বায়োস্কোপের বাক্স ৪: আরো কাছাকাছি

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০৩/২০০৯ - ৭:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অপরূপা নারীটি কাঁদছে, তার প্রেমিকের দ্বিচারিতার স্বীকারোক্তি শুনে:
Is it because she's successful?

পুরুষটি দুঃখিত, নতমুখ, কিন্তু সে সত্যি কথা বলে:
No, it's because she doesn't need me.

আমরা গান শুনতে পাই:

And so it is,
Just like you said it would be
Life goes easy on me
Most of the time.

And so it is
The shorter story
No love, no glory
No hero in her sky

Closer আমার প্রিয়তম ছবির একটা। নাটক-ভিত্তিক চলচ্চিত্র, এতে কারুকৌশল কম, চরিত্র হাতে গোনা, সংলাপ বেশি, feel-good factor অনুপস্থিত। কিন্তু ভালোবাসার এম...অপরূপা নারীটি কাঁদছে, তার প্রেমিকের দ্বিচারিতার কনফেশন শুনে:
Is it because she's successful?

পুরুষটি দুঃখিত, নতমুখ, কিন্তু সে সত্যি কথা বলে:
No, it's because she doesn't need me.

আমরা গান শুনতে পাই:

And so it is,
Just like you said it would be
Life goes easy on me
Most of the time.

And so it is
The shorter story
No love, no glory
No hero in her sky

Closer আমার প্রিয়তম ছবির একটা। নাটক-ভিত্তিক চলচ্চিত্র, এতে কারুকৌশল কম, চরিত্র হাতে গোনা, সংলাপ বেশি, feel-good factor অনুপস্থিত। কিন্তু ভালোবাসার এমন নির্মম ছবি কম দেখেছি (দেখেছি কি আদৌ?)।

চারটি চরিত্র, তার দুটি আমেরিকান নারী, দুটি ব্রিটিশ পুরুষ: স্ট্রিপার, ডার্মাটোলজিস্ট, পোর্ট্রেট ফোটোগ্রাফার,অবিচুয়ারি রাইটার। পরশুরামের "প্রেমচক্র" গল্পের প্রেমের হেক্সাগন মনে আছে? এখানে চরিত্র কম, কিন্তু সম্ভাবনা ও সেই বাবদ জটিলতা অনেক বেশি।

এই আলোচনায় spoiler alert দেবার দরকার নেই। কাহিনী যথেষ্ট জটিল, লিখতে গেলে হয় এক লাইনে সারতে হয় ("প্রেম ও অপ্রেম, দুর্মর ভালোবাসা আর মরে যাওয়া সম্পর্ক, এই সব সত্যিমিথ্যে", বা এই জাতীয় কিছু), অথবা লিখতে হবে লম্বা এক পাতা (উইকিতে খুব বিশদে আছে, যদি কারোর দরকার মনে হয় তো পড়তে পারেন)। তবে এই জাতীয় সিনেমায় সাধারণতঃ যা হয়, গল্পটা ততো জরুরী কিছু নয়। পরিচালক আসলে এখানে একটা খেলা খেলছেন, অনেকটা ঈশ্বরের মতোই নির্দয়ভাবে, চার জনকে একসাথে এনে দেখছেন কী হয়। এই মানুষগুলো সবাই আজকের মেকি পৃথিবীর, এরা ঠকায়, মিথ্যা বলে, আঘাত করে, আবার কাঁদে, ক্ষমা চায়, ফিরে আসে ফের দূরে চলে যাবে ব'লে।

জনমোহিনী শিল্পে সাহিত্যে অহরহ প্রেমের জয়ঘোষ, তার মাঝে এখানে শোনা যায় অন্য এক স্বর: Why isn't love enough? এখানে কোনো প্রেমই দ্বিমাত্রিক নয়, এমনকি অনেক সময় দ্বিপাক্ষিকও থাকে না। মধ্যবর্তিনীর শরীরের ঘ্রাণ ভেসে থাকে বদ্ধ হাওয়ায়। যাঁরা খাঁটি, একমুখী ও অবিচল প্রেমের জয়গানে বিশ্বাসী, এ ছবি তাঁদের জন্য নয়।

