ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ — প্রথম পর্ব

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: শনি, ০৮/১০/২০১১ - ৮:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে ব্লগ লেখার হ্যাপা অনেক। সমীকরণ এড়িয়ে জটিল কারিগরি বিষয় সহজবোধ্য করে লেখা খুব কঠিন কাজ। অনেক সময় লেখার আকার সীমিত রাখতে গিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আলোচনার বাইরে রাখতে হয়। ফলে কোনো জটিল বিষয়কে অতিসরলীকরণ করে বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হলে বরং বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আগেভাগেই বলে নেয়া ভাল যে ভূমিকম্প সম্পর্কে আমার পড়াশোনা আর মহাকাশ সম্পর্কে জোকার নায়েকের জানাশোনা প্রায় একই পর্যায়ের! তাই এ বিষয়ে আমাকে বিদগ্ধ পণ্ডিত ভাবা জোকার নায়েককে হাবুল পণ্ডিত [Edwin Hubble] ভেবে নেয়ার মতোই মূর্খামি। ভূমিকম্প সম্পর্কে আমি যা জানি তা পরীক্ষা পাশের উদ্দেশ্যে “চোথা” মুখস্থ করে শেখা। নিউটনের সেই বিখ্যাত জ্ঞানসাগরের তীরে নুড়ি কুড়ানোর উপমার সাথে তুলনা করলে বলতে হয় ভূমিকম্প সম্পর্কে আমি যা জানি তা জ্ঞানসাগরের তীরে নুড়ি কুড়ানোর উদ্দেশ্যে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ঢাকায় বাসের টিকেট কিনতে যাওয়ার পরিকল্পনা করার সমান।

সিরিজের শুরুতে ভূমিকম্পের কারণ ও উৎপত্তি নিয়ে ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষেপে আলোচনা করব। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিরিজটি পড়তে গিয়ে কারো মাথায় যদি কোন প্রশ্নের উদয় হয় তাহলে নির্ভয়ে মন্তব্য অংশে গিয়ানজাম শুরু করতে পারেন। কেননা কবি বলেছেন, “There are no dumb or stupid questions as long as they make sense.”

যেহেতু, বিজ্ঞানের বিষয়ে গোঁজামিল দিয়ে সহজে পার পাওয়া সম্ভব নয় আবার আমার বিদ্যার দৌড় দিয়েও পাঠকের সব প্রশ্নের জবাব দেয়া অসম্ভব তাই অভিজ্ঞদের আহ্বান জানাই পাঠকের প্রশ্নের জবাবে সহায়তা করার জন্য।

.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:._.:*~*:.

ভূমিকা:
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টা ৪২ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের মাটি কেঁপে উঠেছিল ভূমিকম্পের প্রভাবে। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের সিকিম অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর [ইউএসজিএস] – এর তথ্যানুসারে ভূমিকম্পটির মাত্রা প্রাথমিকভাবে রিখটার স্কেলে ৬.৮ নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত মাত্রা হিসাবে ৬.৯ বলা হয়েছে।

ইউএসজিএসের প্রতিবেদন অনুসারে উক্ত ভূমিকম্পে সিকিম–বিহার–পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে কমপক্ষে ৯৪ জন মানুষ নিহত হয়েছে। নেপালে নিহত হয়েছে ৬ জন, তিব্বতে ৭ জন, ভূটানে ১ জন। শুধুমাত্র ভারতের মোট অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ২২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ! বিডিনিউজের খবর অনুযায়ী ঢাকায় কয়েকটি দালান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গে কিছু দালানে ফাটল ধরার কথা শোনা গেছে।

ভূমিকম্পের প্রভাবে কোন স্থান কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা মূলত নির্ভর করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সে স্থানের দূরত্বের উপর। উৎপত্তিস্থল থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে ভূমিকম্পের ক্ষতির মাত্রা কমতে থাকে। ১৮ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল থেকে ঢাকা শহরের দূরত্ব ৪৯৫ কিলোমিটার। ফলে উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬.৯ হলেও ঢাকার অধিবাসীরা যে ধরনের কম্পন অনুভব করেছে তা বড়জোর ৪–৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট কম্পনের সমান। ইউএসজিএসের ‘দূরত্ব বনাম প্রাবল্য’ লেখচিত্র অনুসারে বাংলাদেশে যে ধরনের কম্পন অনুভূত হয়েছে তা রিখটার স্কেলে ৩.৫ থেকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট কম্পনের সমান।

প্রশ্ন করা যেতে পারে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার আশেপাশে হলে কী ঘটতো? এ প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর পরবর্তীতে আসবে। আপাতত দেখা যাক ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প কত বেশি শক্তিশালী!

ভূমিকম্পে নিঃসৃত শক্তির পরিমাণ হিসাব করলে একটি ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ৩,৯৮১ গুণ বেশি শক্তিশালী! রিখটার স্কেলে ৬.৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় বিস্ফোরিত ‘লিটল বয়’ বোমাটির চাইতে প্রায় ২২.৫ গুণ বেশি।

ভূমিকম্পের সংজ্ঞা:
প্রথমে শুরু করা যাক ভূমিকম্পের সংজ্ঞা দিয়ে। স্কুলে পড়ার বয়সে পাঠ্যবইতে পড়েছিলাম, “ভূ–অভ্যন্তরে শিলাস্তরে আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠে যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্প বলে।” ভূ–অভ্যন্তরে কারা আন্দোলন করে, কীসের দাবিতে আন্দোলন করে তা সে আমলের পাঠ্যবইগুলো থেকে জানার কোন উপায় ছিল না। স্কুলবেলার সে সময়ের বইগুলোয় ‘এসো নিজে করি’ শিরোনামে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণগুলো এত বেশি ঘোলাটে ভাষায় লেখা থাকতো যে একমাত্র চুনের পানিতে রাংতা কাগজ চুবিয়ে গ্যাসীয় বুদবুদ তৈরি করার পরীক্ষাটি ছাড়া আর কোন কিছু নিজে করে দেখা ছিল খুব কঠিন কাজ। তাছাড়া শিক্ষকদের ‘আউট প্রশ্ন’ জিজ্ঞেস করে খামাখা পিটুনি খাওয়ার মতো বেকুবি করার কোন আগ্রহ ছিল না বিধায় ‘মাটি কাঁপলে তাকে ভূমিকম্প বলা হয়’ জানতে পেরেই সন্তুষ্ট ছিলাম।

ভূমিকম্পের কারণ:
পড়তে শেখার বয়সে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম। ভিডিও ক্যাসেটের স্পাইনে আংরেজিতে লেখা হিন্দি শব্দটি সিলেবল ধরে বানান করে পড়ে সিনেমার নাম জেনেছিলাম ‘ভুখা এমপি’। পরে বড়দের মুখে শুনেছিলাম ক্যাসেটের গায়ে আংরেজিতে যা লেখা আছে তার বাংলা করলে দাঁড়ায় ভূমিকম্প। সেদিন কেউ বলে না দিলেও বুঝেছিলাম মন্ত্রী–এমপিরা ক্ষুধার্ত থাকলে দেশে ভূমিকম্প হয়!

মন্ত্রী–এমপিদের লুটপাট ছাড়াও ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পেছনে যেসব কারণ জড়িত সেগুলোকে মোটাদাগে: (I) পৌরাণিক কারণ, (II) মারফতি কারণ, ও (III) প্রাকৃতিক কারণ – এই তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

পৌরাণিক কারণসমূহ:

  • নর্স পুরাণ অনুসারে দেবতা বলডারকে হত্যার কারণে দেবতা লকিকে [লকির পরিচয় জানতে হলিউডের বস্তাপচা সিনেমা ‘থর’ দেখুন] গুহায় শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে। লকির মাথায় এক বিষধর সাপ। সেই সাপ একটু পরপর লকির মাথা লক্ষ্য করে বিষ ঢালে। বিষের হাত থেকে লকিকে বাঁচাতে পাশে দাঁড়িয়ে তার স্ত্রী সেজিন [Sigyn] তা একটা পাত্রে সংগ্রহ করে। পাত্রটা ভরে এলে সেজিন বিষটুকু মাটিতে ফেলে দিয়ে পাত্র খালি করে। পাত্রটা খালি করার সময় বিষের হাত থেকে নিজের মুখমণ্ডলকে বাঁচাতে লকি ভয়ানকভাবে নড়াচড়া করে। ফলে শিকলের টানাটানির কারণে পৃথিবীতে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। [উইকিপিডিয়া]
  • গ্রীক পুরাণ অনুসারে পাতাল দেবতা পসাইডনের [Poseidon] মেজাজ–মর্জি খারাপ থাকলে সে হাতে ধরা ত্রিশূল দিয়ে মাটিতে সজোরে আঘাত করে। তখন ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়। [উইকিপিডিয়া]
  • জাপানি উপকথা অনুসারে নামাজু [Namazu] নামের বিশাল মাগুর মাছ মাটির গভীরে কাদার ভেতর বাস করে। নামাজুকে পাহারা দিয়ে রেখেছে দেবতা কাসিমা। কাসিমা যখন কাজে ফাঁকি দেয় তখন নামাজু পালাবার জন্য ঝাপটাঝাপটি করে। নামাজুর ঝাপটাঝাপটির ফলাফলে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়। [উইকিপিডিয়া]
  • বাঙালি পুরাণের খোঁজ নিয়ে লাভ নাই। বাঙালি বড় বিস্মৃতিপরায়ণ এক চুতমারানি জাতি। মাত্র চল্লিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে সে গণহত্যায় জড়িত শুয়োরদের ক্ষমতার শীর্ষে তুলে দেয় এই জাতি। যে জাতি চল্লিশ বছরের ইতিহাস মনে রাখতে পারে না তাদের হাজার বছরের পৌরাণিক গালগল্প টিকে থাকবে এমনটা ভেবে নেয়া নেহায়েত বোকামি।

পৌরাণিক গালগল্প এখানেই শেষ। আগ্রহীরা চাইলে গুগলে অনুসন্ধান করে ভূমিকম্পের পৌরাণিক কারণগুলো আরো বিস্তারিতভাবে পড়ে দেখতে পারেন।

মারফতি কারণসমূহ:

