সোজা বাংলায়

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৬/২০১০ - ৪:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নজরুল ইসলামের আয়োজনে বাংলাভাষা নিয়ে ই-বইয়ের জন্য লিখেছিলাম এই লেখাটা। তাড়াহুড়ো করে ডেডলাইনের মধ্যে শেষ করে জানলাম সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে আর কাটছাঁট করা হয়নি বিশেষ। পরে বইটা যখন বেরোলো না যথেষ্ট সংখ্যক লেখার অভাবে, তখন একে ভাঁড়ার থেকে বের করে আনা যাক।

একান্নবর্তী না হলেও কলকাতায় আমাদের বাড়িতে একপাল লোক এক ছাদের নিচে একসাথে থাকে। বাংলাভাষা নিয়ে লিখতে বসে তাদের কথা শোনাই আজ। কেন? আরে এরা সক্কলে বাংলায় কথা বলে তো, আর কী কারণ চাই? এতো ডিমান্ডিং পাঠকদের নিয়ে তো ভারি মুশকিল হলো দেখি!

তো যে কথা বলছিলাম। বহু যুগ আগে একদা ঠাকুদ্দা ঠাকুমা যখন এ পারে পাড়ি দেন তখন বাচ্চাদের কী খাওয়া জুটবে সেই চিন্তায় একখানা দুধেল গরুও নিয়ে আসেন সাথে করে। ভাবুন অবস্থাটা! ঘরদোর হাতছাড়া, টাকাপয়সার খোঁজ নেই, কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে কোথায় গিয়ে উঠবে তার নেই ঠিক, এবং ঠাকুদ্দার ট্রান্সফারেবল স্কিলসেটের অভাবে এ দেশে এসে কী কাজ জুটবে সে নিয়েও একটা প্রমাণ সাইজের প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে, তো কোথায় চাট্টি গয়নাগাঁটি নিয়ে ট্রাভেল-লাইট করবে, তা না! সে যাক, বেবিফুডের ব্যবস্থা তো হলো, কিন্তু সমস্যার অন্ত তাতে হয় না। এসে পড়লেই তো গল্প শেষ নয়, মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা কী হবে? এপারে যে সবাই অন্য ভাষায় কথা বলে! বিক্রমপুরের বাংলা হয়তো চিটাগাঙের তুলনায় বেশি কাছাকাছি কলকাত্তাই বাংলার হিসেবে, তা বলে এক রকম তো নয়। সুনীল গাঙ্গুলি লিখেছেন, মার্কিন দেশে নতুন আসা দেশিদের চেহারায় নাকি একটা তেল চুকচুক হেঁহেঁ গোছের ভাব থাকে। যেটা তিনি লেখেন নি, বা নিজেও নতুন ছিলেন বলে হয়তো দেখেনই নি, তা হলো এই সব সূক্ষ্ণ লক্ষণবিচার লাগে না, এক নজর দেখলেই বোঝা যায় কে সবে মাত্র গোঁত্তা মেরে ল্যান্ড করেছে। বাবা জেঠাদের ক্ষেত্রে তার অন্যথা হয়েছিলো বলে তো মনে হয় না। হয়তো সে কারণেই যতো উদ্বাস্তু বাঙাল সবাই জোট বেঁধে থাকতো একেকটা এলাকায়, নিজের ভাষায় যেখানে কথা বলা যায়। তৎকালীন বালিগঞ্জীয় সংস্কৃতিবান বাংলা সাহিত্যে কেয়াতলা রোড মার্কা আপ্লুতভাব থাকলেও এই সব কলোনি নিয়ে লিখতে উন্নাসিক সাহিত্যিকরা আগ্রহ দেখান নি গোড়ার দিকে। পরে অবশ্য সমরেশ বসু কি সান্যালসাহেব লিখেছেন অনেক ক্লাসিক, তাছাড়া সিনেমাতেও এসেছে উদয়ের পথে কিংবা ঋত্বিকের মহাকাব্যগুলো (যে এইখানে এপিকের ডেফিনিশান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভুল ধরবে তার কপালে দুঃখ আছে, বাঙালের রাগ তো চেনো না!)।

সে ভদ্রলোক, মানে আমার ঠাকুদ্দা, ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মালেও ব্যবসা জিনিসটা ভালো বুঝতেন না, আর স্কিলসেটের কথা তো বললামই। ফলে ভাত জোগাড়ের সংগ্রামটা আরো কঠিন হয়ে উঠলো। কী ভাবে কী হইলো তার হিসেব মুজতবা আলীর মতোই আমিও জানি না, তবে গ্রাসাচ্ছাদনের বন্দোবস্ত হতো কোনো ভাবে। মূল্যস্ফীতির কথা বলতে গিয়ে এমন এক দিনের গল্প জ্যাঠামশায় বলেছিলেন একবার, যেদিন ভাত জুটবে কোথা থেকে জানা নেই। পথে কুড়িয়ে পাওয়া গেলো এক টাকা, তাই দিয়ে বাজার এলো। আর আজকাল একশো টাকা লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক, নিজেরা বিরাট বিদ্বান না হলেও এই কঠিন অবস্থার মধ্যে ঠাকুদ্দা ঠাকুমা ছেলেমেয়েদের কলেজে না পাঠিয়ে থামেন নি, এই কৃতিত্বটা তাঁদের অবশ্যই প্রাপ্য। এবং তার সুফল পেয়েছি আমরা, পরের প্রজন্ম।