জুলিয়া রবার্টস ক্যামেরায় মানুষের ছবি আঁকে, দুঃখী মানুষের মুখ, চোখের সেপিয়া জল চকচক করে। সে হেঁটে আসে ছবির কাছে, ছবির মানুষের কাছে, ঠোঁট ছোঁয় ছবির ঠোঁট। অবলীলায়। সে ভালো থাকতে চায় না, জানেও না হয়তো। অ্যাকোয়ারিয়ামে নীল জলের পাশে বসে থাকে, নীল আলোয়। বিষণ্ণতার ছবি আঁকতে আঁকতে কখন ছবির মধ্যে ঢুকে যায় সে, নিজেও টের পায় না।

নাটালি পোর্টম্যান এক পাতালের ঈশ্বরীর মতো, স্ট্রিপ-বারের গোলাপি আলোয় তার রূপালি পরচুলা রঙ বদলায়। আবার লন্ডনের জনসমুদ্রে একাকী নৌকার মতো ভাসে তার রক্ত-লাল চুল।

মাঝরাতে পথভ্রষ্ট প্রেমিককে সে পরম সত্যের মতো বলে: I don't love you anymore.

Since when? জানতে চায় প্রেমিক।

Now. Just now.

সাদা চাদরে বিছানায় আধা-ডুবে থাকা সেই মুখ, এই নির্মমতাও কেমন মায়াবী লাগে।

অথচ সেই কি বলে নি, লীলাময় সুরে:
Lying is the most fun a girl can have without taking her clothes off, but it's better if you do.

জুড ল আর ক্লাইভ ওএন্সও কিছু ভিন্ন নয়, প্রেম-অপ্রেমের এই নিষ্ঠুর খেলা তারাও খেলতে থাকে নারীদের সাথে এবং রক্তাক্ত হয় বারবার। আহত স্বামী বাক্যবাণে বিদ্ধ করে স্ত্রীকে, জানতে চায় শরীরি যুদ্ধে হারজিতের হিসাব, কিসে সেই পুরুষ ভালো আমার থেকে। অথচ এই কথোপকথন শুরু হয় অন্য ভাবে, যখন পুরুষটি জানায়:
I slept with someone in New York. A whore. I'm sorry.

জানতে চায় নারী: Why did you tell me?

এক সত্য উন্মোচন করে আরো ভয়াবহ আরেক সত্যকে। জেগে ওঠে নগ্ন ক্রোধ, অবিশ্বাস, তারপরে যা হয় তাকে verbal intercourse বলা চলে, শুধু তফাৎ এই যে সে রতিতে আশ্লেষ নেই, আছে ধর্ষণের চীৎকার। আবার জেগে ওঠে সেই প্রশ্ন: Why isn't love enough?

গল্প যদিও এ ছবিতে সরলরেখাতেই চলে ("Eternal Sunshine of the Spotless Mind"-এর মতো ঘেঁটে দেওয়া ক্রনোলজি নয় এখানে), বিভিন্ন পর্বের মাঝে দীর্ঘ ফাঁকগুলো জানানো হয় না যেমনটা আমরা দেখে অভ্যস্ত, Six months later-জাতীয় কোনো সাহায্য মিলবে না। আমাদের পরিচিত প্রেমের ধারণাই এখানে আমাদের কম্পাস: আগের দৃশ্যে ক ও খ ভালোবাসে একে অপরকে, পরের দৃশ্যে ক ও গ, তার মানে মাঝখানে কেটে গেছে অনেকটা সময়। তবে এতো সরলও নয় ব্যাপারটা, কারণ এরা প্রেম করছে, নাকি প্রেমের অভিনয়, তাও তো পরিষ্কার নয়। ফলে মাঝেমাঝেই সেই কম্পাস গন্ডগোল করবে। সেও এক খেলা, তবে খেলতে মজাই লাগে। এ ছাড়াও আরেকটা খেলা চলে সারা ছবিতে, সত্য মিথ্যার খেলা। সন্দেহ হয়, Isn't truth overrated? এর বেশি বলতে গেলে spoiler alert দিতে হবে, এবং শুধু তাই নয়, ফাঁস করতে হবে গল্পের টুইস্ট, সেটা অন্যায় হবে কারণ আপনি তো শিগগিরই দেখবেন ছবিটা। অতএব এর বেশি সত্যিতে কাজ নেই, বাকিটা পর্দায় দেখুন। পস্তাবেন না, কথা দিচ্ছি।

