ভেলরি টেইলর নিয়ে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রসঙ্গে...

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ২৮/০৫/২০০৭ - ১২:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রচন্ড অস্থিরতা আর অপরাধবোধ যখন আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল সারাদিন আর রাত ধরে তখন গভীর রাতে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমি আমার খুবই ক্ষুদ্র সামর্থ্য অনুযায়ী একটা উদ্যোগ নেব এবং সেই উদ্যোগে সবাইকে সামিল হতে আবেদন জানাবো।
পোস্ট লেখাকালীন সময়েই আমার এক বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ পাই এবং বন্ধুর বেদনার দিনে তার পাশে দাড়ানোর জন্য ভোরে সিলেট রওনা হই।অনিবার্য ভাবেই তাই শুক্র-শনিবার ব্লগে উপস্থিত থাকতে পারিনি।
হুট করে চলে যাওয়ায় আমার পক্ষে সবার মন্তব্যের জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি।( মোবাইলে চার্জ না থাকার কারনে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই ছিলাম।)

আমি একটু আগে ফিরেছি এবং গভীর আনন্দের সাথে দেখলাম,আমার বন্ধুরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন এবং প্রত্যেকেই তাদের সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছেন।মানুষের শুভ শক্তির উপর আমার আজন্ম বিশ্বাস এবং আবার সেই শুভ শক্তির সমাবেশ দেখে আমি আবারও সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।আমরা সবাই মিলে যদি হাতে হাত ধরে যুথবদ্ধ দাড়াই,সকল অশুভ পরাজিত হবেই হবে,এই সত্য আমি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে বিশ্বাস করি।
পোস্টটিকে স্টিকি করে দেয়ায় ব্লগ কর্তৃপক্ষের প্রতিও আমার বিনীত ধন্যবাদ।

আলোচ্য পোস্টে একজন সতীর্থ ব্লগার ইংরেজীতে কিছু কথা বলেছেন,(আমি এই ব্লগারের নিকটি এর আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না।)তিনি আমাদের সবাইকে বাস্টার্ড ডেকেছেন ,বোকা বলেছেন,আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে আপীল করে লাভ নেই বরং তারাই বড়ো ক্রিমিনাল ,এ কথা আমাদেরকে স্মরণ করে দিয়েছেন এবং সর্বোপরি আমাকে তাসনিম খলিলের পরিনতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।

আমি তার বক্তব্যের বিপরীতে বিনয়ের সাথে বলতে চাই যে,এই উদ্যোগ রাষ্ট্র কিংবা সরকারের সাথে কোনরূপ সাংঘর্ষিক নয়,বরং একটি জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের ভালোবাসা।সুতরাং আমার পরিনতি নিয়ে তার উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই,এবং এটা নিয়ে বর্তমান সরকার যে আমাকে বিপদে ফেলতে আসবেন না,সেটা আমার বিলকুল জানা আছে।
তারচেয়েও বড়ো কথা,ব্যক্তিগত ভাবে আমি যা লিখি বা বলি তার পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েই করি এবং এ জন্য যে কোন পরিনতি মেনে নিতে অতীতেও কোনদিন পিছপা হইনি,বর্তমানেও হবো না।আমার সাহস একটু বোকাদের সাহস,আমার মতো এরকম বোকা মানুষ পৃথিবীতে অজস্র ছড়িয়ে আছে এবং তাদেরকে আসলেই বুদ্ধিমান করা যায় না।

আন্দোলনের সাফল্য সম্পর্কে তিনি যে সন্দিহান হয়েছেন,কষ্টকরে সেটা হবারও তার কোন প্রয়োজন নেই।তার মতো শুভানুধ্যায়ীদের দেখা আমি অনেক পেয়েছি জীবনে এবং তারা কেউই কোন বোকা লোককে দমিয়ে রাখতে পারেন নি।ওসমানী উদ্যানে গাছকাটার বিরুদ্ধে প্রথম যখন মানব বন্ধন হয়,সেই মানব বন্ধনে আমরা মাত্র ১৭ জন মানুষ উপস্থিত ছিলাম এবং অন্তত ১৭০ জন তথাকথিত শুভানুধ্যায়ী তার মতোই জ্ঞানী ভাষায় আমাদের তিরষ্কার করেছিলেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ এসে ঠিকই ওসমানী উদ্যানের গাছগুলোকে আগলে দাড়িয়েছেন,এবং ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্র সেখানে ঠিকই গড়ে তুলতে পারেননি সেই দিনের জ্ঞানী আমলারা।আগেই বলেছি সাধারন মানুষের সেই শুভশক্তির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই,এবং ইতিহাসে কোনদিনই সেই শুভশক্তির পরাজয় ঘঠেছে বলে আমার জানা নেই।

