উড়ে যাও কালো কষ্ট

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: রবি, ২০/০৫/২০০৭ - ১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঝরাতে এঘর ওঘর করি।সারাটা ফ্ল্যাট জুড়ে নি:সঙ্গতা।সিডিতে বাংলা গান,ব্লগে টুকটাক কথা,না পড়া কতোগুলো জরুরি বই...কিছুই টানেনা আমায়।

ঝুল বারান্দায় দাড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ..মিশিয়ে দেই অন্ধকারে।

এই রাতে কেন যেন স্বপনের কথা মনে পড়ে।ব্লুবার্ড স্কুলে ক্লাস টু তে আমার পরানের বন্ধুজন।ভাগ করে টিফিন খাওয়া.স্কেল আর পেন্সিলটা ভালোবেসে দিয়ে এসে হারিয়ে গেছে বলে বাসায় বকা খাওয়া...আহা কতো না সোনালি দিন। স্বপনের বাবার ছিল বদলির চাকরি...একদিন স্বপন আর আসে না স্কুলে...সেই প্রথম আমার হারিয়ে ফেলা আপনজন।স্বপন আজ কোথায় আছিস..জীবন তোকে তার কোন হাতে স্পর্শ করেছে রে..জানতে খুব ইচ্ছে হয়।মাঝখানে বছরের পর বছর...যুগের পরে যুগ...আমাকে তোর মনে পড়ে স্বপন? হয়তো একই বাসে পাশাপাশি সিটে বসে এই ঢাকা শহরে আমরা দুরত্ব পাড়ি দেই..তবু একজন আরেকজনকে চিনি না।আর চেনা হবে না কোনদিন..তবু স্বপনের কথা আমার মনে থাকে এই অবেলায়।

কোথায় আছে তামান্না..প্রিয় বন্ধু আমার..ক্লাসের সবগুলো হোমওয়ার্ক তুলে দিত নোটবুকে..আগলে রাখতো বড়ো বড়ো ছেলেগুলোর হাত থেকে...তোর কি বিয়ে হয়েছে তামান্না..স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছিস বোন আমার..মনে পড়ে সেই বোকা বোকা ছেলেটাকে?
আমি অনেক বদলেছিরে তামান্না..সেই পোড়ার শহরে একসময় আমার উপর আমাদের উপর কথা বলার কেউ ছিল না..আমাকে আর আগলে রাখা লাগেনি কারো..তবু তোর কথা মনে পড়ে খুব।

ক্লাস ফাইভে পাইলট স্কুলে হারাই শাহরিনকে।ভালোবেসে দিয়েছিল ছবি অলা গল্পের বই...তালতলার ফেলে আসা বাসায় সে বই আজো আমি আগলে রেখেছি..শুধু শাহরিন চলে গেছে আমেরিকায় সেই শিশুবেলায়।আজ যোগাযোগের কতোনা উপায়..হাতের পাশে নেট..টেবিলের পাশে ফোন।আমি জানি শাহরিন,তোরও এসব আছে হাতের কাছেই ..শুধু আমি তোর ঠিকানা জানি না...।

ক্লাস থ্রিতে হেটে হেটে স্কুলে যেতাম আমি,কাজ্জাফী,রজব...টারজান আর থান্ডারক্যাটস নিয়ে গল্প...রাস্তায় দাড়িয়ে ক্যানভেসারের মলম বিক্রী দেখা।আহারে আমার বন্ধুরা..তোরা আজ কোথায় ..কে জানে।

আমার বন্ধু কলিন্স।এক জুলাইর শেষ বিকেলে ধুম আড্ডা দিলাম ধানমন্ডির লেকের পাড়ে..খুব বলতো,বন্ধু থাকলে জীবনে একটাই আছে..আরিফ জেবতিক।
এক সপ্তাহ পরে ধুম করে মাথায় স্টেনগান লাগিয়ে মরে গেল কুমিল্লা ক্যান্টে। বন্ধু যদি বললি তবে কেন বললি না তোর সেই গোপন কষ্টটা আমায়?কেন আমি তোর মোবাইলে ফোন দিলে ফোনটা শুধু বেজেই যাচ্ছিল..বেজেই যাচ্ছিল...।কলিন্স তোর সেই জড়িয়ে ধরাটা এখন্‌ও আমার শরীরে লেগে আছে..সেই উত্তাপ দিয়ে,সেই ভালোবাসায়,সেই বিশ্বাসে আর কেউ আমাকে কোনদিন জড়িয়ে ধরবে না...।দেখা হবে পরকালে,শুনে নেব তোর সেই না বলা দূ:খগুলো।কিন্তু একালে তোকে আর কোনদিন কি দেখতে পাবো না?

আমি তবে কী করব তোরা বলে দে।এক জীবনে আর কি দেখব না তোদের মুখ...?


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।