সম্পর্ক ০১

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: রবি, ১৩/০৪/২০০৮ - ১২:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ বিজ্ঞপ্তি
নিজ দায়িত্বে পড়বেন- হয়তো এটা চলবে অনেক দিন- কিংবা হঠাৎ ঠেমে যাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক পাঠকের জন্য লিখিত- কোনো শব্দ বা বাক্যে আহত বোধ করলে সেটা পাঠকের নিজের মানসিক সমস্যা- সেটার দায় নিতে আমার আপত্তি আছে।
----------------------------------------------------------------
মাগীর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেলো ৫০০ টাকার দুখে? অজিমন বসে বসে ভাবে- মাতাল ষন্ডটা ঘরে ঢুকতেই কি শুরু করলো মাগী।
আকমলের মনটায় বেজায় ফুর্তি এখন, সন্ধ্যার মুখে হাতে নগল আসলো ৫০০ টাকা- একটু জোর করতে হয়েছে বটে তবে মেলা ফুর্তি হইছে। এখনও মনটায় ফুর্তির বলগ উঠছে দমকে দমকে- জমিরের তাড়ী ভালোই মজেছিলো- তারপর ফেরার পথে পিয়ারী বিবির সাথে কাটানো সন্ধ্যাটাও ভুলতে পারে না ও। মেলা আশনাই হইলো আইজকা।

বিকাল থেকেই মনটা ভার আকমলের- দুপুর বেলা চৌধুরী সাব এমন না করলে কি আর পাগল নেশাটা চাগান দিয়ে উঠে। সারাটা দিন মেলা ধকল গেছে, এক একটা ৩ মনি বস্তা ঠেলে তুলতে হয়েছে মাচানে, তার পরে ধরো দোকানে মানুষ ২ জন, লোকের বিরাম নাই, আইতাছে, আর যাইতাছে। এর এইটা বুঝাইয়া দাও তো তার কাছে এইটা বুইঝা নাও। দুপুরের আগে আগে হাত একটু খালি হইলো,
ওই মাখইন্যা একটা চা লাগা।
চায়ে চুমুক দিয়া জুইত মতো একটা বিড়ি ধরাইতে না ধরাইতে আইছে রমিজ, কালো পিটানো শরীর, গামছা দিয়া ঘাম মুইছ্যা বললো আকমল ভাই আমার হিসাবটা দেখো একটু।
কেলাশ এইট পাশ আকমল খাতা খুলে রমিজের দেখে, ও রমিকজ মিয়া, গেলো বছরের পাওনা ১২৮৮ টাকা ৪৬ পয়সা আর এই বছরের খোরাকির ধান ৪ মন আর বীজ ধান ২ মন, আর নগদ ১২০০ টাকা সব মিলাইয়া তোমার হইছে ৫৭৯০ টাকা ৭৫ পয়সা।
খোরাকির ধান কত কইরা রাখছে?
৪৬৩ টাকা ২৬ পয়সা
শালার চৌধুরি চুতমারানি একটা ডাকাইত। কোনখানে ধানের মন ৪০০ টাকার বেশী এইটা কও আমারে।
আকমল রমিজরে দেখে অবাক হয়, চৌধুরিকে দেওয়া গালিটাও খারাপ লাগে না ওর। ঠিকই আছে, গ্রামের সবার ভরসা এই চৌধুরি আর জগদীশ , মারোয়ারীর ছেলে ছোট বেলা থেকেই এই দোকানে বসে, ওগো বন্দকী ব্যবসা। মাসে ১২ টাকা সুদ চৌধুরি এমন না, সে বন্দক রাখে না, পাওনা লিখে রাখে, সুদের হার প্রতি শ’তে মাসে ৯ টাকা।
কথাটা তুমি ঠিক কইলা না রমিজ, যাইতা জগদীশের কাছে। সেইখানে না গিয়া চৌধুরির কাছে আইছো ক্যান?
শালার মালাউনের বাচচার কাছে যাইইয়া কি হইব। শালারা তো এইখানে ব্যবসা করে আর দালান তুলে ইন্ডিয়ায়।
শরীর আর চলে না।
কি রে মজিদ আইছিলো, ওর ৩০ কেজির পাওনা কি বুঝাইয়া দিছোস?
হারামির পয়দা বইয়া বইয়া বিড়ি টানতাছোস,কথা ধিয়ানে থাকে না?
মজিদকে ৩০ কেজি আর সাহাকে ২০ কেজির পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথাটা ধিয়ানে ছিলো না- অত কি আর মনে থাকে অর- থাকলে তো পাশ দিয়ে কবে বাবু হয়ে যেতো।
মানুষের ধিয়ানে না থাকতে পারে তাই বলে এমন করে বলবে চৌধুরি সাব- বাপ মা তুইলা কথা বলবে?