আমাদের কৈশোরে, বোধ হয় বাড়িতে ঐ উন্নাসিক সংস্কৃতির অনুপস্থিতির কারণেই, কী বই পড়ছি তা নিয়ে বড়োদের বিশেষ বাছাবাছি ছিলো না। পড়ার বইয়ের বাইরে বইপত্তর পড়া জরুরী এইটে মানা হতো, এবং সে সব বই নেহাত বড়োদের (মানে এ-মার্কা) না হলেই হলো। কমিক্স থেকে শরৎচন্দ্র, সব চলবে। সবচেয়ে প্রিয় ছিলো ছবিতে গল্প, সঙ্গত কারণেই। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ইন্দ্রজাল কমিক্সের কথা লেখা থাকবে না, কিন্তু আমাদের শৈশব কৈশোরের গল্পে তাদের বিশাল ভূমিকা। তবে বইয়ের ব্যাপারে আমরা ছিলাম সর্বভূক, যা পেতাম সব পড়তাম। শারদীয়া কাভার-টু-কাভার, আক্ষরিক অর্থেই পড়া হয়ে যেতো। বাড়িতে বঙ্কিমসমগ্র ছিলো, ঝাড়পিটের গল্প বলেই বোধ হয় রাজসিংহ ভয়ানক ভালো লেগেছিলো, আর ইচ্ছাপূরণের গল্প হিসেবে দেবী চৌধুরাণী। নিজেদের বই তো সব পড়ে শেষ, তখন বই এক্সচেঞ্জ হতো বন্ধুদের সাথে। পুরোপুরি পাঠক থেকে যৎসামান্য লেখকে প্রমোশনটা কীভাবে হলো সেটা ভাবলে মনে পড়ে স্কুলের কথা। সেখানে এক সহপাঠী ছিলো প্রসেনজিত নামে, সে ছোকরা দেখতে শুনতে উচ্চাঙ্গের, আমাদের মতো গোবেচারা কিসিমের নয়, ভয়ানক সুন্দর হাতের লেখা তার, এমনকী তার ইস্তিরি করা জামার পাট অবধি ভাঙতো না সারা দিনের হুল্লোড়ে। এখানে শেষ হলেও চলতো তার গুণের ফিরিস্তি, কিন্তু সে আবার গল্পও লিখতো, তাও আবার গোয়েন্দা গল্প! ভয়ানক সুন্দর হাতের লেখায় ডায়েরিতে লিখে এনে পড়িয়েছিলো, ঠাশ দ্রুম অজ্ঞান অবস্থা আমার তখন। অতএব আমাকেও লিখতে হলো গোয়েন্দা কিছু এক দা'র রহস্য অ্যাডভেঞ্চার, "হাত ও পায়ের ছাপ"। সূচনার বেশি এগোয় নি সে গল্প, অসূয়া যে সৃজনশীলতার জননী নন তা তখন জানা ছিলো না।

এই সময়েই কোনো এক পুজোয় সখ হলো আমাদের, শারদীয়া সাহিত্যসংখ্যা বের করার। বাড়িতেই বিশাল পাঠককুল, পৃষ্ঠপোষকের অভাব নেই। দেয়ালপত্রিকা বের করা হয়ে গেছে আগেই, তাতে সবচেয়ে বড়ো দাদা নেতাজির শালপরিহিত ছবিটা এঁকেছিলো এইটা কেবল মনে আছে। শারদীয়ার মলাট আঁকা আর লেখার দায়িত্ব আমার, যদিও হস্তলেখা তখন কাগের ঠ্যাং না হলেও বগের তো ছিলো বটেই। হয়তো তখন থেকেই মনে হতো হাতের লেখাটা ভালো করা দরকারি। পত্রিকা হতো মিনি সাইজের, পিসতুতো দাদা পুজোয় আসার ফলে লেখক আরো বেড়ে যেতো। তাতে গল্প কবিতা কমিক্স সব ছিলো, যদিও গল্প সবই ধারাবাহিক যার পরের পর্বে কী হলো সে আর জানা যেতো না।

বোধ হয় ক্লাস এইট নাইন নাগাদ জানতে পারলাম পাড়ার বন্ধু দেবাশিস কবিতা লেখে। তার বাড়ি ঘন ঘন যাতায়াত শুরু হলো। কবিতাগুলো আমার তেমন পছন্দ হতো না, কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন চালানো দাদাদের সাথে তার ওঠাবসা ব্যাপারটা নিয়ে মুগ্ধতাটা ছিলো। রুকুসুকু ইতি পলাশ এই সব লিখে আমাদের ছোটোবেলার হিরো সঞ্জীব চ্যাটার্জি আমাদের এলাকার বাসিন্দা, দেবাশিস তাঁর বাড়ি অবধি চিনতো। তার উপর তার হাতের লেখা ছিলো চমৎকার। নিজের দুখিরাম হস্তাক্ষরের জন্য দুঃখ হতো, ফলে তার লেখা দেখে দেখে স, ম ইত্যাদি অক্ষর শুধরে নেওয়ার চেষ্টাও করেছি। শেষমেশ হাতের লেখার অনেক উন্নতি হয়েছিলো, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন নিজের পেশা নিয়ে উন্নতি করার উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় সে জাতীয় চেষ্টা বিশেষ দেওয়া হয় না। যতোই হোক, নেশার কাছে পেশা গো-হারান হারবে এ আর আশ্চর্য কী।