  • ছেলেবেলায় গ্রামের মুরুব্বিদের মুখে শোনা গল্প থেকে জেনেছিলাম প্লেটের মতো চ্যাপ্টা পৃথিবীকে একটা গরু তার শিংয়ের উপর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গরুটা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন সে পৃথিবীকে এক শিং থেকে অন্য শিংয়ে স্থানান্তর করে। স্থানান্তরের সময় যে ঝাঁকুনি হয় সেটাই ভূমিকম্প। গরুটা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সে প্রশ্ন অবান্তর। কারণ মুরুব্বিদের মুখের উপর কথা বলে কেবল ‘ব্যাদ্দপ পোলাপাইনেরা’।
  • ছেলেবেলায় এক পাড়াতো নানীর কাছে আরবি শিখতাম। সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধা নানী পাড়ার ছেলেমেয়েদের স্বল্পমূল্যে আরবি শিক্ষা দিয়ে যে মাসোহারা পেতেন তা দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে জীবনযাপন করতেন। পড়তে পড়তে বিরক্তি ধরে গেলে নানীকে বাধ্য করতাম গল্প বলার জন্য। একদিন গল্পচ্ছলে নানী বলেছিলেন, পৃথিবীতে একজন মুসলমান যখন ক্ষুধার জ্বালায় কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। তখন তার ফরিয়াদে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠলে ভূমিকম্প হয়। বেঁচে থাকলে নানী দেখতে পেতেন এ বছর মুসলিম অধ্যুষিত সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষে না খেতে পেয়ে মারা গেছে ২৯,০০০ শিশু যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম! কানে তুলো গুঁজে আর পাছায় ফেভিকল মেখে আরশে না বসলে ২৯,০০০ শিশুর আর্তচিৎকারে কাঁপুনির চোটে আরশ থেকে আলোর বেগে ছিটকে পড়ার কথা আল্লাহর।
  • আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলো অনুসারে মানুষকে তাদের পাপ সম্পর্কে সাবধান করতে এবং ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি প্রদান করার কাজে সর্বশক্তিমান স্রষ্টা ভূমিকম্প ব্যবহার করেন। স্রষ্টা ইচ্ছা করলেই যেখানে পাপী মানুষদের পাপের পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারেন সেখানে তা না করে ধ্বংসযজ্ঞে এত আগ্রহী হবার পেছনের যুক্তিটি কোনোদিন বুঝতে পারলাম না!
  • ভারতের গো–সেবা মিশনের স্বামী কৃষ্ণানন্দজী মহারাজ বিস্তর গবেষণা করে ব্যাপক হারে গরু নিধনকে ভূমিকম্পের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তার কথা একটাই, গরু বাঁচলে দুনিয়া বাঁচবে।
  • অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা গেছে দেওয়ানবাগী হুজুরের বদদোয়ার কারণে নাকি ভূমিকম্প হয়। চোখ টিপি
  • নারীদের বেপর্দা চলাফেরাকেও ভূমিকম্পের কারণ হিসাবে ধরা হয়। [কৃতজ্ঞতা: ফাহিম হাসান]
  • এছাড়াও, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারকে ভূমিকম্পের কারণ মনে করেন কেউ কেউ। চোখ টিপি

প্রাকৃতিক কারণসমূহ:

  • ভূপৃষ্ঠে বা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি গভীরতায় বড়মাত্রার বিস্ফোরণ [নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ, গ্যাস অনুসন্ধানী কূপে বিস্ফোরণ, খনিতে বিস্ফোরণ ইত্যাদি] ঘটলে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে। এ ধরনের ভূমিকম্পকে প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্প না বলে মনুষ্যসৃষ্ট ভূমিকম্প বলাই যুক্তিযুক্ত।
  • আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও অগ্নুৎ্পাতের সময় সাধারণত ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
  • ভূমিকম্পের মূল কারণ হিসাবে টেকটোনিক বলের প্রভাবকে দায়ী করা যায়। ভূতত্ত্বের কিছু প্রাথমিক বিষয় জানলে টেকটোনিক বলের কারণে কীভাবে ভূমিকম্প তৈরি হয় তা ভালভাবে বোঝা সম্ভবপর হবে।

টেকটোনিক বলের কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি বুঝতে হলে প্রথমে পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ কাঠামো [internal structure] সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা দরকার। পৃথিবী অনেকটা পাকা আমের মতো। আমরা জানি যে পাকা আমের বাইরের দিকটা পাতলা চামড়া দিয়ে মোড়ানো, মাঝের স্তুরটি চটচটে সুস্বাদু হলদে ধরনের এবং একেবারে ভেতর দিকে মাঝখানে একটা শক্ত বিচি বিদ্যমান। আমের মতো পৃথিবীও তিন স্তর বিশিষ্ট। স্তুরগুলো যথাক্রমে ভূত্বক [Crust], গুরুমণ্ডল [Mantle], ও কেন্দ্রমণ্ডল [Core] নামে পরিচিত।

পৃথিবীর একেবারে বাইরের স্তরটি যাকে আমার ভূত্বক বা ভূপৃষ্ঠ নামে ডাকি তা অনেকটা আমের পাতলা চামড়ার মত। ভূত্বককে ইংরেজিতে ক্রাস্ট [Crust] বলা হয়। ভূত্বক আবার দুই ধরনের। মহাদেশগুলো যে ধরনের ভূত্বক দ্বারা গঠিত তার নাম মহাদেশীয় ভূত্বক বা কন্টিনেন্টাল ক্রাস্ট [Continental Crust] আর মহাসাগরগুলো মহাসাগরীয় ভূত্বক বা ওশিয়ানিক ক্রাস্ট [Oceanic Crust] দ্বারা তৈরি।


পাকা আমের মতো পৃথিবী [ছবিসূত্র]

মহাদেশীয় ভূত্বকের গড় পুরুত্ব [average thickness] ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। তবে কিছু কিছু জায়গায় তা দেড়–দুইশো কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত। মহাসাগরীয় ভূত্বকের গড় পুরুত্ব ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। ঘনত্বের দিক দিয়ে মহাদেশীয় ভূত্বকের তুলনায় মহাসাগরীয় ভূত্বকের ঘনত্ব কিছুটা বেশি। কারণ মহাদেশীয় ভূত্বকের শিলাস্তর মূলত অ্যালুমিনাম/অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেটস ঘটিত খনিজে ভরপুর অন্যদিকে মহাসাগরীয় ভূত্বকের শিলাস্তর ম্যাগনেশিয়াম সিলিকেটস ঘটিত খনিজে ভরা।

ভূত্বক আবার বিভিন্ন টুকরায় বিভক্ত। টুকরাগুলোকে ‘টেকটোনিক প্লেট’ বলা হয়। মহাদেশের টুকরাগুলোকে ‘কন্টিনেন্টাল প্লেট’ ও মহাসাগরগুলোর টুকরাকে ‘ওশিয়ানিক প্লেট’ বলা হয়।


চিত্রে মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো দেখানো হচ্ছে (বড় করে দেখতে ছবির গায়ে ক্লিক করুন)। [ছবিসূত্র]

ভূত্বকের নিচে যে স্তর আছে [পৃথিবীর মাঝের স্তর] সাহেবদের ভাষায় তার নাম ম্যান্টল [Mantle]। ম্যান্টলের বাংলা নাম গুরুমণ্ডল। ম্যান্টল শব্দের বাংলা ভাষান্তর করলে দাঁড়ায় প্রদীপের শিখার উজ্জ্বল আবরণ। অর্থাৎ প্রদীপের শিখার হলদেটে অংশকে ম্যান্টল বলা যেতে পারে। গুরুমণ্ডলের গড় পুরুত্ব প্রায় ২,৮৯০ কিলোমিটার।

গুরুমণ্ডলের উপরের স্তরের উপরের অংশ [uppermost solid mantle] ভূত্বকের মতোই কঠিন শিলা দিয়ে তৈরি। ম্যান্টলের উপরের স্তরের কঠিন অংশ এবং ভূত্বক একত্রে মিলে অশ্মমণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ার [lithosphere] তৈরি করেছে। একটু আগে যে টেকটোনিক প্লেটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা মূলত অশ্মমণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ারের টুকরা। অশ্মমণ্ডলের পুরুত্ব ৫০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের মতো।

অশ্মমণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ারের নিচে গুরুমণ্ডলের উপরের স্তরের আরেকটি অংশ অতি উচ্চ সান্দ্রতা বিশিষ্ট [highly viscous] এবং অতিমাত্রায় নমনীয় [plastic] ধরনের। এই অংশকে অ্যাসথেনোস্ফিয়ার [Asthenosphere] বলে। অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের পুরুত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।


পৃথিবীর আভ্যন্তরীন কাঠামো [ছবিসূত্র]

গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাপ বৃদ্ধির ফলে ম্যান্টলের গলিত শিলাস্তরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ম্যান্টলের নিচের দিকে থাকা শিলাস্তর হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং নিচের শূন্যস্থান পূরণ করতে ম্যান্টলের উপরের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত কম গরম শিলা নিচের দিকে নামতে থাকে। ফলে ম্যান্টলের ভেতর এক ধরনের ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়। ম্যান্টলের ভেতরের এই ঘূর্ণিকে বলা হয় পরিচলন [mantle convection]। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রক্রিয়াও প্রায় একই ধরনের।


গুরুমণ্ডলে পরিচলন প্রক্রিয়া[ছবিসূত্র]

ম্যান্টলের ভেতর তরল শিলাস্তরের ঘুর্ণির কারণে অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের উপরে ভেসে থাকা লিথোস্ফিয়ারের টুকরাগুলো [মহাদেশ ও মহাসাগরগুলো] অতি ধীর গতিতে বছরে ১ থেকে ১০ সেন্টিমিটার গতিতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যাচ্ছে।

এতক্ষণ যা পকপক করলাম তার সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়– পৃথিবী তিনস্তর বিশিষ্ট। পৃথিবীর বাইরের দিকের লিথোস্ফিয়ারের টুকরাগুলো ম্যান্টলে সৃষ্ট শিলাঘূর্ণির কারণে অতি ধীর গতিতে স্থান পরিবর্তন করছে। এর সাথে ভূমিকম্পের কী সম্পর্ক তা পরের পর্বে লিখবো। আপাতত দুটো ভাত খেয়ে এক কাপ চা খাই। চোখ টিপি

বানান আপা: বুনোহাঁস


মন্তব্য

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

চমৎকার দরকারী পোস্ট। তথ্যবহুল, বেশ বিস্তারিত ও সাবলীল ভাষা। সিরিজ নিয়মিত চলবে আশা করি।

ভূমিকম্পের আগমনী বার্তা আগে ভাগে পেয়ে যাবার কোন উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে কী? বা কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে গবেষণায়? না এটা অসম্ভব-প্রমাণিত? দ্রোহীদা, কোন এক পর্বে পারলে এ বিষয়ে একটু আলোকপাত কইরেন।

আর ৬.৫ উর্ধ্ব কোন ভূমিকম্প হলে ঢাকায় কোন এলাকার কী অবস্থা হতে পারে তার কোন উপাত্ত কী আছে?

