নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন সবাই, বেশ কিছুকাল যাবৎ এই বঙ্গদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা-বহির্ভূতভাবেই ব্যাঙাচির মতো নতুন একটি শ্রেণী গজিয়ে উঠেছে যাকে বিভিন্নজন বিভিন্ন নামে ডেকে থাকেন। সুজন, সুশীল, নিরপেক্ষ, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কতো আলঙ্কারিক নামে। তিনাদের আরেকটা বিশাল যোগ্যতা রয়েছে, তিনারা আবার বুদ্ধিজীবীও ! যদিও আমার অনিরপেক্ষ মুর্খতায় এটা নির্ধারণ করতে অক্ষম হয়ে যাই যে, তারাই যদি বুদ্ধিজীবী হন তো জ্ঞানপাপী বুদ্ধিব্যবসায়ী কাকে বলে !
.
তবে তারা যে নতুন গজিয়েছেন তা কিন্তু নয়। তারা আগেও ছিলেন, কিন্তু ইদানিং তাদের জ্ঞান-গম্যি-চেহারায় হঠাৎ নতুন করে মানবতাবাদের উদ্বেল চিকনাই এতো বেশি বেশি করে গড়িয়ে পড়তে লাগলো যে, আমার মুখ্য-সুখ্য নাকে মনে হচ্ছিলো, চারপাশটা বুঝি ভীষণ দুর্গন্ধময়তায় দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। তাদের জৌলুশমাখানো বিদগ্ধ আলোচনা-পর্যালোচনা শুনে এই দুর্বল মস্তিস্কে মানসিক অসুস্থতা আমদানিসহ হালের টিভির টকশোখানাগুলো উপভোগ করার যোগ্যতা তো হারিয়ে ফেলেছি সেই কবেই, তার উপর নিজস্ব যেটুকু আত্মবিশ্বাস ছিলো তা-ই বুঝি রীতিমতো সন্দিহান হয়ে উঠলো, এতোকাল তবে বই-পুস্তকে ধর্ম-দর্শন-মুক্তিযুদ্ধ-ইতিহাস-বিজ্ঞান-সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-আইন এসব বাহারি বিষয়ের নামে আসলে যা পড়েছি তা কি ঠিকই পড়েছিলাম ? না কি শুধু শুধু ঘাঁসই কাটলাম জীবনভর !
.
অতএব, নিজের সাথে নিজেরই একটা বোঝাপড়ার দরকার হয়ে পড়লো। এটা আর কিছু নয়, নিজেকে নিজেরই প্রশ্ন করা, নিজের সাথে নিজেরই তর্ক-কুতর্ক করা, কিংবা নিজের অস্তিত্বের নির্লজ্জ কান টেনে ধরে নিজেকেই একটু যাচাই-বাছাই করা। বন্ধুতালিকায় থাকলে সামাজিক সাইটেও বিভিন্ন সময়ে এই উত্থিত প্রশ্নগুলো কারো কারো চোখে পড়তেও পারে এরই মধ্যে। এবং পরে আরো নতুন নতুন প্রশ্নও আসবে হয়তো, তবুও এই স্বীকারোক্তির পাশাপাশি এটাও স্বীকার করে নিচ্ছি যে, নিজের মধ্যে উদ্ভূত এই সাধারণ প্রশ্নগুলো থেকে ভীষণ একটা উপলব্ধিও অর্জন করে ফেলেছি ইতোমধ্যেই। আর তা হলো, ১৯৭১-এর পর এই ২০১৩ সালটাই বাংলার ইতিহাসে আরেকটি অমোচনীয় বছর হয়ে গেছে অনেকগুলো অনিবার্য কারণেই। যার অন্যতম প্রধান কারণ অবশ্যই একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর কুখ্যাত ঘাতক কসাই কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক দায়মুক্তির গর্বিত পথে পা দেয়া। এবং এই শ্বাপদ-সঙ্কুল পর্যায়টিতে পৌঁছাতে গিয়ে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করার যাবতীয় ষড়যন্ত্রের সহযোগী হিসেবে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এইসব বুদ্ধিব্যবসায়ীর চতুর মানবাধিকার ব্যবসার মুখোশটা সমূলে খশে পড়া । এই ২০১৩ সাল যেভাবে একটানে এই মানবতা-কারবারিদের সহ অনেক অনেক মানব-পশুর চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে, এতোকালের সযত্নে ঢেকে রাখা নিজস্ব লেজটা বের করে দিয়েছে, এদেশের ইতিহাসে আগের একচল্লিশটা বছরেও তা সম্ভব হয়নি। তাই এই বছরটার যোগ্য নামকরণ হতে পারে- ‘২০১৩ : মুখোশ উন্মোচনের বছর’ !
.
আর একারণে নিচের উদ্ভূত অসমাপ্ত প্রশ্নগুলো আসলে তারই গৌড়চন্দ্রিকাই কেবল, রেখায় রেখায় টেনে যাওয়া ওইসব মানবাধিকারবারির উদ্দেশ্য ছুঁড়ে দেয়া ঘৃণার অক্ষর ! অতএব, পাঠক হিসেবে যে-কেউ এখানে আরো অসংখ্য প্রশ্ন জুড়ে দিতে পারেন নির্দ্বিধায় ! তাহলে আসুন একটু চেষ্টা করা যাক্ !-
.
