অন্য আলোয় রবীন্দ্রনাথ--১ : দুর্গাপূজা

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১২/০৯/২০১০ - ৯:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
জোড়া সাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে খুব ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী ও সরস্বতী পূজা হত। ঠাকুর পরিবারটি ছিল বৈষ্ণবভক্ত। রবীন্দ্রনাথের ঠাকুর্দা দ্বারকানাথ ঠাকুর পূর্বপৃরৃষের এই দেবদ্বিজে ভক্তিতে অটুট ছিলেন। তিনি নিজে প্রতিদিন পূজা করতেন এবং হোম দিতেন।দুজন ব্রাহ্মণ ছিল বটে—তবে তারা শুধুমাত্র পূজার ভোগ দিতেন আর আরতি দিতেন।

ইংরেজদের সঙ্গে দ্বারকানাথের যোগাযোগ ছিল। তার বাড়িতে সাহেব-মেমদের নিমন্ত্রণ হত। তিনি তাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু খেতে বসতেন না। দূরে দাঁড়িয়ে তদারকী করতেন। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তিনি কাপড় চোপড় পাল্টে ফেলতেন। গঙ্গাজল ঢেলে শুদ্ধ হতেন।

পরে ব্যবসায়ের খাতিরে তিনি যখন আরও ঘনিষ্ট হলেন ইংরেজদের সঙ্গে তখন তিনি এই ছুৎ মার্গটি ধরে রাখতে পারলেন না। তাদের সঙ্গে খেতে বসতে হল। তখন তিনি আর মন্দিরে ঢুকতেন না।১৮ জন ব্রাহ্মণ পূজার সব দায়িত্ব পালন করতেন। আর পূজার সময় দূর থেকে তিনি প্রণাম করতেন।

এক সময় রাজা রামমোহনের সঙ্গে তার পরিচয় হল—তখন তাঁর একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী হলেন। কিন্তু বাড়িতে দীর্ঘদিনের প্রচলিত লক্ষ্মী-জনার্দন, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, সরস্বতী ইত্যাদি পূজা ধুমধামের সঙ্গেই হত।কিন্তু নিজে পূজায় বসেন নি।
তিনি গায়ত্রী মন্ত্রটি জপ করতেন। বিদেশে বসেও গায়ত্রী মন্ত্র জপ শেষ না হলে কোনো রাজপরিবারকেও দর্শন দিতেন না।

দ্বারকানাথের মা অলকানন্দা ছিলেন খুব ধর্মশীলা।তিনি ছিলেন মৃতবৎসা। দ্বরকানাথকে দত্তক নিয়েছিলেন। সন্যাসীদের প্রতিও তাঁর বিশ্বাস ছিল। দ্বারকানাথের ম্লেচ্ছ ইংরেজদের সঙ্গে ওঠা বসা অলকাসুন্দরী পছন্দ করতেন না। কিন্তু ব্যবসায়ের কারণে এই মেলামেশাকে বাঁধা দিতেন।তাদের সঙ্গে একটু আধটু মদও খেতে দ্বারকাকে অনুমতি দিতেন । কিন্তু গোমাংস খাওয়ার ব্যাপারে একেবারে না।

দ্বারকানাথের স্ত্রী দিগম্বরী দেবী ছিলেন তাঁর শ্বাশুড়ি অলকাসুন্দরীর চেয়েও কঠোর। তিনি নিজে খুব ভোরে ঊঠতেন। এক লক্ষ হরিনামের মালা ছিল তার। এটার অর্ধেক জপে খেতে বসতেন। তারপর বাকীটা শেষ করতেন। লক্ষ্মীনারায়ণের নিয়মিত সেবা করতেন। বাড়িতে ইংরেজরা আসা যাওয়া করলেও তিনি তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন নি। তাঁর স্বামী মদমাংস ও ম্লেচ্ছসঙ্গ পছন্দ আরম্ভ করলে তিনি স্বামী সঙ্গও ছেড়ে দেন। দূর থেকে তার সেবাযত্নাদির তদারকী করতেন। কখনো স্বামীর ছোঁয়া লাগলে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে নিতেন। ধর্মের কারণে দ্বারকানাথ ও তার স্ত্রী দিগম্বরীর সম্পর্ক হয়ে উঠেছিল ঝামেলাপূর্ণ।

