ফন্টের খুঁটিনাটি : পর্ব ২

সিয়াম এর ছবি
লিখেছেন সিয়াম [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৯/০৫/২০১০ - ৩:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফন্টের খুঁটিনাটি : পর্ব ১

আবার ফিরে এলাম ফন্টের খুঁটিনাটি নিয়ে। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি দেরি করার জন্য। চলুন তবে আজকের পর্ব শুরু করা যাক।

গত পর্বে আমরা ফন্টের প্রাথমিক কিছু ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এ পর্ব থেকে ফন্ট তৈরীতে হাত দেব।
প্রথমেই আপনাদের ফন্টের টাইপ ডিজাইন প্রস্তুত করতে হবে। টাইপ ডিজাইন হলো আপনার ফন্টটার চেহারা। এরপর প্রয়োজন হবে ফন্টের গ্লিফ বা অক্ষরগুলোর তালিকা, এটাকে টেমপ্লেটও বলতে পারেন।

আমার মনে হয়ে নতুন টাইপ ডিজাইন করা বেশ কঠিন একটা কাজ। ভালোমানের টাইপোগ্রাফির জন্য সৃজনশীলতা আর দক্ষতা দুটোই প্রয়োজন। চারুকলার ছাত্ররা খুব সহজেই এ কাজটি করতে পারবেন। আপনি যদি চারুকলার ছাত্র নাও হয়ে থাকেন তাতেও সমস্যা নেই, সাহস করে আপনিও টাইপ ডিজাইনে হাত দিতে পারেন। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অবশ্যই ভালো কাজ বের হয়ে আসবে। টাইপোগ্রাফি নিয়ে সচলায়তনে মিলন ভাইয়ের চলমান সিরিজটিও পড়তে থাকুন; বাংলায় লিখি : ১ । নতুন টাইপ ডিজাইন না করতে চাইলে বর্তমান কোন ফন্টের টাইপও ব্যবহার করতে পারেন।

ধরে নিলাম আপনার টাইপ ডিজাইন তৈরী। এবার ফন্ট তৈরীর পালা। ফন্ট তৈরী দু’ভাবে শুরু করা যায়। একটা হলো একদম শূন্য থেকে শুরু করা, আরেকটা হলো বর্তমান কোন ফন্টকে ব্যবহার করে নতুন ফন্ট তৈরী করা। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি, মানে পুরোনো একটা ফন্টের উপর নতুন অক্ষর বসিয়ে ফন্ট তৈরী করাটা সময় বাঁচায় কিন্তু এতে কিছু সমস্যাও আছে। একটা ফন্টের সাথে অনেক আনুষাঙ্গিক তথ্য (properties) সংরক্ষিত থাকে যেমন এসেন্ডার, ডিসেন্ডার , স্মুদিং, হিন্টিং, ইউপিএম সাইজ, মেট্রিক্স, কারনেল, ওপেন টাইপ টেবল ইত্যাদি। আপনি টেমপ্লেট হিসেবে একটি পুরোনো ফন্ট ব্যবহার করলে এর সকল প্রপার্টিজও নতুন ফন্টে চলে আসবে, কিন্তু সমস্যা হলো এতে করে পুরোনো ফন্টের ত্রুটিগুলোও নতুনটায় চলে আসে (যেমনটা হয়েছিল সিয়াম রূপালির ক্ষেত্রে, রূপালির সমস্যাগুলো সিয়াম রূপালিতেও ছিল)। পুরোনো ফন্ট নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকবেন যে ফন্টটিতে কোন সমস্যা আছে কিনা। আর একদম নতুন করে শুরু করতে চাইলে প্রথমেই সব ধরণের অক্ষরের একটা তালিকা তৈরী করে নিন। তালিকায় যেসব অক্ষর থাকবে তা হলো-
১. সবগুলো মৌলিক অক্ষর (সংখ্যা ও কার সহ)।
২. হসন্তযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ।
৩. ব্যঞ্জনবর্ণের অর্ধরূপ।
৪. সকল যুক্তাক্ষর গোছানো ভাবে (sorted)
৫. ইংরেজি অক্ষর (যদি রাখতে চান)।

কালপুরুষের গ্লিফ ইনডেক্স - http://dl.dropbox.com/u/4697470/GlyphIndex-Kalpurush.pdf

এরপর আপনাদের যা করতে হবে তা হলো ফন্ট ডেভেলপমেন্ট করার সফ্টওয়্যারে আপনার তৈরী গ্লিফগুলো বসানো। এ ব্যাপারে আগামী পর্বে বিস্তারিত লিখব।
আপনারা দেরী না করে ফন্টল্যাব অথবা ফন্টফোর্জ নিয়ে বসে পড়তে পারেন। আমি অবশ্য ফন্টল্যাব ব্যবহার করি। তাই পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো ফন্টল্যাব নিয়ে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

তানবিন ইসলাম সিয়াম
অমিক্রনল্যাব


মন্তব্য

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পড়ছি।

--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

লীন এর ছবি

সিয়াম ভাইয়ের সিরিজটা সিরাম হইতাছে। চলুক।
চলুক
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি

______________________________________
লীন

সাদাচোখ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ সিয়াম ভাই। লেখা ভালই আগাচ্ছে। তবে আপনার লেখায় যদি পর্যাপ্ত ছবি দিতেন, তাহলে এর মান আরও বাড়ত বলেই মনে হয়। আর স্মুদিং, হিন্টিং, ইউপিএম সাইজ, মেট্রিক্স, কারনেল, ওপেন টাইপ টেবল ইত্যাদি টার্মগুলো একটু সহজ ভাবে বর্ননা করলে ভাল হত।

আশা করছি পরবর্তি পর্ব খুব শিঘ্রি পাব।

ভাল থাকবেন।

সিয়াম এর ছবি

ছবির ব্যাপারে দুঃখিত, আসলে এ পর্যন্ত দেয়ার মতো কোন ছবি ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে পরবর্তী পর্বে ছবি না দিয়ে উপায় নেই।
আর এই টার্মগুলো উদাহরণ ছাড়া বোঝানো একটু কষ্টকর। তাই চাচ্ছিলাম ফন্টল্যাবের ইন্টারফেসের সাথে দেই। কারণ এগুলো ওখান থেকেই কাজে লাগবে।

অভ্রনীল এর ছবি

ফন্টল্যাবের ইন্টারফেস না দিয়ে ফন্টফোর্জের ইন্টারফেস নিয়ে টিউটোরিয়াল দিলে ভালো হয়, কারণ ফন্টল্যাবের যেই দাম সেটা কেনার সামর্থ্য সবার থাকবে বলে মনে হয়না। তাছাড়া ফন্টফোর্জের আরেকটা সুবিধা হল এটা সব প্লাটফর্মেই ব্যবহার করা যায়। তাই ফন্টফোর্জ নিয়ে লিখলে ভালো হত।

_______________
.:: উবুন্টু ও মিন্টকে ছড়িয়ে দিন সবার মাঝে! ::.

সিয়াম এর ছবি

আসলে ফন্টল্যাবে কাজ করে অভ্যস্ত তো, তাই ফন্টফোর্জের ইন্টারফেস আমার কাছে একটু অপরিচিতই। যদি নিকট ভবিষ্যতে ফন্টফোর্জে কাজ করার সৌভাগ্য হয় তাহলে হয়তো দু'একটা লেখা দিতে পারবো। বা কেউ যদি ফন্টফোর্জে কাজ শুরু করে থাকেন তাহলে সেটাও সচলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
ফন্ট ডেভেলপের বেসিকটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই, দু'একটা টার্মের নাম ভিন্ন হতে পারে।

সিয়াম এর ছবি

আসলে ফন্টল্যাবে কাজ করে অভ্যস্ত তো, তাই ফন্টফোর্জের ইন্টারফেস আমার কাছে একটু অপরিচিতই। যদি নিকট ভবিষ্যতে ফন্টফোর্জে কাজ করার সৌভাগ্য হয় তাহলে হয়তো দু'একটা লেখা দিতে পারবো। বা কেউ যদি ফন্টফোর্জে কাজ শুরু করে থাকেন তাহলে সেটাও সচলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
ফন্ট ডেভেলপের বেসিকটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একই, দু'একটা টার্মের নাম ভিন্ন হতে পারে।

আলমগীর এর ছবি

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

টেকি মানুষ না যদিও, তবে পড়তে বেশ লাগছে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

সিয়াম, ফন্ট বিষয়ক টিউটোরিয়ালগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকে একটা অনুরোধ করতে চাই। আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি, তাদের বাংলাদেশ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর নিয়ম অনুযায়ী এমন ফন্ট ব্যবহার করতে হয় যেখানে অক্ষরের মূল রূপ পরিবর্তিত হয় না। যেমন- শু লিখতে গিয়ে এখানে শ-এর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু এনসিটিবির নিয়ম অনুযায়ী শ-এর নিচে আলাদাভাবে ু বসবে। এমনিতে ইউনিকোড ছাড়া আসকি পদ্ধতি আমরা সাধারণত সাবরিনা তন্বী ফন্ট ব্যবহার করি। ইউনিকোডে সিয়াম রূপালী ব্যবহার করতাম মাঝেসাঝে, কিন্তু সেখানেও বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা দেখা গেছে। তাছাড়া সিয়াম রূপালী ফন্টটি দেখতে বিদ্যাসাগরীয় ফন্টের মতো নয়। ফলে শিক্ষাসেক্টরের ইউনিকোডের জন্য এমন একটা ফন্ট জরুরি হয়ে গেছে যা একাধারে বিদ্যাসাগরীয় ফন্টের ডিজাইন অনুযায়ী হবে, পাশাপাশি এনসিটিবির নিয়মানুযায়ী অক্ষরের মূল রূপও বজায় থাকবে, বিশেষ করে যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে। আপনি কি এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেন? এ ব্যাপারে আপনাকে আগাম ধন্যবাদ দিতে চাই। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সিয়াম এর ছবি