সূচনার গানটি আইরিশ রক-গায়ক দামিয়ান রাইসের, ছবিতে ব্যবহৃত।

-------------------------------------------
Closer (2004)
Direction: Mike Nichols
Cast: Natalie Portman, Jude Law, Julia Roberts, Clive Owen


মন্তব্য

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

উইকিতে বিস্তারিত পড়লাম। চমৎকার ছবিটার খোঁজ দেবার জন্য ধন্যবাদ। আজকেই খুঁজবো ছবিটা।

কীর্তিনাশা এর ছবি

দেখতে হবে হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নিবিড় এর ছবি

আপনার রিভিউ পড়ে সিনেমা নামিয়ে তো পারা যাচ্ছে না হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমার মনের কথা বলে ফেলছেন নিবিড়। হাসি

তবে পাঠক ভাই চালিয়ে যান। এই সুযোগে আমরা ভাল ভাল কিছু ছবি দেখি।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মূলত পাঠক এর ছবি

টু-ডু লিস্ট তৈরি করে রাখেন, তাই বলে হাল ছাড়লে হবে? হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

পরিচালক আসলে এখানে একটা খেলা খেলছেন, অনেকটা ঈশ্বরের মতোই নির্দয়ভাবে, চার জনকে একসাথে এনে দেখছেন কী হয়। এই মানুষগুলো সবাই আজকের মেকি পৃথিবীর, এরা ঠকায়, মিথ্যা বলে, আঘাত করে, আবার কাঁদে, ক্ষমা চায়, ফিরে আসে ফের দূরে চলে যাবে ব'লে।

'ক্লোসার' আমারও খুব পছন্দের একটা সিনেমা - এবং আমার পরিচিত বেশীরভাগেরই আবার নয়! তবে, এত চমৎকার ভাবে এর মূলকথা আমি বলতে পারতাম না!

হায়রে, love is never enough ! কী আর করা ......... হাসি

আচ্ছা, আপনি We Don't Live Here Anymore দেখেছেন?

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ স্নিগ্ধা। আপনার ভালো লেগেছে লেখা, জেনে আমারও ভালো লাগলো।

আপনার পরিচিতজন যাঁদের ভালো লাগেনি (আমার চেনার মধ্যেও এমন মানুষ আছেন) একটু খোঁচালে হয়তো দেখতে পাবেন তাঁদের মূল সমস্যা সিনেমাটার নৈতিক দিকটায়। এই মতটা একেবারে ফেলে দেওয়াও যায় না। ভালোবাসার ওপর কি জোর চলে? তাঁরা বলবেন, চলে। হয়তো চলে। কাউকে দেখে প্রেমে পড়লেই সেই পথে এগোতে হবে এমন কথা তো কিছু নেই। অ্যালিস (পোর্টম্যান) আর ড্যান (জুড ল)-এর একটা কথোপকথন আছে ছবিতে:

Dan: I fell in love with her, Alice!

Alice: Oh, as if you had no choice? There's a moment, there's always a moment, I can do this, I can give in to this, or I can resist it. I don't know when your moment was, but I bet you had one.

প্রেম হয়তো সত্যিই অনিবার্য নয়। তবে আমার যেটা মনে হয়, অপ্রেম কিন্তু অনেক ভয়ঙ্কর। মানুষ অন্য প্রেমে পা দেয় যতো না নতুন প্রেমের হাতছানিতে, তার চাইতে অনেক বেশি পুরোনো প্রেমের মৃত্যু হলে। কে জানে সত্যিটা কোথায়। কেউ-ই কি জানে?

We Don't Live Here Anymore দেখেছি, এতো ভালো লাগে নি, তবে সম্পর্কের ছবি যাঁরা দেখতে চান তাঁদের জন্য দ্রষ্টব্য। Closure-এ চরিত্রগুলো একেবারে পিছুটানহীন, এদের জীবনের ব্যাপারে আমরা খুব অল্পই জানি। এখানে কিন্তু সেরকম নয়, এরা রীতিমতো জীবনযুদ্ধে লড়ছে সারাক্ষণ। আপনার কেমন লেগেছে ঐ ছবিটা?