এই সময় আমার একটা গোপন ভালোবাসা গোছের গজিয়েছিলো, পুরোপুরি এক তরফা। সেটা গোপন অতএব সে নিয়ে কারো সাথে চাট্টি সুখদুঃখের কথা বলবো সে উপায় নেই। অতএব কবিতা। কবিতার রহস্যময়তা ও সাঙ্কেতিক ভাষা নিয়ে অনেক আলোচনা শোনা যায়। এ বিষয়ে আমার হাতেকলমে শিক্ষা হয়েছিলো তখনই। এমন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখতাম যে পড়ে বোঝার উপায় ছিলো না যে বিষয়টা কী, এক নবযুবকের প্রেম, না ওয়ার্ল্ড পীস। এদিকে যাকে বলে রেজিং হর্মোনস, তার প্রাদুর্ভাবও ঘটে গেছে, কবিতা তা থেকে মুক্ত থাকে কীভাবে। অথচ খোলাখুলি তা নিয়ে লেখা যায় না কি, ছিঃ! অতএব আবার সঙ্কেতভাষা, সাথে যোগ দিলো দাঁতভাঙা শব্দেরা, বাংলা অভিধান খুলে লিখে ফেললাম একখানা আস্ত কবিতা, যার প্রতিটি পংক্তিতে এরকম শব্দ যে স্বয়ং পরশুরামও চলন্তিকা না খুলে পড়তে বসলে ফেল মারবেন। একটা লাইন মনে আছে কেবল, অনিকেত এ জীবনে প্রগ্রাহ কোথায়! ঘোড়ার লাগাম কারে কয় জানেন নি?

যাক, সে সময় দিস্তে দিস্তে কবিতা লিখলেও ছাপানোর সাহস হয় নি কখনো। লেখা যাঁদের ছাপা হয় তাঁরা সোজা প্লুটো থেকে এসেছেন এমনটাই ভাবতাম, ছাপার অক্ষরের এমনই মাহাত্ম্য। এমনকী স্কুল ম্যাগাজিনেও দিতাম না সাহস করে। ক্লাসে মাইকেলভক্ত এক ছোকরা ছিলো, তার খটোমটো ইংরিজিতে ভাবগম্ভীর লেখা দেখে সাহস না হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের সিলেবাসে বলা থাকতো কিছু রচনার নাম, পরীক্ষার জন্য। বোধ হয় ক্লাস এইটের কথা সেটা, সে বছর ছিলো ‘কলকাতার বর্ষা’। সাধারণতঃ খুবই বিরক্তিকর রচনা থাকতো সিলেবাসে, ‘ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ মার্কা, সেখানে এমন একখানা রচনা কীভাবে ঢুকে গিয়েছিলো সে এক রহস্য। কিন্তু আমি উৎসাহ পেয়েছিলাম প্রবল। পুরোনো বইপত্র ঘেঁটে একখানা রচনা নামিয়েও ছিলাম, যাতে ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যাওয়া শালপাতা আর উপচিয়মান নালার জলে ভেসে যাওয়া মাটির ভাঁড় ছিলো, আর ছিলো বেবি ট্যাক্সি। এটা কী জিনিস জানতাম না, পড়ে খাসা লেগেছিলো তো দিয়েছিলাম ঢুকিয়ে। যেখানে পড়েছিলাম সেটা ছিলো আমার পিসিদের গ্রাজুয়েশানের প্রবন্ধের বই 'একের ভিতর দুই', মলাট ছেঁড়া থাকায় বুঝতে পারি নি, না হলে কি আর সাহস পেতাম? সে রচনা পড়ে শেখরবাবু একেবারে গদগদ, আমাকে ক্লাসের সামনে পরীক্ষার খাতা থেকে পড়ে শোনাতে হলো। তারপরেই আদেশ হলো ম্যাগাজিনে লেখার। গর্বে ছাতি যে সত্যি সত্যি ফোলে সেই দিন বুঝলাম।

