বিজ্ঞাপনের বিজ্ঞাপন

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৩/২০০৮ - ৬:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিজ্ঞাপনের যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে গেলেও বিজ্ঞাপনের বিরাম নেই- বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে ঢেকে যাচ্ছে শহরের মুখ,মানচিত্র আর আমাদের রাজপথগুলো চলমান ক্যানভাস হয়ে জবুথুবু বৃষ্টিতে ভিজছে , সেই সাথে ভিজছে ঐশ্বরিয়া, জন আব্রাহাম, বিপাশা বসু, অপি, তিন্নি- তিশা-
বিজ্ঞাপন নির্মাতা সংস্থাগুলো ব্যস্ত- বিদেশী কাঁচামাল দেশে প্যাকেট করে ইফাদ, তীর, এসিআই পয়সা কামাচ্ছে ঢের তবে ক্রেতাদের ত্রাহি অবস্থা-
সব সময়ই একটা ক্যাচ ফ্রেজের সন্ধানে থাকা বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো নিয়মিত প্রতিযোগিতা করছে- গ্রামীণ ফোন মানুষকে কথা বলতে প্রলুব্ধ করছে, মোনালিসা তিন্নি নেচে কুঁদে বলছে বাংলালিংক বেস্ট- ওয়ারিদ কিংবা একটেল এই প্রতিযোগিতায় থাকলেও পিছিয়ে টেলিটক। সরকারী সংস্থাগুলোর সেবার মান খারাপ- এমন কি এদের ব্যবসায়িক বুদ্ধিও খারাপ- এরা কোনোভাবেই কিছু করতে পারে না-

বিজ্ঞাপনের কৌশলও বদলে গেছে- মগবাজার কুখ্যাত সেখানের হোটেলগুলোতে প্রায় প্রকাশ্যেই মেয়েমানুষ বিকিকিনি হয়- নবাবপুর আর মগবাজার এই দুই এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে কলগার্লের নিয়মিত আনাগোনা- মগবাজারের হোটেলগুলোতে শুধু এই ব্যবসাই না বরং অস্ত্র, মাদক চাঁদাবাজীর ঘটনাও ঘটে নিয়মিত- এসব প্রকাশ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই- সেখানের হোটেলগুলোতে গত ৩ বছরে অন্তত ১০টা খুন হয়েছে- তাই ক্যাফে ডি রাজের পাশের হোটেলের সাইনবোর্ড দেখে ভালো লাগলো- মূলত ভাষাটা- এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত-
সেখান থেকে সামনে আগাতেই বাংলা মোটর মোড়- প্রাক্তন পাক মোটরের মোড়ের বাঙ্গালিত্ব প্রকাশিত হয়েছে এইস্থানে এসে- সেখানে গাড়ীর পার্টসের অনেকগুলো দোকান- ওখানের একটা সাইনবোর্ড দেখে বেশ আহ্লাদিত হলাম- উপরে উঠার সিঁড়ি- এত ফন্দি ফিকিরে ঢাকা শহরের চৌহদ্দিতে ঘুরছে মানুষ- সবারই প্রতিষ্ঠার লোভ- সবাই উপরে উঠতে চায়- সোশ্যাল স্ট্যাটাস ল্যাডারের উপরে উঠে ছড়ি ঘুরাতে চায়- সেখানে এই স্থলে এমন বিজ্ঞপ্তি- নাহ ভুল ভাঙলো কাছে গিয়ে- খুবই সংকীর্ণ একটা সিঁড়ি- বাইরে থেকে চোখেই পড়ে না তেমন ভাবে- এটাই উপরে উঠবার রাস্তা-

দেশজুড়ে প্রচারণা- এইডসের হাত থেকে বাঁচুন- চলমান বাসের গায়ে কন্ডম পড়ে সঙ্গমের উপদেশমালা- ঠিক পিজি হাসপাতালের গেটে হঠাৎ দেখলাম- বিশ্বস্ত দাম্পত্য জীবন যাপন করুন- নিশ্চিত হলাম এটাও এইডস থেকে প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনের বানী-
নাহ পরের লাইনটা চমকপ্রদ- ক্যান্সারের ঝুঁকিমুক্ত থাকুন-
যদিও বুঝলাম না অবিশ্বস্ত বিবাহিত জীবন কি ক্যান্সারের কারণ- ক্যারিওজেনেসিস না কি যেনো বলে এটাকে- যেসব বস্তু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়- সিগারেট- মদ- তামাকের নেশা- বৃদ্ধ বয়েসে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড- মেয়েদের ম্যামল গ্ল্যান্ড- ওভারি- ভেজাল খাওয়া- বার্থকন্ট্রোল পিল- এসব ব্যবহার এড়ালে নাকি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে- কিন্তু দাম্পত্য জীবনে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ততার সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি না-