ঠাকুরমা অলকাসুন্দরী দেবীর কাছে দ্বরকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ মানুষ। ঠাকুরমার শালগ্রাম শিলার জন্য তিনি মালা গেঁথে দিতেন। স্নান করে তার সঙ্গে ছাদে দাঁড়িয়ে সূর্যমন্ত্র জপ করতেন। কালীঘাটে পূজা দিতে যেতেন।দেবেন্দ্রনাথ লিখেছেন,“ প্রথম বয়সে উপনয়নের পর প্রতিনিয়ত যখন গৃহেতে শালগ্রাম শিলার অর্চ্চনা দেখিতাম, প্রতি বৎসরে যখন দুর্গা পূজার উৎসবে উৎসাহিত হইতাম, প্রতিদিন যখন বিদ্যালয়ে যাইবার পথে ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরীকে প্রণাম করিয়া পাঠের পরীক্ষা হইতে উত্তীর্ণ হইবার জন্য বর প্রার্থনা করিতাম, তখন মনে এই বিশ্বাস ছিল যে, ঈশ্বরই শালগ্রামশিলা, ঈশ্বরই দশভুজা দুর্গা, ঈশ্বরই চতুর্ভুজা সিদ্ধেশ্বরী।“

তিনি যুবক হলে রাজারামমোহন রায়ের সংস্পর্শ্বে এলেন। পৌত্তলিকতা ও প্রতিমা পূজার ঘোর বিরোধী হয়ে উঠলেন। তিনি সংকল্প করেছিলেন, “ কোন প্রতিমাকে পূজা করিব না, কোন প্রতিমাকে প্রণাম করিব না, কোন পৌত্তলিক পূজার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করিব না।দেবেন্দ্রেনাথ তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে একটি পৌত্তিলকতা বিরোধী দলও গড়লেন। তাঁদের প্রতিজ্ঞা ছিল, ‘’পূজার সময়ে আমরা দালানে কেহই যাইব না, যদি কেহ যাই, তবে প্রতিমাকে প্রণাম করিব না” ১৮৩৯ সালে অক্টোবর মাসে দেবেন্দ্রনাথের বয়স যখন বাইশ বছর তখন তাঁদের বাড়িতে দুর্গাপূজা হচ্ছিল। তিনি পূজার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। তিনি পূজার সময়ে বাড়ির অন্যপ্রান্তে পুকুরের ধারে চুপ করে বসেছিলেন। সেখানে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একশ্বরবাদি তত্ত্ববোবোধিনী সভা গড়ে তুললেন। এরপর তিনি দূর্গা পূজার সময়ে কলকাতা ছেড়ে দেশ পর্যটনে বের হয়ে যেতেন। তিনি তাঁদের বাড়ি থেকে পূর্বপুরুষের চিরকালীন পূজা ও উৎসব উঠিয়ে দিতে পারেন নি। কিন্তু শরীকদের সঙ্গে আলোচনা করে জগদ্ধাত্রী পূজা জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে তুলে দিতে পেরেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতা দেবেন্দ্র ঠাকুরের প্রবর্তিত ব্রাহ্ম ধর্মাদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তার ধর্মাদর্শে মূর্তি বা প্রতিমা পূজার কোনো স্থান ছিল না। বাংলাদেশের হিন্দুদের বড় উৎসব দুর্গা পূজায় কখনো সামিল হন নি। তিনি উপনিষদের মনের মানুষের সন্ধানই করেছেন চিরকাল। তবে বাঙালীদের জীবনে দুর্গোৎসবের সামাজিকতা এবং মানবিকতার দিকটিকে তিনি প্রশংসা করেছেন। ছিন্নপত্রে তিনি লিখেছেন,(পূজা উপলক্ষ্যে)বিদেশ থেকে যে লোকটি এইমাত্র গ্রামে ফিরে এল তার মনের ভাব, তার ঘরের লোকদের মিলনের আগ্রহ, এবং শরৎকালের এই আকাশ, এই পৃথিবী, সকালবেলাকার এই ঝিরঝিরে বাতাস এবং গাছপালা তৃণগুলা নদীর তরঙ্গ সকলের ভিতরকার একটি অবিশ্রাম সঘন কম্পন, সমস্ত মিশিয়ে বাতায়নবর্তী এই একক যুবকটিকে (রবীন্দ্রনাথ) সুখে দুঃখে একরকম চরম অভিভূত করে ফেরছিল।“