আমাদের বাড়িতে ও চোদ্দ গুষ্ঠিতে কেউ ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে নি। ছোটোবেলায় একটা চেষ্টা করেছিলো গুরুজনেরা, আমার অনিচ্ছাতেই সেটা ভেস্তে যায়। কিন্তু আমার ছোটো তুতো বোন এ বিষয়ে খাতা খোলে। ফলে আমার নিচে যে দু জন, মানে যাদের উপর আমার সর্দারি ফলানোর সুযোগ ছিলো তারা দু রকম হয়ে বেড়ে ওঠে। ছোটো ভাই ভাত খেতে খেতেও গল্পের বই ছাড়ে না, বাংলা বই অবশ্যই, সেটা রাজশেখর বসুর মহাভারত হবার প্রবল সম্ভাবনা। ওদিকে বোন পড়ে সিডনি শেলডন। আমি ও বিষয়ে গোমূর্খ, সিডনি যে পুরুষ তাই জানতাম না। বোন অনেক জোর করে ভগমানের হাবাকল পড়িয়েছিলো, পড়েটড়ে তো আমি ফায়ার, পুঁচকে মেয়ে এই সব অসোব্বো জিনিস পড়বি? কিন্তু ওরও আছে পিয়ার প্রেশার, না পড়লে মান থাকে না। কিন্তু বাংলা সে কিছুতেই পড়তে চায় না, ভীষণ বোরিং লাগে বোধ হয়। ভেবে দেখলাম, ঐ সব পড়ে উচ্ছন্নে তো যাবেই, ঠেকানো তো আর যাবে না, লগে লগে বাংলাটা না হয় একটু ঝালমুড়ি গোছের কিছুই পড়ুক। অতএব শারদীয়া খুলে সুনীল গাঙ্গুলির 'রাকা' নামের একটা উপন্যাস ধরিয়ে দিলাম তাকে। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের অলঙ্করণে এমনিতেই পড়ার ইচ্ছে হওয়া উচিত এমন সুন্দর সে সব ছবি। কিন্তু আসল জিনিস হলো এর বিষয়, একটি কিশোরোত্তীর্ণার বাবার প্রবাসী বন্ধুর সাথে সম্পর্ক নিয়ে। যদিও গর্হিত এলাকায় প্রবেশের আগেই লেখক থেমে যান তবু ঐ টুকুতেও কাজ হলো, তার পর থেকে সে বাংলা বইটই পড়ার নামে দৌড় দিতো না আর। বাংলা সাহিত্যের দাওয়ায় একজন অনিয়মিত পাঠক ধরে আনার কৃতিত্বটা এইখানে চেয়ে নিলাম।

আমাদের পরিবারে লোকজন বেড়াতে খুব ভালোবাসলেও বিদেশে এমনকী ভিনরাজ্যে থাকতে আদৌ পছন্দ করে না। আমার বাবা বদলির আদেশ ঠেকাতে আদালতে অবধি গিয়েছিলেন, এখন ভাবলে খুবই অবাক লাগে। তাঁর কুপুত্র এখন মার্কিন মুলুকে বসে ল্যাজ নাড়ে অবধি ইংরিজি ভাষায়, ব্যাপারটা মর্মন্তুদ। আর আছে সেই বোন। কলকাতায় তার খুব ভালো কোনোকালেই লাগতো না, তাকে কেউ বাঙালি বলে না ভাবলে মনে মনে খুশিও হতো বোধ হয়। সারা জীবন কলকাতায় কাটিয়ে এখন সে মুম্বাইতে চাকরি করে অবাঙালি পতিদেব সমেত, সেই মুম্বাই যেখানে তার প্রায়-ভগবান হিরো শারুখ্খানও থাকে। ভেবেছিলাম স্বর্গে থাকার অনুভূতিটা কেমন জেনে নেবো ওর কাছে। কী আশ্চর্য, ইদানিং যেন তার সুরটা কেমন অন্যরকম লাগে! সে দিন বলেই ফেললো, কলকাতাকে সে আজকাল বড়োই মিস করে। ভাষার টানেই এমন হয় তা বলি না, পরিবার পরিবেশ সব মিলেই এই মন খারাপটা জন্মায় তাও মানি। তবে বাংলায় চাট্টি আড্ডা মারলে পেটের ভাত যে একটু ভালো হজম হয় সেইটা খাঁটি কথা। সাধে কি আর বলে ভেতো বাঙালি!


মন্তব্য

তুলিরেখা এর ছবি

ওরে বাবা!!!
অনিকেত এ জীবনে প্রগ্রাহ কোথায়!!!! হো হো হো
তবু যে গ্রাহ লেখেন নি এই তো অনেক!

এ লাইন পড়ে সুকুমার মনে পড়লো, "মারতে চাও তো ডাকাও নাকো জল্লাদ/ পদ্য শুনে মরতে হবে এ আবার কোন্‌ আহ্লাদ!"

লেখা চমৎকার!

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

হা হা, এই লাইনটা তো জানি না, কোথায় পেলেন?

দুর্দান্ত এর ছবি

নতুন করে আপনার লেখার প্রশংশা আর নাই করলাম। শুধু এটা বলি, আমাদের ঠাকুরদাদের গব্যপ্রীতিটা কমন পড়ে গেল।
আমার জন্মের সময় আমার পিতামহ গ্রামেরবাড়িতে। প্রথম নাতির জন্য ইস্পিশিয়াল উপহার দরকার। তিনি কি করলেন? খবর পেয়েই হাটে গিয়ে কিনে আনলেন মীরকদমের ধবধবে সাদা এক বকনা বাছুর। সেই বাছুর থুত্থুড়ি হয়ে গত হয়েছে অনেক আগেই, তবে তার কিছু হোলস্টেন আর জার্সি মিশ্র নাতি পুতিরা আছে এখনো।

