প্রলাপকথন

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৬/২০১০ - ৪:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক একটা লেখা পড়ে থেকে থেকে আর দিনের আলোয় আসতে সুযোগ পায় না। এই লেখাটাও সেই রকম। এক এক অনুচ্ছেদ করে লিখে লিখে এগিয়েছে। যে গান নিয়ে লেখা সেও খানিক পুরোনো হয়ে গেছে। তবু পোস্টাতাম, কিন্তু সে গান অনুবাদ করতে গিয়ে দুর্দশার একশেষ। বাণী খটোমটো হলে কাজটা সোজা হয়, কিন্তু সরল হিন্দি অনুবাদ আরও বেশি কঠিন। যাক, সচলের কথা ভেবে লেখা যখন, পোস্ট করে দিলাম। তৎপর অনুবাদক কেউ থাকলে গানের বাকিটা করে দিতে পারেন। লেখায় আসল গানটার কথা কম আর দেরিতে লেখার কৈফিয়ত গাদা খানেক। কী আর করা!

------------

বেশ কিছুদিন আগে অপ্র একটা হিন্দি গানের কথা নিয়ে হাজির হয়েছিলো, অনুবাদের জন্য। গানটা তার এতোই ভালো লেগেছে যে অর্থ বুঝলেও একেবারে পাকাপোক্ত করে বুঝতে চায়। আমি এক হিন্দির পণ্ডিত, এই সব অনুরোধ পেলে ছাতি ফুলে ঢাকঢোল হয়ে যায় এক ধাক্কায়। কাজেই অনুবাদে সমস্যা ছিলো না, কিন্তু এই ছবির গানগুলো কোনো কারণে ভালো ভাবে শোনা হয় নি এর আগে। অতএব শুনতে শুরু করলাম, এবং তারপর কী হলো সে কথা বলতেই এই লেখা।

আজকাল যে লিখিটিখি না একেবারেই, তার একটা কারণ সময়াভাব হলে অন্যটা মনমেজাজের হাল। আগে চাকরি করতাম দিশি আপিসে, কর্মক্ষেত্র বিদেশ হলেও সহকর্মী লোকজন সবাই দিশি। সে এক রকম ব্যাপার ছিলো। নতুন চাকরিতে মুশকিল হলো যে কোম্পানি বিদেশি হলেও আমার এই ক্লায়েন্টের অ্যাকাউন্টটিতে চারিদিকে দিশিদেরই রাজত্ব। ফলে এ এক আজব পরিস্থিতি: আমরা ওদের চেয়ে ভালো এটা প্রমাণ করার জন্যই হোক বা আর কোনো কারণে, সব ব্যাটা দিশি বোঝে শুধু কাজ, এবং কিছুতেই তারা সন্তুষ্ট হয় না। হপ্তায় সাড়ে ছ দিন কাজ করেও কেউ খুশি নয়, বড়োই কঠিন ঠাঁই। এই সবের পর সময় পেলেও সচলিং জাতীয় কাজের প্রবৃত্তি থাকে না, বরং শালাদের গুষ্ঠির তুষ্টি করতে পারলেই খুশি হই। তা এ হেন এক সময়ে অপ্রর প্রশংসা শুনেই শুনতে শুরু করলাম "কমিনে" সিনেমার গান।

যাঁরা হিন্দি শুনলেই নাক সিঁটকান, তাঁদের জন্য এইখানে দুইখান কথা আছে: এক, চাট্টি বাজে জিনিস দেখে কি শুনে একটা গোটা জগৎ নিয়ে ধারণা বানিয়ে নিলে শুধু যে স্টিরিওটাইপিংই হয় তাই নয়, আখেরে নিজেই বঞ্চিত হই কিছু ভালো অভিজ্ঞতার থেকে, আর দুই, কীসের সাপেক্ষে এই নাসাকুঞ্চন তার মান নিয়েও একটু বিচার বিবেচনা করে নেওয়া উচিত। যাক, এ হলো গিয়ে "এহ বাহ্য" মার্কা কথাবার্তা।