চলুন ভোটার হই- ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান রাস্তার উপরে এটা লেখা আছে- ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ এই প্রচারণা চালাচ্ছে- কে ভোটার হলো কিংবা হলো না এটাতে এই গ্রুপের লাভ ক্ষতি কি? এটা কি স্বেচ্ছাসেবা? নাহ- এর পেছনের নগদ নারায়ন আছে- সেখান থেকে অতিপূ্র্বে বলা উটের দুধের দোকানের আঙ্গিক বদলে যাওয়ার খবরটা দেওয়া হয় নি- দেওয়ারবাগ দরবার শরিফে হুজুরে কেবলার বিশেষ মাজেজা হৈলে উটের গর্ভবতি হয়ে যাওয়া এবং এই দুধের বাণিজ্যিক বিপণনের গল্পটা আগেই বলেছি-
এইবার গিয়ে দেখি ওটারও সাইনবোর্ড হয়েছে- ৮৯ স্বামীবাগের দোকানে এই সংক্রান্ত খবরাখবর পাওয়া যাবে-

বিজ্ঞাপনের জগতে দোজখেরও বিজ্ঞাপন করে ইবলিস-
হঠাৎ এক পাব্লিক যার পাপ পূণ্যের হিসাব বরাবর- খুব হিসেবি মানুষ- জীবিত থাকবার সময় নামকরা একাউন্ট্যান্ট ছিলেন মরহুম মেজর অবঃ সাদেকুল্লা- তার একটাই বাসনা ছিলো গলফ খেলা-
যেহেতু পাপ পূণ্যের হিসেব সমান তাই বেনিফিট ওফ ডাউট হিসেবে তার বেহেশতেই যাওয়ার কথা- তবে ইশ্বরের অভিপ্রায় বুঝা দায়- তিনি সব সময়ই তার পবিত্র বাম হাতের কণিষ্ঠ আঙ্গুল খানা অন্য কোথাও প্রবিষ্ট করেন- তার সে আঙ্গুলে বিকট গন্ধ- এত সহজ সরল মানুষের হোগায় আঙ্গুলিবাজী করলে যেমনটা পাওয়া যাওয়া সম্ভব-
বেচারা দোজখ ভ্রমনে এসে মুগ্ধ- চমৎকার সবুজ মাঠ- পতাকা লাগানো- বিস্তর উপকরণ ছড়ানো- অবশেষে সাদেকুল্লা জানালো সে দোজখের বাসিন্দা হতে চায়-
তথাস্তু বলিয়া ইশ্বরের দুত চলিয়া গেলেন- সাদেকুল্লা খুঁজে খুঁজে সেরা গলফের উপকরণ নিয়ে মাঠে নামলো-
সব শেষে শয়তান কে বললো আচ্ছা বল পাওয়া যাবে কই?
শয়তান মৃদু হেসে বললো বাছা এজন্যই এটা দোজখ-

এমন কি দোজোখে যখন ইশ্বর ঠিক করলেন ইশ্বর সুবিবেচক তাই তইনি চান না সেখানেও বর্ণবাদ থাকুক- ইশ্বরের জগতে কোনো অনিয়ম নেই- মানবাধিকারের বুলি সেখানে পোষ্টারের রঙ্গিন সজ্জ্বা নয়- তাই কোনো বর্ণবাদী অঘটনের সম্ভাবনা দুর করতে ইশ্বর ফন্দি করলেন প্রতিটা দেশের অধিবাসীদের জন্য আলাদা আলাদা দোজখের কক্ষ থাকবে-
একদিন এক পরিদর্শক, সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তাই উৎসাহের মাত্রা বেশী- ঘুরছেন- টহলের ফাঁকেফাঁকে আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করছেন ইশ্বরের কারিশমা- পৌছালেন যুক্তরাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলে- সেখানের দ্বাররক্ষীর সাথে আলোচনায় যাব বুঝলেন এখানে নিয়মটা এ রকম- প্রতিদিন সকালে এক ঘন্টা কড়া জ্বালে ভাজা হবে- এর পর তাকে শোয়ানো হবে কাঁটার বিছানায়- এর পরে তাকে পিটানো হবে -
একে একে রাস্তা ঘুরতে ঘুরতে অনেক দেশের দোজখই দেখা হলো তার- সব খানেই একই নিয়ম- বাংলাদেশের দোজখে গিয়ে দেখতে পেলো সেখানে সবাই টিকিট কেটে ঢুকছে-