মূলত পাঠক এর ছবি

গরুর বংশধারা প্রবাহিত হতে আমিও দেখেছি বালককালে। ছোটোবেলার সাদাকালো ছবিতে সে বংশের কয়েকজনকে দেখা যায়।

লেখার প্রশংসায় খুবই খুশি হলাম।

সুজন চৌধুরী এর ছবি
সুজন চৌধুরী এর ছবি
মূলত পাঠক এর ছবি

গান = বন্দুক? হাসি

বাল্যকালে শ্রোতা ছিলাম, রেডিওর স্মৃতি লিখতে পারি অবশ্যই।

অনিকেত এর ছবি

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ইন্দ্রজাল কমিক্সের কথা লেখা থাকবে না, কিন্তু আমাদের শৈশব কৈশোরের গল্পে তাদের বিশাল ভূমিকা।

এমন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখতাম যে পড়ে বোঝার উপায় ছিলো না যে বিষয়টা কী, এক নবযুবকের প্রেম, না ওয়ার্ল্ড পীস।

ভাষার টানেই এমন হয় তা বলি না, পরিবার পরিবেশ সব মিলেই এই মন খারাপটা জন্মায় তাও মানি।

দারুণ লাগল পাঠু'দা। অরণ্যদেব তো ইন্দ্রজাল কমিক্সেরই ছিল তাই না?
নারায়ন দেবনাথের নন্টে-ফন্টে--সেইটা মনে হয় ইন্দ্রজালের নয়।

আর বড় যে আমার নাম নিয়ে লিখে ফেললেন? কপিরাইট নাই বলে কি কপি-লেফটও নাই???

লেখা যথারীতি ভাল হয়েছে। অনেক দিন ধরে অনিয়মিত ছিলেন। যুদ্ধের কারণে আর যাই হোক কিছু নিয়মিত হয়েছেন, সেইটা এই যুদ্ধের ময়দান থেকে উঠে আসা একমাত্র সুফল--
তারা-টারা দিলে 'তারা' আবার মনে কিছু করতে পারেন তাই দিলাম না।
এই নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করতে চাইলে ব্যক্তিগত ইমেইলে যোগাযোগ করেন---হে হে হে ---

এখানে 'অন্ধলোকের কড়ানাড়ার' স্কোপ নেই বলেই মনে হচ্ছে---এইরে, দিলাম নাকি আরেক যুদ্ধ লাগিয়ে?

হা হা হা ---

দাঁড়ান, এইটা নিয়েও আপনি আমাকে ব্যক্তিগত ঠিকানায় ইমেইল কইরেন, আমরা এইটা নিয়ে বিষদ আলাপ করব--
হা হা হা হা ----

মামুন হক এর ছবি

অনিকেতদা,
যদিও আমি সব ধরনের বিতর্ক থেকে টায়ার্ডলি রিটায়ার্ড তবুও এ কথা বলে পারছি না যে, তোমার মন্তব্যের শেষের অংশটুকু আমার কাছে বিপজ্জনক ত্যানা প্যাচানী এবং উস্কানীমূলক বলে মনে হয়েছে। কোনো দরকার ছিল না ভাই। দয়া করে এসব নিয়ে আর কথা বাড়াবে না। আমি মুখ বন্ধ রাখলেও বিবেক তো বন্ধক রাখিনি কোথাও। তাই বাধ্য হয়ে কথাগুলো বললাম। প্লিজ কিছু মনে করবে না।

সাবিহ ওমর (অফলাইন) এর ছবি

নন্টে-ফন্টে বেরুত বোধহয় সূচিপত্র থেকে...

মূলত পাঠক এর ছবি

উত্তপ্ত এই পরিবেশে ঐ প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। অরণ্যদেব ওঁদেরই ছিলো, আর ছিলো ম্যানড্রেক, বাহাদুর, ফ্ল্যাশ গর্ডন। পরে এক ঝাঁক নতুন লোক এসেছিলেন: বাজ সয়ার, রিপ কার্বি, লেফটেন্যান্ট ড্রেক, ফিল করিগ্যান, গার্থ।

নন্টে ফন্টে এঁদের নয়, বোধ হয় নিউ বেঙ্গল প্রেস থেকে বেরোতো।

ভালো থাকুন।

অনিকেত এর ছবি

তোমার কথা রাখছি, মামুন ভাই।
আমার উপরের মন্তব্যটা পাঠু'দা কে অনুরোধ করছি মুছে দেবার জন্য।
অজস্র বিতন্ডা হয়েছে, আমি চাইছি না এইটা আরো উস্কে দিক

আমি মন্তব্য মোছার চেষ্টা করেছি, পারিনি
মডুদেরও অনুরোধ জানালাম কমেন্টটা মুছে দিতে

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

গুরু গুরু

[কেউ কি জানেন যে আমি মূলত পাঠকের অন্ধ ভক্ত!]
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মূলত পাঠক এর ছবি

অন্ধ না হলে কেউ এই লেখার ভক্ত হয়! হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

ধিক্ নজু ভাইকে ! আর কোন লেখা না পেলেও এরকম একটা লেখা পেলেই তো ই-বুক উৎড়ে যায় !

