চুলগুলো তার বুকপকেটে ছিল,হৃদয়ের কাছাকাছি....

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ০৯/০৫/২০০৭ - ১২:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এক.
ছোট্ট একটা শহর।পাশাপাশি দুইটি বাড়ি। রাত ১০টা ।পাড়াগায়ের জণ্য বেশ রাত।মেয়েটি জানালায় দাড়িয়ে চুল আচড়ায়।ছেলেটি ও এসে দাড়ায়।ত্রস্ত চলাচল।দুজনের মাঝখানে লোহার গরাদ।
ইতি উতি উকিঁ।মেয়েটি জানতে চায়,`কেমন আছো?' ছেলেটি তাকিয়ে থাকে চুলের দিকে। আনমনা হয়ে বলে `এতো লম্বা চুল!' হাত বাড়িয়ে চুলে ডুবাতে চায় আঙুল,হাত আটকে যায়।মাঝখানে লোহার গরাদ।

মেয়েটি হেসে বলে,নেবে?
দাও।
মেয়েটি এক গোছা চুল ছিড়ে।গরাদের ফাক দিয়ে এগিয়ে দেয়।ছেলেটি অঞ্জলি পেতে নেয়। ছেলেটি আরো কিছু বলতে চায়,মেয়েটি চট করে সরে যায় জানালা থেকে।কেউ বুঝি এলো,কেউ বুঝি এলো।

দুই.
শহরের কানাগলির এক চিলেকোঠায় বাস ভদ্রলোকের।হাবিব সওদাগরের আড়তের কেরানি।রোজ গভীর রাতে আড়তের কাজ শেষে বিষন্ন পায়ে বাড়ি ফেরেন।তার সাথে কেই থাকে না।কেউ তাকে কোনদিন হাসতে দেখেনি,কেউ দেখেনি তার সাথে কোন ঘরফেরা পথিকের আলাপন।তার কাছে কারো চিঠি আসে না কোনদিন।এভাবে বহুদিন চলে গেছে...বহুদিন..।

একদিন রাতে বাড়ি ফিরতে গিয়ে উল্টে পড়েন রাস্তায়।লোক জড়ো হয় ।কেউ এম্বুলেন্স ডাকতে যায়,কেউ জল ছিটায় চোখেমুখে,কেই চামড়ার জুতা শুকানোর চেষ্টা করে।
পাড়ার মোরের গুন্ডা ধরনের ছেলেগুলো ঘুম ভাঙ্গিয়ে ডেকে নিয়ে আসে এক এম.বি.বি.এস ডাক্তার।তিনি এসে কব্জি ধরে জানান,সব শেষ।হার্ট এটাক।

ছেলেগুলো পকেট হাতড়ায়।ঠিকানা পাওয়ার আশায়।
একটা লন্ড্রির রসিদ,কতোগুলো তেলচিটে আড়তের কাগজ,একটা ন্যাতানো স্বস্তা সিগারেট,একটা প্লাস্টিকের চিরুনি।আর কিছু নেই।
নাহ,বুকপকেটে পাওয়া যায় আরো কিছু।
এক গোছা লম্বা চুল।

ছেলেগুলো অবাক হয়ে ভাবে,চুলগুলো কী দীর্ঘ....।
চুলগুলো তার বুকপকেটে ছিল,হৃদয়ের কাছাকাছি....।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

অনেক আগে পড়া.. ছুটির দিনে, "ভালবাসার চারাগল্প" কলামে!

--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।