লন বাল আপনার দোকানের চাবি, এইখানে না থাকলেও চলবো আমার।
শালার এর চেয়ে ঢাকায় গিয়া রিকশা টানলেও সুখ।প্যাডেল মারলেই টাকা, নিজের মতো ই্চছা হইলো প্যাডেল মারলাম, ভালো না লাগলে মারলাম না। কেউতো আর বাপ-বাপান্ত করবো না। কালকেই শহরে গিয়ে রিকশা চালাবে ভেবে রাগের জ্বলন একটু কমেছিলো তার-

বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়াইছে, বেলা ৩ পহরে বাসায় ফিরছে আকমল। শেফালী পুকুর থেইক্যা উইঠ্যা আসছে। মাথায় গামছা বাধা, শাড়ীর কোনায় কোনায় ভেজা, চুলের ডগা ভেজা, ভেজা চুল থেকে পানি গড়া গড়ায়ে পড়তাছে। দরজার দিকে পিঠ করে শাড়ী ঠিক করছিলো শেফালী, আকমলের চোখে পড়লো শেফালীর ঘাড়ে- ঘাড়ের পাশেই খোঁপার নীচে লালচে নরম চুলের রেখা। সম্পূর্ণ মুখটা দেখা যাচ্ছে না, কানের পাশ থেকে চোখের একটু আর গাল, সেখানে ভেজা চুল ফর্সা গালের সাথে লেপ্টে আছে, মাথার উপরে বাধা চেকের গামছা-
আকমল কাছে ডাকলো শেফালীকে।
বেহায়ামি কইরো না এখন, খবরদার কাছে আইবা না। শেফালী আকমলের হাতের নাগাল থেকে পিছু হটে।
বেহায়ামির কি আছে এইটা কও? আকমল শেফালীর পিছে দাঁড়িয়ে পিঠে হাত রাখে।

অজিমনের মনে আছে বিকাল বেলায় ছেলের ফিরে আসবার দৃশ্যটা- তেমন পার্থক্য ছিলো না- একটু মাথাটা ঝুকিয়ে রোজকার মতোই ঘরে ফিরলো- অজিমন ছেলেকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো-
বাবা দুইটা মুখে দে- চান করে আয়-
ছেলের ঘরে ঢুকে উঁকি দিয়ে গিয়ে লজ্জায় ফিরে এসেছে অজিমন- এই বয়েসেও এমন আদেখলাপানা না করলে কি হতো না- বিয়ার ৫ বছর পরে শেফালী মাগী স্বামীসোহাগী- ভাগ্য আছে ওর-
একটু দাঁড়াও ভাত খায়া নাও। আমি আইতেছি। শেফালী দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পরে আকমল বিছানার মাথার কাছে জড়ানো পুটলিটা দেখে । এমনিতেই খুলেছিলো- ৪টা ১০০ টাকার ঝকঝক নোট দেখে আর সামলাতে পারে নি নিজেকে- আর খুচ্রা ১০, ৫- ২ টাকার গোছা- পুটলিটা পকেটে ভরতে যাবে এমন সময় ছুটে এলো শেফালী-
না মাথার কিরে তুমি নিয়ো না- তোমার বিশ্বাস নাই-
আরে না রে পাগলী দ্বিগুন ফিরোত দিবো-
হ আমি বিশ্বাস করছি তোমার কথা- এক বছর হয়ে গেলো একটা শাড়ী কিনে দিতে পারলা না আর এখন আমারে দ্বিগুন টাকা দিবা-
না রে চৌধুরীর কাজটা আর করবো না- শহরে যাবো- তোকেও নিয়ে যাবো- যাইতে খর্চা আছে না-
শঙ্কিত চোখে শেফালী তাকিয়ে থাকে-
কি কইলা চৌধুরির দোকানে যাইবা না মানে? আকমলের সাজানো কথাগুলো কোথায় হারিয়ে যায়।
শেফালী পুটলিটা আরও জোরে আঁকড়ে ধরে - টান দিয়ে ছিনিয়ে নেয়-

না
শুধু একটাই শব্দ- উচচারণের দৃঢ়তায় প্রকাশ পায় খুব সহজে হাত ছাড়া করবে না এই জমানো টাকা-
শালীর শইরে বিষের ব্যাদনা উঠছে সময় নিয়া ঝাড়তে হবে- এখনও দুপুরের খাওয়া হয় নাই- পেটে তার হলকা টের পায় আকমল-
আরে দে না- বলতেছি তো সামনের মাসেই ফেরত দিবো-
শেফালী ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়ায়- তবে বেশী দূর যেতে পারে না- দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছে আকমল-

