হৃদয়ের কী'বা দোষ

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১২/২০০৮ - ১০:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছ্যাঁকা খাওয়ার বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম। মাসুদ আবার মনে করিয়ে দিল। হঠাৎ বুকের এক কোনে একটা ব্যথা উঠেই মিলিয়ে গেল। একজনের সাথে ভাব হয়েছিল। পরে মেয়েটি অন্যজনকে বিয়ে করে। তখনো আমার বিয়ে করার মতো যোগ্যতা হয়নি। মানে স্কুলের ওপরের ক্লাসে পড়ি আর কি। বাপের ঘাড়ে চড়ে খাই। তো সে সময়ে যে মেয়ে চলে গেছে তার জন্য আর কতো দিন বিরহের অনুভূতি বেঁচে থাকে। চিনচিনে ব্যথাটা তাই অনেকদিন থেকেই নাই। মাসুদ আবার সেই চিনচিনে ব্যথাটা ফিরিয়ে আনলো।
মাসুদ জীবনে নাকি একটাই প্রেম করেছে। তাও আবার ভার্সিটিতে এসে। অনেকটা সাবালক হয়ে, বুঝে শুনেই। সেই প্রেমও আর নাই। ইতি নাকি বলেছে, ফ্যামিলি রাজি নাই, তাই মাসুদকে বিয়ে করতে পারবে না। মাসুদ অবশ্য ইতির কথা বিশ্বাস করেনি। কারণ পাত্রের বাজারে ব্যাংকারের এখন বেশ দাম। ঢাকা ভার্সিটির ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থেকে বিবিএ এমবিএ করে চাকরি করছে সিটি ব্যাংকে। এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে। বেতন ভাতা কম নয়। পঁচিশ হাজারের ওপরে। কাজেই এমন পাত্রকে ইতির ফ্যামিলি না করতে পারে এমনটা মাসুদ ভাবতে পারে না। আবার ইতির এখানকার পাত্র যে আহামরি চাকরি করে তেমনও নয়। তাই ইতির প্রত্যাখান মেনে নিতে পারে না মাসুদ। অন্য কারণ খুঁজতে চেষ্টা করে। সে কারণেই আমার কাছে আসা।
গ্রীষ্মের লু হাওয়া বয়ে যায়। আর তার তপ্ত তাপে জীবন ঝালাপালা। তবুও আমার পাঁচ তলার রুমে এক চিলতে বাতাস আসে। আর সে বাতাসের নিচে আমি মাসুদকে সান্ত্বনা দেই। আমার সান্ত্বনা বাণী শুনে মাসুদ আরও বিরক্ত হয়। বলে, তুই কী বুঝবি প্রেমিকা চলে গেলে। আমি স্মৃতি হাতড়াই।
স্মৃতির টানে রিনি ফিরে আসে। নখ দাঁত বের করে। অনেকদিন পর আবার রক্তাক্ত হই। বেদনার নীল মেঘ ছেয়ে ফেলে আমার পৃথিবী। ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে। রিনির কথা থাক। থাক বৃষ্টি ভেজা সেইসব দিনের কথা।
রিনির যেদিন বিয়ে সেদিনের কথা সব মনে আছে। রিনিই এসে দাওয়াত দিয়ে গিয়েছিল, বলেছিল, এলোমেলো কিছু না করে পারলে এসো একবার। উথাল পাথাল আবেগ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমিও যাবো ভেবেছিলাম। কিছু বন্ধু অবশ্য প্যাঁচ ঢোকায় এর মাঝে। বলে, তুই প্রচন্ড ইমোশনাল, নিজেকে সামলাতে পারবি না। আসলে আমার ভেতরে স্থিরতা ছিল না। বন্ধুদের কথাই সই। এটা মেনে সে রাতে গাঁজা খেয়ে বমি করেছিলাম। রিনি অবশ্য পরে এটা শুনে বেশ রাগ করেছিল। আমি যাবো সে এ আশা নিয়ে বসেছিল।
গাঁজার বিশ্রী স্বাদের মতো জীবনটাও তেতো হয়ে যায়। সেই সময়টাকে আরও তেতোময় করে তোলে অদ্ভুত এক শপথ। রিনি চলে যাওয়ার পর বন্ধুদের কাছে শপথ করেছিলাম আর কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করবো না।
রবীন্দ্রনাথে পড়েছিলাম মানুষ পণ করে তা ভাঙ্গার জন্যই। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছিল। অনেকদিন আমি শপথ ভাঙ্গিনি। ভাঙ্গছিলাম না এটা ভেবে বেশ ভাল লাগতো। কিন্তু ভাল লাগতো ব্যাপারটা অবশ্য আর থাকেনি। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই টলে উঠে ধনু ভাঙ্গা সে পণ। উর্মি এসে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় আমার ভিত। ঠিক সাইক্লোনের উর্মিমালার মতো। উর্মি অবশ্য কাঁপেনি। কেঁপে ভেঙ্গে গেছি যা আমিই।
সবক্ষেত্রে নিজের একটা প্রোফাইল আর পোর্টফোলিও লাগে। প্রোফাইল কিংবা পোর্টফোলিও শব্দ দুটিই শহরে এসে জানা। গ্রামে থাকার সময় কখনো শুনিনি। দুটোই প্রবলভাবেই ছিল উর্মির। ইন্টারমিডিয়েটে সে মেয়েদের মধ্যে দেশ সেরা হয়েছিল। আর আমি লো প্রোফাইলের। ফলে পাত্তা পাইনি। পাত্তা না পাইলেও অনেকদিন পিছু লেগেছিলাম। তবে কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। পরে অবশ্য উর্মি রিফাতের সাথে জুটি বাধলে আমিও চলে আসি লাইন ছেড়ে।
তারপর আবার পুরনো শপথে ফিরে যাই। তারপরও আরও কিছুদিন উর্মির স্বপ্নে দিন গুজরান করি। এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা এলে ক্যাম্পাসে যাই। প্রিয় ক্যাম্পাসে আড্ডা মারি। বন্ধুরা কেউ প্রিয়জন নিয়ে এসে বসে পড়ে। বুকের কোথাও যেন ব্যথা করে উঠে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কিসের যেন হাহাকার। অনুভব করি কেউ পাশে নেই।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।