কালান্তক শবদেহ

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: সোম, ২৩/০৬/২০০৮ - ১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কালান্তক শবদেহ

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? পোড়াবে ?
আজন্ম বিষের জ্বালা অন্তর্লীন দ্রোহ হয়ে
যে নাকি নিজেই এক হয়ে গেছে প্রজ্জ্বলিত শিখা
আগুনের সাধ্য কি পোড়ায় তাকে !
কেবল বিষের বিষে ছেয়ে যাবে তোমাদের নিঃশ্বাসী আকাশ
লুটানো পাখিদের গাছেদের পত্রহীন অভিশাপে
পুড়ে যাবে সব যতো স্বপ্নের বসত।
এই দেহ ছুঁয়ে যাবে এতো বেশী দীর্ঘ নয় আগুনের হাত।

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? কবর দেবে ?
মাটিকেই জিজ্ঞেস করো-
অন্তহীন প্রত্যাশার বিপন্ন অক্ষর বুকে প্রতীক্ষায়
যে নাকি তিলে তিলে হয়ে গেছে প্রত্নময় অনঙ্গ শরীর
মৃত্তিকা কি করে গলাবে তাকে ?
মাটিও নেতিয়ে যাবে দীর্ঘতম প্রতীক্ষার তাপে।

কুলপ্লাবী স্রোতে জলে
নদীও পারে না নিতে একপেশে বিষাদের ভার ;
যে সুখ আসেনি ফিরে যে প্রেম থাকেনি ছুঁয়ে
আর কোনো বুক জুড়ে যে কষ্ট কখনো বাজেনি সুরে
সেই শোক শিলাদেহে নিরন্তর গেঁথে আছে দুর্বহ ভারে।
এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ?
কতোকাল বইবে এই দুর্বহ পাথর ?
তার চেয়ে খুঁজে দেখো সে-ই কোনো প্রিয়তম মানুষেরই বুক-
নিমেষেই মিশে যাবে তাতে
যেভাবে মিশে থাকে রক্তের ভেতরে জাগা রক্তাক্ত শপথ !


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

বসু, কবিতাটির জন্য আপনাকে স্যালুট!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রণদীপম বসু এর ছবি

এই স্যালুটের ভার কী করে বইবো আমি !
অক্ষরের উঁই এসে কুড়ে কুড়ে খেয়ে গেছে পায়ের জমিন ;
তার চেয়ে ফুঁটে যাক মন্তব্যের হুল,
কবিতারা বুঝে যাক্
এটা কোনো স্বেচ্ছাচারী নায়কের নিজস্ব ভূখণ্ড নয়-
যা ইচ্ছে করে যাবে শব্দের খেলায়...

হা হা হা ! জুলিয়ান ভাই, কবিতার ফর্মটা ব্যাক ডেটেড। কেন জানি মাঝে মাঝে ব্যাক-ডেটেড হতেই ভালো লাগে। কিন্তু সমস্যা আপনাদের মতো উদার মনের মানুষদের নিয়ে।
ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আরে ভাই আমিও তো ব্যাক ডেটেড! পুরানে পুরান চিনে নতুনে চিনে ঘাস! নাইলে কি আর কয় ওল্ড ইজ গোল্ড!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

শ্যাজা এর ছবি

এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ? কবর দেবে ?
মাটিকেই জিজ্ঞেস করো-
অন্তহীন প্রত্যাশার বিপন্ন অক্ষর বুকে প্রতীক্ষায়
যে নাকি তিলে তিলে হয়ে গেছে প্রত্নময় অনঙ্গ শরীর
মৃত্তিকা কি করে গলাবে তাকে ?
মাটিও নেতিয়ে যাবে দীর্ঘতম প্রতীক্ষার তাপে।

কোন কথা হবে না ...


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

কীর্তিনাশা এর ছবি

বসু দা, অসাধারন কবিতা। পড়ে অনেক্ষন নিরব হয়ে বসে ছিলাম।

------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার মন্তব্যের বিপরীতে জবাব দেয়ার ভাষা তো ভাই আমার নেই !
আপনার জন্যে শুভ কামনা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রণদীপম বসু এর ছবি

হুম ! কথা না হওয়াটাই কথার গভীরতা। যার তল আমিও পাই না অনেক ক্ষেত্রে।
ধন্যবাদ শ্যাজা আপনাকে, চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগলো কবিতাটা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

আমাদের আবেগগুলো পুরনো হয় না বলেই অনেক পুরনো কবিতাও আবেগে আঁচড় কাটে।

ধন্যবাদ নজরুল ভাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সেই শোক শিলাদেহে নিরন্তর গেঁথে আছে দুর্বহ ভারে।
এই শবদেহ নিয়ে কোথায় যাবে তুমি ?
কতোকাল বইবে এই দুর্বহ পাথর ?

কতকাল বইবে এ দুর্বহ পাথর, কবি?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রণদীপম বসু এর ছবি

যে পাথর অস্তিত্বের সাথে মেশা, তা ঝেড়ে ফেলি কী করে ? গলে গলে নির্ভার হই যদি !
আমার ভুবনে অভিনন্দন আপনাকে। আপনার মন্তব্যে সম্মানিত বোধ করছি আমি। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

কী যে বলেন, এরকম কবিতা দেয়ার জন্য আমরাই সম্মানিত। আরো খোঁড়েন, আরো দুর্বহ ভার নেন, তাহলে আরো হিরা-মানিক পাব।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রণদীপম বসু এর ছবি

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।