অনুবাদ প্রচেষ্টা-২

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: শনি, ২০/০৯/২০১৪ - ১১:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নবট্রি জঙ্গলের নতুন শেরিফ একটা সাক্ষাৎ দানব। জঙ্গলের বামনরা কেউ তাকে পছন্দ করত না। একদমই না। তাই ভোটাভুটি শেষে যখন ফলাফল ঘোষণা হল, সাথেসাথেই বামনরা নির্বাচনে স্থুল কারচুপির অভিযোগ এনে আবার ভোট গণনার দাবী জানাল। কিন্তু দানবরা সেই অভিযোগ একদমই আমলে নিল না। তারা বিজয় উল্লাস শুরু করে দিল শরাবে চুর হয়ে। আর পরীরা এসবের মধ্যে কোনরকম মাথা না ঘামিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে লাগল। অবশ্য তারা সবসময়ই তাই করে।

এই জঙ্গলেই ভ্যারেন্টসি নামের অল্পবয়সী এক বামন ছিল। তার ছিল কালো কুচকুচে চুল আর গভীর চোখ। একদিন সাত সকালে সে শেরিফের অফিসে হাজির। শেরিফ বোগলো স্টিম্প তখন অফিসেই ছিলেন।
“আমার আপনার সাহায্য দরকার”- খুব অধৈর্য্য ভাবে সে বলল শেরিফ যখন তার নাম এন্ট্রি করছিল খাতায়। বামনরা অবশ্য এমনিতেই সবসময় এমন ছটফট করতে থাকে। এমন একটা ভাব, যেন একটু নির্ভার হলেই তাদের কিছু একটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।

“বস। বীয়ার চলবে?”- শেরিফ জিজ্ঞেস করলেন অল্পবয়সী বামন কে। ভাবলেন এতে হয়ত তার ছটফটানি কিছুটা কমবে।
“আজব! আমার ছিনতাই হয়ে গেছে আর আপনি আমাকে বীয়ার সাধছেন!”- তার কণ্ঠে আসলেই ঝামেলায় পড়ার ইঙ্গিত ছিল। শেরিফ নড়েচড়ে বসলেন।
“দেখ, তুমি যদি আসলেই কোন ঝামেলায় পড়ে থাক আর আমার সাহায্যও চাও” সোজাসুজি ভ্যারান্টসির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে একটু থেমে আবার শুরু করলেন শেরিফ, “তাহলে অবশ্যই তোমার আমাকে পুরো কাহিনীটা বলতে হবে। একদম আগাগোড়া পুরোটাই, একটুও বাদ দিলে চলবে না। কোন তাড়াহুড়া না।” বলে তিনি নিজের মনেই ভাবলেন-“ অবশ্য এটা এই ছোকড়ার জানা উচিৎ।”

“আমি বসন্ত উৎসবে গিয়েছিলাম।”-ভ্যারান্টসি বলা শুরু করল।
“...দুই দিন আগে যেটা শুরু হয়েছে সেটা?” বোগলো বিরক্তি চেপে রেখে জিজ্ঞেস করলেন আর মনে মনে ভাবলেন, “নাহ্‌! ব্যাটা গোড়াতেই গলদ করছে, বললাম একদম ডিটেইল বলতে...।”

শেরিফের এই আগ বাড়িয়ে কথার মাঝখানে কথা বলাতে ভ্যারান্টসিও বিরক্ত হল। রাগটা ধরে রেখে সে আবার শুরু করল-“প্রথম রাতের ঘটনা এটা। আমি একপাশে দাড়িয়ে নিজের মনেই চিন্তা করছিলাম, এমন সময় একটা ছোট পরী রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের উপর থেকে আমার পাশে এসে আমার সাথে ছিনালী শুরু করল।”

“পরীরা তো এইসব করে না!”- বোগলো বললেন। বামনটা কে দেখে মনে হল সে তার কথা বুঝতে পারেনি। তাই সে যোগ করল-“ তারা তো অশরীরী, এমন তো করার কথা না।”