১৮৯৪ সালে কলকাতায় দুর্গোৎসব হচ্ছেল।ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের কোনো প্রত্যক্ষ বা সামাজিক যোগ নেই। তখন তিনি একদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতির বাড়িতে যেতে যেতে দেখলেন, পথের দুধারে অধিকাংশ দালানে ‘দুর্গার দশ-হাত-তোলা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে’। সেই মূর্তিকে কেন্দ্র করে ‘আশেপাশের সম্স্ত বাড়ির ছেলের দল ভারী চঞ্চল হয়ে উঠেছে।‘ তাঁর তখন মনে হয়েছে, দেশের ছেলে-বুড়ো সকলেই হঠাৎ দিন কতোকের মত ছেলে-মানুষ হয়ে উঠে,সবাই মিলে একটা বড়ো গোছের পুতুল-খেলায় মেতে উঠেছে।এই খেলাটিকে তিনি উপেক্ষা করতে পারছেন না--অবজ্ঞাও করতে পারছেন না। তিনি লিখেছেন, বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বৃথা সময় নষ্ট। কিন্তু সমস্ত দেশে লোকে যাতে মনে করে একটা ভাবের আন্দোলন একটা বৃহৎ উচ্ছ্বাস এনে দেয় সে জিনিসটি কখনোই নিষ্ফল এবং সামান্য নয়।
এই পূজা পার্বন যে মানুষকে একত্র করে মিলনে বাঁধে এইটিই তাকে টেনেছে--কোনো পূজাকে নয়।তিনি মিলনের মধ্য দিয়ে অসীমকে পাওয়া যায়। কোনো দেবতাকে নয়।

কেননা রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন--হিন্দু নয়।

সূত্র :
১) আত্মজীবনী--মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর--ছিন্নপত্রাবলী
৩) পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়--রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ
৪) সমীর সেনগুপ্ত--রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্জন


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখা ভালো লাগল।

এখন একটা তুলনামূলক আলোচনা করা যায় কি? প্যাগান পরিবারে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ এক ঈশ্বর বাদী ধর্ম ইসলামের প্রবক্তা ছিলেন। তুলনামূলক ভাবে প্যাগান ধর্মের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহন করে রবি ঠাকুরের বাবা ছিলেন এক ঈশ্বর বাদী ব্রক্ষ্ম ধর্মের প্রবক্তা। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এই ধর্মের অনুসারী। মোহাম্মদ এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনেরই রচনা প্রতিভা, নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা ভালো ছিল। তবু ইসলাম ধর্মের তুলনায় ব্রক্ষ্ম ধর্ম তেমন সফল নয়। কেন?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সাবিহ ওমর এর ছবি

এটা আপেল আর কমলার তুলনা হয়ে গেলনা? মুহাম্মদের ধ্যান-জ্ঞানই ছিল ধর্মপ্রতিষ্ঠা আর প্রচার। রবিবুড়ো ওদিকে কি পা বাড়িয়েছেন? (আমি জানি না আসলে)।

আর বুঢ়া নেতা হিসেবে মুহাম্মদের মত ছিলেন বলে মনে হয় না। প্র্যাকটিক্যাল কাজে মুহাম্মদ অনেক অনেক বেশি ঝানু ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ব্যবসায় ফেল মেরেছিলেন, মুহাম্মদ সেদিক থেকে ভালই সফল ছিলেন। ধর্মপ্রচারের সময়ও মুহাম্মদ ধর্মাচরণের প্রায়োগিক দিকটাকে একটা শক্ত চেহারা দিতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মমত অনেকটাই দার্শনিক। শান্তিনিকেতনের আড্ডায় এসব আলোচনা চলতে পারে, কিন্তু গণমানুষের কাছে ধর্মের প্রায়োগিক দিকটাই মুখ্য।

আর এত এত বই লিখলে মানুষের ধর্মপ্রচারের টাইম থাকে কই? খাইছে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মন্তব্য পছন্দ হইছে। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

এমন সত্য কথা কইলে চলবে কেমনে ? পছন্দ হইলো মন্তব্য
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মন্তব্যে চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন এই অযুহাতে সাহিত্য চর্চার জন্য জমিদারী থাকতে হবে এবং এ জন্য বজরায় চড়ে নদীতে চড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে এমন কথাও কিছুদিন আগে শুনেছি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এর সেই জমিদারী কেমন জমিদারী ছিল কেমন দেনাগ্রস্থ ছিলেন তিনি, মেয়ের যৌতুক দিতে না পারার কারণে কিভাবে তাকে এবং তাঁর মেয়েকে এটা ভোগ করতে হয়েছে এ খবর অনেকেই জানে না। ব্যস্ততার মধ্যেও মন্তব্য না করে পারলাম না! চমৎকার প্রবন্ধ দাদা, শেয়ার করছি!

