উপন্যাসের প্রিয় চরিত্রগুলো (তৃতীয় পর্ব)

রংতুলি এর ছবি
লিখেছেন রংতুলি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২০/০৩/২০১৩ - ৬:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবনটা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়া উপন্যাসের কোন চরিত্র না। তারপর... (ভূমিকায় আর কথা না বাড়াই!)

আমার আয়নায় প্রতিবিম্বিত চরিত্রগুলো -

পার্ল এস বাকের মা
চেজিরা, টু উইমেন, আলবার্তো মোরাভিয়া

দীপার সাতকাহনঃ

আসামের চা বাগান, গাছগাছালি, বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট্ট নদীটার উপর রাতের জোনাকীর খেলা, চাঁপার ঘ্রাণ আর খুব ভোরে শিউলি কুড়ানো - দীপার গল্প যেন প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা প্রতিটি মেয়ের গল্প। মায়ের চোখরাঙ্গানি, পিটুনি, ঠাকুমার নিষেধ উপেক্ষা করে সে ছুটে যায় বার বার খোলা মাঠ, পথ-ঘাট পেরিয়ে - কখনো ফুল কুড়োতে তো কখনো বড়শী নিয়ে বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে। আশ্চর্য! প্রকৃতি তো বাছবিচার করে না তার অকৃত্রিম-অফুরন্ত রং-রূপ ঢেলে দিতে ছেলে অথবা মেয়ের। তার বন্ধু খোকন আর বিশু ছেলে, তাতে কি! ওদের কাছেও তো আঙরাভাসা নদীটা নীল আর চা বাগানগুলো সবুজ, একই রঙ একই গন্ধ। তাহলে কেন মা-ঠাকুমার যত বিপত্তি তার মেয়ে হয়ে বাইরে যাওয়ায়। খোকন, বিশুরা ফড়িং বা মাছ ধরতে যেতে পারলে সে পারবে না কেন? ওরা হাঁটুর উপরে প্যান্ট পরলে কোন দোষ নেই - অথচ দেয়াল টপকে পার হতে, গাছে উঠতে বা কোছা ভরে ফুল কুড়োতে তার যদি একটু হাঁটু বের হয়েই যায়, তাতেই বা কি এমন দোষ? এরকম চারপাশের প্রকৃতির প্রতি একটি শিশুর সরল-সহজাত আকর্ষণ, আর পদে পদে বাধা পেয়ে অন্ধকারে নিত্য আলোর শিখা খুঁজতে থাকার মতই তার ছোট মনে দানা বেঁধে উঠতে থাকা মেয়েদের উপর সমাজ আরোপিত নানা বিধিনিষেধের প্রতি প্রশ্ন। যার উত্তর একটাই - সে মেয়ে!

দুঃস্বপ্নের মত দীপার জীবনে সেই তের বছরেই জড়িয়েছিল এক নিষ্ঠুর অতীত। শুধুমাত্র উত্তরাধিকারের জন্যে এক আত্নকেন্দ্রিক ধনী পরিবারের রোগাক্রান্ত, মৃতপ্রায় ছেলের সাথে তার বিয়ে দেয়া হয়। কিছু ভয়ানক অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে সেদিন পালিয়ে বেঁচেছিল সে। এই অপরিনামদর্শি, জীর্ন বাঁধন নিশ্চিতভাবেই তার ভাগ্যে রেখে যায় বিধবার কালো দাগ। জীবনের এই নির্মম অধ্যায় মুছে ফেলে সে শুরু করতে চেয়েছে নতুন জীবন। পুঁজি ছিল প্রতিকূলতায় হার না মানা তার দৃঢ় মনোবল। কঠোর পরিশ্রমে গড়ে নিতে চেয়েছে নিজের ভাগ্য। সাথে তার স্রোতের মত গতিশীল মনে ঝড় তুলত নানা প্রশ্ন, যার উওর সে পায়নি কারুর কাছে - বিধবারা পেয়াজ, ডিম, মাছ-মাংস খেলে কি হয়? কেন মেয়েদের পদে পদে কঠোর অনুশাসনের মধ্যে না চললে ভগবানের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে? কোন ভগবান? কি তার নাম? ধর্মের এই একচোখা নিয়মগুলোর বিরুদ্ধে এভাবেই তার ভেতরে ফুটে ওঠে প্রতিবাদী স্বাধীনচেতা এক রূপ।

