শেয়ার বাজার বনাম নৈতিক ঝুঁকি

রিসালাত বারী এর ছবি
লিখেছেন রিসালাত বারী [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৩/০৫/২০১১ - ৮:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আরো অসংখ্য সঙ্কট আর দূর্ভোগের মত শেয়ার বাজারের সংকটটিও আমাদের কাছে নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছুতেই এক সময় আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই। তেমনি এখন যারা এই বাজারের সাথে জড়িত না তারা এটাকে "দূরবর্তী ঘটনা" ধরে নিয়ে শান্তিতে আছেন। অনেকেই আছেন যাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থাকলেও এটা দিয়ে ঘর-সংসার চালাতে হয় না বলে আপাতত ভুলে আছেন। ভবিষ্যতে কোন একদিন সংকট কেটে গেলে তারা ভুস করে মাথা তুলবেন। তবে কিনা দেশে ধৈর্য্যশীল মানুষের সংখ্যা কম। আর বাজিকররা আছে সর্বোত্তম সুযোগের অপেক্ষায়। সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থানে তারা শেয়ার কিনে কলাগাছ ফুলে বটগাছ হবেন। সেই সর্বনিম্ন বিন্দুটি সম্বন্ধে আমাদের কোন ধারনা নেই। বোধ করি বাজিকররাও নিশ্চিত না সেই ব্যাপারে, তাদের আবদার গুলো যখন পূরণ হবে সেটাকেই সর্বনিম্ন অবস্থান ধরে নেয়া যায়।

এই লেখার উদ্দেশ্য পুঁজিবাজারের সঙ্কটের কারন অনুসন্ধান নয়। সেটা এখন কম বেশি সবাই জানে। তারল্য সঙ্কট আজকাল শিশুদের মুখেও শোনা যাচ্ছে। বাজারকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিশাল অংকের অর্থ কিছু ব্যাক্তি/গোষ্ঠি বিশেষের কাছে চলে গেছে, যারা পুনরায় সেই অর্থ বিনিয়োগ না করে বসে আছেন। আর এই ফুলানোর পিছনে ভূমিকা কার তা তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের বিষয়। তবে এই সঙ্কট নিশ্চিত ভাবেই সরকারকে একটা ডিলেমায় ফেলে দিয়েছে। সে ব্যাপারেই এখানে আলোকপাত করার ইচ্ছা রাখি।

প্রাথমিক অনভিজ্ঞতা ও কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পর সরকার/অর্থমন্ত্রী যখন পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা শুরু করলেন তারপর কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস। তাতে আন্তরিকতা থাকুক বা না থাকুক সঙ্কট আরো ঘনীভূত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে সরকারের হাতে করার মত আর কিছুই নেই, শেষ ভরসা সেইসব ‘গ্যাম্বলার’রাই। বিনিয়োগকারীরাও এখন সেরকমই মনে করছেন যার প্রমান পাওয়া যাবে তাদের সাম্প্রতিক দাবিনামা থেকেই। যে সমস্ত সুবিধা চাওয়া হচ্ছে অর্থমন্ত্রী/সরকারের কাছেঃ

১। কালো টাকা বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ
২। বিও একাউন্টের বিপরীতে TIN বাধ্যতামূলক না করা
৩। গোয়েন্দা নজরদারী বা এ সংক্রান্ত গুজব থেকে রুই-কাতলাদের স্বস্তি ফেরানো
৪। নতুন করারোপ না করা বা পুরাতন কর-নীতি শিথিল
৫। আইডি কার্ড ও সিসিটিভি স্থাপনের সিদ্ধান্ত স্থগিত। (আন্দোলনকারীরা এটাকে খারাপ চোখে দেখছেন)

বিনিয়োগকারী, যারা এখন আন্দোলনকারীতে পরিণত হয়েছেন, তাদের কথার সুরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে তারা আসলে সরকারের হস্তক্ষেপ যতটা না কামনা করছেন তার থেকে বেশি চাইছেন যেন জুয়ারীরা বাজারে আবারো ফিরে আসে। আর সেই ফিরে আসার পথ মসৃন করতেই সরকারের নিকট এখন যত দাবী-দাওয়া। ঝামেলাটা হলো, যেখানে আর্থিক স্বার্থ জড়িত সেখানে নীতিকথা খুব একটা ভাত পায় না। তাই সাদাচোখে ভাল মনে হওয়া সিদ্ধান্তগুলোও তেত্রিশ লক্ষ বিনিয়োগকারীর নিকট প্রহসন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সংখ্যাটা যখন তেত্রিশ লক্ষ, যাদের পরিবার-পোষ্য মিলে প্রায় কোটি ছাড়িয়ে যায়, তখন সরকারের পক্ষেও তা উপেক্ষা করা মুশকিল। ভোটব্যাংক ঝুঁকিতে পরে যায়। চাপটা তাই ভয়াবহ বলেই মনে হয়।

বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে একে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে কিছু ব্যাক্তিকে মুনাফার সুযোগ করে দেয়ার পর যখন তেত্রিশ লক্ষ বিনিয়োগকারীর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল, তারপর এ ধরনের চাপ একটা "উভমুখি নৈতিক ঝুঁকির" মধ্যে ঠেলে দিবে সরকারকে। দেখা যাক সরকার দু'কুল রক্ষা করতে পারে কিনা। তবে মুহিত সাহেবের উপর ভরসা কম।

বিঃদ্রঃ ১। নৈতিক ঝুঁকি একটা মজার শব্দ হাসি
বিঃদ্রঃ ২। পোষ্টের আকার বড় না করে চাই আলোচনায় অন্যান্য বিষয় উঠে আসুক


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

নৈতিক ঝুঁকি একটা মজার শব্দ

শুভাশীষের নৈতি ঝুঁকি ও আমার নৈতি ঝুঁকি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

রিসালাত বারী এর ছবি

দুইটাই অসাধারণ লাগলো। আগে পড়া থাকলে একটা ডিসক্লেইমার দিয়ে নিতে ভুল করতাম না হাসি

পাঠক1 এর ছবি

অন্ধকার প্রেরণার মত মনে হয়.. ৮২ টাকা থেকে কিছু স্টক ৩১ এ..আবার সে ৮২ তে উঠবে..মানুষ তো সপ্ন নিয়েই বাঁচে..এই দুর্যোগ আমাদের স্বপ্নালু করে তুলেছে..জীবন দা স্টক র কথা ভেবেই মনে হয় লিখেছেন... খাইছে

পাঠক1 এর ছবি

'অন্ধকার প্রেরণার মত মনে হয়''.. ৮২ টাকা থেকে কিছু স্টক ৩১ এ..আবার সে ৮২ তে উঠবে..মানুষ তো সপ্ন নিয়েই বাঁচে..এই দুর্যোগ আমাদের স্বপ্নালু করে তুলেছে..'জীবন দা' Bourse র কথা ভেবেই মনে হয় লিখেছেন...:প

শামীম এর ছবি

লোভটাই এই বাজারের প্রধান পুঁজি। ভ্যালু এডিশন ছাড়া ভ্যালু বাড়লে সেটা ধপাস হবে -- এই অনুমানটা হয়তো ঠিক ভাবেই করতে পেরেছিলাম।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।