বৃদ্ধাশ্রম (একটি ফিউচার ফিকশন)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: রবি, ০১/০৭/২০০৭ - ১:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


এক.

"আমার একটা দরকার,৯৫ বছরের বেশি হতে হবে"অনিক তার চাহিদা জানায়।
কেয়ার টেকার ফিস ফিস করে বলে,"৯৫ বছরের বেশি মাল বেশি নাই,এগুলার জন্য ডিমান্ড বেশি।ধার হিসেবে দিতে পারি,১৫ দিন পরে ফেরত দেবেন।"

"ধার হিসেবে নিয়ে কী করব?" অনিক বিষ্ময়ের সাথে জানতে চায়।
"অনেকেই ছবি আকাঁর জন্য নিয়া যায়।তাছাড়া হিউম্যন স্কাল্পচার না কি যেন একটা হইছে,সেইখানে জিন্দা মানুষ খাড়া করাইয়া রাইখা এক্সিবিশন করে।এই সব কারনেও আটিসরা নিয়া যায়।আপনে কি কামে নিবেন?

অনিক বুঝতে পারে।তার চাহিদা অন্য।সে এসেছে ডি.এন.এ গবেষনার কাজে।বিদেশী ফান্ড,টাকা পয়সার সমস্যা নেই।সুতরাং তার দরকার একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধ মানুষ যার পুরো ডি.এন.এ প্রোফাইল বের করার পর,তাকে কেটে কুটে কিছু নতুন জিনিষ দেখতে হবে।মৃত মানুষ দিয়ে কাজ হবে না,কারন নতুন কিছু হরমোন টেস্ট করতে হবে ।যুগান্তকারী ফলাফলের আশা করছে ইউনিভার্সিটি,সুতরাং তাদের তাড়া আছে।বিদেশীদের ফান্ড ব্যবহারের্ও তাড়া আছে।জুন মাসের মাঝে একটা রেজাল্ট না দিলে ফান্ড ফেরত যাবে।

সুতরাং তাকে একটা ৯০ প্লাস মানুষ কিনে নিতে হবে।দ্রুত কেয়ারটেকারের সাথে দরদস্তুর শেষ হয়।এই টাকাগুলো কেয়ারটেকার নিজে মেরে দেয়,যারা কিনে কিংবা ভাড়া নেয়,তাদের সবাই বিষয়টি জানে।এভাবে বৃদ্ধাশ্রম থেকে লোক বের করে নেয়া বেআইনি,কিন্তু সরকার দেখেও না দেখার ভান করে সবসময়।
সময় পরিবর্তিত হয়েছে,একসময় এইসব বুড়োবুড়ির দায়িত্ব নিত পরিবার,এখন পরিবার সিস্টেমটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।প্রচুর মালিকানাবিহীন শিশুতে ভরে উঠছে শিশু সদন গুলো,আর দলে দলে মানুষ বুড়ো হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সরকারী বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে।এই জনবল সরকারের কোন কাজে আসছে না,অথচ গুচ্ছের টাকা খরচ হচ্ছে।তাই যেন তেন উপায়ে এদের কাছ থেকে মুক্তি পেলেই চলে।কেয়ারটেকার যখন বিক্রী করে দিয়ে "মৃত"লেখে ফাইল বন্ধ করে দেয়,তখন সরকার তাই খুশিই হয়।

দুই.
মহিলাকে দেখে অনিকের পছন্দ হয়।বয়েস ৯২ হলেও বেশ শক্ত সমর্থ মহিলা।গুটুর গুটর করে এসে অনিকের গাড়িতে উঠে বসেন।সারা মুখে তার হাসি।কেয়ারটেকার বলে দিয়েছে,আপনাকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে,এজন্য তার সুন্দর সাদা শাড়িটা পরে এসেছেন।সারা মুখ জুড়ে কেমন নিষ্পাপ হাসি।অনিক একটু বিষন্ন হয়।

তিন.
ভুরু কুচকে অনিক তাকিয়ে আছে মনিটরের দিকে।মহিলার সবগুলো অর্গান আলাদা আলাদা জারে ভরে লেবেল লাগিয়ে রাখা হয়েছে,সেগুলো নিয়ে তার আপাতত:কোন কৌতুহল নেই।সে অবাক হয়ে দেখছে মহিলার ডি.এন.এ প্রোফাইল।অনিকের ডি.এন.এ প্রোফাইলের সাথে অদ্ভুত মিল। সে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো চেক করলো।এই মহিলা নিশ্চিত ভাবে অনিকের পূর্বপুরুষদের একজন।দাদী অথবা নানী।অনিকের কপাল বেয়ে সুক্ষ ঘামের ধারা বইতে থাকে।

চার.
পরদিন অনিক আবার যায় সেই বৃদ্ধাশ্রমে।কেয়ারটেকারে সাথে কথা বলা দরকার।মহিলার ঠিকানা ঠিকুজি কিছু বের করতে পারলে অনিক সেখানে খোজঁ নেবে।কে জানে হয়তো,অনিক তার মা কিংবা বাবার দেখা পেয়ে যেতে পারে।

কেয়ারটেকার অফিসে নেই।ফিরতে ঘন্টাখানেক দেরী হবে।গেস্টরুমে বসেই এ সময়টা কাটিয়ে দেবে ভাবে।
গেস্টরুমে আরেকজন মানুষ অপেক্ষা করছে কেয়ারটেকারের।হয়তো, সে ও একজন মানুষ কিনবে।

অনিক তার সাথে গল্পের চেষ্টা করে।সময় কাটানোর চেষ্টা।সেই লোকটি গল্পে আগ্রহী নয়।তার কাছে কেয়ারটেকারের অপেক্ষাটাই মূখ্য।

পরিচালক সেট সাজিয়ে বসে আছে সকাল থেকে।জরুরী ভাবে একজন ষাটোর্ধ মহিলা দরকার,আগের জন একটা কাজ করার পরই কাল রাতে গলায় দড়ি দিয়ে মরে গেছে।প্রায় পুরো টাকাটাই জলে গেছে।
তাই আজ একজন নতুন মহিলা দরকার।আবার টাকা ইনভেস্ট।অবশ্য এই ইনভেস্টে প্রডিউসারের আপত্তি নেই।
আজকাল মানুষের রুচি বদলে গেছে।
এডাল্ট সেক্স মুভিতে বিনিয়োগ করতে তাই প্রডিউসাররা পিছপা হন না।
টাকা যাই লাগুক,দুই মাসের মাঝেই হাজারগুন হয়ে ফেরত আসবে।
লাভ,সবই লাভ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিন্নমাত্রার একটা গল্প।

ইউক্লিড

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।