পোস্টে চলুক ।(পৌরাণিক আর মারফতি কারণ মজার দেঁতো হাসি )

দ্রোহী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। সিরিজখেলাপি হিসাবে আমার বেশ দুর্নাম থাকলেও সিরিজটা শেষ করার ইচ্ছা আছে। দেঁতো হাসি

ভূমিকম্পের আগমনী বার্তা ঠিক সেভাবে সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। যেমন ধরেন দেলু রাজাকারের পুটুতে রাজহাঁসের ডিম ঢুকার সাড়ে তিন ঘন্টা পর ভূমিকম্প সংগঠিত হবে - এভাবে এত সুনিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব না। তবে অংক-টংক করে কোন স্থানের ভূমিকম্প ঝুঁকি আন্দাজ করা যায়।

Comprehensive Disaster Management Program (CDMP) এর গবেষণায় বলা হয়েছে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরে প্রায় ৭০ হাজার বহুতল ভবন সম্পুর্ন ধ্বংস হয়ে যাবে।মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন ৭০ হাজার বিল্ডিং ধ্বংস হলে মানুষ মারা যাবে ৭০ হাজার। এ অনেকটা মুক্তিযুদ্ধে ২৬ হাজার মানুষ মারা যাবার মত ব্যাপার আর কী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আসবে সিরিজের বাংলাদেশ অংশে। চোখ টিপি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

সিরিজখেলাপী(!) নামটা মুছেই দেন, সিরিজটা দ্রুত শেষ করে!!! দেঁতো হাসি

০২
গবেষণা কিছু হচ্ছে না বুঝি? কোন উপায়ই বুঝি নেই তাই না!!!

০৩
বাংলাদেশ পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

অটঃ আম্রে 'তুমি' কৈয়েন বস। হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিজ্ঞান বুঝলাম। কিন্তু আপনি ভূমিকম্পের পক্ষের লোক না বিপক্ষের লোক তা একটু খোলাসা কইরা কইলে সুবিদা অইত

দ্রোহী এর ছবি

আমি বিজ্ঞানের পক্ষের আর ভূমিকম্পের বিপক্ষের লোক চোখ টিপি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

গুরু গুরু
আপনে লোকটা ভালো হইলে বেশী কইরা বিজ্ঞানের পোস্ট লিখতেন। এতো অসাধারণ একটা পোস্ট হইছে যে আর কী বলব! আমি নিশ্চিত হইলাম যে আম্নে সবাত্তে বেশি বুজেন! দেঁতো হাসি

পরের পর্বগুলোতে জবাব আসছে হয়তো, তারপরও প্রশ্ন রেখে যাই, রিখটার স্কেলের হিসাবটা কী? দুটো রিখটার মাত্রার পার্থক্য যদিও বলেছেন কিন্তু তাতে স্কেল সম্পর্কে 'কিলিয়ার' ধারণা হয়নাই! ১ রিখটার মাত্রার চাইতে ২ রিখটার মাত্রা দ্বিগুণ মনে হচ্ছেনা, কেম্নেকী!

আপনাকে ঠেলে ঠেলে যারা এই লেখা লিখিয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন। তারা প্রায় অসম্ভব সম্ভব করেছেন। পরবর্তী পর্বগুলো তাদের কাছেই জলদি চাইলাম হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দ্রোহী এর ছবি

আমি লোকটা খুব ভালু এ বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।

সিরিজের দ্বিতীয়/তৃতীয় পর্বে ভূমিকম্প মাপার স্কেলগুলো বিস্তারিত আলোচনা করবো। রিখটার স্কেল জিনিসটা অনেকটা pH স্কেলের মত গাণিতিক স্কেল।

কোন ভূমিকম্প সাইজমোগ্রামে কত বড় বিস্তারের তরঙ্গ তৈরি করে তার উপর ভিত্তি করে রিখটার স্কেলে সে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

সে হিসাবে কোন রেকর্ডিং স্টেশন থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে সংগঠিত রিখটার স্কেলে ১ মাত্রার ভূমিকম্পে S-wave এর সর্বোচ্চ বিস্তার (ধরা যাক ৫ মিমি) যা হবে ২ মাত্রার ভূমিকম্পে তার দশ গুণ বেশি হবে (৫০ মিমি)।

আবার P-wave এর তুলনায় S-wave এর গতিবেগ কম। তাই যে কোন সাইজমোগ্রাম থেকে প্রথম P wave এবং প্রথম S wave এর আগমনী সময়ের পার্থক্যকে তাদের গতিবেগের পার্থক্য দিয়ে গুন করে রেকর্ডিং স্টেশন থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব বের করা সম্ভব। এদিকে সাইজমোগ্রাম থেকে s-wave এর সর্বোচ্চ বিস্তার মেপে নেয়া যাচ্ছে। দূরত্ব ও বিস্তার জানলে রিখটার স্কেলে মাত্রা বের করা পান্তাভাত।

শক্তিমত্তার পার্থক্যে ১ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ২ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় ৩২ গুণ বড়।

♦♦♦

বেশ কয়েকজনের পীড়াপীড়িতে এই অসম্ভব কাজ সম্ভব হয়েছে। তারা এমনিতেই বেশ খাটো। ধন্যবাদ দিয়ে তাদের আরো খাটো করতে চাই না। শেষে লোকে 'বামন' বলে গাল দেবে। চোখ টিপি

অঅসাধারন এর ছবি

ঝরঝরে বর্ণনা। সিরিজ চলুক

কালো কাক এর ছবি

সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষা মনে হচ্ছে কালকে ! লেখা ভাল লাগসে। এত কঠিন (কিন্তু মজার) জিনিস মানুষ পড়ে কেম্নে ভাবছি দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

চলুক!

এই সিরিজ ই-বুক আকারে দেখতে চাই।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বুকের ব্যপারে দ্রোহী'দার অনাগ্রহ থাকার কথা না। এই ব্যপারে আপনার মতো আমিও খুব উৎসাহী।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

সমর্থন। সমর্থন। লেখা শেষে ই-বুক চাই।

দ্রোহী এর ছবি

বুক-পেট কোন ব্যাপারেই আমার আপত্তি থাকার কথা না। চোখ টিপি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হ। এখনতো আপ্নে ছেলের বাপ। প্রয়োজন বাড়ছে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কল্যাণF এর ছবি

ই-বুক প্রস্তাবে চরম ভোট চলুক

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার। চলুক সিরিজ।

(আসবে আসবে এরকম শোনা যাচ্ছিল আমি সচলে আসার পর থেকেই... হাসি

দ্রোহী এর ছবি

হাসি

আমি অনেকটা ভাঙা মোটরসাইকেলের মত। কষ্টেসৃষ্টে একবার যখন স্টার্ট নিতে পেরেছি তখন তেল ফুরোনোর আগ অব্দি চলবে আশা করি।

সাফওয়াত এর ছবি

সফেদ বর্ণনা। পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম... আমাদের দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ভূ-তত্ত্ব নিয়ে যে অধ্যায়টি ছাত্রদের মুখস্ত করতে হয়, সেই জায়গায় যদি এমন সাবলিল ভাষায় কোন কিছু থাকত তাহলে হয়ত অনেক ছাত্রই এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হত! আমাদের বর্তমান পাঠ্যবইগুলোর বর্ণনা একটা শিশুমনের বিকাশকে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

এই ধরনের লেখা ব্লগের গন্ডি পেরিয়ে সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক... এই কামনা করি।

দ্রোহী এর ছবি

ধন্যবাদ।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

সফেদ বর্ণনা। পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম... আমাদের দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ভূ-তত্ত্ব নিয়ে যে অধ্যায়টি ছাত্রদের মুখস্ত করতে হয়, সেই জায়গায় যদি এমন সাবলিল ভাষায় কোন কিছু থাকত তাহলে হয়ত অনেক ছাত্রই এই বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হত! আমাদের বর্তমান পাঠ্যবইগুলোর বর্ণনা একটা শিশুমনের বিকাশকে নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

আমিও ভাবছিলাম। হাসি

বাউন্ডুলে এর ছবি

চলুক
তথ্যবহুল... জমজমাট ... একটা সিরিজের প্রত্যাশা করছি...

গৌতম এর ছবি

আমার একটা প্রশ্ন ছিল। ধরেন, একটা ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হল কিন্তু এর স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ৫ সেকেন্ড। অপরদিকে একই স্থানে একটি ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের স্থায়ীত্ব ছিল ৪০ সেকেন্ড। কোনক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে? ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কি শুধু রিখটার স্কেলের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে, নাকি স্থায়ীত্বের বিষয়টিও এখানে মুখ্য? বোধহয় বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেললাম।

আর আমার ধারণা, আপনি ছবিটবি দিয়ে যা বুঝাতে চাইলেন, সেগুলো পুরাটাই ভূয়া। ভূমিকম্পের আসল রহস্য পৌরাণিক আর মারফতি কারণগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে। সেদিন দেইল্লা রাজাকার বলেছে তার প্রতি অবিচার হলে গজব পড়বে। আমার মনে হয় নেক্সট ভূমিকম্পের কারণ সেটাই। চোখ টিপি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দ্রোহী এর ছবি

উরে গৌতমদা,

কবি বলেছেন, "বুকার মত প্রশ্ন বলে কিচু নাই। কিচু নাই.... নাই!"

সাধারন হিসাবে ভূমিকম্পের স্থায়িত্বকাল যতবেশি হয় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও ততবেশি হয়। কিন্তু এখানে একটা কথা আছে। রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় ১০০ গুন বেশি শক্তিশালি। সে হিসাবে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হবে তা ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় নগন্য।

প্রশ্ন আসতে পারে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ যেহেতু মাটির কম্পন সেহেতু ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে মাটির যে হারে কাঁপে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সেই কাঁপুনির মাত্রা কি ১‌০০ গুন বেশি হবে?