কাজী মামুন

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই, হিন্দু নন।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সুহৃদকুমার ভৌমিক এর "আর্য রহস্য" বইটা পড়ছিলাম। আর্য অনার্য, সুর অসুর, মহিষাসুর বধ, বাংলায় দূর্গার প্রচলন এই নিয়ে মাথা পুরা আউলা হয়ে আছে। অনেক নতুন নতুন প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

দাদা, ভালো লাগছে। চলুক।

অদ্রোহ এর ছবি

ঠাকুর পরিবারে ব্রাহ্মধর্ম চর্চা কি এখনও চালু রয়েছে?

একটি দারুণ সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

সাইফ শহীদ এর ছবি

কুলদা,

সুন্দর একটি তথ্যবহুল লেখা দেবার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

'ম্লেচ্ছ' শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল। এটা কি যে ভাবে 'যবন' শব্দটি ব্যবহার করা হতো, তারই সমার্থক একটি শব্দ? কিছু অভিধান অনুসারে কোন কোন 'অনার্য' অধিবাসীদের 'ম্লেচ্ছ' বলা হতো। ইংরেজদের কি সেই অর্থে 'ম্লেচ্ছ' বলা যায়?

কেউ কেউ এটাও বলেছেন যে 'মুসলমান' শব্দের অপভ্রংশ এটি। এ ব্যাপারে কোন ভিন্ন ধারণা থাকলে জানতে আগ্রহী।

আমার কাছে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের নীচের লেখায় 'ম্লেচ্ছ' জাতির বিবরণ বেশী আকর্ষনীয় লেগেছে। এতে যদি কোন মনুষ্য জাতির কেউ আঘাত পান - আমি অতীব দুঃখিত।

আমরা যে শ্রেষ্ঠ, তার প্রমাণ এই যে, আমাদের ভাষায় বানর অর্থই শ্রেষ্ঠ— আর আর সকল জীবই অশ্রেষ্ঠ। মনুষ্যদের আমরা ম্লেচ্ছ বলিয়া থাকি। যেহেতু তাহারা অপক্ক কদলী দগ্ধ করিয়া খায়, এরূপ আচরণ আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করিতে পারি না। তাহা ছাড়া তাহারা সাতজন্মে গায়ের উকুন বাছিয়া খায় না এমনি অশুচি! আত্মীয় বান্ধবের সহিত দেখা হইলে তাহারা পরস্পরের গায়ের উকুন বাছিয়া দেয় না তাহাদের সমাজে এমনি সহৃদয়তার অভাব। শ্রেষ্ঠজাতি বানর জাতি এই-সকল কারণে মনুষ্য জাতিকে ম্লেচ্ছ বলিয়া থাকে।

[বানরের শ্রেষ্ঠত্ব]

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

এটা তো একেবারে সেরকম মন্তব্য হয়েছে দাদা
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অতিথি লেখক এর ছবি

দেবদ্বিজে , দ্বারকানাথের মা অলকানন্দার ধর্মচর্চার সাথে বাস্তব জীবনে সাদা ইংরেজ সভ্যতার অধিকারীদের মিথ্ক্রিয়া করতে গিয়ে যে সংঘাত গুলা দেখা গিয়েছিল তা আপনার লেখায় চমৎকার ভাবে ফুটে এসেছে ।

রাহমোহনের ব্রাহ্ম ধর্মে অনেক ভালো কথা থাকলেও তা সমাজের একেবারে উঁচুতলার অভিজাতদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল জনগণের মাঝে এর বানি তেমনভাবে যায়নি বা প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তবে বেদভিত্তিক একেশ্বরবাদি হিন্দু ধর্মের ব্যাপক প্রচার করে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেন স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বর্ণ প্রথা, সতি দাহ প্রথা, পুরোহিত প্রথা বিরোধী, একেশ্বর ভিত্তিক হিন্দু ধর্মের ধারনা ১৮ শতকের দিকে জনপ্রিয় করে তুলতে অনেকটাই সফল হোন কিন্তু তা মনে হয় খোদ ভগবানেরই সইছিল না ! মাত্র ৬৯ বয়সে যোধপুরে ধর্ম প্রচার কার্য কালে এক শত্রুর বিষ প্রয়োগে তিনি মারা যান , হিন্দু ধর্মের সংস্কারের কাজে তিনি সফল হলে ২১ শতকে আমরা হয়তো অন্য এক হিন্দু ধর্ম দেখতাম যেখানে অবশ্যই দুর্গাপূজা বলে কিছুর অস্তিত্ব থাকত না !