স্নিগ্ধা এর ছবি

খেয়াল করেছেন কি, সিনেমাটার নাম Closer, 'Closure' নয়? যেখানে পরেরটা হলেই বরং আপাতদৃষ্টিতে বেশী মানানসই হতো বলে মনে হয়? এইসব সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো খুব ভালো লেগেছিলো। আর, হ্যা - there's always a moment, what (and why) one does with that moment is a completely different story, though! এ ধরণের কথাগুলোও চমৎকার ভাবে এসেছে।

আমার নিজের We Don't Live Here Anymore বেশী ভালো লেগেছে এই সিনেমাটার চাইতে। এটার মেকিংটাতে যেমন একটু পো-মো ভাব আছে, ওটা হচ্ছে একদম সোজাসাপ্টা। মানুষ আসলেই কত অসহায় - নিজেরই কাছে/নিজেদের কাছে - খুব প্রাত্যহিকতার মধ্যে দিয়ে দেখানো হয়েছে (আমার মতে)।

মূলত পাঠক এর ছবি

ঠিক বলেছেন, একবার আমার মনে সন্দেহ অবধি এসেছিল যে নামটা Closure নয় তো? একজন রিভিউ'র শিরোনাম রেখেছেন Intimate Strangers, কি যে যথাযথ নাম কী বলব!

সত্যি কথা, অন্যটা (We Don't Live Here Anymore) অনেক বেশি আটপৌরে। আর এইটায় পরিচালক সব চরিত্রের খোসা ছুলে আঁশ বেছে সামনে রেখেছেন। এই ছবিটা আমার বেশি প্রিয় তার এটা একটা কারণ: Statistics-এর Multivariate Analysis-এ যেমন বাকি সব প্রভাব দূর ক'রে একটা একটা করে আসল জিনিস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় তেমনি। অন্য আরেক দিন হয়তো আটপৌরে গল্প মনকে বেশি টানবে।

পো-মো মানে পোস্ট মডার্ন তো? সাহিত্যের ছাত্র নই, সাবধানে জিজ্ঞেস করছি তাই, অন্য কিছু হলে হাসবেন না খবরদার হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

অনেকদিন পর, তাও আবার এই প্রসঙ্গে, multivariate analysis এর কথা পড়ে মজা লাগলো! হাসবার প্রশ্নই ওঠে না, সাহিত্যের ছাত্র আমিও নই, পোস্টমর্ডানিজম নিয়ে কিছু কিঞ্চিৎ টানাহ্যাচড়া করে থাকি সমাজবিজ্ঞানের বলে হাসি এই সিনেমাটার 'টোন' নিয়ে আমি কিন্তু আপনার সাথে এক্কেবারে দ্বিমত পোষণ করি! আপনার কাছে যেমন মনে হয়েছে এটাতে চরিত্রগুলোকে দয়াহীনভাবে নগ্ন করা হয়েছে, আমার ঠিক উল্টোটা মনে হয়েছে। পো-মো মনে হবার কারণই তাই। আমার মনে হয়েছে আমরা আসলে যে কখনই পারিপার্শ্বিকতা+/বাস্তবতা+/পারস্পরিকতা ছাড়িয়ে যেতে পারি না, আমরা বা আমাদের ইচ্ছেগুলোও যে অনেকখানি এগুলোরই ফলাফল - সে কথাটাই এই সিনেমাটাতে বেশ একটু পেঁচিয়ে টেচিয়ে বলা হয়েছে। কি জানি, জানি না ............

ভালো কথা, আপনি যেহেতু বেশ অনেক সিনেমা দেখেন বলে মনে হচ্ছে - Big Fish, Normal এগুলো কি দেখেছেন?

মূলত পাঠক এর ছবি

পো-মো'র যে আমি কিছুই জানি না, মুখ খুললেই ঢিল খাবো।

এই প্রসঙ্গে আরেকটা চিঠি লিখলাম অপ্রিয়কে, পড়তে পারেন।

যে ছবিদুটোর কথা বললেন, দেখি নি একটাও। দেখতে বলছেন?

