গোলাপ গাছে একটি আগন্তুক জলকণা...

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি
লিখেছেন কাজী আফসিন শিরাজী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১০/০৮/২০০৯ - ১:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কয়েকটা অপুষ্ট জলকণা উঁচু উঁচু মেঘ থেকে ছুটে আসছে অভিকর্ষের ভালবাসায়, রিমির পাশে কাঁচের দেয়ালে এসে জমছে সে সব জল। রিমি ইউনিভার্সিটির ক্যাফেতে বসে কফিতে চিনি ঢেলে চামুচ দিয়ে গুলছে আর সেই চক্রাকার কফির পাকে সেও ঘুরতে ঘুরতে তলিয়ে যাচ্ছে গভীর বিষাদে। হঠাৎ হারমোনিকার শব্দ শুনে রিমি পাশ ফিরে তাকায়। … ঐ ছেলেটা!! ছেলেটার প্রাচ্যের মায়াময় ঠোঁটে জার্মান হারমোনিকার সুর যেন ঢের বেশি কসমোপলিটন ভাষায় কথা বলে। রিমি নিজেকে স্থির রাখতে পারেনা, খুব কৌতূহল নিয়ে ছেলেটাকে দেখাতে থাকে। এত ভালোবাসা নিয়ে সে কাউকে কোনদিন দেখে নাই। ছেলেটাকে রিমি কোনদিন বলতে পারে না তার ভেতরের সব দুর্বোধ্য স্বপ্নপাপী রসায়নে কীভাবে ভাঙচুর করে মনের কাগজ-কার্ডবোডের ঘরবাড়ি। রিমি খাতার পেছন থেকে একটা কাগজ ছিঁড়ে তাকে একটা চিঠি লিখেঃ

প্রিয় রাজপুত্র,

আমি এক চিরন্তন নিদ্রার তালা-চাবিতে বন্দী এক স্লিপিং বিউটি। জড়তা আর সমাজের দারোয়ান পাষণ্ড ডাইনোসর আর বাজ পাখিগুলো মেরে আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাও- যেন আঙুলের বরফগুলো গলে আবার আঙুলগুলো নাড়তে পারি, যেন পায়ের গুটিয়ে যাওয়া আঙুলগুলোর বরফ গলে আবার হাঁটতে পারি, যেন ঠোঁটের বরফগুলো গলে আবার বলতে পারি “ভালবাসি” অথবা “রঙ”। রাজপুত্র একবার ছুঁয়ে দিয়ে যাও যেন বুড়িয়ে যাওয়া শরীরে ফিরে আসে কবেকার সেই জোয়ার; সেই জোয়ারে যদি কিছু পোড়া জল ভাতে মাড়ের মত উৎরায় পরে, তাহলে তুমি তোমার ম্যাজিক ওয়ান্ড দিয়ে মুছে দিও গাঢ় দাগগুলো। রাজপুত্র রাজ্য জুড়ে কত কত মানুষ, সবাই আমাকে নেড়ে চেরে রেখে যায়, ঝাঁঝরা দৃষ্টিতে দেখে আমার আদ্যপ্রান্ত, কেউবা ঘর্মাক্ত বগলের নিচে টেনে নিতে চায় বালিশের মত, কিন্তু কই কেউতো ভাঙ্গায়না ঘুম। রাজপুত্র তুমি কী জান বেঁচে থাকার জন্য রক্তে কতটুকু উষ্ণতা প্রয়োজন! আমার কেন এত শীত করে! আমার কেন ঘুম ভাঙ্গে না! ও রাজার পুত্র আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাও, বলে যাও- “জেগে ওঠো!”