তর্কতত্ত্ব-০১
কোনটা বেশি জরুরি- গণতন্ত্র, না কি একটা দায়িত্বশীল ভালো সরকার ?
ভালো সরকার মানে কী ? এটা কিভাবে নির্ধারণ হয় ?
গণতান্ত্রিক নির্বাচন কি আদৌ কোন ভালো সরকার গঠনের নিশ্চয়তা দিতে পারে ?
.
তর্কতত্ত্ব-০২
নির্লজ্জতা আর নিরপেক্ষতা কি এক ? কেন নয় ?
তাহলে নিরপেক্ষতা মানে কী ? কিভাবে তা নির্ধারণ হয় ?
একজন অপরাধী ও একজন নিরপরাধীকে সমান ও অভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা কি নিরপেক্ষতা ?
নাকি খারাপ লোকের বিরল ভালোগুলো এবং ভালো লোকের কেবল ছিটেফোটা নগন্য মন্দগুলো খুঁজে এনে ককটেল বানিয়ে বাজারে তোলাই নিরপেক্ষতা ? নিরপেক্ষতা কি তবে কোন বিপুল বাাণিজ্যের নাম ?
তথাকথিত ঈশ্বরও কি নিরপেক্ষ ?
.
তর্কতত্ত্ব-০৩
মানবতা মানে কী ? মানবতার সংজ্ঞা কী ?
মানবতা কি অমানুষের জন্যে প্রযোজ্য ?
যদি তা না হয়, তাহলে তথাকথিত মানবতাবাদীরা জঘন্য খুনি অমানুষদের জন্য মানবতার আবেগ দেখিয়ে ডুকরে উঠেন কেন ? এবং-
যে দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই, সেসব দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা সেনা বাহিনীর হাতে এতো এতো মারণাস্ত্রের বদলে গোলাপফুল ধরিয়ে দেয়া হয় না কেন ?
…
মন্তব্য
আপনারে কিছু হিন্টস দেই। আপনি যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন সেগুলো অনেকে আগেই সমাধান হওয়া বিষয়।
১।
মোটাদাগে গণতন্ত্র মানে হলো এরকম একটা সিস্টেম যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর জনগণ তাদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দায়িত্বশীল ভালো সরকার সাংঘর্ষিক কোন ধারণা নয়। একটা নির্দিষ্ট সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলেও ভালো হতে পারে। কিন্তু সেই ব্যবস্থাটা একটা ভালো তত্ত্ব (থিওরী) না। কারণ সেই সরকার গেলে সেরকম একটা সরকার পুনরায় আসবে এটার নিশ্চয়তা নেই। রেপ্লিকেট করা না গেলে সেটা ভালো তত্ত্ব এরকম ভাবার কারণ নেই। সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখতে হবে।
ভালো সরকার মানে হলো একটা আদর্শ কাঠামোর সবচাইতে কাছে যেই সরকার যেতে পারে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন ভালো সরকারের নিশ্চয়তা নাও দিতে পারে। তবে আমাদের হাতে এর থেকে ভালো বিকল্প নেই।
নিরপেক্ষতা বা অবজেক্টিভিটির ধারণা প্রায় একশত বছর ধরে পরিত্যক্ত। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল সর্বপ্রথম এই ধারণার অস্তিত্বের ওপর আক্রমন করে।
তৃতীয় বিশ্বে সমস্যা জিইয়ে রাখতে পারলে কারো কারো সুবিধা। এইজন্যই এটা হয়। দাদারা চায় এখানে জামাত রাজনীতি করুক।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বুঝলাম, আপনি অনিরপেক্ষ, অমানবিক ! এইসব জবাব নিয়া আপনি কোনোদিনই আমাদের মহান টকশোখানার সুশীল মানবতাবাদী বাক্সে জায়গা পাবেন না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হুমম...
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খুব একটা বোঝা গেলনা রণদা। অগোছালো আর বিক্ষিপ্ত লাগল।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
প্রক্ষিপ্ত আবেগের বিক্ষিপ্ত লেখা। তাই আবেগ সুশৃঙ্খল রাখলে বিক্ষিপ্ত প্রলাপের বাইরে অন্য কিছু বোঝার জো নেই। হা হা হা !
অতি সংক্ষেপে এই লেখার সারমর্ম হলো, সুস্থ থাকতে চাইলে বর্তমানের টিভি চ্যানেলগুলি থেকে বিশেষ করে টকশো নামের পাগলাখানা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন ! নইলে খিটখিটে মেজাজ, চিন্তার বিশৃঙ্খলা, হাই ব্লাডপ্রেসার, মানসিক বিধ্বস্ততা, নিরপত্তাহীনতা বোধ, মানুষের উপর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসহীনতা ইত্যাদি সর্বঘাতি অসুস্থতা অনিবার্য আপনার জন্য !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন