সায়েন্স ফিকশনঃ কপোট্রনিক ছাগুদি

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: সোম, ৩০/০৭/২০০৭ - ২:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মারা যাচ্ছি ব্যাপারটি চিন্তাকরে কেন জানি খুব একটা অবাক হলাম না। মৃত্যুভয় উপস্থিত হলে মনে হয় অবাক হওয়া বা দুঃখিত হওয়ার মতো সহজ অনুভুতিগুলি কাজ করে না। ল্যাবরেটরির মাঝামাঝি জায়গায় দাড়িয়ে আমি মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম। আর দশ মিনিটের মধ্যে যে এক্সপেরিমেন্টটি শুরু হতে যাচ্ছে-সেটা থেকে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি বের হবে, তার লক্ষভাগের একভাগ একটি শক্তিশালী ঘোড়াকে এক সেকেন্ডের ভেতর মেরে ফেলতে সক্ষম। বাঁচতে হলে আমাকে দশ মিনিটের ভেতর ল্যাবরেটরি থেকে বের হতে হবে আর তা করতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখেই।

কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে একটি অতিকায় রবোট দাড়িয়ে আছে। রবোটটি তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন, অল্পকিছূ কারিগরি জ্ঞান আর তৃতীয় শ্রেণীর যুক্তিতর্ক ছাড়া এটি আর কিছু বোঝে না। এখন এই রবোটটিকে বুঝিয়ে আমাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে। ব্যাপারটি সহজ হবার কথা নয়, তবুও আমাকে চেষ্টা করতে হবে। আমি রবোটটিকে ডাক দিলাম, “এই রবোট, শোনো।”

-বলুন।
-আমি এখান থেকে দশ মিনিটের মধ্যে বের হতে না পারলে মারা যাব।
-জানি।
-আমি মারা গেলে এই এক্সপেরিমেন্টটার কোন মুল্য থাকবে না। আর কেউ এই ফলাফল বুঝতে পারবে না।
-আমাকে বলা হয়েছে সবচেয়ে কম ঝামেলায় এই এক্সপেরিমেন্টটি শেষ করতে। আপনাকে বের হতে দিলে এই এক্সপেরিমেন্টটি আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। এতে করে প্রায় ছয় হাজার ডলারের মতো খরচ হবে। সেই তুলনায় আপনার শরীরের মুল্য মাত্র দুইশ তেইশ ডলার। আপনার মৃত্যুতে খুব বেশী একটা আর্থিক ক্ষতি হবে না।

আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম। হতাশায় নিজের চুল টেনে ধরলাম। এখন কি করতে পারি। ল্যাবরেটরির অতিকায় যন্ত্রপাতির ভেতর নিজেকে নিতান্তই অসহায় মনে হতে লাগলো। তক্ষুনি মনে পড়লো কোনায় ঝোলানো টেলিফোনটার কথা। দৌড়ে গিয়ে রিসিভার তুলে নিলাম, “হ্যালো। হ্যালো।”

-কে? প্রফেসর?
-হ্যাঁ।
-আমরা বুঝতে পেরেছি। আপনাকে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু করা যাচ্ছে না কারন রবোটটি সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছে।
-রবোটটির কানেকশন কেটে দাও।
-ওটার কোন কানেকশন নাই- একটা পারমাণবিক ব্যাটারি সরাসরি বুকে লাগানো।
-সর্বনাশ! তাহলে উপায়?
-আমরা দেখি কি করতে পারি। ঘাবড়াবেন না।

রিসিভারটি যথাস্থানে রেখে আমি মেগাট্রনটির গায়ে হেলান দিয়ে মেঝেতে পা মেলে বসলাম। মেগাট্রনের ভেতর থেকে একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম রবোটটিকে বিকল করা যাবে না। আর রবোটটিকে বিকল করতে না পারলে এক্সপেরিমেন্টটি বন্ধ করা যাবে না। এক্সপেরিমেন্টটি বন্ধ করতে না পারলে আর ছয় মিনিটের ভেতর আমি মারা যাচ্ছি।

