ওজনদার গল্প

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বুধ, ০৫/০৩/২০০৮ - ৬:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নিউ মার্কেটে গেলেই আগে নিজের ওজন মাপানোর একটা নেশা ছিলো আমার- হয়তো সপ্তাহে একবার যেতাম কিংবা মাসে একবার, তবে যখন, যতদিন পরেই যাই না কেনো ঠিকই দোতালার সিঁড়ির পাশের ওজন মাপার ম্যাশিনে গিয়ে দাঁড়াবো- ওজন মাপাবো- ওজন মাপানোর তুলনায় বড় নেশা ছিলো সেই ভবিষ্যত বানী লেখা মাপের কাগজের। ভাবভঙ্গি দেখেই ভালো লাগতো- বিশাল মাপের একটা বাক্স- সেখানে গুনে গুনে পয়সা ফেলতে হয়- ঘটাং করে একটা শব্দ তার পরে কাগজ ছিটকে আসলো- সেখানে প্রায় অস্পষ্ট নীল কালিতে ওজনের ঘরে তীরচিহ্ন- সে লেখা আমি বুঝতাম না- দোকানি অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিতো-
সময়ের সাথে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে- নীলক্ষেতের মোড় থেকে শুরু করে মিরপুরের রাস্তা- যেখানেই যাওয়া যাক না কেনো ঠিকই ২ টাকায় ওজন মাপানো যেতো- মানুষ এখন নিজেদের জন্যই ওয়েট ম্যাশিন কিনে- আগে বিদেশগামী সকল মানুষের প্রথম কাজ ছিলো পরিচিত জনের কাছ থেকে একটা ওজন মাপা যন্ত্র চেয়ে নিয়ে আসা- সেটা দিয়ে বিশাল মাপের স্যুটকেসের ওজন নির্ধারণ- কতটুকু নেওয়া যাবে- দুইটাতে সমান মাপ হলো কি না- হ্যান্ড ক্যারিতে ৭ কেজি নেওয়ার নিয়ম- সেখানে ঠেসে ভড়লে হয়তো ১২ কেজি ঢুকানো যাবে- এ নিয়ে বিভিন্ন বাদানুবাদ- এবং এয়ারপোর্টে বাড়তি ব্যাগ নিয়ে যাওয়া- বান্দারা এরপরেও বেশী ওজন নিয়ে যাবে ব্যাগে- ঠকানোর একটা চেতনা সবসময় ক্রিয়াশীল এখানে- শালার হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কাটলাম- যদি প্লেনের পেটের ভিতরে ভড়ে শান্তিমতো জিনিষ নিয়াই না যাইতে পারলাম তাইলে ক্যামোন হইলো-
একই রকম চিন্তা সম্ভবত কাজ করে যখন মানুষ দেশের বাড়ী যায়-
এ বিষয়ে মেয়েদের পারদর্শীতা বেশী- তারা যখন একবার বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাতে থাকে তখন মনটা উৎফুল্ল লাগে-ব্যাগের বহর দেখে মনে হয় এ যাওয়াই অন্তিম যাওয়া আর আসবে না- একটু কষ্টও লাগে যখন বৌয়ের সাথে সহযাত্রী হিসেবে আমি থাকি- রেডিমেড কুলি হিসেবে আমাকেই এই বহরকে টেনে নিয়ে যেতে হবে- তবে যখন আমি সহযাত্রী নই তখন খানিকটা বিমর্ষ লাগে এটা ভেবে পরিবহনের কোনো পুরুষকেই এটা টানতে হবে- তবে এই সুযোগে একটু আয়েশ করে জায়গা নিয়ে শোয়া যাবে বিছানায়-