কোন স্থানের মাটি সর্বোচ্চ কতটুকু কাঁপবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ধরা যাক কোন স্থানে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হলে মাটি সবোর্চ্চ পরিমানে কাঁপবে। সেখানে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হয় তাহলে কী ঘটবে? যেহেতু রিখটার স্কেলে মাত্রা ১ বৃদ্ধি পেলে শক্তির পার্থক্য বৃদ্ধি পায় ‍‌~ ৩২ গুন। সেহেতু ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মাটি কাঁপার সময়কাল অনেক বেশি হবে এবং উৎপত্তিস্থল থেকে অনেক বড় ব্যাসার্ধ জুড়ে ধ্বংসলীলা সাধিত হবে।

ছবিটবি দিয়ে যা বুঝাতে চেয়েছি সবই ভূয়া। ভূমিকম্পের প্রকৃত কারণ রাজহাঁসের ডিম। ডিমের সাপ্লাই বাড়লে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন ধরনের গজব পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে। চোখ টিপি

মনোজ এর ছবি

চলুক

... একটা গরু তার শিংয়ের উপর নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

সার্কাসের গরু বোধহয় চিন্তিত

বাঙালী বড় বিস্মৃতিপরায়ণ এক চুৎমারানি জাতি

স্মৃতি নিষ্প্রয়োজন। জন্মাবো একআধটু গোল্লাছুট খেলব দুম্ করে মরে যাবো খালাস। আমি নিজে ছাড়া বাকী সব আলোকবর্ষ দূরে গিয়ে মরুক।- জীবনযাপনের বাঙালী তরিকা।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
চমৎকার, দরকারী এবং রসময় লেখা। আপনি মানুষটা আরেকটু কম আইলসা হলে জাতি আপনার কাছ থেকে নিয়মিত আরো অনেক এমন লেখা পেতো।

দ্রোহী এর ছবি

রসময়!!! দেঁতো হাসি

তানভীর এর ছবি

চলুক

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলেন। ধন্যবাদ। আশা করি সিরিজটা নিয়মিত পাব।

মারফতি কারণগুলো পড়ে গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তয় একটা বাদ গ্যাছে - নারীদের বেপর্দা চলাফেরা ভূমিকম্পের কারণ। এই বিদ্ঘুটে তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে ফেইসবুকে একটা ইভেন্ট খোলা হয়েছিল যা অনলাইন মিডিয়াতে ঝড় তোলে ও ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি করে।

দ্রোহী এর ছবি

হে হে হে হে......মারফতি লিস্টে যোগ করে দিলাম। চোখ টিপি

কল্যাণF এর ছবি

চলুক চমৎকার লেখা, অসাধারন, পরের পর্বের জন্য 'ফৌজদারি' ধাওয়া দিয়া গেলাম দ্রোহীদাদারে।

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ। উত্তম জাঝা! পরের পর্বের জন্য পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
তয় মারফতি কারণ গুলার জন্য গড়াগড়ি দিয়া হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চমৎকার উপস্থাপনা, ও বর্ণনা।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

পরের পর্ব চাই। এক্ষণ চাই। এক্ষুণি চাই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মেম্বর, আপনার বিগত জীবনে করা সকল দুষ্কর্ম-অপকর্ম এই একটা লেখার জন্যই ক্ষমার্হ। আরো যে আশি-নব্বই বছর বাঁচবেন সে সময়কালে যেসব দুষ্কর্ম-অপকর্ম করবেন সেগুলোর অপরাধ থেকে অগ্রিম পানাহের জন্য এই সিরিজটা অবিলম্বে শেষ করুন। লেখার ব্যাপারে একটাই মন্তব্য করা যায় গুরু গুরু গুরু গুরু

পাঠকদের প্রতিঃ যে মানুষ এমন ভাষায় বিজ্ঞানের কঠিন বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন, তিনি যদি মাসে একটা দূরে থাক বছরে একটা করেও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা না দেন - তাহলে তাকে কী করা উচিত?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দ্রোহী এর ছবি

দেঁতো হাসি

আমি লোকটা এমনিতে খুব ভালু। আমার দুষ্কর্মের লিস্ট বেশি লম্বা হয়নি। খোঁজ নিলে দেখা যাবে সুর্কমের লিস্টও বেশি বড় না। তবে আমার নিষ্কর্মের লিস্ট যে বেজায় লম্বা তা নিশ্চয়তা সহকারে বলতে পারি।

বেশিদিন বাঁচতে চাই না। টেনেটুনে ৭০-৭৫ বছর বাঁচলেই খুশি। কোন ঝামেলায় ফেঁসে না গেলে নিয়মিত বিরতিতে সিরিজটা লিখে শেষ করে ফেলব।

নাশতারান এর ছবি

যাব্বাবা! এদ্দিনে! (তালিয়া)

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

(গুড়) দেওয়া ছাড়া উপায় কী?

এই প্রশ্নটার উত্তর পরে কোনো পর্বে দিয়েন তো - ওই যে বলে, সানফ্রান্সিসকো/সিয়াটল এসব অঞ্চলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে একটা স্কেল ৭ ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা - এগুলো কী করে বলে?

দ্রোহী এর ছবি

অ্যাঁ, এ প্রশ্ন আপনে আমাকে জিজ্ঞেস করলে ক্যামনে কী? আমারইতো প্ল্যান ছিল আপনাকে আর পিপিদাকে চেপে ধরে এই প্রশ্নের উত্তর বের করা।

জলদি বলেন, ডেটাসেট দিলে রিকারেন্স পিরিয়ড বের করে দিতে পারবেন? আমি নিজে করেছিলাম ২০০৩ সালে। ক্যামনে করেছি এতদিনে তা গুলে খেয়েছি। মন খারাপ

কৌস্তুভ এর ছবি

যেমন লেখা ছিল তাতে তো মনে হয়নি এটা রেকারেন্স পিরিয়ড থেকে বের করা... সেভাবেই করে নাকি?

দ্রোহী এর ছবি

সাধারণত বড় মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর পুনরাবৃত্তির সময়কাল বেশ বড় হয়। বাংলাদেশ তথা বেঙ্গল বেসিনের ক্ষেত্রে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল প্রায় ৩৫০ বছর। এ কারণে বড়মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর পুনরাবৃত্তির সময়কাল পরিসংখ্যান ও সম্ভাব্যতার গণিত ব্যবহার করে বের করতে গেলে বিশাল বড় ডেটাবেজের প্রয়োজন হয়।

বেঙ্গল বেসিনে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল ঠিকঠাক ভাবে হিসাব করতে গেলে নিদেনপক্ষে ১ হাজার বছরের ডেটা দরকার।

প্রকৃতি বড় হারামি ধরনের। যেমন ধরেন হিসাব অনুযায়ী বেঙ্গল বেসিনে প্রতি ৩৫০ বছর বা কাছাকাছি সময় পর পর একটা করে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালে ধুপধাপ করে দুটো ভূমিকম্প হওয়ার পর অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট।

চীন ও তুরস্কের ডেটা লক্ষ্য করলেও দেখা যায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ক্লাস্টার হিসাবে সংঘটিত হয়। এ জন্য বড়মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল অংক কষে বের করতে গেলে ১ থেকে ১০ হাজার বছরের ডেটা দরকার।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণে বিজ্ঞানীরা আরেকটা পথ বের করেছেন। আমরা জানি যে ভূমিকম্প উৎপত্তির পেছনে শিলাস্তরের বিচ্যুতি [displacement] দায়ী। তাই অ্যাকটিভ ফল্টে [সান অ্যান্ড্রিয়াস ফল্ট] বিচ্যুতির পরিমান হিসাব করে অংক কষে ভূমিকম্প সংঘটিত হবার সম্ভাবনা ও সম্ভাব্য মাত্রা নিরূপণ করা যায়। তবে সে বড় খরুচে ব্যাপার, বিচ্যুতির পরিমাণ ঠিকভাবে বের করতে রেডিও কার্বন ডেটিং ফেটিং করার দরকার পড়ে।

ছোটখাটো ভূমিকম্প যেহেতু গরু ছাগলের বাচ্চার মত সংখ্যাবৃদ্ধি করে তাই এসব ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তির সময়কাল মোটামুটি শ'খানেক বছরের ডেটাসেট থেকেই বের করা যায়। তার জন্য ফল্টের ডিসপ্লেসমেন্ট বার করা লাগে না।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ধুসর গোধূলি এর ছবি

পরের কোনো পর্বে লিখবেন হয়তো, তাও এখানেই জিজ্ঞেস করে ফেলি। ভূমিকম্পের শকওয়েভ বলে যে একটা জিনিস আছে, সেটা মূল ভূমিকম্পের পর কীরূপে, কখন আবির্ভূত হয়! বেঙ্গল বেসিনের যে সময়কালের উল্লেখ আছে, সেখানে প্রথমটা মূল ভূমিকম্প হলে পরেরটা কি শকওয়েভের আওতায় পড়ে? যদি পরেরটা শকওয়েভ হয়ে থাকে তাহলে তো হিসাব মতে এই বেসিনে ব্যাপক আকারের এক ভূমিকম্প হওয়াটা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেটা আবার ভূতাত্বিকরা সন্দো করছেন। নতুন একটা প্রবল ভূকম্পন আসার আগের সময়টাকেই কি অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট বলছি আমরা?

দ্রোহী এর ছবি

হের মনির হোশেন,

ভূমিকম্পের ডাক নাম "শক"। সে হিসাবে ভূমিকম্পের ফলে যেসব তরঙ্গ সৃষ্টি হয় [P-wave, S-wave, L-wave] তাদের সবগুলোকেই শকওয়েভ বলা যায়।

সিনেমায় দেখবেন নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরিত হলে একটা উচ্চগতির ঝাপটা তৈরি হয়। এই ঝাপটার ধাক্কায় দালানকোঠা, অফিস, আদালত ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। অথবা সুপারসনিক বিমান সাউন্ড ব্যারিয়ার অতিক্রম করার সময় যে সনিক বুম তৈরি করে সেটাই শকওয়েভ।

তবে আপনি যে জিনিসটা জানতে চাইছেন সেটা ভিন্ন জিনিস। সাধারণত বড় ভূমিকম্পের অব্যবহিত আগে পরে অপেক্ষাকৃত ছোট মাত্রার এক বা একাধিক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এদের যথাক্রমে ফোরশক এবং আফটারশক এবং মূল ভূমিকম্পটিকে মেইন শক নামে ডাকা হয়।

ফোরশক বা আফটারশক মূল ভূমিকম্প সংঘটিত হবার কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েকদিন আগে/পরে সংঘটিত হতে পারে। এ কারণে অনেকসময় ফোরশক থেকে মেইন শক আসার ইঙ্গিত বোঝা যায়।

বেঙ্গল বেসিন তথা বাংলাদেশের ভয়টা অন্য জায়গায়। বেঙ্গল বেসিনের টেকটোনিক অবস্থান এমন যে এখানে নিয়মিত বিরতিতে মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প হবেই। পৃথিবী ছেড়ে অন্য গ্রহে চলে যাওয়া ছাড়া এটা ঠেকানোর কোন উপায় নেই। ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার অপ্রতুলতা ইত্যাদি কারণে ভূমিকম্প ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। তার উপর আমরা বাঙালি জাতি হওয়ার কারণে ভূমিকম্প ঝুঁকি আরো খানিকটা বেড়ে যাচ্ছে।

একটা উদাহরণ দিলে জিনিসটা পরিষ্কার হবে।

আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন ঢাকায় যদি ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তাহলে ৭২ হাজার বহুতল ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। আরও ৮৫ হাজার ভবন মাঝারি ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবনের উপর গবেষণা করে এ তথ্য জানা গেছে।

এবার তাহলে দেখা যাক কত লোক মারা যাবে। মন্ত্রী বলেছেন, ভূমিকম্পটি যদি দিনের বেলায় সংঘটিত হয় তাহলে ৭০ হাজার মানুষ মারা যাবে। আর রাতের বেলায় সংঘটিত হলে ৯০ হাজার।

এবার আপনি বলেন দেখি রাতের বেলায় সংঘটিত একটা ভূমিকম্পে যদি ঢাকা শহরের প্রায় দেড় লাখ ভবন পুরোপুরি ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৯০ হাজার মানুষ মারা যায় তাহলে প্রতিটি ভবনে কতজন মানুষ বসবাস করে?