শালী গা কি কুটকুট করে- এমনি এমনি কৈতাছি- ভালো ভাবে কৈতাছি কতা কানে হান্দায় না- দে মাগী- তোর কোন ভাতারকে দিবি টাকা?
শেফালী বুকের কাছে আগলে ধরে রাখে তার যক্ষের ধন- মুরগির ডিম বেচে আর ধান ঝেড়ে জমানো টাকা- শরীরের রক্ত ঘাম করে জমানো জীবনের সঞচয়ের সবটাই চলে যাবে এক লহমায় এটা মেনে নিতে পারে না ও-

এমন না শেফালী আকমলকে ভালোবাসে না- যদি এমন চোরের মতো- লোভির মতো না চাইতো যদি এমন হুকুমের সুরে না বলতো- যদি একটু সোহাগ করে বলতো শেফু রানী দে না ১০০ টাকা- শেফু সোহাগী কি না বলতো- কিন্তু এমন কি স্বভাব-
শেফালী চাইছিলো আরও একটু আবদার- আরও একটু অনুনয়- হুট করে গালি দিয়ে বসবে এমনটা ভাবে নি- এখন আর পিছু সরতে পারে না- অভিমান আর অপমান কাঁটার মতো বিধে থাকে- ভেতরে জ্বলতে থাকে আগুনের মতো-

প্রথম চড়টাতেই মাটিতে ছিটকে পড়ে শেফালী- অজিমম ছুটে আসে- কি রে কি হইলো- এই দুপুর বেলা মাইরপিট করার কি হইলো-
একটু আগের দেখা সোহাগের দৃশ্যটা ইর্ষাকাতর করে তুললেও এখন শেফালীকে দেখে তার খারাপই লাগে- তারপর ছেলেকে বাধা দিতে চান না- ভাঙুক মাগীর আড় ভাঙুক- বড় মাথা উঁচু করে থাকে- তাকে বিন্দুমাত্র পাত্তাই দেয় না- ছেলেটা বাসা থেকে বের হয় সকাল সকাল, তারপরে আর শেফালী মাগীকে কে পায়। কোনো মতে ঘরের কাজটা উনানটা শেষ করে যায় আজিজগো বাড়ী- সেইখানে সবতে মিলে কি জানি একটা করছে। জয়গুনের মেয়ে মল্লিকা আসে। সে আবার ফ্যামিলি প্লানিং্যে কাজ করে। কি কান কথা শুনাইছে কে জানে, শেফালী আর বাচচা নিতে চায় না এখন। আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে চায় উয়। আরে ধাইড়া মাগী বিয়া হইছে বাচচা বিয়াবি তা না। বাচচা হইবো, লাতির মুখ দেখনোর খায়েশটা বুকের ভিতরে খাবি খায় অজিমনের।

এসেছে। শেফালীর উঁচু গলার চিতকার আর্তনাদে বদলে যায়। তার পরে ধস্তাধস্তির শব্দ ক্ষীণ হয়ে আসে। আকমলের অজিমন ছেলের দরজার সামনে দাঁড়ায়। বিশ্বাস নাই, মাতাল ষন্ডতাকে বিশ্বাস নাই, রক্তের দোষ, হ্যার বাপেই কি কম গোঁইয়ার আছিল। আকমল দরজা খুল। হামারজাদা তোর কি মাথামুথা খারাপ হইয়া গেলো? হামারজাদা দরজা খুল।

ঘন ঘন শ্বাস পড়ে, বুকটা উঠা নামা করে, পিটাতে পিটাতে ঘেমে গেছে আকমল। শালার মাগীর বিষটা ঠিকমতো ঝাড়া হইলো না। একটা লাত্থিতেই ছিটকায়া পরছে হারামজাদি। পড়ে থাকা শেফালীকে কয়টা লাথি কষিয়েছে জানে না আকমল। নেশা কেটে যাওয়ার ভীষণ বিরক্ত লাগে ওর।

শালার বাইন্যা মাগী নেশাটাই বরবাদ কইরা দিলো।
মাটিতে এলিয়ে পড়ে থাকা রক্তাত্ব শেফালীর পিঠে একটা লাথি দিয়ে আকমল বাসা ছাড়লো।

মা উঠ মা। রক্তের দোষ, বংশের দোষ এইটা।
শেফালীর ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। একদলা থুতু ফেললো। থুতুর সাথে রক্ত পরছে।
মা আমার সব টাকা নিয়া গেছে। আমার কি হইবো, কন মা।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটা কি সিরিজ করবা? ভালো হইছে।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্যামেলিয়া আলম

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। ভাল হয়েছে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুব ভাল লাগলো। চলুক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।