দীপাবলী এমন এক চরিত্রের নাম, যাকে ভাগ্যদেব সুপ্রসন্ন হয়ে কখনো নিরবিচ্ছিন্নভাবে কিছু দেয়নি। বেঁচে থাকার জন্য, সমাজে নিজের জায়গা করে নেয়ার জন্য যাকে প্রতিটি মুহূর্ত লড়ে যেতে হয়েছে - কখনো পারিপার্শ্বিকতার সাথে তো কখনো নিজের সাথে। কঠোর পরিশ্রমে অর্জন করে নিয়েছে আয়করের চাকুরী, সম্মান, প্রতিষ্ঠা, বেছে নিয়েছে জীবনসঙ্গী। তারপরেও তার লড়াই থেমে থাকে নাই। আত্নমর্যাদা ও আদর্শের লড়াই আপনাআপনি কখনো থামে না, তার উপর দীপা নারী, আর নারী মাত্রই তো এসব ঠুনকো অনুভূতি বিসর্জন দিতে দিতে প্রাণহীন কাঠপুতুল হয়ে টিকে থাকা, নয়তো বা নিছক ঐ এক আত্নমর্যাদা আঁকড়েই জীবনে চরম কিছুর মূল্য দেয়া। দীপা আপোষ করার মেয়ে নয়। স্বপ্নপূরণ ও মুক্তির আশায় সে কারুর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে না। আপনজন, কাছের মানুষের আত্নকেন্দ্রিক লোভী চেহারাগুলো তাকে ক্ষতবিক্ষত করলেও নিজের নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে সে থেকেছে অনড়। এবং সবশেষে সে আপোষহীন, অবিচল ও একা।

লেখক সমরেশ মজুমদার তার জনপ্রিয় উপন্যাস 'সাতকাহন' এর দীপাবলী-কে এঁকেছেন আপোষহীন সংগ্রামী এক নারী চরিত্র হিসেবে। কেন দীপাবলীর মত এমন একটি চরিত্রটি তার মনে এল এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন - "আমি এগারো বছর বয়সের একটি বিধবা মেয়ে দেখেছিলাম। সে আমাদের চা বাগানের। তাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল এত সুন্দর, কোমল, নিষ্পাপ একটি মেয়ে কেন এভাবে হারিয়ে যাবে? শেষ হয়ে যাবে? সাতকাহন লেখার সময় সেই মেয়েটিকেই আমি আমার মতো করে রূপ দিয়েছি। তাকে সমাজ, সংসারের বেড়াজালের ভেতর দিয়ে আমি পরিপূর্ণ মানুষ করে তুলতে চেয়েছি।" দীপাবলীর একা থেকে যাওয়াটা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি, এব্যাপারেও লেখকের বক্তব্য স্পষ্ট - "বাংলাদেশের মেয়েরা যে আত্নমর্যাদাসম্পন্ন এটা আমাদের শ্রদ্ধার সঙ্গেই মনে রাখা দরকার।" একাধিকবার এই দীপাবলিকে টেলিভিশন ও সিনেমার পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে তা উপন্যাসের দীপার মত করে আদৌ কারো মনে দাগ কাটতে পেরেছে কিনা সন্দেহ!