আর্যভট্ট এর ছবি

এখানে একটু হাতড়ে দেখুন না

স্বাধীন এর ছবি

চমৎকার সিরিজ। খেলাপী না হলেই হলো দেঁতো হাসি , গাড়ি চলতে থাকুক

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

বিজ্ঞান পড়তে গিয়া সজ্ঞানে অজ্ঞান হইনি এমন খুব কম সৌভাগ্যই হইসে লাইফে...আইজ তার একটা। অসাধারণ দ্রোহীদা। তয় সিরিজ শেষ না করলে কিন্তু মারফতি কারণের মইদ্যে ঢুকায় দিমু আপনেরে কইলাম দেঁতো হাসি

অতীত

মন মাঝি এর ছবি

ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ম্যাগনিচ্যুড আর ইন্টেনসিটি, 'রিখটার স্কেল' আর 'মডিফায়েড মারকালি ইন্টেন্সিটি স্কেল' (MMIS?) - এগুলির মধ্যে সম্পর্ক আর পার্থক্য, মানবজীবন ও স্থাপনার উপর সঙ্ঘটিত বাস্তব ইম্প্যাক্ট পরিমাপ এবং 'সম্ভাব্য' ইম্প্যাক্ট বা ইফেক্ট পরিমাপের একটা পূর্ব-নির্ধারিত অব্জেক্টিভ স্কেল হিসেবে এগুলির রেস্পেক্টিভ প্রাসঙ্গিকতা বা প্রয়োগযোগ্যতা সম্পর্কে একটু যদি লে-ম্যান্স টার্মসে খোলসা করে বুঝিয়ে বলতেন তাহলে খুব ভালো হত।

****************************************

দ্রোহী এর ছবি

দ্বিতীয়, তৃতীয় পর্বের দিকে গিয়ে এসব বিষয় আসবে। আমি একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করেছি। এতে করে আসল জিনিস পর্যন্ত যেতে সময় একটু বেশি লাগবে কিন্তু আমি চেষ্টা করছি ভাসাভাসাভাবে সবকিছু কভার করতে যাতে করে সবগুলো পর্ব একসাথে কম্পাইল করলে "ভূমিকম্প For Dummies" ধরনের একটা কিছু দাঁড়ায়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

"ডামিজ ফর ভূমিকম্প" হইলে কেমন হয়? চিন্তিত

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

শাব্দিক এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

যুমার এর ছবি

বেশী দেরি কইরেন না কিন্তু!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

যাক, গিন্নী বাসায় ভুমিকম্প ঘটিয়ে ফেললে, সেইটাকে ব্যাখ্যা করে মনকে প্রবোধ দেবার একটা তথ্য/তত্ত্ব হাতের কাছেই জমা থাকলো।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চাল্লু।

গ্যালারীতে আছি। টেকনোপ্লেট নিয়া হালকাপাতলা জানতাম, দেখি আপনার পরের চোথায় কী আছে।

[আপনি লোকটা পাষন্ড আছেন। পৌরাণিক কারণ পইড়া হাসতে হাসতে দম আটকায়া গেসিলো :D]

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনের এই সিরিজের ইবুকে যেকোনো রকম কামলা দেয়ার জন্য হাত তুলে খাড়াইলাম। আপনের মেম্বরীর কসম লাগে, এই সিরিজ থামায়েন না। ঈশ্বরের আরশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে তাইলে। জিগান, 'ক্যান'!

দ্রোহী এর ছবি

জিগাইলাম, "ক্যান?"

কল্যাণF এর ছবি

'ক্যান?' চিন্তিত

পুতুল এর ছবি

কামের কাম করসেন একটা মেম্বর।
আমি মার কাসে হুনসি গরু এক শিং থেইক্যা আরেক শিং-এ নেওয়া সময় দুনিয়া কাইপ্পা উঠে, হেইডারে মাইনষে কয় ভূমি কম্প।
এতদিন এই কাহিনী এদ্দূরই জানতাম।
এখন মনে লায় কদ্দূর বুঝতারসি।
এর লাইগ্যা আপ্নেরে একদিন দাওতদিয়া খাওয়াইতে অইব।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

দ্রোহী এর ছবি

দাওয়াত!! অক্কনি আইতাছি! দেঁতো হাসি

আশালতা এর ছবি

আমিও খালি জানতাম মাটি কাঁপলেই ভুমিকম্প, এত্ত এত্ত জিনিস্পাতি জড়িত জানতাম না। চমৎকার সিরিজ। গুছিয়ে বসলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

পড়ুয়া এর ছবি

গত দিনের ভূমিকম্পের পরদিন সকালে আমার বাড়ীর কাজের মেয়েদের কথোপকথন:
১. এই জিনিষটা আসলে কি হইলো ?
২. সারাডি দুইন্যা কাইপ্যা উডচে।
১. ক্যান?
২. দুইন্যার নীছে ফাহার দিয়া বরা, হের একডি কাইপ্যা ব্যাকতিরে কাপাইয়া দিছে।হেরফর জমিনরে লাড়ান দিছে। আর হেই দিনাজপুরতেঅ মেলা ফাহার আছে,হেই জাগাতো মেলা কাপছে। গরবাড়ী ব্যাক বাইঙা পড়ছে।
১. এখানে কাপছে ক্যান?
২. অইখানতে আইয়া পড়ছে।

আমারও জ্ঞান বাড়লো।

পাঠক এর ছবি

সম্পূরক প্রশ্ন:

অদূর ভবিষ্যতে সৌদি আরবে তুলকালাম ভূমিকম্প হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?

দ্রোহী এর ছবি

না। মন খারাপ

সব ঠেলা ইরান আর আফ্রিকার উপর দিয়ে যাবে।

উপরের ম্যাপে ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত রিখটার স্কেলে ৫ এর চাইতে বড় ভূমিকম্পগুলো দেখানো হয়েছে। দেখেন, সৌদি আরবে মাত্র একটা ভূমিকম্প হয়েছে। নিশ্চিন্তে যাতে হারেমের বিবিদের সাথে মৌজ মাস্তি করা যায় তার জন্য খোদা তাদেরকে ভূমিকম্পের হাত থেকে বাঁচায়ে দিয়েছে। চোখ টিপি

সমুদ্র এর ছবি

রিখটার স্কেল নিয়ে সালমান খানের ভিডিওটা পাওয়া যাবে এইখানে:

রিখটার স্কেল - খান একাডেমি

"Life happens while we are busy planning it"

দ্রোহী এর ছবি

সালমান খান বলে কথা! চোখ টিপি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

চমৎকার সহজপাঠ্য লেখা। অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এই বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য। টেকনিক্যাল বিষয়ে এরকম মজার ভাষায় লিখতে পারাটা একটা বিরাট কৃতিত্ব।

এখন কিছু মন্তব্য আর প্রশ্ন:

১. রিখটার স্কেল এবং এই সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কি অতি মূল্যবান এবং অতি জটিল কিছু? এটা চালাতে কি ভয়াবহ ধরণের অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার দরকার হয়? এটা আমাদের দেশে নেই (অথবা বেশি নেই) কেন? বছর দশ-পনেরো আগেও শুনেছি বাংলাদেশে ভালো ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র নেই। এখন কি অবস্থা বদলেছে, নাকি এখনো ভূমিকম্পের পরে অন্য দেশের ডাটা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় সেটার তীব্রতা জানার জন্য?

২. টেকটোনিক প্লেট এবং তাদের নড়াচড়া জিনিসটা ছোটবেলায় ভুগোল পড়ার সময় থেকেই বুঝতে, বা ভিজ্যুয়ালাইজ করতে খুব সমস্যা হয়। এই বিশাল আকারের নড়াচড়া দু-ইঞ্চি সাইজের একটা ছবি দিয়ে বোঝানো হয়তো বেশ কঠিন। পরের পর্বে এগুলোর বোঝানোর মত কোন ভিডিও বা অ্যানিমেশন থাকলে যোগ করে দিতে পারেন, মনে হয় তাতে জিনিসগুলো বুঝতে সুবিধা হবে।

৩. ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যেটা বুঝি সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটা প্রেডিক্ট করতে না পারার ব্যাপারটা। প্রশ্ন হলো, প্রেডিক্ট করা যায় না কেন? এই প্লেটগুলোর নড়াচড়া এত আকস্মিক কেন? মানে, সাধারণ ইনট্যুইশনে মনে হয় বিশাল জনিসের নড়াচড়া হবে (অপেক্ষাকৃত) ধীরগতির - প্লেট টেকটোনিকসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উল্টো কেন? সময়ের (মহাকালের হিসাবে) সাথে সাথে কি এই আকস্মিকতার পরিবর্তন হয়? মানে যেমন ধরুন, হিমালয় রেঞ্জের তৈরী হওয়াটা যদ্দুর জানি (ভুলও জানতে পারি) প্লেট টেকটোনিকস এর কারণেই... কিন্তু সেটা তো হয়েছে অনেক হাজার-লক্ষ বছর ধরে। আজকালকার ভুমিকম্পের ক্ষেত্রে সেটা অমন আকস্মিক কেন? (এইটা একটা বোকার মত প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু আপনি নিজেই তো বলেছেন যে কবি বলেছেন... হাসি )

৪. বিভিন্ন প্লেটগুলোকে যে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, আর সীমানা দেয়া হয়, এই জিনিসটা কি আসলেই একজিস্ট করে, নাকি ব্যাপারটা তাত্বিক? মানে মনে করুন, আমি যদি পানির তলায় গিয়ে মাটি খুঁড়ে আফ্রিকান প্লেট আর আমেরিকান প্লেটের সীমারেখার কাছে যেতে পারি, আমি কি কোন লাইন বা খাদ বা ফাটল বা অন্য কিছু দেখে বুঝতে পারবো কোনটা কোন প্লেটের অংশ? নাকি সীমারেখার ব্যপারতা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠাতেই থাকে? আবার, ওশিয়ানিক প্লেট আর কণ্টিনেণ্টাল প্লেট আলাদা করে কেমনে? আমিতো আপনার ডায়াগ্রাম থেকে দেখতে পাচ্ছি আমেরিকান প্লেটের অর্ধেকের বেশি হলো আটলাণ্টিকের তলায়? কেম্নে কী?