আগে এমন অনেক হয়েছে যে স্রেফ গান শুনে এমন ভালো লেগেছে যে সিনেমা দেখতে পৌছে গিয়েছি থিয়েটারে। "কমিনে"র ক্ষেত্রে হলো তার ঠিক উল্টো। সিনেমাটা নেটফ্লিক্সে অনলাইনে পাওয়া গেলেও দেখি নি, এই সব গান শাহিদ কপুরের উপর চিত্রায়িত হলে সেটা হজম করতে পারবো কিনা সেই আশঙ্কায়। সে বালকটি খুবই ভালো ছেলে, কিন্তু এই গানগুলো তার চেয়ে আরেকটু বেশিই ভালো। বিশাল ভরদ্বাজ যে একটা বাজে ধরণের প্রতিভা সে বিষয়ে আরেকবার শাহরিয়ার মামুন উর্ফ অপ্রর সাথে সহমত হওয়া গেলো। তবে তার সবচে' ভালো লেগেছে আরেকটা গান, আমার আবার অন্য একটা। আপাতত আমার পছন্দেরটা নিয়েই লিখি।

(এইখানে বলে রাখি, আলাস্কা এয়ারলাইন্স খুব চমৎকার, তারা অঢেল মদ খাইয়ে আমার মেজাজ খোলতাই করে দিয়েছে, গানবাজনা শুনতে হলে এমন মুডে শোনাই ভালো। অতএব আরেকবার শোনা যাক কমিনে)।

সবার আগে গানের কথা। কথা সরল বলেই অনুবাদ কঠিন লাগছে, সরাসরি অনুবাদ করলে কেমন খেলো শোনায়, আবার বেশি কসরৎ করলে মূলানুগ থাকে না। সমস্যা!


থোড়ে-
ভিগে ভিগে সে থোড়ে নম হ্যায় হম
কল সে-
সোয়ে-ওয়ে ভি তো কম হ্যায় হম
দিল নে ক্যায়সি হরকত কী হ্যায়
পহলি বার
মোহব্বত কী হ্যায়
আখরি বার
মোহব্বত কী হ্যায়

চোখ-
ভেজা ভেজা আর সজল এ মন
কাল রাতে-
ঘুম হলো না, প্রলাপ কথন
হৃদয় দেখালো এ কী খেলা
এলো আজ প্রেমের বেলা

শেষের দুটি লাইন নিয়ে কেউ সাজেস্ট করুন, দেখা যাচ্ছে না তাকিয়ে, এমন বাজে অনুবাদ!

যাক, তারপর-

আঁখে
ডুবি ডুবি সি সুর্ময়ী মধ্যম
ঝিলেঁ
পানি পানি হ্যায় বস তুম অউর হম
বাত বড়ি হয়রত কি হ্যায়
পহলি বার
মোহব্বত কী হ্যায়
আখরি বার মোহব্বত কী হ্যায়

এগুলো গদ্যে নামানো যায়, কিন্তু ছন্দোবদ্ধভাবে অনুবাদ করা যে কী ভয়ানক কাজ!

চোখ দুটি তার কাজলঘন, এইবার মধ্যম-কে কী করি! প্রখর সূর্যের তাপ কমে এলে তাকে কী বিশেষণ দিয়ে বোঝাই? সেই চোখের ঝিল থেকে ঝিলের জলে চলে আসে ছবি যাতে দুটি হৃদয় প্রেমের কথা বলছে একান্তে নির্জনে। সে যে অবাক কাণ্ড তাতে সন্দেহ কী, এমন ভিড়ের পৃথিবীতে একলা হয়ে প্রেমের কূজন করতে পারার সুযোগ পাওয়া গেলে আশ্চর্য বই কী!

খাব কে বোঝ সে
কপকপাতি হুয়ি
হল্কি পল্কে তেরি
ইয়াদ আতা হ্যায় সব
তুঝে গুদগুদানা
সতানা
য়ুঁ হি সোতে হুয়ে
গাল পে টিপনা
নিচনা
বেবজা বেসবব
ইয়াদ হ্যায়
পিপল কে জিসকে ঘনে সায়ে থে
হম নে
গিলহরি কে জুঠে মচর খায়ে থে
ইয়ে বরকত উন হজরত কি হ্যায়
পহলি বার
মোহব্বত কী হ্যায়
আখরি বার মোহব্বত কী হ্যায়