দীপার জীবনের সাতকাহনের মাঝে আমি শুধু আমাকে নয়, বরং চেনা-অচেনা অসংখ্য মেয়েকে দেখতে পাই, পুরো দুই খন্ডের বিশাল এই উপন্যাস জুরে কোথাও না কোথাও, বিন্দু বিন্দু হলেও অনেকেই ভেসে ওঠে আমার মানসপটে। ছোট দীপার সাথেই বা আমি নিজের এত মিল পাই কেন, কে জানে! হয়ত মফঃস্বলে বেড়ে ওঠা আমি খুব সহজে চিনে ফেলি দীপার ফুল, পাখি, জোনাকির প্রতি সেই চিরচেনা অদম্য আকুতি। তারউপর মেয়ে হয়ে জন্মে আমিও চলতে-ফিরতে-উঠতে-বসতে শুধু 'না' শুনেই অভ্যস্থ। আমার চেয়ে বছর দু'য়েক ছোট ভাইটা বাড়ির পেছনের খোলা মাঠে ইচ্ছে মতো ছুটতে পারবে, আমি 'না'... পাড়ার একই বয়সি ছেলেদের সাথে ও খেলতে পারবে, আমি 'না'... এছাড়া্‌ও, যখন খুশি বাইরে যেতে পারব না, ফুটবল/ক্রিকেট খেলতে পারব না, নিজের জমানো টাকায় ইচ্ছেমতো দোকান থেকে শখের কিছু কিনতে যেতে পারব না... জোরে কথা বলতে পারব না, আস্তেও না... হাসতে পারব না, কাঁদতেও না... আমার এ 'না'এর পালা যেন অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকে... এত শত 'না' এর মাঝে যখন নিজেকে হারিয়ে যাওয়া কেউ লাগতে থাকে তখন দীপার কথা ভেবে আমি শক্তি পাই। কারণ দীপা আমার ভেতরে একই থাকে, সে কখনো হারায় না।

জীবন সংগ্রামে হাল ছেড়ে দেয়া, সমাজ কর্তৃক গুঁড়িয়ে দেয়া আত্নসম্মান নিয়ে দিকজ্ঞানশূন্য অসহায় কোন মেয়ের কাছে জীবনকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন আঙ্গিকে দেখতে, পারিপার্শ্বিকতার সাথে নিজ আদর্শের সংঘর্ষে শক্তি যোগাতে, সাধ ও স্বাধীনতা অর্জনে দীপাবলীর সংকল্প ও সংগ্রামের গল্প মূলত এক দৃষ্টান্ত।


মন্তব্য

রাসিক রেজা নাহিয়েন এর ছবি

আমার পড়া অন্যতম একটা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ।

রংতুলি এর ছবি

পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বহুল আলোচিত 'সাতকাহন' উপন্যাসটি আমি পড়িনি, এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি পড়ার কোন পরিকল্পনা নেই। গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারে-কাছের মানুষদের কাছ থেকে দীপাবলীর গল্প শুনতে শুনতে বইটা পড়ার আগ্রহ আরো কমেছে। সেসব শুনে যা বুঝেছি তা হচ্ছে, কিছু কিছু প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ আছে যারা সমাজবাস্তবতার নামে বিপ্লবের সম্ভাবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট হবার কথা বলে হতাশা ছড়ায়। অবশ্য সবাই ইবসেন নন্‌, সেই সক্ষমতা সবার থাকে না।

এই চরিত্র বিশ্লেষণটা পড়ে বুঝতে পারলাম না আমার বোঝাটা ঠিক কি ভুল। কারণ, আপনি এখানে দীপাবলীর পরিণতির কথা স্পষ্ট করে বলেননি। তার চারপাশের বা কাছের মানুষগুলোর ভূমিকা দূরে থাক তাদের নামগুলো পর্যন্ত বলেননি (শুরুর খোকন আর বিশু ছাড়া, যদিও সেখান থেকে তারা কেমন মানুষ তার কিছুই বোঝা যায়নি)। সুতরাং তাদের সাথে দীপাবলীর ইন্টারঅ্যাকশন কী রকম সেটা আর জানা গেলো না। favourable আর hostile এই দুই ধরনের পরিস্থিতি দীপাবলী কীভাবে হ্যান্ডেল করে সেটা জানা গেলো না। দীপাবলীর আদর্শটা* আসলে কী সেটাও স্পষ্ট হলো না।

(* নারীমুক্তির ধারণাটি সবার ক্ষেত্রে এক প্রকার নয়। পুরুষতান্ত্রিকতার ধারকেরা প্রায়ই নারীকে তাদের বানানো শ্বাশত মাতৃমূর্ত্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে তাকে মহিমান্বিত করা হয়েছে এমনটা দেখাতে চায়। সংসারের মধ্যে সবাইকে আঁকড়ে ধরে থাকাটাই নারীর পরম মুক্তি বা ধর্ম্মের পথে নিজেকে বিলীন করে দিলেই তার নির্বাণ ঘটবে এমনটাও কেউ কেউ দেখাতে চায়। শ্রীযুক্ত সমরেশ মজুমদারের দৃষ্টিতে নারীমুক্তির ধারণাটি কী রূপ?)