অপ্রিয় এর ছবি

একটু খোঁচালে হয়তো দেখতে পাবেন তাঁদের মূল সমস্যা সিনেমাটার নৈতিক দিকটায়

সমস্যাটা কিন্তু নৈতিকতায় নয়। আমাদের মুখের ভাষার যেমন একটা ব্যাকরণ আছে, কনটেক্সট আছে, আবেগেরও তেমন কনটেক্সট আছে, ব্যাকরণ আছে। কথা বলার জন্য ব্যাকুল আমি দুরে চিত্কার চ্যাচাঁমেচি শুনে দৌড়ে যাই, গিয়ে দেখি যদি সে ব্যাকরণ জানে না, কনটেক্সট বুঝে না। আমি কাছে যাব ঠিকই কিন্তু ভাব বিনিময় করতে পারব না, আমার তৃষ্ণা মিটবে না। আবেগের চিত্কার শুনেও কিন্তু আমরা ভালবাসার তৃষ্ণার্ত যারা তারা ছুটে যাই, কিন্তু অপর পক্ষ (অথবা উভয়েই) যদি তার ব্যাকরণ না জানি, কনটেক্সট না বুঝি, ভালবাসা হবে না। ভালবাসা শুধু একটি আকর্ষন নয়, কোন বিশেষ অনুভুতি নয়, মুহুর্তের ম্যাজিক নয়। ভালবাসা একটি ‘কথোপকথন’, আবেগের কথোপকথন। আবেগের ব্যাকরণ না জানলে, তার কনটেক্সট না বুঝলে ভালবাসা হয় না। সে ছবিতেই হোক বা বাস্তবে। যে মানুয় ১২ বছরের মধ্যে কোন ভাষাই রপ্ত করেনি, সারা জীবনেই সে আর কোন ভাষা বলতে বা বুষতে পারে না। ভালবাসায়ও হয়ত তাই, টলষ্টয় বলেছিলেন যে কখনও ঈশ্বরকে (মিথ্যা ঈশ্বর হলেও) ভালবাসেনি সে কখনও কোন মানুষকে ভাল বাসতে পারে না।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার এই চিঠিটা আমার অনেক মনে ধরলো। সত্যিই অনেক কথোপকথন অসম্পূর্ণ থাকে ভাষার অমিলে। আর ভালোবাসা শিখতে হয় বই কি, শুধু তার ব্যাকরণই নয়, তার নিয়মকানুনও। আমি স্নিগ্ধাকে যা লিখেছি তাতে একটা "হয়তো" আছে। আমার চেনা অনেকের যা মত সেটা ওখানে লিখেছি, সেটা যে সব্বার কথা নয় সেটা বোঝাতেই "হয়তো"। অনেকে নৈতিকতার জন্যও অপছন্দ করবে এই ছবিটিকে। যেরকম আমার মনে হয় Bridges of Madison County প্রসঙ্গে। বাস্তব জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে নৈতিকতার কথা ভোলা যায় না, এবং যে কথা আপনি আগের চিঠিতে বলেছেন সে কথা খুবই প্রাসঙ্গিক থাকে। সেই জন্যই হয়তো এ ছবির পরিচালক চরিত্রগুলোকে ডালপালা ছঁেটে বাস্তবতার প্রায় বাইরে এনে ফেলেছেন। শেষের কবিতা-তেও সেই রকম অনেকটা, অমিত রায় যেন চরিত্রের খসড়া, রক্তমাংসের মানুষ নয়। এমন গল্প বা ছবিকে খানিকটা ক্লিনিক্যালি না দেখলে ভালো না লাগারই কথা।

মূলত পাঠক এর ছবি

নীড় সন্ধানী, কীর্তিনাশা ও নিবিড়কে ধন্যবাদ। আমার লেখা কাউকে ভালো ছবি দেখতে আগ্রহী করলে লেখা সার্থক।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

"ক্লোজার" সিনেমাটা আমার অসম্ভব প্রিয়। এ পর্যন্ত মনে হয় চার/পাঁচবার দেখেছি, এবং আরো যে দেখব, সেটা নিশ্চিত। কী দুর্দান্ত অভিনয় করেছে সবাই! আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র অ্যালিস (নাটালি পোর্টম্যান)। খারাপ লেগেছে ড্যান (জুড ল)-এর জন্য। সিনেমাটা নিয়ে বলার কিছু নেই, আপনি চমৎকারভাবে লিখেছেন প্রয়োজনীয় সবই।

