের উচ্ছাস প্রকাশ করে,তাদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা অপরিসীম।

(আগামী পর্বে সমাপ‌্য।এক কিস্তিতে লিখলে ভালো হতো।কিন্তু সেক্ষেত্রে লেখাটি বেশি লম্বা হয়ে যায়)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।