বামনটা এবার বেজায় বিরক্ত হল। খুব সম্ভবত সে এভাবেই কথা বলে সবসময়। যাই হোক বোগলো আবার শুনতে লাগলেন।
“পরীটা তার নাম বলেছিল ল্যাপ্রিস্‌”-ভ্যারান্টসি বলল, “ নামের শেষে ‘স’ অবশ্য উহ্য ছিল। সে আমাকে আমি কি করি, আমি কোথা থেকে আমার পরনের কাপর বানাই, মেয়েদের মধ্যে কি কি বৈশিষ্ট থাকলে আমার ভাল লাগে, কখনো কোন পরী আমাকে চুমু খেয়েছে কি না এইসব জিজ্ঞেস করছিল। কথা বলতে বলতে সে আমার কাঁধে বসে আমার চুল নাড়াচাড়া করছিল, আমার আঙ্গুল নাড়াচাড়া করছিল।”

“তারমানে এই না যে সে তোমার সাথে ছিনালী করছিল” বোগলো মন্তব্য করলেন, “যাই হোক, তরপর বল দেখি।”

“তারপর আমাকে সে জিজ্ঞেস করল আমি কখনো পরীদের বাড়ি গিয়েছি কি না।”
“আর তুমিও সাথে সাথে তার সঙ্গে তার বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলে?” বোগলো জিজ্ঞেস করলেন। তিনি এই আজগুবি কেসটার সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছিলেন।
“আমি যেতে চাচ্ছিলাম” বলে বামনটা একটু আমতা আমতা করে আবার শুরু করল, “ ইয়ে মানে, আমি যাচ্ছিলাম আর কি, কিন্তু এর পর সব কেমন অন্ধকার হয়ে গেল এবং আমার আর কিছু মনে নেই। সকালে জ্ঞান ফিরে দেখি আমি একটা ঝোপের ধাঁরে পড়ে আছি, আর আমার টাকাপয়সা, গলার চেইন, এমনকি বেল্টের বক্‌ল্‌ টাও হাওয়া!”

“কোন ঝোপ?”-বোগলো মোটামুটি ঘটনা বুঝে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আরেকটু নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলেন।
“বাটারপাইল ঝোপ”- ভ্যারান্টসি বলল।
ঝোপটি নবট্রি জঙ্গলের গ্রামের অদূরেই। তারমানে জ্ঞান ফেরার পরই বামনটা সোজাসুজি তার অফিসে এসেছে।
“তাহলে তো হয়েই গেল। বুঝে গেছি কাহিনী” শেরিফ গর্বের সাথে বললেন। তোমার ওই ল্যাপ্রিস্‌, যার ওই শেষের ‘স’ টা উহ্য থাকে, সে কোন পরী না। সে অবশ্যই একটা ভুত, মানে পেত্নী আর কি। ছদ্মবেশে এসে তোমার টাকাপয়সা, চেইন, বাক্‌ল্‌ এইসব মেরে দিয়েছে।”

বামনটাকে দেখে মোটেও সন্তুষ্ট মনে হল না তার এই সহজ সরল ব্যাখ্যায়। বোগলো ভাবলেন, “ব্যাটা গাধা নাকি? এত সহজ ভাবে বললাম, তাও বুঝে না!”
ভ্যারান্টসি এবার একটু জোরের সাথে বলল-“ সে আমাকে অজ্ঞান করে আমার সব নিয়ে গেল, আর আপনি বলছেন সব সমাধান করে ফেলেছেন!! আপনার এই সমাধানে আমার লাভ কি?”
“তা ঠিক আছে”, বোগলো বললেন-“ কিন্তু এটা সত্য যে সে একটা পেত্নী, আর ভুত আইন ৬৮ এর ৪৩২১ ধারা, গঅ ৪ উপধারা অনুসারে, খুন ছাড়া অন্যান্য দুষ্কর্ম এবং তার জন্য শাস্তির আবেদন, যেমন- প্রতিশোধ, শাস্তি বা জরিমানা এইসব ভুতদের রাজার এখতিয়ারের ব্যাপার। সেটাও আবার ভুতের রাজার তরফ থেকে এই সমস্ত বিষয়ের জন্যই শেরিফের কাছে যে ফর্ম দেয়া হয় সেই ফর্মে করে আবেদন করতে হবে, তারপর। আজ পর্যন্ত একটা মামলার ফর্মও ঠিকঠাক মত রূজু করা যায়নি!”

