ভাগ্যিস মাদার তেরেসা বাংলাদেশে আসেন নি।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০৫/২০০৭ - ৫:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
সি.আর.পি বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে সাভারে।এর খবর আমি প্রথম পাই দেশের বাইরে এক ডাক্তারের কাছে। পরিচিত এক পঙ্গু লোকের চিকিৎসার ব্যাপারে তার সাথে আলাপ করছিলাম,তিনি খুব অবাক হয়ে বললেন, তোমার দেশে সি.আর.পি থাকতে তুমি রোগীকে এখানে নিয়ে আসতে চাও কেন?

বিদেশী ডাক্তারের কাছে প্রথম শুনলেও পরে বেশ কয়েকবার এই প্রতিষ্ঠানটির কথা আমি জেনেছি।

মূলত:পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোকদেরকে সেখানে খুবই যত্ন সহকারে চিকিতসা দেয়া হয়।চিকিতসা প্রায় সব সময়ই আন্তর্জাতিক মানের বলে শুনেছি ।

ভেলরি টেলর নামের এক ইংরেজ মহিলা ,যিনি নিজেই ফিজিও থেরাপিস্ট তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছিলেন ১৯৭৯ সালে।
খুবই ছোট্ট আকারে এর শুরু।সেই থেকে ভেলরি প্রচন্ড পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।ধনী গরীব সব রোগীকেই সেখানে আন্তরিক এবং সমান চিকিতসা দেয়া হয়,যতোদূর জানি সেই চিকিতসাটা প্রায় বিনামূল্যেই দেয়া হয়।ভেলরির ম্যানেজমেন্টটাও শুনেছি খুব সুন্দর,গরীব রোগীরা যাতে সুস্থ হওয়ার পর নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে,তার জন্য তাদের কে হাতের কাজ শিক্ষা দিয়ে তিনি সাবলম্বী করে তুলেন।

দুই.
এই বিরাট কর্মযজ্ঞ চালনা করার জন্য যে বিশাল ফান্ড দরকার,সেটিও ভেলরি প্রচন্ড পরিশ্রম করে জোগাড় করে থাকেন।তার বন্ধু বান্ধব,বিভিন্ন ডোনার এজেন্সী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় তিনি ছুটোছুটি করে এই ফান্ড জোগাড় করে থাকেন।

আমাদের লেখালেখি গ্রুপের রানামেহের একবার তার এ ধরনের ফান্ড রেইজিংয়ের একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল।রানা মেহের এসে লিখেছিল ,ভেলরিকে সেই অনুষ্ঠানে লাগছিল দীন।হাত পাতার যে লজ্জা,অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা সেই লজ্জা তাকে ক্রমাগত দিচ্ছিলেন,আর ভেলরির মাথা নুয়ে পড়ছিল নীচু থেকে নীচুতে।রানা মেহেরের সেই লেখা পড়ে আমার চোখে জল এসেছিল।
আমি ভেলরির কষ্টটুকু অনুভব করছিলাম।

তিন.
আজ ২৮ বছর পরে,সি.আর.পি এখন একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান।সেই মহীরুহের কাঠ কাটতে তাই অনেকেরই উৎসাহ।
ভেলরিকে তাই তাড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ চলছে।সেই মহান উদ্যোগ নিয়েছেন,তত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্ঠা এবং সি.আর.পি ট্রাস্টের সদস্য জনাব সি.এম শফী সামি।

তার যুক্তি হচ্ছে,ভেলরিকে একটা উপদেষ্টা পদ দিয়ে রাখা হোক,কিন্তু ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সহ বাকি বিষয় গুলোতে চাকরিজীবি সি.ই.ও দেয়া হোক।শফী সামির উদ্যোগটা নিয়ে আমার কোন কথা নেই,তার ছোট ভাই যেরকম এম.ডি হয়ে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৬০০ কোটী টাকার লোপাট করতে সাহায্য করেছেন ,তিনি সি.আর.পিতে তা করবেন কি না তা নিয়েও আমি চিন্তিত নই।

আমি শুধু লজ্জায় আমার মাথা নিচু করছি সেই ভদ্রমহিলার কাছে, যিনি তার জীবনের এতোগুলো বছর এই পোড়ার দেশে কাটিয়ে দিয়েছেন শুধু আমাদের প্রতি তার ভালোবাসা থেকে।একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আমাদের জন্য।

রানা মেহের দেখেছিল ভেলরির সেই নুয়ে পড়া মুখ।আমি জানি মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দে ভেলরির সেই মাথা আবার উচুঁ হয়েছিল।

হায়,একজন ভেলরির সামনে আমার মাথাটি আর কোনদিনই উচুঁ হবে না।


মন্তব্য

শামীম এর ছবি

আজকে আড়াই লাখের(!) শফী সামিকে বিভিন্ন চ্যানেলে বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়া উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে দেখলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

শামীম এর ছবি

আজকে আড়াই লাখের(!) শফী সামিকে বিভিন্ন চ্যানেলে বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়া উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে দেখলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

ফারলিন এর ছবি

আমরা আর কিছু না পারি, ভালো ভালো লোকদের ভালোমত অবমাননা করতে পারি। বাহবা আমাদের !

রিবেরূ এর ছবি

উনার মতন মহান ''মাতার'' তুলনা হয়না। বাঙ্গালীরা যা পারেনি মহান ভেলরি টেইলর তা পেরেছেন। যে ভাল করেন তার পাশে বিপদ লেগেই থাকে, আর তার জন্যই মহিমা প্রকাশের সুযোগ আরো বেরে যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।