তবে ব্যাগের বহর যতবড়ই হোক না কেনো বাপের বাড়ী থাকবার সময় মাত্র ৩ দিন, ৩ দিনের জন্য ৯ সেট কাপড়ের কোনো দরকার নেই- ট্রাভেল লাইট এন্ড ইজি- জার্নিতে যত হালকা হয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো- এসব পরামর্শ কোনো কাজে আসে না- তাই যতবার বৌকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তখনই নানাবিধ ছলচাতুরি মনে আসে-
এখন অবশ্য ওজন নিয়ে বিপ্লব ঘটে গেছে বাংলাদেশে- একটা নিলে রেকটা ফ্রি'র যুগে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ হেলথ রিপোর্ট পাওয়া যায় ওজন মাপাতে গেলে- ওজন- উচ্চতা- উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম কি বেশী- শরীরে চর্বির পরিমাণ- ব্লাড প্রেশার- এবং একই সাথে ডায়াবেটিসও মেপে ফেলা যায়- ১০ টাকাই লাগে- ইবনে সিনা- লয়াব এইড- মেডিনোভা- সবাই ফ্লপ এখানে- আর সস্তা বলেই এখানে লোকজন তেমন আসে না-

ভালো লাগলো সেদিন এমন এক দোকানের সামনে একজন থামলো- কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলো কাজকারবার- তারপর ভেবে বললো- মিয়া এই যে ওজম মাইপবার লাগছো- যদি কারো ২ কেজি কম পরে তুমি কি ভরে দিবা?

সমুদ্র সৈকতের পাশে সুন্দরী এক তরুনী- পিঠে হ্যাভারস্যাক- হঠাৎ থামলো- হ্যাভারস্যাক ফেলে ওজন মাপার যন্ত্রে দাঁড়ালো- পকেট থেকে খুচরা পয়সা ফেলে ওজন দেখলো- ১১৫ পাউন্ড-
কিছুক্ষণ ভাবলো- এরপর খুলে ফেললো তার জামা-
ব্যাগ থেকে খুচরা পয়সা নিয়ে আবার ওজন মাপলো- ১১০পাউন্ড-
নাহ মাথা ঝাঁকিয়ে জিন্সের প্যান্ট খুললো- ব্যাগ থেকে পয়সা নিয়ে আবার মাপালো- ১০৮ পাউন্ড- তন্বী তরুনি কিছুক্ষণ হতাশ হয়ে তাকালো ওজন মাপার যন্ত্রের দিকে- আবারও ব্যাগে হাত দিলো-

নাহ আর খুচরা পয়সা নেই-

পাশের চেয়ারে আয়েশ করে বসে থাকা বৃদ্ধ বললো সমস্যা নাই যত খুচরা লাগে আমি দিবো-


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শেষের প্যারাটা খাপছাড়া, তবে চুম্বক।

আমার এক বড়ভাই গল্প করেছিলেন একদিন। ওনার এক শত কেজি বিশিষ্ট বন্ধু নিউমার্কেটের ঐ মেশিনে দাঁড়ানোর পরে যে কাগজটা বেরিয়ে এলো তাতে লেখা,

"অনুগ্রহ করে ১জন ১জন করে উঠুন।"
হো হো হো
সত্যি কি না জানি না, তবে খুব হেসেছিলাম।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

গৌতম এর ছবি

এটা একটা জোক হিসেবেই শুনেছিলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

দ্রোহী এর ছবি

স্যুটকেস প্যাকিংয়ে আমি মেয়েদের চাইতেও বেশি দক্ষ। ৫০ পাউন্ড ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্যুটকেসে আমি ১০৪ পাউন্ড কাপড় ভরতে পারি। ফলাফলে আমার ব্যাগ চুরি হয়ে যায়।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

জামার অজন ৫ পাউন্ড?? কেমনে কি?!

- খেকশিয়াল

রাতুল এর ছবি

খুচরা পয়সা নিয়ে ভাববেন না। সচলায়তনে প্রচুর আগ্রহী গ্রাহক পাবেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শালার হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কাটলাম- যদি প্লেনের পেটের ভিতরে ভড়ে শান্তিমতো জিনিষ নিয়াই না যাইতে পারলাম তাইলে ক্যামোন হইলো-

আমার ছোটভাই পলেন পড়তো ইউক্রেনে
সে আবার ১০০% ভেতো বাঙ্গাল
একবার যাবার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে তার নির্ধারিত ওজনের বেশি জিনিস হয়ে যাওয়ায় আমাকে ৪৮০০ টাকা বাড়তি গুনতে হলো

বাড়তি মাশুল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- অত কী নিচ্ছিস?
সে আমার দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভাবে বলল- না তেমন কিছু না। বিশ কেজি চাল নিচ্ছি

অমিত আহমেদ এর ছবি

মজা পাইলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।