চরিত্রবিশ্লেষণ করুন- কার কেমন চরিত্র?

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: রবি, ০৪/১১/২০০৭ - ৬:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোক পলিয়া কহিলু? তুই মোক পলিয়া কহিলু?

যে কথাটা বলছে তার বলিষ্ঠ শরীর, সাইকেল এক পাশে রেখে সামনের একটু শীর্ণ ছেলেকে কথাটা বলছে।

ছেলেটা শহরের, সেও বলছে, হ্যাণ বলছি, বলছি তো কি হইছে পলিয়া, বেটা পলিয়া আবার মাস্তানি করে।

ঘটনা সেখান থামলো না, লোকটা সাইকেল থেকে নেমে মারা শুরু করলো,

ডালপালা ছড়ালো এটার,

আমাদের বেড়ে উঠবার সময় দিনাজপুরে পলিয়া বলতো যাদের তারা মুলত আদিবাসি, থাকতো শহরের কোলাহল থেকে দুরে কোনো গ্রামে। ফি-হপ্তা আসতো বাজারে ঘরের শাকসব্জি আর মুরগি বেচতে, সেই ফনিক্স সাইকেলের দুইপাশে কিংবা পেছনে টুকরি বেধে তারা আসতো,

সেই থেকে পলিয়া শব্দটার ভেতরে যে অবমাননা তার সাথে পরিচয়। এর আগে কথা প্রসঙ্গে অনেকেই অনেককে পলিয়া বলতো। এবং একটু নাকবোচা গালের দুপাশে উঁচু এবং চোখ ছোটো মানুষদের পলিয়া বলা হয় জানা থাকলেও সেটা ব্যবহারে সুযোগ আসে নাই।

অবমাননার মূল কারণ উদ্ধারের ক্ষমতা কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা তখন ছিলো না। এখন এসে বুঝি আসলে সরল গ্রাম্য মানুষ যারা শহরের নানাবিধ জটিলতা আর অর্থনৈতিক ম্যারপ্যাঁচ বুঝে নি, যারা সহজেই শহরের চালাকিতে ঠকে তারা আদতে পলিয়া,

পলিয়ারা ২ সের লাল শাক ৩টাকায় বেচে চলে যাচ্ছে, শহরের ফরিয়া সেটা বাজারে বেচছে ৮ টাকায়। এই যে নির্বোধ সারল্য এটাই পলিয়ামি। যদি আমরা পলিয়াকে বিশেষায়িত করতে চাই।

অবেশেষে এই সময়ে এসে একটা বিষয় বুঝতে পারলাম, আমাদের ভেতরে অনেক রকম বিভিন্নতা থাকলেও আমরা সবাই আদতে আমাদের লোকালয়ের বাইরের মানুষকে হেয় করতে চাই।

এবং এই হেয় করবার প্রবনতায় আমাদের কিছু বিশেষ্য বিশেষায়িত হয়ে একটা অবমাননাকর অর্থ বহন করতে থাকে। আমি পলিয়া থেকে শুরু করেছিলাম, পরে দেখলাম বাজারে নতুন শব্দ আসলো, মফিজ, সবাই সবাইকে মফিজ বলবার সুযোগ খুঁজছে, কিছু হলেই বেটা তুই একটা মফিজ, মফিজ না হইলে কেউ এই কাজ করে?

ঢাকায় আসলাম, তখন শিখলাম, কুদ্দুস, আবুল, আব্দুল।

সবচেয়ে আশ্চর্য হলো এরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ বহন করে, যে আবুল সে আবুল, তাকে দিয়ে মফিজের কাজ হয় না, যে মদন সে আবার কুদ্দুসের সাথে সম্পর্ক রাখে না।

অর্থ্যাৎ পথে চলতে চলতে প্রচলিত হতে হতে এরা স্বকীয়তা অর্জন করেছে। এবং এরা নিজেরাই নিজেদের চরিত্রকে প্রতিস্ঠিত করেছে সনাজ মানসে।