যারা উদ্যোগে নিজেদের জড়িত করেছেন,তাদেরকে আলাদা আলাদা ভাবে উত্তর না দিয়ে একসাথে কথা বলার জন্যই এই পোস্টের অবতারনা।

১/ আরো বড়ো ধাক্কার ব্যাপারে অনেকেই একমত হয়েছেন।
আমিও স্থির করেছিলাম যে ব্যাপারটি নিয়ে মানব বন্ধন কিংবা অনশনে যাবো,কিন্তু বর্তমান জরুরী অবস্থায় সেটি সম্ভব নয়।কোন প্রকার বিক্ষোভ দেখানো এ পর্যায়ে নিষিদ্ধ আছে,এবং এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ভেলরির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই আপাতত:আমাদের যোগাযোগ বৈধ উপায়ে এই ইমেল প্রচারণার মাধ্যমে জনমত গঠনেই ব্যস্ত থাকবে।

২/আমি আগামী দুই তিন দিনের মধ্যেই ভেলরির সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করব বলে আশাবাদী এবং উনার ব্যক্তিগত ইমেইল ও ফোন নাম্বার ব্লগে প্রকাশ করে দেব,যাতে আপনারা এই মহিয়সী মহিলার প্রতি সরাসরি আপনাদের ভালোবাসা জানাতে পারেন।আমি নিজেও এই মহিলার সাথে দেখা করতে উদগ্রীব।

৩/অনেকেই পত্রিকায় ব্যাপক প্রচারণার উপর জোর দিয়েছেন।সাপ্তাহিক ২০০০ এ সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং দৈনিক প্রথম আলোও একাধিক নিউজ করেছে।বাকি পত্রিকাগুলোর ব্যাপারে আমি সাধ্যমতো যোগাযোগ করব। এই ব্যাপারে ব্লগের সাংবাদিক বন্ধুরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচেষ্টা নেন,সেটি খুবই কাজে আসবে বলেও আশা করি।বিশেষ করে ইংরেজী পত্রিকার সাংবাদিকদের কেউ যদি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেন ,সেটি আমাদের উপকারে আসবে।

৪/হাসান মোরশেদ জানিয়েছেন যে বাইরের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টিকে আভ্যন্তরীন ব্যাপার হিসেবে নিয়েছে।সেটা তারা করবে,এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তবুও আমি তাদেরকে নক করার ব্যাপারে আগ্রহী কারন অন্তত:পক্ষে কখনো যদি বিষয়টি যদি তাদের জানার প্রয়োজন হয়, তখন যেন তারা আমাদের উদ্যোগটির ব্যাপারেও অবগত থাকেন।বিষয়টি মুল আন্দোলন নয়,আন্দোলনের একটি পার্শ্ব ফ্রন্ট।সেখানে হাসান মোরশেদের মতো শক্তিশালী মানুষ যদি কাজ করেন,তাহলে আমরা অনুপ্রানিত বোধ করি।

৫/প্রাথমিক স্টেজে আমাদের মূল প্রেশারের জায়গার একটি হচ্ছে এফ.সি.আর.পি নামের সংগঠন দুটি।এই দুইটি সংগঠনের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা আমি আমার পোস্টে উল্লেখ করেছি। সি.আর.পির সিংহভাগ ফান্ড এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই এসে থাকে,এবং সি.আর.পির পরিচালনায় এদের কথাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবেই।খুবই খুশির ব্যাপার যে ব্লগার তীরন্দাজ জার্মানির এফ.সি.আর.পির সাথে পরিচিত এবং তিনি এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।নি:সন্দেহে এটি এক বিরাট অগ্রগতি।আশাকরি তীরন্দাজ আমাদেরকে তার উদ্যোগের আপডেট জানিয়ে সুখী করবেন।