স্বপ্নের ভারে কাঁপে তার নির্ভার পক্ষ্মগুলি। মনে পড়ে, আমাদের সেই সব খুনসুটি-ভরা দিন, অকারণে গাল টিপে দেওয়া আর পিপুলগাছের ছায়ায় বসে কাঠবেড়ালির ফেলে দেয়া বাদাম দাঁতে কাটতে কাটতে অলস দুপুর কাটানো। সে সব আশ্চর্য সময় কারোর আশীর্বাদের ফলই ছিলো নিশ্চয়ই।

তো এই তো গেলো ভাঙাচোরা অনুবাদ। কিন্তু এর আসল জিনিস সুর আর কম্পোজিশন, সে তো আর লিখে বোঝাতে পারি না। মসৃণ সুরের সাথে জোরালো অর্কেস্ট্রেশান, মোহিত চৌহানের নেশা আর বেদনা মেশানো কণ্ঠ, সব মিলিয়ে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। শুনে ভালো লাগলে অন্য গানটাও শুনুন, ঐটাই অপ্রর রেকমেন্ডেড।

গানের কথা হিন্দি থেকে আর অনুবাদ করতে পারলাম না। কেউ হিন্দি বুঝলে পড়ুন, না হলে বাদ দিন। গানের আর ভাষা কী! কিন্তু বিশাল ভরদ্বাজ স্বয়ং গেয়েছে এবং কী চমৎকার গেয়েছে শুনে দেখুন। বলেই তো ছিলাম, ছেলেটি প্রতিভাবান!

কেয়া করে জিন্দগী ইসকো হম যো মিলে
ইস কি জান খা গয়ে রাত দিন কে গিলে
মেরি আরজু কমিনে, মেরি খোয়াব ভি কমিনে
ইক দিল সে দোস্তি থি, ইয়ে হুজুর ভি কমিনে

কভি জিন্দগি সে মাঙ্গা, পিঞ্জরে মে চান্দ লা দো
কভি লালটেন লাকে কাহা আসমাঁ পে টাঙো
জিনে কে সব করিনে, হ্যায় হমেশা সে কমিনে
মেরি দাস্তাঁ কমিনে, মেরে রাস্তে কমিনে
ইক দিল সে দোস্তি থি, ইয়ে হুজুর ভি কমিনে

জিস কা ভি চেহরা ছিলা, অন্দর সে অউর নিকলা
মাসুম সা কবুতর নাচা তো মোর নিকলা
কভি হম কমিনে নিকলে, কভি দুসরে কমিনে
মেরি দোস্তি কমিনে, মেরে ইয়ার ভি কমিনে
ইক দিল সে দোস্তি থি, ইয়ে হুজুর ভি কমিনে

শুনতে থাকুন!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

উদ্ধৃতি

শেষের দুটি লাইন নিয়ে কেউ সাজেস্ট করুন, দেখা যাচ্ছে না তাকিয়ে, এমন বাজে অনুবাদ!

পাঠকদা, দেখুন তো হলো কি না-

এইই আমার প্রথম প্রেম
এইই সমাপন

------------------------------------
কুটুমবাড়ি

ভ্রম এর ছবি

গান দুটা খুব সুন্দর। সুর, কথা সবই মাথায় গিয়ে লাগে। রীতিমত ঝগড়া করে এই ছবিটা দেখেছিলাম বন্ধুদের সাথে, কেউ দেখতে চায়না। শহীদ কাপুর কে দেখলে নাকি বিরক্ত লাগে, অভিনয় জানেনা, এই না সেই না। যাক, 'কামিনে' দেখে এই ধারনাটা হয়তো অনেকেরই ভেঙ্গেছে।

বিশাল ভরদ্বাজ মানেই যাতা!

মামুন হক এর ছবি

বাহ্‌ দারুণ লাগলো তো!হিন্দি জ্ঞান ভেজে খেয়েছি অনেক আগেই, তাই অনুবাদ কেমন হয়েছে ধরতে পারলাম না। তবে পড়তে কিন্তু হোঁচট খেতে হয়নি একটুও হাসি

