শুধু বিজ্ঞাপন দেখতে চাই

রাসেল এর ছবি
লিখেছেন রাসেল (তারিখ: রবি, ০৭/১০/২০০৭ - ৮:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(অরুপ ভাইটি- লগ ইন ছাড়া মন্তব্যের সুবিধাতে যেনো বাংলায় লেখা যায় এই সুবিধাটা দেখরে ভাই, আর কি জানি সমস্যা আমি নিজে ফেস করতেছি- মাঝে মাঝেই লগ ইন বক্স উধাও হয়ে যায়)

বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠা এবং সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধতাবাদীতা নিয়ে মরিয়া হয়ে যাওয়া সবসময়ই দুর্বল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে- আমার নিজের মনে হয় না বাংলাদেশের সংস্কৃতি এতটা খারাপ কিংবা দুর্বল- তবে ধারাবাহিকতা খেয়াল করে দেখলাম আদতে সমস্যাটা সাংস্কৃতিক আগ্রাসণের আর এই আগ্রাসনে নষ্ট হয়েছে আদতে সংস্কৃতিকর্মীরা- তারাই বস্তাপঁচা হিন্দি চ্যানেলের অনুকরণ করাটাকে মোক্ষ ভাবছে- অশিক্ষিত মানুষেরা যা করে- তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক দীনতা ঢাকে চটক দিয়ে-যেহেতু তাদের দিয়ে এমন অনন্য কিছু নির্মাণ সম্ভব নয় তাই তারা সারা রাত বসে বসে হিন্দি চ্যানেল দেখে পরদিন সেখান থেকে স্ক্রিপ মেরে নতুন একটা অনুষ্ঠানের আইডিয়া নামিয়ে ফেলে- এদের যথেষ্ঠ প্রশিক্ষণের অভাব আছে- তবে সবচেয়ে করুণ হলো এদের মননশীলতার অভাব-

বাংলাদেশের অসংখ্য বানিজ্যিক চ্যানেল- আরও ২টা নাকি আসছে সামনে- বিজ্ঞাপণের টাকায় টান পড়ে না মোটেও রদ্দিমাল চালালেও পাবলিক ছাগলের বাচ্চাদের রুচি বিষয়ে উদাসীনতা একটা চলমান ফ্যাশন- ওরা কি বাল বুঝে- আমিই বুঝদার- যা বানাবো তাই গিলবে- যদি কোনো পরিকল্পনা কিংবা কোনো জরিপের ব্যবস্থা থাকতো এবং বিজ্ঞাপনদাতারা যদি সত্যি সত্যি এটা জানতে পারতো তাদের কষ্টের টাকা আদতে কোনো রকম প্রচারণার কাজে লাগছে না তবেই তারা নিশ্চিত হয়ে ভালো পরিচালকের, মননশীল মানুষের অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ করতো- ফলে হয়তো মননশীলতার চর্চা বাড়তো-

যাই এতসব চ্যানেলে নিয়মিত টক শো- স্ট্রীট শো- ফ্যাশন শো- ঘরকন্না রান্না বান্না নানা রকম ইতরামি থাকে তবে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মতো কিছু গেম শো শুরু হয়েছে- অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হতে হলে বেহায়া হতে হয়- আমার এক বন্ধুর বলা এই অমিয় বানীটাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছি- দেবাশীষ কিংবা ফারজানা ব্রাউনিয়া কিংবা ইসমাইল শোএর ইসমাইল যেই হোক না কেনো তাদের বাচনভঙ্গি এমনই যে তাদের কথা শুনবার কোনো রুচি হয় না- বরং মনে হয় যদি চুতমারানিদের টিভির ভিতরে হাত ঢুকায়া গলা চাইপা দেওয়া যাইতো কিংবা উলটা পালটা বেধরক থাপড়ানো যাইতো ভালো লাগতো- ফারজানা মাইয়ার বিশাল স্তন, এইটা নাড়াচাড়া করা ছাড়া পুরা অনুষ্ঠানে তার কোনো ইম্প্রেসিভ কাজ আমি দেখি নাই- আমি নিশ্চিত দেবাশীষের বীচিও অনেক বড়ো- ঝুলে পড়া নাতো এত সাহস ও পায় কই- ইসমাইলের বিষয়ে বীচি খুঁজতে হবে- তাই এই উপস্থাপক মানুষদের বাদ দিয়ে অন্য দিকে যাই-