আর ডেমিয়েন রাইসের "ব্লোয়ার'স ডটার" আমার খুবই পছন্দের একটা গান, প্রায়ই শুনি। বিশেষ করে "ডিড আই সে দ্যাট আই লোদ য়্যু? ডিড আই সে দ্যাট আই ওয়ান্ট টু লীভ ইট অল বিহাইন্ড?" শুনলে এখনো কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।

ভাই পাঠক, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন দারুণ সব সিনেমা নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য। আশা করি নিয়মিত এভাবে শেয়ার করে যাবেন আপনার ভাল লাগা সিনেমাগুলোর কথা।

অপ্রিয় এর ছবি

টলষ্টয় বলেছিলেন ভালবাসার জন্য দুটি জিনিষ না হলেই নয়, অন্তরে বিশ্বাস আর মনে সাহস। এ ছবির চরিত্রগুলোই চুড়ান্ত রকম নার্সিসিস্টিক। নার্সিসিস্টদের অন্তর মিথ্যায় ভরা আর তাদের নিজের আত্মর মুখোমুখি হবার সাহস একবোরেই নেই। আবেগ তাদের ক্যাওটিক। রূপালী পর্দার এই নার্সিসিস্টিক ড্যান্স দেখে কারু যদি আবেগে শুড়শুড়ি লাগে, কেউ যদি মজা পান তবে পয়সা উসুল, কিন্তু এদের কাছে ভালবাসার শিক্ষা নিতে গেছেন তো ডুবেছেন।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

মূলত পাঠক এর ছবি

তলস্তয় মহামতি, তাঁর আত্মা শান্তি পাক। আমাদের মতো মাঝারি মাপের মানুষদের সাথে তাঁর মাপ মিলবে না। এ ছবিটা ঠিক ঘটনাধর্মী নয়, এটা দ্বিচারিতা, ব্যভিচার আর অপ্রেমের সারাংশ। 'শেষের কবিতা' যেমন অনেকের বেশ ন্যাকা ন্যাকা লাগে (আমারও লাগে কিছুটা), এটা সেইরকম, র' অ্যালকোহলের মতো, বিশ্লেষণের স্বার্থেই বাহুল্যবর্জিত। কেওটিক লাগা খুব অস্বাভাবিক নয়।

চরিত্রেরা নার্সিসিজম-মুক্ত এমন কথা বলবো না, তবে ওটা খুব বেশি জেনেরালাইসড অবজারভেশন। আরো অনেক শেডস আছে, সেগুলো বাদ দিলে জাস্টিস হয় না। এমনিতেই তো পরিচালক তাদের খোসা-টোসা ফেলে টেবিলে তুলেছেন শবব্যবচ্ছেদের জন্য।

আবেগে সুড়সু িড় কিম্বা পয়সা উশুল, কোনো উদ্দেশ্যেই এই জাতীয় ছবি দেখার মানে হয় না, তার জন্য এর চাইতে ঢের বেশি লাগসই অনেক সিনেমা আছে, এবং সে সব সিনেমাও কিছু খারাপ জিনিস নয়। তবে নৈতিকতা বা ভালোবাসা শিক্ষার জায়গা এই সিনেমাটা নয়, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

অপ্রেম আধুনিক সমাজের এক চেনা ব্যাধি, কাটাছঁেড়া না করলে জানা যাবে কী ক'রে আসল সমস্যাটা কোথায়। আদর্শ প্রেম ভালো জিনিস, কিন্তু এর বৃত্তের বাইরে যারা আছে তাদের গল্পের কী হবে?

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও, অতন্দ্র প্রহরী। ভালো লাগার জিনিস আরো পাঁচজনের ভোগে লাগলে ভালো লাগা অনেক গুণ বেশি হয়, সেই আনন্দে/আশাতেই লেখা। যাঁরা পড়ছেন, তাঁরাও বলুন না প্রিয় সিনেমার নাম, আমার টু-সি লিস্টটাও লম্বা হোক।

Damien Rice-এর গান বিশেষ শুনি নি, এঁর অ্যালবাম মাত্র দুটি। তবে এই গানটা সত্যি সুন্দর, ন্যাকা প্রেম নয়, নির্মম প্রেমের।