দুর্দান্ত হয়েছে রাজর্ষি দা ! এ মুহূর্তে আপনি কিন্তু আমার তীব্র হিংসায় জর্জরিত হচ্ছেন ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, রণদীপম স্যার, এমন বাড়িয়ে বলা প্রশংসার জন্য। হাসি

সংসপ্তক এর ছবি

মূলত পাঠক লিখেছেন:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ইন্দ্রজাল কমিক্সের কথা লেখা থাকবে না, কিন্তু আমাদের শৈশব কৈশোরের গল্পে তাদের বিশাল ভূমিকা।

আবার বলে! নানার বাসার পুরান মাল-সামানের ভিতরে একবারে খুঁজে পেয়েছিলাম বাঁধাই করা এক গাদা ইন্দ্রজাল, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল, দেব সাহিত্য কুটির আর কিশোর ভারতী......এত্তবড় গুপ্তধন সারা জীবনে আর পাই নাই।

মূলত পাঠক লিখেছেন:

তবে বাংলায় চাট্টি আড্ডা মারলে পেটের ভাত যে একটু ভালো হজম হয় সেইটা খাঁটি কথা।

এই এক কারনে এখনো কালাপানি পার দিতে ইচ্ছা করে না।

পোস্টে ভার্চুয়াল পাঁচতারা।

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

তাঁর কুপুত্র এখন মার্কিন মুলুকে বসে ল্যাজ নাড়ে অবধি ইংরিজি ভাষায়, ব্যাপারটা মর্মন্তুদ।

এই লাইনটা চমৎকার দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

জানি তো কেন আপনার ভালো লেগেছে। ওৎ পেতে থাকেন এই সব কমেন্টের জন্য। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার

________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ।

ময়না মিয়া [অতিথি] এর ছবি

মাটির টান....

আপনার লেখায় মাটির টান ফুটে উঠেছে চমৎকার। তড়িঘড়ি ইতি টানতে চেয়েছেন বাঙালীকে ভেতো বদনাম দিয়ে। এ জায়গাটায় খটকা লাগলো এই ভেবে- আপনিও শেষ পর্যন্ত কলকাতার বাবু কালচারে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশে ভাত যারা ফলায় তারা ভেতোই বটে। কিন্তু যারা চাষী অর্থনীতির ওপর বেঁচে থাকে, ভাতের ওপর নির্ভরতা তাদের নেই। আমার মনে হয় ঢাকায় ফাস্ট ফুডের যত দোকান আছে তার অর্ধেকটাও কলকাতায় নেই। তথ্যটি এ কারনে উল্লেখ করলাম যে, নগর সংস্কৃতি ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে চিরায়ত স্বত্ত্বাকে।
কলকাতায় আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তিনবার, নব্বই দশকে। তিনবারই নতুন-নতুন বিষয় আবিস্কার করেছি। আর মাটির টান যে মানুষের মধ্যে কত প্রবল, তা টের পেয়েছি কলেজ রোডে এক নারায়ণগঞ্জীর বই-এর দোকানে গিয়ে।
কলকাতার মানুষের আতিথেয়তা সম্পর্কে বাংলাদেশে প্রচলিত ধারনাগুলো যে কতটা অসত্য তার প্রমাণ পেয়েছিলাম তিনবারই। মানুষের এই আতিথেয়তা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে নিশ্চয় আরো প্রবল ছিল। কলকাতার 'পূর্ববঙ্গীয়দের' নষ্টালজিয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, একটি স্বতন্ত্র স্বত্বা বোধকরি কলকাতার নগরজীবনে এখনো প্রবাহমান। কিন্তু পূর্ববঙ্গীয়রা কলকাতাকে কখনো নিজের মনে করেনি রাজনৈতিক কারনে। কারন পূবংবঙ্গীয়রা ছিল চাষা-ভূষার দল, আর কলকাতার আদিবাসীরা ছিল জমিদার-ভূস্বামীর দল। সে জন্য ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় পাড়ি জমালেও পূর্ববঙ্গীয়দের থাকতে হয়েছে পৃথক বস্তিতে, এটাই ছিল বাস্তবতা। লেখকের লেখায় এ সত্যটুকু ফুটে ওঠার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। ভাল থাকুন, আরো বেশি বেশি করে লিখুন।

zic2010@yahoo.com

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনার তত্ত্বে তথ্যগত ত্রুটি রয়েছে, "পূবংবঙ্গীয়রা ছিল চাষা-ভূষার দল, আর কলকাতার আদিবাসীরা ছিল জমিদার-ভূস্বামীর দল": কৃষক ভূস্বামী দু পাশেই ছিলো। দেশভাগের আগে কি আর চাষাবাদ হতো না পশ্চিম দিকে?