গানের কিংবা অন্য যেটা হয়তো দেখা যেতো উপস্থাপিকা দেখলে সেটাও দেখবার রুচি হয় না- এরা নতুন প্রজন্মের বাংলাভাষা আবিস্কার করে ফেলেছে আর সেটা শুনার পর টিভির সামনে বসে নিজের আঙ্গুল কামড়ানো ছাড়া মুখ নিয়ন্ত্রনের কোনো উপায় আমার জানা নেই-

রাস্তায় সেদিন দেখলাম একদল ছেলে বসে আন্তাক্ষরী খেলছে- মেধাবী কাজকারবার- তবে তাদের এত হিন্দি গান মুখস্ত এবং তারা এত আবেগ নিয়ে গাইছে মায়া লাগলো- আমরাও একটা সময় ভারতীয় গান শুনতাম- আমার কাছে সকাল মানেই মান্না দে- শ্যামল মিত্র হেমন্ত মানবেন্দ্র- প্রতি পূজায় নতুন নতুন ক্যাসেট বের হতো- যদিও সবগুলোই তেমন ভালো লাগতো এমন না তবে শুনতাম- এর পরে সময় বদলে গিয়ে অঞ্জন, নচিকেতা- সুমন- শিলাজিত হয়ে ইন্দ্রনীল শ্রীকান্তে গিয়ে আমার জীবনে ভারতীয় সংস্কৃতিক আগ্রাসণ থেমে যায় নি- আমি এরপরও মাহিনের ঘোড়াগুলি শুনি, চন্দ্রবিন্দু শুনি, লক্ষীছাড়া শুনি, ভুমি শুনি- তবে একটু একদেশ দর্শী- বাংলা পশ্চিম বাংলা আগ্রাসন আমি মেনে নিয়েছি, পড়বার সময়ও কোলকাতার উপন্যাস- পূজাবার্ষিকী পড়ি- অতএব আমার মুখে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শোভা পায় না- এরপরও রাস্তায় বসে থাকা কতগুলো উঠতি যুবকের হিন্দি সুর আমাকে ক্ষিপ্ত করে-

আমাদের নাটকের চরিত্রগুলোও আমার কাছে অপরিচিত হয়ে উঠে একটা সময়- যদিও চ্যানেলের মাশরুম গ্রোথের সাথে সাথে দক্ষ মানুষেরা তৈরি হয় নি তবে হিন্দি রদ্দি নাটকের দুর্বল অনুকরন করে চলা নাটকগুলোর পরিবারেরা আদতে বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে বসবাস করে আমি জানি না- ওদের সাথে আমার কেনো যেনো কোথাও কখনও দেখা হয় না- এদের কাছাকাছি বোধ সম্পন্ন কেউই নেই-
একুশে টেলিভিশন অনেক আগে বন্ধন বলে একটা নাটক করেছিলো- চমৎকার একটা নাটক- এর পরে মাঝারি মানের লেখক এবং পয়সার ধান্দায় ব্যস্ত আনিসুল হকের একান্নবর্তী- এর পরে রঙের মানুষ- মানছি সবাই সেলিম আল দীন না- সবাই গিয়াসউদ্দিন সেলিম না- তবে কাছাকাছি মানের কিছু অনুকরণ করে নির্মাণ করতেও পারতো- নতুন যারা লিখছে কিংবা পরিচালনা করছে তাদের কারো ভেতরেই তেমন মেধার স্ফুরণ নেই- বরং নাটক দেখে বমি চলে আসে আর এটা কোনোভাবেই আটকাতে পারি না-

আনিসুল হকের কাছে যতটুকু প্রত্যাশা তার ক্ষমতার সীমা যতটুকু সেটুকু সে বুঝে- এখন সে হিন্দি সিরিয়াল দেখে চিন্তা করে পরবর্তী পর্বের ঘটনা কি হবে-

