সম্পর্ক ০৬

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: শুক্র, ০২/০৫/২০০৮ - ৩:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না।
আগে কি খুব ভালোবাসতাম?
হুমম।
আমি ওর মুখের দিকে তাকাই। বলতে পারি না সংশয়ের কথা। আমাদের বিয়ের বয়েস ঠিক ৭ সপ্তাহ হলো আজ। বিয়ের মাসপুর্তিতে ওকে একটা শাড়ী কিনে দিয়েছিলাম, সাথে একটা কেক উপরে লেখা ছিলো "অনন্ত কাল যেনো পাশাপাশি থাকি"
বাংলায় লিখতে চায় নি ওরা, জোর করেই লিখাতে হয়েছে। হ্যাপি এনিভার্সারি লেখার বদলে এই লেখাটাই মনে ধরেছিলো বেশী।
উদযাপনের সময় ম্লান হয়ে যায় দিন দিন। তার অস্তিত্ব ঘরের পরিসর সংকুচিত করে দেয়। আমি হাঁশফাস করি। মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে গেলে পাশে দেখি শুয়ে আছে ও। আর কখনই সমস্ত বিছানা জুড়ে শুয়ে থাকা হবে না আমার, কষ্ট পাই একটু। ও ঘুমের ভেতরে হাত বাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। নির্ঘুম জেগে থাকি ।

তোমার কি হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছো। অফিসে ঝামেলা?
নাহ, কি আর হবে? কিছুই হয় নি।
তাহলে, শরীর খারাপ করে নি তো। ডাক্তারের কাছে যাবে?
ডাক্তারের কথা শুনেই মেজাজ খিঁচরে যায় আমার। একটুও শান্তি নেই জীবনে। নিজের মতো একটু সময় চুপচাপ থাকবো তারও উপায় নেই এখন। নিজগৃহে কারাবাস চলছে মনে হয়। আমি টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে থাকি।

খেতে আসো। সারাক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে থাকতে চোখ জ্বালা করে না তোমার।
নাহ আমার ভালোই লাগে।
কি দেখো সারা সন্ধ্যা ?
আসলে তেমন কিছুই দেখা হয় না। স্পোর্টসের চ্যানেলগুলো ঘুরে ঘুরে কখনও মুভিজে গিয়ে থামি, সেটাও ভালো লাগে না। কোনো কিছুই ভালো লাগে না এখন আমার।

চলো ঘুমাবে চলো, ঘুম ঘুম লাগছে আমার।
যাও ঘুমাও তাহলে আমি আসতেছি।
নাহ এখনই চলো।
আমি চুপচাপ তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার আর কিছুই ভালো লাগে না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। চেয়ারে বসে থাকি। হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে চেয়ারের কাছে, চুপ করে।

আচ্ছা আমাকে বিয়ে করে তুমি সুখীতো? তোমার কি হয়েছে বলবে না আমাকে?
আমার মুখে কোনো উত্তর আসে না। আমার কি হয়েছে আমি নিজেই জানি না আসলে। শুধু মনে হচ্ছে এইখানে এই মুহূর্তে থাকা কিছুতেই সম্ভব না। অন্য কোথাও অন্য কোনো জীবনের প্রত্যাশা ছিলো আমার।
তুমি ঘুমাও। আমি একটু বাইরে থেকে আসতেছি। লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পড়ো। আমি যাবো আর আসবো।
কি আনতে যাচ্ছো?
কিছুই না, আমার একটু বাইরে যেতে ইচ্ছা করছে, সারাক্ষণ এমন করবে না তো। আমার কি নিজের বলে কিছু থাকতে নেই?
তার চোখ পানিতে ভরে যায়। আমি নিষ্ঠুরতার আনন্দে মাতি। আজ কিছুতেই ছাড়ান নেই। গলার স্বরের উপরে কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না আমার।
চেঁচিয়ে উঠে বলি তুমি নিজের মতো থাকবে, আমাকেও নিজের মতো থাকতে দিবে, সারাক্ষণ জেরার মুখে রাখছো তুমি আমাকে। এ্যঁই কি করো, কোথায় যাও, কখন আসবে, এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। বিয়ে করছি বলে কি সারাক্ষণ গৃহবন্দী থাকতে হবে?
ওর টপ টপ করে পড়তে থাকা চোখের পানি দেখে আনন্দ লাগে, আমি বিষন্ন আনন্দ নিয়ে ঘরের দরজা খুলে রাস্তায় নামি।