স্রোতে ভাসা এক কচুরিপানা...
রিমি চিঠিটা ভাজ করে হাতের মুঠোর উষ্ণ ওমে গুঁজে ছেলেটার দিকে হেঁটে যায়। ছেলেটা রিমিকে দেখেও তার হারমোনিকা থামায় না। রিমি ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছেলেটাকে দেখে তার খুব মায়া হয়, ফেচ ফেচ করে কানতে ইচ্ছে হয়। রিমির বুকের ভেতরটা কেমন জানি ফাঁকা লাগে। সে চিঠিটা দরজার কাছের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। ক্লাসে যাওয়ার জন্য দরজা ঘুলে বাইরে বের হতেই দেখে বৃষ্টি আরো বেড়েছে। সে আবার ভিতরে ঢুকে যায়। রিমি ছেলেটার পাশে গিয়ে বসে। তাকে বলে, “আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি যদি ঘুমিয়ে যাই আমাকে একটু ডেকে দিবেন প্লীজ”। ছেলেটা একটু অবাক দৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকিয়ে সাশ্রয়ী হাসি দেয়। সব মৌনতা সম্মতির লক্ষণ নয়, কিছু মৌনতা বক্তব্যহীন। ছেলেটা আবার হারমোনিকা বাজাতে থাকে। রিমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্লাস বাদ দিয়ে ক্যাফেতে বসে ছেলেটার হারমোনিকা শুনতে থাকে আর ভাবে- যৌবনই তো বখে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়, গেলামই নাহয় একটু বখে!

(আমার খাতার পিছের আঁকিবুকি একটা ছবি দিয়ে দিলাম লেখাটার সাথে, কেন দিলাম জানি না)
Photobucket


মন্তব্য

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌অপূর্ব!! দারুন সুন্দর হয়েছে লেখাটা!!!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

খাপছাড়া এর ছবি

লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সুন্দর। বেশ ভালো লাগলো। আপনার লেখার মধ্যে শেষ মুহূর্তে একটা বিষাদের ছাপ আছে। যাহোক,

ভাতে মাড়ের
এখানে ভাতের হবে কি?
...............................
নিসর্গ

কাজী এর ছবি

হুম 'ভাতের' হবে। আরও কিছু ভুল আছে, আদ্যপ্রান্ত>অদ্যপান্ত

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লুবিরগুলো ধরেই বলছি, আপনার আঁকা ছবিগুলোর ক্যাপশন খুব বেশিরকম বিষাদমাখা...
পড়লেই কেমন কষ্ট হয়... মন খারাপ

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কৌটাবন্দী স্বপ্নরেণু এর ছবি

হুম... আমার আঁকা, আমার লিখা সবই তো আমার রক্ত গলেই আসে, যে রক্তে বিষ তার স্বাদ তো একটু নোনতা হবেই। তবে মানুষ সব হজম করে ফেলে, আমিও একদিন হজম করে ফেলব সব বিষাদ, আমিও একদিন মজার মজার কার্টুন আঁকবো। যদিও বাস্তব জীবনে আমি খুব হাসিখুসি কিন্তু আঁকা/লেখাটা আসে খুব ভেতর থেকে, ঐ যায়গাগুলোতে এখনো কাঁটাছেড়া আছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুমম...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ঘুম দুপুরের রোদ এর ছবি

আমার ভেতর আগে যা কিছু চারা গাছ ছিল, সবই গায় গতরে অনেক বড় হয়েছে এখন।
তাই বয়সের আগেই নুয়ে পরছি।
কষ্ট খুজে বেড়ানো লাগে না, সব খানেই কষ্ট থাকে। পার্কের বেঞ্চিতে গিয়ে বসবেন ওখানেও কষ্ট জমে আছে। কেউ গায়ে মাখে, কেউ মাখেনা। কিছু সম্পর্কে দুইটা মানুষ একি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ থাকে, হেড আর টেল। একি মুদ্রায় বাস কিন্তু মুখোমুখি দেখা হয় না। আমার জীবনটাও কী আকাশে ছুড়ে দেয়া এমন কোন মুদ্রার এক পাশ নাকি কে জানে!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগলো...
কিন্তু মন্তব্যের ঘরে আপনি একেকবার একেক নামে মন্তব্য করছেন? কেন?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

মনটা খুব খারাপ...

মামুন হক এর ছবি

বিষন্নতা জীবনেরই অংশ মামা। মন খারাপ থাকলে থাক, খুঁচিয়ে লাভ নেই।
তোকে তো সেদিন বল্লামই...

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

আপনার গল্প কই?? জলদি ছাড়েন।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ব্যাটা, শোন... অন্যদের জন্য যখন দোয়া করি, তখন তা অনেকাংশেই ফলে যায়... তোর জন্যে অনেক দোয়া আছে... যখন ফলবে তখন দেখিস তোর বিষাদের ফুলে কত্ত প্রজাপতি এসে বসে!

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

কাজী আফসিন শিরাজী এর ছবি

দোয়াই ভরসা... হিহিহি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।