দুর্দান্ত এর ছবি

গুলজারের কলম বলে কথা। ও থেকে যা বেরোয়, তাই তো সুধাময়।

---
আমি একটু ঢাকাইয়া ইষ্টাইলে টেরাই দিলামঃ

মনডা আমার
ভিজা ভিজা, নোনতা নোনতা লাগতাছে
কাইল থনে
হুইবার ফুইবার ভি পারি নাইক্কা আলগোছে
দিলডা হালায় কেমুন জানি করবার লাগছে
পয়লা পরথম
মহব্বতের পাছাড় খাইছি
হ্যাশবারের লাহান
মহব্বতের লাড্ডু খাইছি
---
এই ফিল্ম এর গান নিয়েই যখন কথা হচ্ছে, তখন এটা দেখুন তো। কোন মিল আছে কি? নাকি এটা শুধুই আমার ভ্রম।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি


আহ্, "কামিনে"! কতোকিছু মনে পড়ে গেল। টিভিতে অনেকদিন বিজ্ঞাপন দেখেছি আগে। গানের মধ্যে খালি "ধান তে নান" গানটার প্রতিই বেশি ফোকাস করা হয়েছে প্রচারণায়, আমার যা মনে হয়েছে। গানটা অনেক হিটও। পার্টি সং হিসাবে খুবই ভালো। শহীদ কাপুরকে এমনিতে আমার কাছে অতো ভালো না লাগলেও "যব উই মেট" সিনেমার পর থেকে আলাদা চোখে দেখি ওঁকে। যাই হোক, হিন্দি সিনেমা বলতে গেলে তেমন একটা দেখাই হয় না। তবে এটা হয়তো দেখতাম। কারণ বিশালের পরিচালনার সিনেমা, এবং অস্ট্রেলিয়া-প্রবাসী এক বন্ধু সিনেমাটা দেখে ভয়াবহ মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করেছিল। ও আবার হিন্দি সিনেমা দেখেই না বলতে গেলে। এর অনেকদিন পর ডাউনলোড করে দেখেই ফেললাম সিনেমাটা। হ্যাঁ, প্রত্যাশার চেয়েও বেশিই ভালো লেগেছিল, শুধু শেষের দিকে "একটু" ছাড়া। এটা বোধহয় কোয়েন্টিন টারান্টিনোর স্টাইল ফলো করে বানানো। অভিনয়, সংলাপ, মেকিং সবকিছুই গড়পড়তা অন্যান্য হিন্দি সিনেমার চেয়ে অনেক পরিণত, গোছানো আর যত্নের মনে হয়েছে। এতো কথা বলার কারণ, কেউ যদি সিনেমাটা দেখতে চান, দেখতে পারেন। খুব একটা খারাপ লাগার কথা না।

বিশাল ভরদ্বাজের মিউজিকের ফ্যান আমি অনেক আগে থেকেই। এবং ওঁর কণ্ঠেরও। বিশাল গুণী একজন মানুষ। আমি যখন এই সিনেমার গানগুলো ডাউনলোড করি, তখন শুরুতে টাইটেল সংটাই নামিয়েছিলাম, সেটা ওঁর নিজের গাওয়া জন্য। এবং প্রথমবার শুনেই ভয়াবহ ভালো লেগেছিল। এরপর কতোবার যে শুনে ফেলেছি! এখনও প্রায়ই শুনি, মাঝে মাঝেই। শুধু নিজেই শুনি নি, বহু মানুষকে জোর করে শুনিয়েছি। চোখ টিপি

"পেহলি বার মোহাব্বত" গানটা বোধহয় পাঠক'দা আপনি নিজেই পাঠিয়েছিলেন আমাকে। এটাও আমার খুবই ভালো লাগে। তবে টাইটেল সংটাই আমার বেশি প্রিয়। এখানে টাইটেল সঙের একটা ইংরেজি অনুবাদ আছে। কেউ চাইলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

প্রলাপকথন ভালো লাগলো অনেক। আরও আসুক এরকম হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কামিনে গানটাই ভাল্লাগে বেশি। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মূলত পাঠক এর ছবি

আলাদা করে ধন্যবাদ দিচ্ছি না, তার পরিবর্তে যাঁরা আমার অকিঞ্চিৎকর লেখাগুলো পড়েছেন সবাইকেই অনেক ধন্যবাদ জানাই এইখানে।

সকলে ভালো থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢ্যান টে না... না না না না...

______________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ইউটিউব দেখতে অনেক সময় লাগে। গানগুলো আগে শোনা হয় নাই। লেখা পড়ে ভালো লাগলো।
আপনার প্রথমদিকের সিনেমা আর রাগ সঙ্গীত নিয়ে পোস্টগুলা খুব মিস করি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।