ইউনিকোডে এনসিটিবির নিয়মেও সম্ভবত লেখা সম্ভব। যেমন শ এর নিচে উ-কার লিখতে হলে শ+zwnj+ু (যদিও আমার ব্রাউজার দেখাচ্ছে না, নোটপ্যাডে ঠিকই কাজ করছে। )
যতদূর জানি এভাবে সব যুক্তাক্ষরের অপরিবর্তিত রূপ লেখা সম্ভব। তবে ফন্ট থেকে কি করা যেতে পারে এটা নিয়ে আরেকটু ঘেঁটে দেখতে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে, গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু সামনে আনার জন্য। হাসি

উন্মাতাল তারুণ্য এর ছবি

ইউনিকোডে সিয়াম রূপালী ব্যবহার করতাম মাঝেসাঝে, কিন্তু সেখানেও বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা দেখা গেছে।

আলোচনা মাঝখানে হাত ভরে দেবার জন্য দুঃখিত। আসলে ব্যাপারটা কি জানেন গৌতম দা 'বেশ কিছু সমস্যা'-কে যদি 'এই কয়টি সমস্যা'-য় তালিকাবদ্ধ করা না যায় তাহলে বাগ ফিক্সিং-ই বলুন আর নতুন ফিচার যোগই বলুন, প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। প্রয়োজনগুলো একটু স্পেসিফিক্যালি বললে সুবিধা হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব ভাল লাগছে আপনার এই সিরিজটা। আরো লেখা চাই।
তার্কিক

নয়ন [অতিথি] এর ছবি

সিয়াম, লেখা ভালো হচ্ছে। ধন্যবাদ তোমাকে। গৌতম দা'র ব্যাপারটা আমিও দীর্ঘদিন যাবৎ চিন্তা করছিলাম, আর এটাকে অভ্র'র একটা সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলাম। আমরা যারা বিজয় কী-বোর্ড লেআউট ব্যবহার করে অভ্র ব্যবহার করি, তাদের জন্য আলাদা করে 'কার' দেয়ার পদ্ধতিটা কী? Insert>Symbol-এর পদ্ধতিটা বাদ দিয়ে, কেননা ওটা কোনো লেখাজোখা'র পদ্ধতি না, বলা যায় আঁকার পদ্ধতি।
যাহোক, আমার জানামতে, প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মও সেটাই: কার আলাদা করে লেখা। কার ব্যবহারের সময় হরফ বদলে যাবার ব্যাপারটা দূর করা উচিত। তবে কথা হলো তাতে ইউনিকোডের গ্লিফে কোনো বাধা নেই তো? বিজয় সফ্টওয়্যার ২০০৩ ব্যবহার করার সময় কাজটি আমি করি অন্যভাবে: টাইপ করার সময় 'শ+ু' দিলেই সেটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু যদি 'শ+space+backspace+ু' দিই তাহলে সেটা আলাদাভাবে নিচে বসে পড়ে, যদিও বড় ধরণের টাইপিং-এ এতো কষ্ট করতে যাবে না কেউ।

আরেকটা ব্যাপারও: যেমন: ঙ+গ লিখলে অক্ষরটি 'ঙ্গ' হয়ে যুক্তাক্ষর হয়ে যায়, এখানেও সেটা ভেঙে এমনভাবে বসবে, ঙ superscript আর গ subscript হলে যেমনটা দেখায় অনেকটা সেরকম। ভাই কাজটা জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত অভ্র-তে। কারণ এরকম সুবিধার অভাবে আমি একটা 'আঞ্চলিক অভিধান' প্রস্তুতের বেলায় অভ্র ব্যবহার করতে পারছি না, কারণ অভিধান নিয়মানুযায়ী প্রস্তুত হওয়া উচিত। এরকম আরেকটা সমস্যা 'স+ত+ূ'-এ। যেখানে একত্রে থাকবে 'স+ত' কিন্তু আলাদা দেখাবে 'উ-কার'। একটু আশু সম্মিলিত সমাধান চাই।
(নয়ন)

______________________________
অন্তহীন এ পথের শেষে
আছে কী যে লুকিয়ে বসে
দেখতে আমি চাই...

উন্মাতাল তারুণ্য এর ছবি

ভাই কাজটা জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত অভ্র-তে।

নয়ন ভাই, যে সমস্যার কথা উল্লেখ করলেন সেটা আসলে 'অভ্র কিবোর্ড' এর সমস্যা নয়। কিবোর্ড শুধু ক্যারেক্টার কোড বলে দেয়। সে কোডের বিপরীতে অক্ষরের চেহারা কি রকম দেখাবে সেটা নির্ধারণ করে ফন্ট।

যাইহোক, সমস্যার কথাগুলো মাথায় রাখা হল। আরো কোন স্পেসিফিক সমস্যা থাকলে একটু ক্রমানুসারে বিস্তারিত জানালে ভাল হবে।

ধন্যবাদ।

প্রতীক [অতিথি] এর ছবি

একটু দেরী হয়ে গেলো পড়তে সিয়াম ভাই! পরবর্তীটার আশায় রইলাম।
আপনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফন্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করার পর রবীন্দ্রনাথের অব্যর্থ সেই কথাটা মনে পড়লো---

"সহজ কথা যায়না বলা সহজে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।