অল্পবয়সী বামনটি হতাশায় চেয়ারে এলিয়ে পড়ল। এটা সত্যি যে ভুতদের এই ফর্মটি আকাশ-পাতাল বৈপরীত্যে ভরপুর। একটা গাছের সঠিক যায়গা বের করার জন্যই পাতার পর পাতা কি সব হিবিজিবি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়!
“এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে বিরক্তিকর”-সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
“তুমি বুঝতে পারছ না”- বোগলো তার পাইপ ধরাতে ধরাতে বললেন।
“আমি কী বুঝতে পারছি না? আমার কিছুই করার নেই আসলে”- হতাশ ভাবে বলল ভ্যারান্টসি।
বোগলো চেয়ারে সোজা হয়ে বসলেন। গলার স্বরটা একটু রূক্ষ করে বললেন-“ছোকড়া, তুমি কি জান দানবরা কোন্‌ কাজটা ভাল পারে?”
“মদ খেতে?”- অনেকটা অনিশ্চিতভাবে বলল বামন।
-“আর?”
বামন এবার বোগলোর মুখের দিকে তাকাল কোনরকম ইঙ্গিতের আশায়। উঁহু, কোন লাভ হল না। তারপর আমতা আমতা করে বলা শুরু করল-“ তারা সোনা-দানা পরিমাপে ভাল, তারপর এই গুপ্তধন পাহারা দেয়া...” বলতে বলতে সে খেয়াল করল বোগলোর চোখে এক প্রকার দ্যূতি প্রসারিত হচ্ছে।
“... আর তারা ফর্ম পূরণে ভাল!” বামনের অসম্পূর্ণ বাক্য শেষ করলেন বোগলো, “আমরা স্কুলের স্ন্যাক টাইমের আগে ভুতদের এইসব ফর্ম নিয়ে খেলতাম।”

“এই চ্যাবলিস নাকি হোয়াট্‌জিট কি যেন নাম?” বলে শেরিফ হাঁক ছাড়লেন। শেরিফের অফিসে এক গোমড়া মুখো বামন মহিলা কাজ করত। শেরিফ যতবারই তাকে দেখেছে সবসময়ই তার নাক কুঁচকানো থাকে এবং শেরিফ কে দেখলেই সে সবসময় দেয়ালের দিকে সরে গিয়ে তাঁর হাঁটার জন্য জায়গা করে দেয়। একবার তিনি হেঁটে চলে যাবার পর সে ডাস্টবিনে থুথুও ফেলেছিল। সেদিন অবশ্য তিনি সকাল বেলাতেই তাঁর মামার তৈরি তিতকুটে বীয়ার এক মগ সাবার করেছিলেন। আজ পর্যন্ত এই মহিলা কোনদিন মদটদ খায়নি!!
“চিয়াম্বর”- সে তার স্বভাবসুলভ শুকনো খনখনে গলায় উত্তর দিল।
“ক্যাবিনেট থেকে ভুতদের জরিমানা/প্রতিশোধ আবেদন ফর্ম টা দাও তো” বোগলো বলতে বলতে আশ্বস্ত করার মত করে তার নিতম্বে চাপড়ে দিলেন, সে লাফ দিয়ে ক্যাবিনেটের দিকে সরে গেল।
শেরিফ তাঁর পালকের কলমখানি চোখা করতে শুরু করলেন। চিয়াম্বর একটু নিরাপদ দূরত্ব থেকে তাঁর টেবিলে কয়েকটা ফাইল রাখল, তারপর বাকি ফাইলপত্র আনার জন্য ক্যাবিনেটের দিকে চলে গেল।

“কতক্ষণ লাগতে পারে?” ভ্যারান্টসি এবার জিজ্ঞেস করল।
বোগলো টেবিলের উপর জমা করা ফাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে খানিকক্ষণ মনে মনে হিসেব কষে উত্তর দিলেন-“এই পাঁচ সারে পাঁচ ঘন্টার মত। তোমার নাম বৃত্তান্ত আমাদের এই চিয়া-আম-হাম্বর এর কাছে রেখে যাও। ফর্ম পূরণ হয়ে গেলে তোমাকে তলব করব। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে ভুতের রাজার কাছে।”