আসলেই কিছুই করার ছিলো না আমার, ঘরের ভেতরে যেমন দমবন্ধ লাগছিলো বাইরে এসে তা আরও বেড়ে যায়। তার ভেজা চোখের আদ্রতায় রাতের শহর ভিজে যায়। আমি চুপচাপ আহত বাঘের মতো ফিরে আসি।
ও বিছানায় উল্টে শুয়ে আছে।
পিঠ উঠানামা করছে, কোনো আওয়াজ নেই, হাতের মুঠিতে শক্ত করে ধরে আছে বিছানার চাদর।
আমি পাশে বসি তার।
তার চুলে হাত রাখি।
নাহ ছুঁবে না আমাকে তুমি। একদম ছুঁবে না। আমি কালকেই বাসায় চলে যাবো।
ক্যানো যাবে?
তোমার আমাকে ভালো লাগে না। আমার সাথে থাকতে ভালো লাগে না। আমি কি জন্য এখানে পড়ে থাকবো বলো?
কোনো কারণ আছে?
আমি আছি না?
তুমি থাকলেই বা কি? তুমি কি আমার কথা ভাবো? আমি সারাটা দিন ঘরের ভেতরে তোমার প্রতীক্ষায় বসে থাকি। তুমি বাসায় থাকো না, সারাদিন তোমার কাজ আর কাজ, বাসায় ফিরলেই সেই টিভির সামনে বসে থাকো। আমি যে একটা মানুষ এই কথা তোমার খেয়াল থাকে?

ভুল হয়ে গেছে বাবা মাফ করে দাও।
আমার বাড়িয়ে দেওয়া হাত সরিয়ে দিয়ে সে পাশ ফিরে শোয়। আমি খাটের কিনারায় বসে থাকি। তারপর বারান্দায় গিয়ে বসি।
রাতের শহরের শব্দ কমে যায়। ম্লান মুখে তাকিয়ে আছে ও। আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।
রাতে কিছু খেয়োছো তুমি?
খেতে আর দিলে কই।
চলো খাবে চলো।
একটু পরে যাই।
কি করবে এখন এখানে বসে।
পাশাপাশি বসে থাকি কিছুক্ষণ। একদিন রাতে দেরি করে খেলে কিছুই হবে না।
কালকে সকালে না অফিস আছে তোমার।
এই যে আবার শুরু করলে, এইটাই ভালো লাগে না, ডোন্ট ট্রাই টু বি মাই মাম। সামটাইম যাস্ট ফর গডস সেক ট্রাই টু বি মাই ভ্যালেন্টাইন।
ও চলে যায়। আমারও ভেতরটা ভেঙে যেতে থাকে। আমি ভাঙতে ভাঙতে ধুলিকণা হয়ে যাই, বাতাসে উড়ে যাই, কোথাও স্থির থাকতে পারি না একমুহূর্ত।
রাত সভীর হয়। আমি বিছানায় এসে শুই। সে আমাকে আলিঙ্গন করে, বাহুডোরে বাঁধে।
রাতে খেয়োছো তুমি?
নাহ আর ইচ্ছা নেই।
ক্ষুধার্ত আমরা আরও ক্ষুধার ভেতরে তলিয়ে যাই, পরস্পরের রক্ত মাংস খাই, ক্লান্ত হই, ঘেমে একশা হয়ে পাশাপাশি শুয়ে থাকি।
বিষন্নতা উবে যায়, তাকে কোলে তুলে নিয়ে যাই খাওয়ার ঘরে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা ভাত বের করে গরম করে ওর প্লেটে তুলে দেই।
ও হাত মুখ ধুয়ে এসেছো এখানে। ওকে অনেক সতেজ দেখায়।
আমি আমার ৭ সপ্তাহের পুরোনো বৌয়ের প্রেমে পড়ি নতুন করে।


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অসাধারণ!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এক কথায় দূর্দান্ত!!!
-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জট্টিলজ...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ!

অতিথি লেখক এর ছবি

সহজ ভাষায় ভারি সুন্দর লেখা হয়েছে। আশা করি সামনে এরকম ভালো লেখা আরো পাব।

--- ফেরারী ফেরদৌস

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এইরকম সুখ সুখ লেখা পড়তে বেশি ভাল লাগে।
খুবই ভাল লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনিন্দিতা এর ছবি

দুর্দান্ত হয়েছে।

রাসেল এর ছবি

সম্পর্কের সব দিন খারাপ না, মাঝে মাঝে স্বপ্নের মতো দিন আসে, মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্নের মতো রাত আসে।
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

দ্রোহী এর ছবি

অল্প রুজি বেশি রুজি
আহা কি সুখ
মিশুক মিশুক !


কি মাঝি? ডরাইলা?

মুশফিকা মুমু এর ছবি

প্রচন্ড ভাল লাগল জাঝা

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।