কলকাতার বাবু কালচার জিনিসটা আজকের যুগে আর আছে কি? ওতে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগও নেই। তাছাড়া বিদেশে বসে কোনো রকম প্রচলিত বাবুগিরির প্রশ্ন থাকে না, চান আর নাই চান।

লেখা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আশা করি আমার ভুল ধরাতে কিছু মনে করবেন না।

তাসনীম এর ছবি

ইন্দ্রজাল কমিক্স...আহা...প্রথম পড়া ইন্দ্রজালের কমিক বইটার নামও মনে আছে "লাল ইটের বাড়ি"। স্মৃতিশক্তি কম হলে মনে হয় স্মৃতিপীড়াও কম হয়। খুব ভালো লেগেছে লেখাটা...স্মৃতিময় লেখা পড়তে দারুণ লাগে আজকাল। কেমন যেন নিজের শৈশবের গন্ধই পেলাম।

আবার বাবা চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ৪০ এর দশকে...পৈত্রিক বাড়ি থেকে নিজের করা বাড়ি মাত্র ৫০ মাইল দূরে। সেটা নিয়ে সারাজীবন ধরে কত হাহাকার করেছেন, কবে যে উনি রিটায়ার করে "বাড়ি ফিরবেন"।

শৈশবে বাড়িটা মনে হয় আর বাসস্থান থাকেনা একটা সময়ের পরে, স্মৃতিময় একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। ৫০ মাইল দূরেই হোক আর ১৫০০০ মাইল দূরেই হোক, সেখানে ফেরা বড় দুষ্কর।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মূলত পাঠক এর ছবি

খাঁটি কথা, বাল্যকালের বাড়িতে আর ফেরা যায় না, ঐ সময়টা পার হয়ে গেছে, মানুষেরা গেছে বদলে। স্মৃতিমেদুর হওয়ার বেশি কিছু করার নেই।

লাল ইঁটের বাড়ির ইংরেজিটার পিডিএফ নেটে পেয়ে যাবেন, আমার কাছে ছিলো একদা। লাগলে খুঁজে দেখতে পারি।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সামনে ঋত্বিকের মহাকাব্য নিয়ে লিখলে ভালো লাগবে। ঋত্বিকের 'দলিল' বলে একটা নাটক আছে পোস্টটা পড়তে পড়তেই সম্প্রতি আবার পড়া ওই নাটকটার কথা মনে পড়ে গেল।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মূলত পাঠক এর ছবি

ঋত্বিক ঘটক বা তাঁর কাজ নিয়ে লেখার যোগ্যতা নেই, লিখতে বসলে সেটা বাড়াবাড়ি রকমের দুঃসাহস হয়ে যাবে।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমি মুগ্ধ পাঠক

...........................
Every Picture Tells a Story

মূলত পাঠক এর ছবি

আর আমি আপনার ছবির, ওর অদ্ধেক লিখতে পারলেও খুশি থাকতাম।

s-s এর ছবি

আপনার এই লেখাটি পড়ার মাত্র সুযোগ হলো। চমৎকার লাগলো, বিশেষতঃ পরবাসী পুত্রের বেদনাব‌হ ল্যাজ নাড়ায় এক্কেবারে নিজেকে দেখ‌তে পেলাম :)। ভালো আছেন আশা করি।

মূলত পাঠক এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ হলো।

ল্যাজ নাড়াটা কিন্তু বেদনাবহ না হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সোজা বাংলায়, আমি একদম গল্পের ভেতরে চলে গিয়েছিলাম। ছবির মত বর্ণনা। আহা! কি দারুণ!!!

আপনার জন্য শুভকামনা।

--------------------------
তাহসিন গালিব

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, তাহসিন গালিব।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি


বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ইন্দ্রজাল কমিক্সের কথা লেখা থাকবে না, কিন্তু আমাদের শৈশব কৈশোরের গল্পে তাদের বিশাল ভূমিকা।

আবার জিগায়! তবে, 'অমর চিত্র কথা'-র কথা বললেন না বলে আপনাকে এক তারা দিলুম, ভবিষ্যতে।

আমার কিন্তু বেতালের পাশাপাশি ম্যানড্রেকও দারুণ লাগতো, গণসম্মোহন, মনের প্রতিফলিত ছবি...। নাদিয়ার বিকিনি-পরা ছবির তাৎপর্য বুঝতে বুঝতে কমিকস পড়াই ছেড়ে দিলাম। রিপ কার্বি ভালো লাগতো, সাদাসিধে, ভালোই। ফ্ল্যাশ গর্ডনও মোটামুটি। গার্থ ভালো বুঝতাম না। তবে, পুরনো আমলের বেতালগুলোর আসলেই তুলনা ছিলো না। পরে একটা ছবি দেখলাম, হলিউডি। বাজে লাগলো এমন!

আমাদের এদিকটায় আবার একটা কার্টুন দেখাতো- 'ডিফেন্ডারস অব দি আর্থ'। ওটায় বেতাল, ম্যানড্রেক, লোথার, আরো অনেকেই ছিলো। তাই, নামগুণেই মূর্ছা যেতাম।


অতএব আমাকেও লিখতে হলো গোয়েন্দা কিছু এক দা'র রহস্য অ্যাডভেঞ্চার, "হাত ও পায়ের ছাপ"।

আমিও একটা শুরু করেছিলাম কমবয়েসে, ফেলুদার আদলে তিনমূর্তি নিয়ে। কিন্তু অল্প পরেই বুঝে গেলাম, আমার লেখকপ্রতিভার ঘটির জল কাকের হাজার নুড়িতেও ভেসে ওঠার নয়। এখনকার লেখাগুলোও আমার তাই।