ভ্যারান্টসি চলে গেলে পরে শেরিফ তার সেক্রেটারীর দিকে ফিরে বললেন-“ ভুতের লিয়াজো অফিসার কে একটা ম্যাসেজ পাঠাও। বল যে ভুতরাজ সোক্রীর সাথে আমার একটা মিটিং দরকার দুই/তিনদিনের মধ্যে। বিকেলের দিকে হলে ভাল হয়। কিন্তু, ভুলেও কি জন্য দেখা করতে চাচ্ছি, তা বলবে না।”

পরদিন সকালের একটু পর পর-ই বামনটি একটি খালি ওয়াগন নিয়ে শেরিফের অফিসে উপস্থিত হল। শেরিফ তাকে বলেছিলেন ওয়াগন নিয়ে আসতে।
“সত্যিই আপনি এটা করতে চান?” স্তুপ করা ফাইল পত্র ওয়াগনে তুলতে তুলতে ভ্যারান্টসি তৃতীয় বারের মত শেরিফ কে একই প্রশ্ন করল। “ভুতরা কিন্তু মারাত্মক প্রতিশোধপরায়ণ।”
“বিশেষ করে তারা যখন হারতে বসে” বোগলো যোগ করলেন, “কিন্তু, আমি শেরিফ, আর আমি আমার কর্তব্য করবই।”

শেরিফের অনুরোধে ভুত রাজা তার সভাসদ আর অন্যান্য অতিথীদের নিয়ে বাটারপাইল ঝোপের সামনের পরিষ্কার দিকটাতে ছিলেন। তাদের কালো ঝাড়ুর মত ঝোলা আলখাল্লাগুলো উড়ছিল কোনরকম বাতাস ছাড়াই! শেরিফ ঝোপের খালি জায়গাটার কিনারায় এসে থেমে তিনবার সামনের দিকে ঝুকে ভুতরাজা কে সম্মান দেখালেন। তার দেখাদেখি বামনও তাই করল।

তারপর তিনি ওয়াগন টেনে ভুতরাজার কাছাকাছি এসে থেমে আবার তিনবার ঝুকলেন। ভুতরাজা বৃত্তাকার একটা জায়গায় তার অতিথীদের সাথে ছিলেন। শেরিফ ওয়াগনটি বৃত্তকার জায়গাটির বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকে সিংহাসনের সামনে গিয়ে আবার তিনবার ঝুকলেন।

“তুমি দেখি আমাদের নিয়মকানুন ভালই জান,” ভুতরাজ সোক্রী বললেন, “দেখে খুশি হলাম।”
“মহারাজ সোক্রী,” বোগলো বললেন, “আপনার একজন প্রজার ব্যাপারে আমার অভিযোগ আছে।”
“কাগজপত্র ঠিকঠাক মত না হলে কিন্তু অভিযোগ বাতিল বলে গণ্য হবে...” সোক্রী বললেন।
বোগলো ওয়াগন থেকে পাঁচটি মোটামোটা ফাইল নিয়ে এসে রাজার পায়ের কাছে রাখলেন।

রাজার দুইজন উপদেষ্টা ফাইল খুলে খুঁটিয়েখুঁটিয়ে দেখতে লাগল। বোগলো অধৈর্য্য হলেন না, কারণ তিনি জানেন ভুতরা এমনই, তারাতারি কাজ করা তাদের স্বভাবের মধ্যেই নেই । তিনি মনে মনে হাসছিলেন উপদেষ্টাদের প্রতি রাজার বিরক্তির অভিব্যাক্তি দেখে। রাজা মনে হয় ছোটবেলায় স্কুলে সময়ের মূল্য বিষয়ে কিছু শিখেছেন! যাই হোক, এখনো এত খুশি হওয়ার কিছু নেই, কারণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

“শেরিফ বোগলো,” রাজা ডাকলেন।
শেরিফও বিনয়ের সাথে জবাব দিলেন-“মহারাজ, আপনি কি আমার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন?”
“তুমি কি ফর্মটি ঠিকঠাক মত পূরণ করেছ?” রাজার চোখে বিজয়ের হাসি ঝিলিক দেখা যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে ভ্যারান্টসি আরও তিনটি বেশ মোটাসোটা ফাইল নিয়ে আসল রাজার সামনে।
“হ্যা মহারাজ”-শেরিফ উত্তর দিলেন।
“হুম, বেশ বেশ,” বলতে বলতে উঠে দাড়ালেন রাজ, “আমার উপদেষ্টারা এসব দেখে সব ঠিকঠাক করে রাখবে, আমি পরে তোমাকে ডাকব, ঠিক আছে?”