দ্রোহী এর ছবি

যুধিষ্ঠিরদা,

আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো পরবর্তী বিষয়গুলো আলাপ করতে গেলে বিস্তারিতভাবে আসবে। আপাতত সংক্ষেপে উত্তরগুলো দিই:–

১. রিখটার স্কেল আসলে একটা গাণিতিক স্কেল। এটা মূলত রেকর্ডিং স্টেশন থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ও গ্রাউন্ড মোশনের লগারিদমিক সম্পর্ক। সত্তুরের দশকে রিখটার স্কেলের ফর্মুলা মডিফাই করে মোমেন্ট ম্যাগনিচ্যুড স্কেল নামে আরেকটা গাণিতিক স্কেল উদ্ভাবন করা হয়েছে। বড় বড় ভূমিকম্প মাপার কাজে বর্তমানে মোমেন্ট ম্যাগনিচ্যুড স্কেলই ব্যবহৃত হয়। মডিফায়েড মারক্যালি স্কেল নামে আরেকটা স্কেল আছে এটা মূলত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে লাগে বেশি। কোন স্থানের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রার উপর ভিত্তি করে এই স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এটা মূলত কোয়ালিটেটিভ স্কেল।

রিখটার স্কেলে কোন ভূমিকম্পের মাত্রা মাপার জন্য গ্রাউন্ড মোশন ও উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব জানা প্রয়োজন। গ্রাউন্ড মোশন মাপার কাজে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় সেটাকেই আমরা ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র হিসাবে চিনি।

ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের মূলনীতি খুবই সহজ। একটা সুতা দিয়ে কলম ঝুলিয়ে দিয়ে তার নিচে সুষম গতিতে একটা কাগজ টানতে থাকলে একটা সরলরেখা পাওয়া যাবে। এমতাবস্থায় ভূপৃষ্ঠ কাঁপলে জড়তার কারণে কলমটাও কাঁপবে। ফলে কাগজের উপর আঁকাবাঁকা রেখা তৈরি হবে। এই হচ্ছে সাইজমোগ্রাফ যন্ত্রের মূলনীতি।

সাইজমোগ্রাফ যন্ত্রে এতো কলমের বদলে ধাতব বল ও সুতার বদলে সুবেদি স্প্রিং ব্যবহার করা হয়। যন্ত্রটা এত সুবেদি যে ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ঠ কম্পনকে কয়েক মিলিয়ন গুণ ম্যাগনিফাই করতে পারে।

সুতারাং, বুঝতেই পারছেন এত সুবেদি যন্ত্র খানিকটা মূল্যবান হবেই।

যতদূর জানি বাংলাদেশে সরকারী পযার্য়ে একটা সাইজমোগ্রাফ যন্ত্র ছিল। সেটা আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিসের তত্ত্বাবধানে ছিল। সে এক প্রাগৈতিহাসিক যন্ত্র। সে যন্ত্রে ভূমিকম্পটম্প মাপা যায় না। কেবল পৃথিবী যে কাঁপছে সেটা বোঝা যায়। যখন ভূমিকম্প নিয়ে পড়ালেখা করতাম তখন শুনেছিলাম যন্ত্রটা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পরে ঠিক করা হয়েছে কি না জানি না।

গত কয়েক বছরে সরকারী উদ্যোগে নতুন কোন সাইজমোগ্রাফ স্থাপন করা হয়েছে কি না তা এখনো জানি না। বাংলাদেশ চ্যাপ্টার লেখার আগে খোঁজখবর নিব।

বেসরকারী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা ভূমিকম্প গবেষণা প্রজেক্ট আছে। এই প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে একটি অত্যাধুনিক ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। এছাড়া ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিফারেন্সিয়াল জিপিএস স্থাপন করা হয়েছিল টেকটোনিক মোশন রেকর্ড করার জন্য। গত ৭ বছরে সে প্রজেক্টের আওতায় আরো অনেক কিছু করা হয়েছে। তবে সমস্যার কথা হচ্ছে সেই ডেটাগুলোর যাবতীয় অ্যানালাইসিস হয় কলাম্বিয়ার ল্যামন্ট ডোহার্টি অবজারভেটরিতে। দেশে যাদের ওই ডেটায় অ্যাকসেস আছে তাদের ভেতর হাতেগোনা গুটিকয়েকজনের উপযুক্ত ট্রেনিং ও পড়ালেখা আছে এ ধরনের ডেটা নিয়ে কাজ করার। ফলে দেশে ওই ডেটা নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কাজ হয় না বলেই জানি। যেটুকু হয় সেটাও কলাম্বিয়ার ব্যানারে পাবলিকেশনের জন্য যায়। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

২. প্রথম পর্বে আসলে অ্যানিমেশন/মুভি সংযুক্ত করার মত তেমন কিছু আলোচনা করিনি। পরের পর্বগুলোতে সুবিধামত তা করার ইচ্ছা আছে।

৩. ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ যথাযথ প্রস্তুতির অভাব। যে কোন প্রাকৃতির দুর্যোগই আকস্মিক। ভূমিকম্পও তাই। তারপরও পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতার গণিত, ভূতত্ত্ব ব্যবহার করে কোন অঞ্চলের ভূমিকম্প প্রবনতা, সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ইত্যাদি নির্ণয় করা সম্ভব।

সমস্যাটা অন্য জায়গায়। উদাহরণস্বরুপ মনে করেন আপনি একটা কাঠ পেন্সিলকে দুই পাশ থেকে বল প্রয়োগ করে ভাঙতে চেষ্টা করছেন। আপনি কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন না ঠিক কোন বিন্দুতে ফাটল সৃষ্টি হয়ে পেন্সিলটি ভাঙবে। যদি দশটি পেন্সিল ভাঙা হয় তাহলে দেখা যাবে প্রতি ক্ষেত্রেই ফাটলের স্থান বা প্রকৃতি আলাদা আলাদা। তারপরও অংক কষে, পরীক্ষা নিরিক্ষা করে পেন্সিলটি কোথায়, কীভাবে ভাঙতে পারে তা আন্দাজ করা সম্ভব।

ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও তাই। আমরা জানি ভারতীয় প্লেট উত্তর পূর্ব দিকে বছরে ২–৫ সেন্টিমিটার গতিতে উত্তরে ইউরোশিয়ান প্লেট ও পূর্বে বার্মিজ প্লেটের গায়ে চাপ দিচ্ছে।

চিন্তা করে দেখুন বাংলাদেশের সমান বড় এবং কয়েকশো কিলোমিটার পুরু একটা জিনিস বছরে ২ সেন্টিমিটার ঠেলে সরানোর জন্য কতটুকু শক্তির প্রয়োজন হয়। নিউটনের F=MA দিয়ে হিসাব করলে একটা আন্দাজ করা সম্ভব। এই গতিশক্তিটুকু লিথোস্ফিয়ারে জমা হচ্ছে যা পরবর্তীতে ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেটকে ধাক্কা দেবার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যেহেতু ভূপৃষ্ঠে শিলাস্তরের বন্টন সুষম না তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল জায়গাগুলোর কোন একটি দিয়ে এই শক্তির অতি সামান্য কিছু অংশ রিলিজ হয়। শক্তিটুকু রিলিজ হওয়ার সময় যে ফাটল/ভাঙনের সৃষ্টি হয় তাই ভূমিকম্প।

এখন, আপনি কখনোই আন্দাজ করতে পারবেন না ফাটল/ভাঙনটা কখন ঘটবে। কিন্তু অংক কষে ও পরীক্ষা নিরিক্ষা করে একটা সম্ভাব্য সময়/ক্ষতির মাত্রা ইত্যাদি বের করা সম্ভব।

হিমালয় পর্বত তৈরি হয়েছে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটে মুখোমুখি সংঘর্ষের ফলে। দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে যে শিলাস্তর ছিল তা ভাঁজ হয়ে হিমালয় পর্বত তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে হিমালয় পর্বত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের মুখোমুখি চাপের ফলে হিমালয় পর্বতের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আজ থেকে এক মিলিয়ন বছর পর হিমালয় পর্বতের উচ্চতা প্রায় দুই কিলোমিটার বেশি হবে। দেঁতো হাসি

৪. বিভিন্ন প্লেটের সীমা আসলেই একজিস্ট করে। গুগল ম্যাপে গিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে জুম করলে প্লেট বাউন্ডারি দেখতে পাবেন। যদিও গুগল ম্যাপে ব্যাথিমেট্রি রেন্ডার করে ব্যবহার করা হয়েছে বাস্তবের প্লেট বাউন্ডারি একই ধরনের। প্লেট বাউন্ডারি ব্যাপারটার আসলেই বাস্তব অস্তিত্ব আছে।

এই যে দেখেন পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৯ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের কাছাকাছি অঞ্চলের প্লেট বাউন্ডারির টপোগ্রাফি/ব্যাথিমেট্রিক সিমুলেশন [সোর্স: USGS]। প্লেট বাউন্ডারি দেখতে পাচ্ছেন? চোখ টিপি

আপনি যদি পানির তলায় গিয়ে আফ্রিকান প্লেট আর আমেরিকান প্লেটের বাউন্ডারি গিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন তাহলে দেখবেন একটা সীমানার দুই পাশের অংশ দুই দিকে সরছে। তাদের রাসায়নিক গঠন কিছুটা ভিন্ন। এবং বয়স ভিন্ন। তবে বাউন্ডারিটাকে একটা দাগ না বলে একটা জোন/এলাকা বলা ভাল। এত বড় স্কেলের একটা জিনিসতো আর দাগ হওয়া সম্ভব না। চোখ টিপি

ওশিয়ানিক প্লেট আর কন্টিনেন্টাল প্লেট আলাদা করে তাদের রাসায়নিক গঠন থেকে। ওশিয়ানিক প্লেট মুলত ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেটস ঘটিত শিলাস্তর দিয়ে তৈরি আর কন্টিনেন্টাল প্লেট অ্যালুমিনাম সিলিকেটস ঘটিত শিলাস্তর দিয়ে তৈরি। ঘনত্বের দিক থেকে তাই ওশিয়ানিক প্লেট কন্টিনেন্টাল প্লেটের তুলনায় কিছুটা ভারী। এ কারণে কন্টিনেন্টাল ও ওশিয়ানিক প্লেটের মুখোমুখি সংঘর্ষে কন্টিনেন্টাল প্লেট ওশিয়ানিক প্লেটের উপরে চড়ে বসে।

প্লেটের সীমারেখা তো আর সমুদ্রতলের উচ্চতার উপর নির্ভর করে না। তাই আমেরিকান প্লেটের অধিকাংশই আটলান্টিকের তলায়। আরো কিছু প্যাঁচ আছে, সেগুলো বলতে গেলে রামায়ণ লিখতে হবে। তখন জিনিসটা সহজবোধ্য হওয়ার বদলে দুর্বোধ্য হয়ে যাবে। চোখ টিপি

যুধিষ্ঠির এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার জন্য! অনেক কিছু এখন বুঝতে পারলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকি এখন!

দময়ন্তী এর ছবি

দারুণ লেখা|

আমি আপাতত দুটো প্রশ্ন করে রাখি, উত্তর পরের কোনও পর্বে এলেও অসুবিধে নেই
১) পাহাড়ী অঞ্চলে বড়সড় বাঁধ দিলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ে কি? বাড়লে কিরকম হারে, তার কোনও ধারণা করা সম্ভব কি? সম্প্রতি সিকিমের ভূমিকম্পের পর কিছু আলোচনা শুনেছি ওখানকার তিস্তা হাইডেল প্রোজেক্ট নিয়ে, ওটা নাকি ভূমিক্ম্পের অন্যতম একটা কারণ

২) যাঁরা কনস্পিরেসি থিয়োরী নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, তাঁরা বলেন ভূমিকম্প কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা যায় এবং 'বড়ভাই' দেশগুলো নাকি সেই নিয়ে গবেষণা করে, মাঝেসাঝে এখানে সেখানে ভূমিকম্প ঘটিয়েও থাকে| এর প্র্যাকটিকাল ফিজিবিলিটি কতটা?