এখানে সিগারেট ধরানো সাংঘাতিক বেআইনি জেনেও একটি সিগারেট ধরালাম। কিছুক্ষনের ভেতর মারা যাচ্ছি। এখন আর কিছুতেই কিছু যায় আসে না। হঠাৎ একটা বুদ্ধি মাথায় উঁকি দিয়ে গেল। বেঁচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনার ঝিলিক দেখতে পেয়ে আমি নতুন প্রাণ ফিরে পেলাম।

গলা উঁচিয়ে আমি রবোটটিকে ডাকলাম- “এই রবোট।”
-বলুন।
-আমার একটা সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবে? বেশিক্ষন লাগবেনা। নীচুস্তরের যুক্তিতর্ক ভিত্তিক সমস্যা।
-বলুন সমস্যাটি কি?

অতি প্রাচীন কালে নব্বুই ও চব্বিশ কো-অর্ডিনেটে একটা ছোট্ট শহর ছিল ঢাকা। সেখানে এক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জন্ম নিয়েছিল, তাকে সবাই রাগুদি ডাকতো- সবসময় রেগে থাকতো কিনা! সেই রাগুদি, তৎকালীণ সময়ের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে হার্ভাড, ইয়েল, এম.আই.টি ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছিলেন। আমেরিকায় না এসে তিনি কিভাবে হার্ভাড, ইয়েল, কলম্বিয়াতে পড়ালেখা করলেন, তাও একসাথে তৎকালীণ পৃথিবীর সবশ্রেষ্ঠ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে পড়ালেখা করা সম্ভব হলো? তার কোর্সমেটরা যখন তার সাথে লেখাপড়া করতেন, তখন তারা অবসরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডীন হিসাবে কাজ করতেন। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?

রবোটটির মাথাটা ডানদিকে কাত হয়ে হেলে পড়লো- আমি নিশ্চিন্ত হলাম যে রবোটটি এই ধাঁধার সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রনটুকু ফিরে পাবে না। আর নিয়ন্ত্রনটুকু ফিরে না পেলে সে এক্সপেরিমেন্টটা শুরু করতে পারবেনা। আমার হাতে এখন অফুরন্ত সময়।

আমি আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে মেগাট্রনটির গায়ে হেলান দিয়ে আবারও মেঝেতে পা মেলে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। বাইরে তখন লেজার বীম দিয়ে দরজা কাটা হচ্ছে। তারপর একটা পাদ দিলাম, এখানে পাদ দেয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ জেনেও।



  • মুহম্মদ জাফর ইকবালের “কপোট্রনিক বিভ্রান্তি” অবলম্বনে।
  • ইতিপূর্বে সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিলো।


মন্তব্য

কেমিকেল আলী এর ছবি

কেমন আছেন বস?
সবকিছু ঠিকঠাক হইছে নাকি?

দ্রোহী এর ছবি

নাহ্,

আগামী কাল পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবো। তারপর I-94 কার্ড, সেটা যখন হাতে আসবে তখন সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবো।

আমি যাকে বলে বাঁশডলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।


কি মাঝি? ডরাইলা?

কেমিকেল আলী এর ছবি

ভাবি কাছে নাই তো তাই একটু আধটু এদিক সেদিক তো হবেই!!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পড়ছিলাম। পড়লাম।
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অমিত আহমেদ এর ছবি

আগেই পড়েছিলাম।
লেখা মন্দ হয়নি, আবার খুব ভাল হয়েছে তাও না হাসি নতুন লেখা চাই, নতুন লেখা!


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

অয়ন এর ছবি

হ নতুন লেখা চাই।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ভাল কথা, এটার নাম মনে হয় ছিল "কপোট্রনিক রাগুদি"? নাকি আমার ভুল?


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

দ্রোহী এর ছবি

হু--

প্রথম সংস্করনে "রাগুদি" নামটিই ছিলো। পরবর্তীকালে তা "ছাগুদি"তে পরিনত হয়েছিলো।


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।