আমাদের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপরে এই নষ্ট অমননশীলতা যতদিন লেগে থাকবে আমাদের লজ্জাও অব্যহত থাকবে- আমরা ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার করবো- চ্যানেল চাই না, নাটক চাই না- শুধু বিজ্ঞাপন দেখাও-


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

অরূপ দা, সত্যিই হয়না।
এর আগেও দেখেছি। বলা হয় নি।

কোন কুকি-বিস্কিট সেট করেছেন নাকি? সেই ব্যাটা ঠিকমতো কাজ করেনা বোধহয়।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রাসেল এর ছবি

হয় না- তুই ট্রাই দিয়া দেখছিস, লগ ইন করা থাকলে এক হিসাব তবে অতিথি হিসাবে মন্তব্য করতে গেলে কাহিনী কাজ করে না- এইটা আমি গত ৩ সপ্তাহ ধরে দেখতেছি-

------------------------------------

আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কম্পুকানার সাজেশান :রিফ্রেশ দিয়ে দেখেছেন ?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ইন্টারনেট ও সচলে রাসেলের লেখালেখির সুযোগ বাধামুক্ত করা হোক।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দাবীর সাথে কঠোর সহমত।

সৌরভ এর ছবি

আহহারে, এইরকম লেখা এই একজনই লিখতে পারে।
আমার ধারণা, মনিটরিং শুরু হইলে, সবার আগে রাসেল ভাইয়ের লেখা ব্লাক আউট করবে সরকার।
দেশ থেকে পড়াই যাবে না।
ম্যাঁও


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রেজওয়ান এর ছবি

বিশেষ করে ব্রাউনিয়ার ফ্যান যদি কর্তৃপক্ষের কেউ হয় তাহলে খবর আছে।
×××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

ফায়ারফক্স টেস্ট এর ছবি

আমার নাম অরূপ

সৌরভ এর ছবি

তাই নাকি? আপনার নাম অরূপ। ভাল লাগলো শুনে। আমার নাম সৌরভ। নাইস টু মিট য়্যু। হাসি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার টেস্ট এর ছবি

আমার নাম অরূপ

অয়ন এর ছবি

বিজ্ঞাপনদাতারা যদি সত্যি সত্যি এটা জানতে পারতো তাদের কষ্টের টাকা আদতে কোনো রকম প্রচারণার কাজে লাগছে না তবেই তারা নিশ্চিত হয়ে ভালো পরিচালকের, মননশীল মানুষের অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ করতো- ফলে হয়তো মননশীলতার চর্চা বাড়তো-

এইটা মনে হয় ঠিক না। ব্লগে যারা বিজ্ঞাপন সংস্থার সাথে জড়িত আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন কিন্তু বিজ্ঞাপন প্রচারণার কাজে লাগছে না কিন্তু তারপরো কর্পোরেট হাউসগুলো বিজ্ঞাপন দিয়েই যাচ্ছে এইটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য না।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই খানে আমিও অয়নের সাথে একমত।
এই দেশে ছাগ সম্প্রদায় বেশি।গড়পড়তা বাঙালির বুদ্ধিমত্তা,আচার আচরন,শিল্প ও রূচিবোধকে অনেকেই স্থূল বলতে পারেন।সেই বাঙালির জন্যই যদি অনুষ্ঠান বানানো হয়,তাহলে সেই অনুষ্ঠানের জন্যই তো বিজ্ঞাপনদাতারা বসে থাকবেন।

ময়ূরীর সিনেমা এখানে ঈশ্বরিয়ার চেয়ে বেশি চলবে,সে আপনি যতোই বলেন না কেন।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যাক, রাসেল তাহলে হারিয়ে যায়নি ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

রাসেল ভাই,
কুকি জনিত একটা ছোট্ট বাগ ঝোপের পাশে লুকিয়ে থাকে। সুযোগ বুঝে কামড়ে দেয়। সেটাকে তাড়াতে কন্ট্রোল+F5 দিলে কাজ হতে পারে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।