ঠিক এই মুহুর্তের অপেক্ষাতেই শেরিফ ছিলেন।
“না মহারাজ,” তিনি একটু জোরের সাথেই বললেন, “এটা গ্রহণযোগ্য না।”
“এত বড় সাহস!” বলে একজন উপদেষ্টা চিৎকার করে উঠল।
“মহারাজ, আপনি নিশ্চয়ই জানেন,” যতটা সম্ভব বিনয়ের সাথে শেরিফ শুরু করলেন উপদেষ্টার চিৎকার কে পাত্তা না দিয়ে, “ভুত লিয়াজো আইন ৭১ এর ২৩৯৮ ধারা, ট৫ব উপধারা অনুসারে, যখন ভুত রাজ্যের বাইরের একজন নির্বাচিত এবং সম্মানিত শেরিফ একদম নিয়ম মাফিক কোন অভিযোগপত্র দাখিল করবেন, ভুতরাজা সেই অভিযোগপত্র নিজে দেখে সেদিন সূর্যাস্তের পূর্বেই একটা রায় দিতে বাধ্য থাকবেন... এখনও এক ঘণ্টা সময় হাতে আছে।”

উপদেষ্টারা শেরিফের কথা শুনে এতটাই বেকুব বনে গেল যে প্রথমে তাদের মুখদিয়ে কোন কথা সরলো না। অবশ্য তাদের কিছু করারও ছিল না, কারণ তারা ভুত এবং সব আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শণ করা তাদের ধর্ম। তারা মহারাজের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝুকিয়ে ফাইলগুলো তাঁর হাতে হস্তান্তর করে পেছনে সরে দাড়াল।

বোগলো চুপচাপ দাড়িয়ে এসব দেখছিলেন। তারপর তিনি জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা ছোট ভাঁজ করা কাগজ বের করে বললেন-“ যদিনা...”
অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক উপদেষ্টাটি সাথে সাথে প্রথমে বোগলো এবং তারপর তাঁর হাতে ধরা কাগজটির দিকে তাকাল। তারপর সে বলল-“অভিযোগকারী নতুন কিছু বলতে চাইছেন।”
“দেখি,” মৃদু স্বরে বললেন রাজা, “আমার খুব সম্ভবত আর কোন পথ নেই, তাই না শেরিফ?”
“অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে আপনি দুটো পথের একটা বেছে নিতে পারেন,” বলতে বলতে শেরিফ তাঁর হাতে ধরা কাগজটি এগিয়ে দিলেন।

“ল্যাপ্রিস্‌, যার নামের শেষের ‘স’ উহ্য থাকে, তাকে হস্তান্তর করতে হবে,” মহারাজ সোক্রী পড়তে শুরু করলেন, “এবং তাকে নিঃশর্ত ভাবে বামন ভ্যারান্টসির দাসী হিসেবে থাকতে হবে, অথবা ওয়াগনটি একদম পরিপূর্ণ ভাবে মহারাজের কোষাগার থেকে স্বর্ন দিয়ে ভড়ে দিতে হবে। সন্ধ্যার আগেই রায় প্রদান এবং রায় কার্যকর করতে হবে।”

উপস্থিত সব ভুতরাই মোটামুটি খাবি খেল এটা শুনে! মহারাজ প্রথমে শেরিফের দিকে, তারপর ওয়াগনটির দিকে কঠোর ভাবে তাকালেন।

“আপনি ভেবেছিলেন রাজা স্বর্ন দিবেন,” ভ্যারান্টসি জিজ্ঞেস করল, “তাই না?”
ওয়াগনের এক কোণে কালো এবং চুপচাপ স্বভাবের ল্যাপ্রিস্‌, যার শেষের ‘স’ উহ্য থাকে, বসে ছিল। এই মুহুর্তে তাকে মোটেও পরীর মত লাগছিল না।