অ্যালিসের (পোর্টম্যান) চরিত্রের শেষটা সিনেমায় নাটকের চাইতে একটু আলাদা, আর ব্যাপারটা বেশ ইনটেরেস্টিং। পড়তে পারেন এখানে (পাতার নীচের দিকে দেখুন), তবে কাহিনী ফাঁস হবে কিছুটা, সাবধান করে রাখলাম।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দেখা হয় নাই... কত কিছু যে দেখা হয় নাই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন ফাঁকিবাজি কমেন্ট দিলে চলবে না, আপনি হলেন বিশেষজ্ঞ মানুষ, দেখা না থাকলেই পার পাবেন না।

s-s এর ছবি

আমি একটা মজার কথা বলি, ন্যাটালি পোর্টম্যানের জন্য দু:খ ছাড়াও , জুলিয়া রবার্টস কি বলে, কি বলে , আমাকে বলেন কি বলে, ঐ অস হ্য ক্লাইভ ওয়েনটার সাথে থাকলো?? কি বলে?? হাসি আমি হলে তো লাথি দিয়ে চলে আসতাম আফটার হোয়াট হি সেইড টু জুলিয়া! আমি ক্লাইভ ওয়েনকে এই সিনেমাটা দেখার পর থেকেই স হ্য করতে পারিনা , এমনকি খুব সম্প্রতি ডুপ্লিসিটিতেও ওদের দু'জনকে একসাথে দেখলাম, তারপর দ্য ইন্টারন্যাশনালে দেখলাম ও ই ব্যাটাকে তারপর দেখলাম চিল্ডরেন অফ মেন। সব গুলোতেই সে খুব ইনটেন্স, বাট ক্লোসার এর জন্যই আমি তাকে স হ্য করতে পারিনা। আই হেইট হিম উইথ এ প্যাশন হাসি :)। পুরুষ মানুষ যে কি দুনিয়ার বদ হয়, এইটা ভাই আমি ক্লোসার দেখেই হাড়ে হাড়ে টের পেলাম, সেটা আপনি আমাকে ফিমেল শভেনিস্ট বা যাই বলুন না কেন! আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি ছবিটা দেখে। ইচ্ছে করছিলো ওয়েনকে এক থাপ্পড় তারপর জুড ল কে আরেক থাবড় দিই!
সত্যিই , আই ফিল কোয়াইট স্ট্রংলি আ্যবাউট দিস ফিল্ম , তাই মনে হচ্ছে এতদিন পর লিখতে বসেও। ওদেরকে এখুনি চড়াতে ইচ্ছে করছে:) হাসি :শয়তানী হাসি

আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??

মূলত পাঠক এর ছবি

এরেই কয় প্যাশন (মানে যেইডা আপনে দেখাইলেন) হাসি

তয় এই সিনেমায় হগ্গলেই অদ্ভুত, জুলিয়া আর নাটালিও বদপ্রকৃতির, কাজেই zারে খুশি থাবড়া মারেন, আমার সাপোর্ট রইল।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ক্লোসার সিনেমাটা আমার দেখা ছিল না। আপনার রিভিউ পড়ার পর দেখলাম। দেখে ভাল লাগল। রিভিউ ভাল লিখছেন।

এই সিনেমা পোমো না এটা নিশ্চিত। পোমোতে সিনেমা দেখতে গেলে মনে হবে নাটক বা থিয়েটার দেখছেন, কবিতা পড়লে মনে হবে গল্প পড়ছেন, উপন্যাস পড়লে মনেহৈতারে পুঁথি পড়তেছেন। চোখ টিপি এটা দেখে সিনেমাই মনে হলো। এই গোত্রের আরো অজস্র সিনেমা আছে। সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে। সেক্স ভাইটাল জিনিস। এসব ক্যাঁচাল লাগলে ভালগার কথা বের হতে থাকে। ছেলেরাই বেশি বলে ফেলে। মেয়েরা ছ্যাঁকা দিলে মরদেরা ভাবে বউ ওই জায়গায় শান্তি পায় না বলে ভাগছে। এটা এক মাপে মেল শোভিনিজম্। সম্পর্ক নিয়ে সাই মিং লিয়ং-য়ের কাজ নিখুঁত। পিটার গ্রীনএওয়ের দা কুক, দা থিফ, হিজ ওয়াইফ এণ্ড হার লাভার দেখতে পারেন।

একটা ভাল পোমো মুভির নাম বলি। বিয়ীং জন মেলকোভিচ্।

ইদানীং সিনেমা নিয়ে লেখেন না কেনু?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।