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

দ্রোহী এর ছবি

১. টেকটোনিক প্লেটে সঞ্চিত শক্তির কিয়দংশ যখন লিথোস্ফিয়ারের দুর্বল জায়গায় ফাটল সৃষ্টির মাধ্যমে বেরিয়ে পড়ে তখন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে বিশালাকারের জলাধার তৈরি করতে হয়। এই জলাধার ভূপৃষ্ঠে বা কাছাকাছি গভীরতায় ফাটল সৃষ্টি করার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এক অর্থে হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট টাইপের মত বড়মাপের কোন স্থাপনা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে সেটাকে ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ বলা যেতে পারে না।

২. ভূমিকম্প অবশ্যই কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা সম্ভব। ভূগর্ভে নিউক্লিয়ার বোমা বিস্ফোরণ ঘটালেই ভূমিকম্প সৃষ্টি হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্যখানে।

মানুষ সাধারণত রিখটার স্কেলে ৩.৫ এর চাইতে ছোট ভূমিকম্প অনুভব করতে পারে না। ৪.৫-৫ এর চাইতে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প জানমালের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করতে পারে না। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ এর উপরে উঠলে তবে তাকে শক্তিশালি ভূমিকম্প বলা হয়।

রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার একটা ভূমিকম্প সৃষ্টি করার জন্য ভূগর্ভে একটা হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার সমান মানের নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। আর ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করার জন্য প্রায় ৩২ টি বোমা একসাথে বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।

অন্য দেশে গিয়ে গর্ত খুঁড়ে বোমা বিস্ফোরণ করার অনুমতি মনে হয় কোন দেশই দেবে না। সেক্ষেত্রে নিজের দেশে গর্ত খুঁড়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে ক্ষতি যা হওয়ার তা নিজের দেশেরই হবে।

ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্য হিসাবনিকাশ করে ভূমিকম্পের উৎসের গভীরতা সহজেই নিরুপণ করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অধিকাংশ ভূমিকম্পই ১০ কিলোমিটারের আশেপাশে হয়। ভূগর্ভে ১০ কিলোমিটার গর্ত খুড়ে নিজের দেশের ক্ষতি করার জন্য বোমা বিস্ফোরণ করার শখ পৃথিবীর খুব বেশি দেশের হবে বলে মনে হয় না।

আর ১/২ কিলোমিটার গভীরতায় বিস্ফোরণ ঘটালে সেটা যে নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণে সৃষ্ট ভূমিকম্প তা আশেপাশের সব দেশের ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র টের পাবে। শুধু শুধু কোন দেশ ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে গিয়ে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ শুরু করার ঝুঁকি নেবে বলেন?

সচল জাহিদ এর ছবি

প্রাসংগিক বলে আপনার ১ নং প্রশ্নের উত্তরে একটু যোগ করি। দ্রোহীদা ক্ষেপলে কিন্তু খেলুমনা।

টিপাইমুখ সিরিজ লেখার সময় এটি নিয়ে খোজ খবর করেছিলাম। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যেসব জলাধারের পানির উচ্চতা ১৫০ মিটারের বেশী তাদের ক্ষেত্রে এই RIS বা Reservoir Induced Sesmicity এর হার শতকরা ৩০ ভাগ। দি ইকোনোমিষ্ট এশিয়ার ভলিউম ১১ নাম্বার ১ ইস্যুতে ডঃ আর কে রঞ্জন সিং এর 'টিপাইমুখ' শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেনঃ

Impacts of reservoir-induced seismicity (RIS): The weight of the reservoir, by itself or in conjunction with other reservoirs in the region, can create the sorts of pressures that could result in an earthquake. The weight of the reservoir can also force water down cracks and faults till it catalyses an earthquake. The occurrence of reservoir-induced seismicity is now a well accepted fact. RIS has occurred in various dams across the world. 17 of the 75 cases of RIS reported


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

এই যে দেখেন। আমি সাধারণ ভূতাত্ত্বিক ধারণা থেকে উত্তরটা দিলাম আর আপনি একেবারে গবেষণার উপাত্তসহ উদাহরণ দিলেন।

এ কারণেই লোকে বলে, "দশের লাঠি একের বোঝা!" আমার পক্ষে তো একা সবকিছু জানা সম্ভব না। অনেককিছুই আছে আমি জানি না। তাই যে যা জানেন তা নিয়ে এগিয়ে আসলে কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

শহরাঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যদি একজন সিভিল এঞ্জিনিয়ার কিছু আলোকপাত করতেন তাহলে খুব ভাল হত!

সাফি এর ছবি

১। এইটা কি আসলেই আপনে লেখসেন নাকি একাউন্ট হ্যাক হৈলো?
২। কিছুদিন আগে কোথাও পড়েছিলাম রামপুরা টিভিভবন ফল্ট লাইনের উপরে পড়েছে। এর সত্যতা কতখানি? ফল্ট লাইনের থেকে দূরে গেলেই কি ভূমিকম্পের ক্ষতি থেকে বাঁচার সম্ভাবিলিটি বাড়বে? পেন্সিলের উদাহরণে ফল্ট লাইনটা কোথায়?
৩। সিরিজের সিলেবাসে রিং অব ফায়ার আছে?
৪। মাটির স্থিতিস্থাপকতার সাথে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির কোন সম্পর্ক আছে? আমাদের নরম মাটি বনাম কোন জায়গার পাথুরে মাটির ভবনের একই মাপের ভূমিকম্পে কি ক্ষতির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে?

দ্রোহী এর ছবি

১। দেঁতো হাসি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হইছে।

২। ঢাকা শহরের মাঝামাঝি উত্তরে মিরপুর আর বনানীর মাঝামাঝি আর দক্ষিণে বুয়েট-ঢাবি ক্যাম্পাস বরারব একটা প্যালিও ফল্ট থাকলেও থাকতে পারে। বিজ্ঞান মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে আমার প্রফেসরের একটা প্রজেক্ট ছিল। সে প্রজেক্টের আওতায় আমরা কিছু সস্তা সার্ভে করেছিলাম ঢাকা শহর জুড়ে। সে সার্ভের ডেটায় এ ধরনের একটা ইঙিত আছে। কিন্তু বিষয়টা প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে কিছু পয়সা খরচ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে পয়সাটা দেবে কে আর পরীক্ষানিরীক্ষাই বা করবে কে?

সাধারণত লিথোস্ফিয়ারের দুর্বল কোন স্থানে সঞ্চিত শক্তি বৃদ্ধি পেতে পেতে এক পর্যায়ে সেটা যদি শিলাস্তরের ভঙ্গুরতা লিমিট পার হয়ে যায় তখন ফল্ট সৃষ্টির মাধ্যমে শক্তিটুকু রিলিজ হয়। তাই ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য আগে থেকেই ফল্ট থাকতে হবে এমন কোন কথা নাই। তবে কোন জায়গা যদি আগে থেকে ফল্টেড থাকে [যেমন ঢাকার উত্তরে মধুপুর ফল্ট, সিলেটের ডাউকি নদীর তীরের ডাউকি ফল্ট ইত্যাদি] তাহলে তো দুর্বল জায়গা রেডিমেড পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই প্রতিষ্ঠিত/অ্যাকটিভ ফল্টেই বেশিরভাগ ভূমিকম্প সংগঠিত হয়।

পেন্সিলের উদাহরণে বোঝাতে চেয়েছি প্রেশারের পরিমান কাঠের ভঙ্গুরতা লিমিট ক্রস করে যাওয়া মাত্রই পেন্সিলটি ভেঙে যাবে। যেহেতু পেন্সিলটির দৈর্ঘ্যের সাথে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে চাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে পেন্সিলের মাঝ বরাবর ভাঙার সম্ভাবনা বেশি। কেননা স্থিতিবিদ্যার হিসাবে পেন্সিলের মাঝ বরাবর শক্তি প্রয়োগ বেশি হবে তাই সেটাই সবচাইতে দুর্বল জায়গা। সুতারাং ফল্ট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা পেন্সিলের মাঝখানেই সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু যদি পেন্সিলের দৈর্ঘ্য বরাবর বল প্রয়োগ করা হয় তখন পেন্সিলের কাঠের যে জায়গাটা পচা/দুর্বল সেখানে ভাঙার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সে জায়গাটা যে পেন্সিলের মাঝ বরাবর হবে এমন কোন কথা নেই। আবার আমরা যদি পেন্সিলের গায়ে ছুরি দিয়ে কয়েকটা দাগ দিয়ে একটু দুর্বল জায়গা তৈরি করে দিই [আগে থেকে সৃষ্ট ফল্ট] তাহলে সেই দাগ বরাবর পেন্সিলটি ভাঙার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

ভূমিকম্পের উৎস থেকে যত দূরে থাকা যাবে ততোই ভাল। ফল্ট লাইনের আশেপাশে যেহেতু ভূমিকম্প ঝুঁকি বেশি সে হিসাবে দূরে গেলে সম্ভাবিলিটি তো বাড়বেই। দেঁতো হাসি

৩। রিং অফ ফায়ার রাখবো কিনা বুঝতে পারছি না। লিখতে গেলে সবকিছুই লিখতে হয় আবার বাদ দিতে গেলে কোন কথাই বলা হয় না। আমি নিজেই বিভ্রান্ত কোনটা রাখবো আর কোনটা বাদ দিবো তা নিয়ে। সবকিছু লিখতে গেলে এত বেশি বিষয় ঢুকে পড়বে যে ব্লগ পোস্ট না হয়ে বই হয়ে যাবে।

৪। মাটির স্থিতিস্থাপকতাই ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ। ভূমিকম্পের প্রভাবে বেডরক [প্রাকৃতিক ভাবে জমা শিলাস্তর] যেভাবে কাঁপে তার তুলনায় ল্যান্ডফিল [মাটি ফেলে ভরাট করা জায়গা] অনেক বেশি কাঁপে। ফলে কৃত্রিম ভাবে ভরাট করা জায়গায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণে। ঢাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি অ্যাম্প্লিফাইড হওয়ার পেছনে এটা একটা বেশ বড় কারণ। মন খারাপ

সাফি এর ছবি

আপ্নে লুক্টা আইল্সা হৈলেও খারাপ না দেঁতো হাসি

লেখা আর ধৈর্য্য নিয়া উত্তর দেওয়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ঢাকার অবস্থাতো এমনিতেই খারাপ, নতুন আরেকটা ডাইমেনশন জানলাম ওঁয়া ওঁয়া

দ্রোহী এর ছবি

আপ্নে লুক্টা আইল্সা হৈলেও খারাপ না (দেঁতো হাসি)

এই কথাটা কেউ বুঝে না!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সবকিছু লিখতে গেলে এত বেশি বিষয় ঢুকে পড়বে যে ব্লগ পোস্ট না হয়ে বই হয়ে যাবে

তাতে সমস্যা কী? আপনাকে কি কেউ দিব্যি দিয়ে বলেছে যে, "কথা দে, তুই খালি বলগ ল্যাখবি - কুনুদিন বই ল্যাখবি না"!