“আমরা তো আর হেরে যাইনি, তাই না? কিছু না কিছু তো পেয়েছি,”বোগলো উত্তর দিলেন।
“আপনার কি মনে হয় আমি একটা পেত্নী দাসী হিসেবে চাচ্ছিলাম?” বামনটি অধৈর্য্যের সাথে বলল, “এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না!”
“আর একটা কথা না,” শেরিফ ধমকে উঠলেন, “যতক্ষণ না তুমি তোমার এই পেত্নী দাসী কে দিয়ে তোমার চুরি যাওয়া জিনিসপত্র ফেরত আনতে পার।”
“এটা কি সম্ভব?”
“এটাই আমার পরামর্শ,” বোগলো বললেন, “আমি যতদূর জানি ভুত পেত্নীদের আমাদের ধন দৌলতের প্রতি কোন আগ্রহ নেই, তারা কেবল আমাদের কাছ থেকে এগুলো ছিনিয়ে নিয়ে ভয় দেখায়।”

বোগলো ভ্যারান্টসির দুই কাঁধে হাত রাখলেন। “আমি জানি বামনেরা দাস দাসী রাখে না, কিন্তু তুমি না চাইলেও আগামী পূর্ণিমার আগে তুমি তাকে ছেড়ে দিতে পারবে না। চাইলে তুমি ওকে আমার জেলখানায় রেখে যেতে পার তার আগ পর্যন্ত। সাথে সে যদি তোমার চুরি যাওয়া জিনিসগুলো যদি ফেরত দেয় তাহলে তার যথেষ্ট শাস্তি হয়ে যাবে।”
“আপনি ঠিকই বলেছেন শেরিফ,” ভ্যারান্টসি বলল, “চুরি যাওয়া জিনিসপত্র আর সাথে দুই সপ্তাহের জেল, যথেষ্ট। আমি তাহলে দুই একদিন আমার ঘরের কাজে খাটিয়ে আপনার জেলখানায় রেখে যাব বাকি দিনের জন্য।”

শেরিফ বোগলো হঠৎ ভ্যারান্টসি কে ধরে শুন্যে তুলে জড়িয়ে ধরলেন। সে শেরিফের এমন কাণ্ডে বিহবল হয়ে গেল। অস্বস্তিতে সে খুক খুক করে কাশতে লাগল। এমনকি শেরিফ তাকে মাটিতে নামিয়ে দেয়ার পর কিছুক্ষণ সে ঠিকমত হাঁটতে পারছিল না।

তিনদিন পর ল্যাপ্রিস্‌, যার শেষের ‘স’ উহ্য থাকে, শেরিফের অফিসে এক কেস বীয়ার সমেত উপস্থিত হল। সে কারও সাথে কোন কথা না বলে তার জন্য নির্ধারিত সেল এ ঢুকে বসে রইল। সে অনুশোচনায় ভুগছে ভেবে শেরিফ মনে মনে খুশিই হলেন আর তাকে তার নিজের মত থাকতে দিলেন কিছু না বলে।

ওইদিন বিকেলে শেরিফ যখন তাঁর অফিসে বসে কিছু হাতের কাজ সারছিলেন তখন পরীদের একটা প্রতিনিধি দল তাঁর কাছে আসল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্কজন উৎকণ্ঠা জড়ানো কণ্ঠে বলল-“শেরিফ, আমাদের জন্য খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটে গেছে!” তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিয়ে বলল-“ কেউ একজন গুজব রটাচ্ছে যে পরীরা নাকি ছিনালী করে বেড়াচ্ছে!”

নোটঃ গল্পটি Stephen Jones এর Fairies Don't Flirt এর অনুবাদ


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

বামুন নয়, বামন। বামুন = ব্রাহ্মন, বামন = বেঁটে, dwarf. ভুলগুলি শুধরে নেওয়ার অনুরোধ রইল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সুবোধ অবোধ এর ছবি

এহহে!! মাথায়-ই ছিল না এটা। মুখ্যু সুখ্যু লোক অনুবাদ করতে বসলে যা হয় আর কি!! খাইছে
ঠিক করে দিলাম। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনাকে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি
সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুবোধ অবোধ এর ছবি

এত্তবড় এট্টা গপ্প দিলাম, তারপরও পাপ্পন??? খাইছে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

৩-এর লিগা, আগাম চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।