এই সময় আমার একটা গোপন ভালোবাসা গোছের গজিয়েছিলো, পুরোপুরি এক তরফা। সেটা গোপন অতএব সে নিয়ে কারো সাথে চাট্টি সুখদুঃখের কথা বলবো সে উপায় নেই। অতএব কবিতা। কবিতার রহস্যময়তা ও সাঙ্কেতিক ভাষা নিয়ে অনেক আলোচনা শোনা যায়। এ বিষয়ে আমার হাতেকলমে শিক্ষা হয়েছিলো তখনই। এমন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখতাম যে পড়ে বোঝার উপায় ছিলো না যে বিষয়টা কী, এক নবযুবকের প্রেম, না ওয়ার্ল্ড পীস।

আমি আপনার চাইতে এব্যাপারে কিছুটা স্মার্ট ছিলাম দেখা যায়। আমি নতুন একটা সাঙ্কেতিক ভাষাই তৈরি করে নিয়েছিলাম। ওভাষাতেই ডায়েরি লিখতাম। সবে অঙ্কে কিছু গ্রিক বর্ণের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাই আমার সৃজিত ভাষার বর্ণে ওগুলোরও কিছু ছাপ ছিলো। আমি অবশ্য তখন বাও কি তেও, কাজেই নওল কিশোর বলা যায়।


আমাদের সিলেবাসে বলা থাকতো কিছু রচনার নাম, পরীক্ষার জন্য। বোধ হয় ক্লাস এইটের কথা সেটা, সে বছর ছিলো ‘কলকাতার বর্ষা’।

আমারও এইটে একটা রচনা এলো, নাম 'জ্যোৎস্না রাতে একা'। বানিয়ে-টানিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলাম নদীতীরে, ভাব নিলাম হরিপদ কেরানির, ব্যর্থতা আর দারিদ্র্য যার আজন্ম কণ্ঠলগ্ন, আরো কিসব ছাইপাঁশ লিখেছিলাম তা আর মনে নেই।


বোন অনেক জোর করে ভগমানের হাবাকল পড়িয়েছিলো

ওটা কী বস্তু, বস? খায় না পিন্দে?

অতএব শারদীয়া খুলে সুনীল গাঙ্গুলির 'রাকা' নামের একটা উপন্যাস ধরিয়ে দিলাম তাকে। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের অলঙ্করণে এমনিতেই পড়ার ইচ্ছে হওয়া উচিত এমন সুন্দর সে সব ছবি। কিন্তু আসল জিনিস হলো এর বিষয়, একটি কিশোরোত্তীর্ণার বাবার প্রবাসী বন্ধুর সাথে সম্পর্ক নিয়ে। যদিও গর্হিত এলাকায় প্রবেশের আগেই লেখক থেমে যান তবু ঐ টুকুতেও কাজ হলো, তার পর থেকে সে বাংলা বইটই পড়ার নামে দৌড় দিতো না আর।

এমনি সুন্দর না, উস্কানোর জন্যে আদর্শ সেসব ছবি? লেখাটা পড়তে পড়তে থমকে যাচ্ছিলাম বার বার। ভয় পাচ্ছিলাম চেনা পৃথিবী ছাড়িয়ে ভয়াবহ অচিন জঙ্গলে পড়ে যাওয়ার। শেষদিকে ভয় কাটে। লেখক নিজেই অবতীর্ণ হন। লেখকের স্বীকারোক্তিটা মনে দাগ কেটেছিলো: "আমার পছন্দের নারী চরিত্রগুলোকে আমি নিজেই লেখার মাঝ দিয়ে একটু আদর করে নেই।" (মোটামুটি এরকমই)
অসভ্য!!
(ঈর্ষা!!!)

মুখ্য পুরুষ চরিত্রটার একটা কথাও এখনো মনে আছে (নামটা যেন কী ছিলো???), কিছুদিন আগে মনেও পড়েছিলো, নকশাল আন্দোলন নিয়ে: "কোন কিছু যখন পচে যায়, তখন সেটা ভেঙ্গে ফেলতে হয়।"

অ.ট.: এটা তো বেশ পরের দিকের উপন্যাস। আপনার বয়েস তো তাহলে যা ভেবেছিলাম, বোধহয় তার চাইতে কমই। মানে, আমারটাই বেশি নাকি????


সাধে কি আর বলে ভেতো বাঙালী!

আমার কিন্তু ভাতও খেতে হয়, নইলে খিদেটা ঠিক মেটে না।

যাওয়ার আগে শেষ মোচড় বা কামড়:
'বাঙালী' এখন 'বাঙালি'।

অপ্রা: আঁদ্রে জিদের সেই মহদুক্তির যথার্থ ব্যবহারের জন্যে হাজারো অভিবাদন।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

মূলত পাঠক এর ছবি

আজকাল ভাত না খেয়েই সপ্তাহের চার পাঁচ দিন কাটে, অসুবিষহাও হয় না তো। সবই অভ্যেসের ব্যাপার বোধ হয়।

ভগমানের হাবাকল হলো "Windmills of the Gods"

বানান ঠিক করে দিলাম।

লিখে ফেলুন 'জ্যোৎস্না রাতে একা' নিয়ে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।