( অনুসন্ধিৎসু )

অতিথি লেখক এর ছবি

১৮৯৪ সালে কলকাতায় দুর্গোৎসব হচ্ছেল।ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের কোনো প্রত্যক্ষ বা সামাজিক যোগ নেই। তখন তিনি একদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দৌহিত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতির বাড়িতে যেতে যেতে দেখলেন, পথের দুধারে অধিকাংশ দালানে ‘দুর্গার দশ-হাত-তোলা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে’।
বাংলায় দুর্গাপূজার প্রচলন ঠিক কবে, কীভাবে হয়েছিল? আমি যতটুকু জানি - রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে আরও ১৮ কি.মি. উত্তরে তাহিরপুর জনপদ। সেখানে আজও একটি জমিদার বাড়ি (তাহিরপুর রাজবাড়ি) অক্ষত আছে। প্রবাদ অনুযায়ী, ১৫ শতকের প্রথমার্ধে কামদেব ভট্ট এই জমিদার বংশের পত্তন করেন। এই জমিদারদের মধ্যে রাজা কংস নারায়ণ ছিলেন সর্বপ্রধান। ১৬ শতকের প্রথমদিকে বৃদ্ধ রাজা কংস একটি মহাযজ্ঞ সম্পাদন করতে মনস্থ করলে তখনকার শাস্রজ্ঞ পন্ডিতগণ অভিমত দেন যে, তিনি সামন্ত রাজা হওয়ায় বিশ্বজিৎ ও রাজসূয় যজ্ঞ করার অধিকারী নন এবং কলিতে অশ্বমেধ বা গোমেধযজ্ঞও নিষিদ্ধ। সবদিক বিবেচনা করে পন্ডিতরা রামচন্দ্র-অনুসৃত শারদীয় দুর্গোৎসব করার পরামর্শ দিলে রাজা কংস নারায়ণ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন, ফলে চতুর্দিকে রাজা এবং দুর্গাপূজার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই, প্রবাদ অনুযায়ী, কালক্রমে সারা বাংলায় শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন হয়। [প্রবাদটি সংগৃহীত, তবে এর পক্ষে সমর্থন দেখতে পেলাম উইকির এই পাতাটিতেও। সেখানে বলা হয়েছে - The Temple of King Kangsa Narayan (Bengali: রাজা কংস নারায়ণের মন্দির) is situated at the northern part of Bangladesh. It is in Rajshahi's Tahirpur, where, legend state that the Durga Puja of the Hindu community was performed for the first time in the Indian subcontinent.]

আসল সত্যটি জানতে আগ্রহী। আপনার পরিশ্রমী লেখাটা ভালো লেগেছে।

এই পূজা পার্বন যে মানুষকে একত্র করে মিলনে বাঁধে এইটিই তাকে টেনেছে--কোনো পূজাকে নয়।তিনি মিলনের মধ্য দিয়ে অসীমকে পাওয়া যায়। কোনো দেবতাকে নয়।
চরম সত্যি কথা।

------------------------
কুটুমবাড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল একটা সিরিজ হচ্ছে। চলুক

অনন্ত

নিজাম কুতুবী [অতিথি] এর ছবি

রবীন্দ্রনাথকে জাত ধর্মের বাইরে চিন্তে করতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো। এন্ড নোটের সূত্রগুলিকে রচনার গায়ে জায়গামতো সুপারস্ক্রীপ্ট করে চিহ্নিত করে দেয়া যায় না?

রোমেল চৌধুরী

সৈয়দ আফসার এর ছবি

কেননা রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন--হিন্দু নয়। [/quote

রবীন্দ্রনাথকে জানার জন্য এ টুকুই যথেষ্ট।
লেখাটি ভালো লাগল।
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

অনেক পরে এসে পড়ছি, কিন্তু ভাল লাগল। আচ্ছা, ব্রাহ্মধর্ম এখনো কি প্রচারিত আছে? প্রসার ঘটছে কি এর? ঠাকুরবাড়ি বা এর বাইরে এর বর্তমান অবস্থা কীরকম?

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।