আমাদের বড়ো একটা শক্তি হচ্ছে যে আমাদের বহু ব্লগার জার্মানি এবং ইংল্যান্ডে আছেন,ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অগনিত ব্লগার রয়েছেন।তারা যদি একটু এফর্ট দেন,একটা করেও ফোন করেন,তাহলেই অনেক কিছু অর্জন সম্ভব।এফ.সি.আর.পি কে প্রভাবিত করতে পারলে একটি বিরাট কাজ হবে।

৬/ ভেলরির সাথে আলাপ করার পর আমি ঢাকার ডি.এফ.আই.ডি (লন্ডন ভিত্তিক
সরকারী সাহায্য সংস্থা)তে সরাসরি গিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করব।সে কাজে আমি ঢাকায় অবস্থানরত ব্লগারদের অংশগ্রহনও আশা করি।একই সাথে আমি ডি.এফ.আই.ডি’র ঢাকাস্থ প্রধানের ই-মেইল আই.ডিও জোগাড় করে দেব,যাতে আপনারা সেখানেও নিজ নিজ মতামত পাঠাতে পারেন।এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর।

৮/ব্লগার মানবীর করা পিটিশন একটি ভালো কাজ,এবং মাহবুব সুমন সেটিকে অনলাইনে তুলে দিয়ে আরেকটি সুন্দর কাজ সম্পন্ন করেছেন।কিন্তু আরেকটু গুছিয়ে বিষয়টি করার জন্য আরো দুয়েকদিন সময়ের দরকার আছে।

৭/আমার পূর্ববর্তী পোস্টে কিছু তথ্য সংশোধন আছে।প্রথমটি হচ্ছে ভেলরি ৭১ সালেই বাংলাদেশে ফেরত এসেছিলেন (সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ সাদিক),দ্বিতীয়টি হচ্ছে শফি সামি দুই বছরের জন্য মাসে আড়াই লক্ষ টাকা বেতনে সি.আর.পির সি.ই.ও হলেও ভেলরির প্রবল প্রতিরোধের মুখে তিনি সেই পোস্ট ছাড়তে অলরেডি বাধ্য হয়েছেন,সাধের চাকরির মেয়াদ পূরণ করতে পারেন নি। কিন্তু তিনি সি.আর.পির ট্রাস্টিবোর্ডে একটি নিয়ন্ত্রন অলরেডি প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ভেলরিকে কর্মহীন ও ক্ষমতাহীন করে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।একাধিক বিশাল বেতনের পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন,এবং এরা তথাকথিত চুক্তি ভিত্তিক চিকিৎসার নামে গরীবদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করেছেন।
(কয়েকজন ট্রাস্টি দ্বিমত পোষন করে কোন পকেট মিটিংয়ে যাচ্ছেন না এবং তারা ভেলরির পাশে আছেন।আমি তাদের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।)
আরেকটি সংশোধন হচ্ছে,ভেলরির পালিতা কন্যার একজন সি.আর.পিতে কাজ করেন এবং অন্যজন এতোই পক্ষাঘাতগ্রস্থ যে তার পক্ষে কাজ করা কোনভাবেই সম্ভব না।তিনি ভেলরির বাসাতেই থাকেন।
----------------------

প্রিয় মানুষেরা,শুভ শক্তির যুথবদ্ধ মানুষেরা,আমরা কিন্তু থামবো না।একটা শেষ দেখে ছাড়বোই।
আমাদের সাধারন জীবন,মামুলি জীবন,নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার আটপৌরে জীবন।দিন কে দিন নিজের কাছে ছোট হয়ে থাকার, অন্যরা বাকি সব করে দেবে ভাবার জীবন,সব কিছু শুধু পাবার জীবন।
তবু আমরাও একটা প্রতিবাদ করেই দেখি না।আমাদের জন্য ৩৬ বছর উৎসর্গ করা মানুষটির ব্যথায় একটু ব্যথিত হয়ে দেখি না একবার।

নিজের কাছে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে তো পারব।এ প্রচেষ্টা আসলে নিজেকেও মাঝে মাঝে মানুষ ভাবার প্রচেষ্টা।এর বেশি কিছু নয়।

আসুন,নিজেদের জন্য আমরাও কিছু অর্জন করি।
আরেকবার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলি,‘‘ আমরাও আছি...”


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।