রীতিমতো বিস্মিত পরিদর্শক টিকেট বিক্রেতাকে বললো এইখানে এত ভীড় কেনো? সবাই কি বাংলাদেশের?
না আউট সোর্সিংয়ের ভীড়-
এখানে কি আছে যা অন্য কোথাও নেই-
সেই একই নিয়ম- এখানে সকালে এক ঘন্টা পুড়ানো হবে- এর পরে কাঁটার বিছানায় এক ঘন্টা এর পরে সারাদিন ধোলাই-

তেমন তো ব্যতিক্রম নেই- এখানে এত ভীড় কেনো তবে?
নাহ বাংলাদেশ তো- গ্যাস শেষ তাই আগুন জ্বলে না- কোনো এক ব্যাটা এসে কাঁটাগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে- আর যার পিটানোর কথা সে সরকারী কর্মচারি তাই নিয়ম করে সকালে আসে- এটেনডেন্স শীটে সাইন করে আবার আড্ডা দিতে চলে যায়-
যাই হোক বিজ্ঞাপনের শ্লোগান দিয়েই শেষ করবো-এক নামকরা বীমা কোম্পানি বিজ্ঞাপনী শ্লোগান খুঁজছে- এমন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেছে কতিপয় মানুষ- বীমা কোম্পানির মটো তারা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেবা দিতে পারে- যেকোনো বিষয়ে বীমা করবার অভিজ্ঞতা তাদের আছে- শ্লোগান নিয়ে প্রতিযোগিতায় একজন ভেবে বের করলো- দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমরা আপনার পাশে আছি-
পরবর্তী জনের ভাবনা এটাকে টেক্কা দিতে হবে- তাই
পরবর্তি জন কিছু ক্ষণ ভেবে লিখলো-
"গর্ভ থেকে মর্গ পর্যন্ত" আমরা আপনার সাথেই থাকবো-

তৃতীয় জন ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না-
" বীর্যপাত থেকে গোরআজাব " আমাদের পাশেই পাবেন-
নাহ বোধ হয় এটাকে টলানো সম্ভব নয়- তবে শেষ প্রতিযোগী যা নির্ধারণ করলো বিজ্ঞাপনী শ্লোগান
"উত্থান থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত" আমরাই সেবা দিয়ে থাকি-


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত বেহেশতের কি অবস্থা হবে?


কি মাঝি? ডরাইলা?

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সমগ্র বাংলাদেশ নরক ঘোষণাই শান্তির একমাত্র উপায়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাসেল এর ছবি

এইটারও বিজ্ঞাপন দিতে হবে-

-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

হিমু এর ছবি

ভাই, কী শুরু করলেন? সব লেখাই পুরান চুটকি দিয়া শ্যাষ করেন ক্যান আনিসুলহকের মতো?

আর বিজ্ঞাপনে কাজে দ্যায়। মোনালিসাকে দিয়ে সচলায়তনের একটা বিজ্ঞাপন করানো গেলে কেমন হতো ভাবছি। প্রথমে রেখেঢেকে দেখানো হবে বেচারীর কোন কোমল প্রদেশে কামড়ের বেগুনী দাগ (সৌজন্যে আমি আর কি)। তার পরপরই জলদগম্ভীর স্বরে আসমানী বাণী নাজিল হবে, "সচলায়তন! মনে দাগ কাটে ভীষণভাবে!" তারপর শোনানো হবে নারীকণ্ঠের কোমল আর্তনাদ, "আহ!"


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

""সচলায়তন! মনে দাগ কাটে ভীষণভাবে!"

কিন্তু দাগ দেখানো হবে গায়ে! ক্যামনে কি?


কি মাঝি? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি

এতো খুঁত ধরলে তো চলবে না। আমাদেরও তো খেয়েপরেকামড়ে বাঁচতে হবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

দ্রোহী এর ছবি

"সচলায়তন! দাগ কাটে ভীষণভাবে" বললেই তো ব্যাপারটা আইনসিদ্ধ হয়ে যায়। তখন মনে, গায়ে, পাছায় যেখানে খুশী দাগ দেখানো যায়।


কি মাঝি? ডরাইলা?

রাসেল এর ছবি

পুরানা কৌতুক তবে ভালো লাগলো- দেখি সামনে নতুন কিছু পাই নাকি- অনেক দিন কৌতুকবিচ্ছিন্ন।

-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

হিমু এর ছবি

শাহবাগ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন বড়মণিদের কৌতুক। আউট অফ প্রিন্ট যদিও। সাবধানে যাবেন, বৃদ্ধ শাইসু বা মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী যেন ধরে না প্যাঁদায়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অ্যানন এর ছবি

ম্যামল গ্ল্যান্ড না ম্যামেরী গ্ল্যান্ড।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।