এই সমস্ত ধানাই-পানাই ছাড়েন মেম্বর, সবকিছু নিয়েই লিখুন। এতে যদি বই হয় তাহলে আখেরে আমাদেরই লাভ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

আমিও চা কফি নিয়া বইলাম। শেখার কোন শেষ নাই।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

আরে কন কী? আমি নিজেইতো চা নিয়া বইসা আছি!

শেখার কোন শেষ নাই দেখেই তো শেখার চেষ্টা করা বৃথা!

মন মাঝি এর ছবি

অঃটঃ ভূমিকা/মুখবন্ধের টেক্সটটা গ্রে করলেন কিভাবে ?

****************************************

দ্রোহী এর ছবি

লেখার রং বদলাতে [কালার=গ্রে]Your Text Here[/কালার] কোডটা ব্যবহার করুন। গ্রে বদলে অন্য কোন রং দিতে চাইলে সে রংয়ের নাম লিখে দিলেই চলবে। কোড অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হবে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

ফ্যাকের "লেখা রঙিন করব কীভাবে?" অংশটুকু ঠিক করা দরকার। কোডের 'কালার' লেখাটা ইংরেজিতে লেখা বিধায় দেখা যায় না, বাংলায় "[কালার=গ্রে]Your Text Here[/কালার]" এভাবে উল্লেখ করলে মনে হয় ভালো হয়। আমি এতদিন চেয়েও কালার করতে পারছিলাম না।


_____________________
Give Her Freedom!

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পৃথিবী কি এক সময় বায়বীয় অবস্থায় ছিলো? তারপর তরল? তারপর কঠিন? পুরা পৃথিবী কঠিন হয়ে গেলে কি ভূমিকম্প থেমে যাবে? সেরকমটা হতে কতোদিন লাগবে?

ভূমিকম্পের কোনো উপকারিতা আছে?

লেখার স্টাইল লাইক্কর্ছি। বৈচিত্রময়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

দ্রোহী এর ছবি

১.

পৃথিবীর সৃষ্টি যেহেতু মহাজাগতিক ধূলিকণা ও গ্যাস থেকে সে হিসাবে আপনার কথাই সঠিক।

বায়বীয়–তরল–কঠিন দশা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে পৃথিবীর বিবর্তন ঘটছে। বর্তমানে শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর উপরিভাগের ৪০০-৫০০ কিলোমিটার ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন শিলাস্তরে পরিণত হয়েছে।[মহাজাগতিক বস্তু সমূহের কেন্দ্র সাধারণত উচ্চ চাপ ও মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কঠিন অবস্থায় থাকে - তাই সেটা হিসাব থেকে বাদ দিলাম]। পৃথিবীর বাকি অংশ এখনো তরল অবস্থায় রয়েছে।

পৃথিবীর ব্যাসার্ধ ৬৩৭৮ কিলোমিটার এবং বয়স ৪.৫৭৪ বিলিয়ন বছর। সাড়ে চার বিলিয়ন বছরে পৃথিবীর মাত্র ৫০০ কিলোমিটার শীতল হয়েছে। ঐকিক নিয়মে হিসাব করলেও আরো কমপক্ষে ৫০ বিলিয়ন বছর তো লাগবেই। তার উপর আরেকটা ঝামেলা আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপমাত্রা ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর তরল অবস্থায় উপরিভাগের তাপমাত্রা ছিল বড়জোর ৪০০-৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুতারাং প্রকৃতপক্ষে পুরো পৃথিবী শীতল হয়ে কঠিন অবস্থায় পরিণত হতে ৫০ বিলিয়ন বছরের চাইতে অনেক বেশি সময় লাগবে। প্ল্যানেটারি জিওলজিস্টরা মোটামুটি সঠিক একটা সংখ্যা বলতে পারবে।

পৃথিবীর মত চাঁদের সৃষ্টি একই ভাবে হলেও চাঁদ পুরোপুরি জমে কঠিন হয়ে গেছে। এর কারণ চাঁদের আকৃতি ছোট তাই পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বেশি হওয়ার কারণে দ্রুত শীতল হতে পেরেছে। [একই পরিমাণ চা কাপের তুলনায় পিরিচে ঢাললে যে কারণে দ্রুত শীতল হয়]। চাঁদের অভ্যন্তরভাগ শীতল হওয়ার কারণে চাঁদ সাইজমিক্যালি মৃত। এ কারনে চাঁদের টেকটোনিক অ্যাকটিভিটি হয় না, ফলে ভূমিকম্প ও হয় না।

পৃথিবী ঠান্ডা হওয়ার এক পর্যায়ে ম্যান্টলে সৃষ্ট ঘুর্ণন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তখন টেকটোনিক অ্যাকটিভিটি বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবী হবে ভূমিকম্প মুক্ত। তখন আবার ভূগর্ভস্থ তাপের অভাবে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

২.
ভূমিকম্পের একটা উপকারিতা আছে। চোখের পলকে জনসংখ্যা কমাতে, নতুন চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করতে, নির্মান শ্রমিক, সিভিল এঞ্জিনিয়ারদের কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টিতে ভূমিকম্পের অবদান অসীম। চোখ টিপি

৩.
থ্যাংক্যু! বেশিরভাগ শব্দের সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ নাই দেখে একটু সমস্যায় আছি। পরের পর্বগুলোতে এই সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেবে।

হিমু এর ছবি

প্রতিশব্দ বানানোর কাজে বামহাত বাড়িয়ে দিতে চাই।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমি মন্তব্যগুলো পড়তে গিয়ে কোন কিছু ব্যাখ্যা করবার জন্যে আপনার উদাহরণ দেয়ার স্টাইলটা দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। যেমন এই যে চা পিরিচে ঢাললে ঠাণ্ডা হবার ব্যাপারটা।

বাংলা প্রতিশব্দ ব্যাপারটা আমি নিজে খুব একটা ভালো পাই না। আপনি লেখার মাঝেও অনেক প্রতিশব্দ দিয়েছেন, সেগুলো স্কুলের পাঠসূচী মনে পড়াতে সামান্য সাহায্য করলেও আমি এখন লেখাটা পড়তে গিয়ে Mantle-গুরুমণ্ডল গুলায়ে ফেলছি। বৈজ্ঞানিক টার্মস একটা কমন ভাষায় হওয়া জরুরি মনে করি আমি। যাতে সবদেশের সব বিজ্ঞানপড়ুয়াই Earth Crust আর Mantle বললে চট করে একই জিনিসই বুঝে। বিজ্ঞানেরক্ষেত্রে মাতৃভাষা প্রীতিটা ভাল্লাগেনা। সবকিছুর প্রতিশব্দ করতে গিয়ে জিনিসটা জটিল করে মানুষের বিজ্ঞানভীতি বৃদ্ধির দরকার নাই।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

আপনার পোস্টটা এই মাত্র পড়লাম। আর এর একটু আগেই আমি এই বিষয়ে একটা পোস্ট দিলাম। আমারটা পোস্ট করে যখন আপনারটা পড়লাম, তখন আমার লেখাটাকে শিশুতোষ মনে হচ্ছিল। আসাধারণ হয়েছে। চলুক। নিয়মিত পড়ার ইচ্ছে রইলো।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বাঙালি পুরাণের অংশটুকুর জন্য লাল সেলাম দিয়ে গেলাম

সজল এর ছবি

গুরু গুরু
সবইতো বুঝলাম, কিন্তু ভূমিকম্পের পূর্বাভাষের জন্য তো সহজ তরিকা আছে। কিছু পিপড়া, তেলাপোকা, কেঁচো ইত্যাদি পালন করতে হবে, ভূমিকম্পের ব্যাপার স্যাপার এরা আগেই টের পেয়ে জানায়া দিবে চোখ টিপি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বহুদিন ধরে বহু খোঁচাখুঁচি পরে, অবশেষে পোস্ট!! সময় করে বসে মন দিয়ে পড়লাম। এই পর্বে শুধু আরম্ভ হয়েছে, কাজেই বিস্তারিত আরও অনেককিছুই সামনে আসছে নিশ্চয়ই। এ পর্বে তাই প্রশ্ন করবার বেশি কিছু ছিলো না। কিন্তু রিখটার স্কেল, ফল্ট লাইন, আফটারশক, পূর্বনির্ধারণ সম্ভব কিনা, এগুলো নিয়ে অনেকেই আমার মাথায় ঘুরঘুর করা কিছু প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উত্থাপন করে ফেলেছেন। পোস্টটার মতন মন্তব্যও অনেক চমৎকার আর সহজবোধ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে মন্তব্যেই উত্তর দিয়ে ফেলেছেন বলে পরের পর্বগুলোতে আর এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আসবে না এমনটা কইরেন না প্লিজ, আগেই অনুরোধ করছি। এই সিরিজটার প্রতি আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ আছে, নিজের জন্যেই টুক করে ঝালাই করে নেয়া বা রেফারেন্সিং করতে গিয়ে পরে কখনো দরকারী তথ্যটুকু খুঁজতে গিয়ে অনেক অনেক মন্তব্য ঘাঁটতে হলে খুব ঝামেলায় পড়বো, ওরকমটা হলে অনেক জরুরি সময় বেরিয়ে যায়। তাই অনুগ্রহ করে সবকিছু নিয়েই বিস্তারিত লিখুন বিভিন্ন পর্বে।

কিন্তু আট তারিখের পোস্ট, এখনো পরের পর্ব এলো না কেন? তাত্তাড়ি লিখেন মিয়া! আমি খুবই বাজে ইশটুডেন, স্মরণশক্তি তো এক্কেরে ঝ্যারবেড়া কিসিমের! এত দেরি করে করে একেকটা পর্ব আসলে ক্যাম্নে কী?! কী পড়ে, কী নিয়ে, কী প্রশ্ন করতে চাই সব ভুলে যাবো তো! আর P-wave, S-wave এতদিনে সব গুলায়ে খেয়ে ফেলছি, অবশ্যই সহজ করে বুঝিয়ে লেখার কথা বিশেষ বিবেচনায় রাখবেন। দেঁতো হাসি

আর এই যে, (গুড়) পোস্ট দেবার জন্যে শুধু না, এত সুন্দর সহজ করে লেখার জন্যে ডাবল (গুড়) (গুড়)

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আরে বাহ্‌! দারুণ দারুণ!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মিস করে যাওয়া এই লেখাটি ঝাড়া পড়ে গেলাম। সকালে কাঠমন্ডু যাচ্ছি, পরে ধীরে সুস্থ্যে আবার পড়তে হবে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।