তবে একটা ঐক্য আছে এদের ভেতরে, এরা সবাই আদতে সেই সামাজিক পরিবেশের এবং অর্থনৈতিক পরিমন্ডলের বাইরের মানুষ।

সারল্য আরও একটা বৈশিষ্ঠ্য হলেও স্বতস্ফুর্ততা এবং স্মার্টনেস বিচারে এদের পার্থক্যটা তৈরি হয়।
মদন একেবারে আনস্মার্ট একটা চরিত্র, যার নাম শুনলেই মনে হয় এই বেটা মেরুন প্যান্টের সাথে সবুজ শার্ট পড়ে চলেআসতে পারে।
কুদ্দুসের বৈশিষ্ঠ্য এখনও পরিস্কার হলো না।

আব্দুল নেহায়েত চাকর শ্রেনীর মানুষ, সে খেদমত কারী, তার পরিচ্ছদের জায়গাটাতে স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি।

আবুল নেহায়েত গোবেচারা, তার সাথে সবাই মজা নেয়।

মফিজ যেহেতু আমাদের ওখানে বহুল প্রচলিত নামবিশেষণ তাই তার চরিত্র বেশ পরিস্কার।

মফিজ সাধারনত এমন একটা চরিত্র যে নিজের গ্রাম্যতা সম্পর্কে সচেতন, এবং নিজের গ্রাম্যতা ঢেকে শহুরে হয়ে উঠতে বদ্ধপরিকর, তবে তার সাংস্কৃতিক চরিত্র বারবার তার কাজে পরিস্কার ফুটে উঠে।

সে ধারণা করেই নিয়েছে তাকে ঠকানো জন্য সবাই উদগ্রীব, এবং সেও ঠকবে না কোনো মতে তাই নানাবিধ আয়োজন করতে থাকে সে বোকা না হওয়ার এই প্রানান্ট প্রচেষ্টাকারী মানুসটা যখন এত প্রচেষ্টা স্বত্তবেও নিজের গ্রাম্যতা ঢাকতে পারে না তখন সে মফিজ।

আপাতট উন্মুক্ত মঞ্চ।

যারা যারা পড়ছে তারা সবাই যদি একটু করে এই সব নামবিষহেষণের চরিত্র নির্মাণ করে তাহলে একটা বোধগম্যতা আসবেে।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যদিও উল্লিখিত নামগুলির কয়েকটা সৃষ্টিকর্তার গুনবাচক নাম, তবুও আমাদের সমাজে এই নামগুলি একেকটা বিশেষ অর্থ (ব্যঙ্গার্থে) বহন করে।

ইউনিভার্সিটি লাইফে আমার এক বন্ধুর মুখে শুনতাম "খায় জব্বার মোটা হয় কুদ্দুস"। এর মানে কী তা সে-ই ভাল জানে। তবে ঘটনার পরম্মরায় যা বোঝা যায় তা হল জব্বারের প্রচেষ্টার ফল কুদ্দুস বিনাক্লেশে অর্জন করে ফেলে। অর্থাৎএকজন কাজ করে আর ফল ভোগ করে আরেকজন। সে অর্থে কুদ্দুসকে সুবিধাবাদি বলা যায় হয়তো।

টীকা:
জব্বার শব্দের আভিধানিক অর্থ হল মহা পরাক্রমশালি বা মহা শক্তিশালি। ব্যাপক অর্থে, যার ক্ষমতা ও অথরিটির কোন সীমা নেই, সৃষ্টির সবকিছুই উপরেই যাঁর অথরিটি।

কুদ্দুস শব্দের অর্থও অনেকটা জব্বার শব্দের মতই।

রাহা এর ছবি

হুম কিন্তু ..... ব্যাখায় মফিজ এর সঠিক বিশ্লেষন করা হয়নি । সেদিনও আমি বলেছিলাম ।

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ক্ষ্যাত.....?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।