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রংতুলি এর ছবি

উপন্যাসে আমার ঝোঁক একটু বেশি। উপরে যদিও বয়স ১৮ প্লাস দিয়েছি কিন্তু নিজের বেলায় আমি কখনোই বয়সের ধার ধারি নাই। নানা গুণীর নানা মত পাওয়ার আগেই, কোনরকম পূর্বানুমান ছাড়াই আমি বেশিরভাগ উপন্যাস পড়েছি। পাশের বাড়ির এক আন্টির কাছ থেকে আমি সাতকাহন হাতে পেয়েছিলাম স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই। ব্যস! আর যাবে কই! আমার স্বভাবও কিছুটা দীপার মত ছিল, 'না' এ ক্ষান্ত হবার না। সাতকাহনের ১ম ও ২য় এর পর একে একে সমরেশের অন্য উপন্যাস - উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ...

আমার জীবনে একসাথে আমি এতো এতো উপন্যাস পড়েছি যে, এসবের অনেক চরিত্রই এখন আলাদা করে ভাবতে গেলে গোল পাকিয়ে ফেলি। তাই ঠিক করেছি আমি শুধু সেসব চরিত্র নিয়ে লিখবো যেগুলো নিজে থেকে আমার মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

যা'হোক সমরেশের বিপ্লব নিয়ে অন্য উপন্যাসও আমি পড়েছে... যার মধ্যে আমার আরো অনেক প্রিয় চরিত্রও আছে, যেমন - আট কুঠুরি নয় দরজার আকাশ লাল, গর্ভধারিনীর জয়িতা। আপনার কমেন্টটা হয়ত আমি ঠিকমত বুঝি নাই, কারণ আমার কাছে কখনোই মনে হয়নি সমরেশের কোনো লেখায় বা চরিত্রে বিপ্লবের সম্ভবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হয়, বরং প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকতা সত্ত্বেও কেউ কেমন করে বিপ্লবকে নিজের ভেতর মনে-প্রাণে ধারণ করে এবং প্রয়োজনে শুধু তাই আঁকড়ে বেঁচে থাকে সে উদাহরণ তিনি দাঁড় করাতে চান তার উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর ভেতর দিয়ে। দীপাবলীও তার ব্যতিক্রম না। সমাজ ও ধর্ম কর্তৃক কেবল মেয়েদের উপর আরোপিত বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে দীপা প্রশ্ন করে শুরু থেকেই। কম বয়েসে বিধবা হয়ে হাজারো প্রতিকূলতায় মাথা তুলে দাড়াতে সে সংগ্রাম করে। স্বভাবতই শিক্ষা ও পরিশ্রম মানুষকে কুপমুন্ডকতার সাথে লড়াইয়ে শক্তি যোগায়, স্বাবলম্বী করে, দীপার ক্ষেত্রেও তার বিপরীত কিছু ঘটে নাই! খোকন ও বিশুর প্রসঙ্গ এসেছে দীপার মনে দানা বেঁধে ওঠা প্রশ্নের বিপরীতে পুরুষ উদাহরণ টানতে। দীপার পরিণতি তো আমি বলেইছি - আপোষহীন, অবিচল ও একা।

দীপা যাদের আপন মা-বাবা ভাবতো - মাসি অঞ্জলী, মেসো অমরনাথ আর ঠাকুমা মনোরমা যার সাথে দীপার অন্যরকম এক সম্পর্ক, কারণ কম বয়েসে বিধবা হওয়া ঠাকুমার ভেতর দীপা নিজেকে দেখতে পেতো ... হোস্টেলে সম্ভবত তার আরেক রুমমেট সেও বিধবা (মেয়েটার নাম ভুলে গেছি), আর পরবর্তীতে বেছে নেয়া জীবনসাথী অলোক, মাঝে আরো অনেক চরিত্রের নাম ভুলে গেছি... দীপার চরিত্র বিশ্লেষণে যে এদের প্রত্যেকের আলাদা বর্ননা প্রয়োজন, আমার কাছে তা মনে হয়নি। তাছাড়া ৬০০/৭০০ পৃষ্ঠার এক উপন্যাস, যার পুরোটাই দীপাকে কেন্দ্র করে, তার আদ্যোপান্ত আমি এই এক লেখায় তুলে ধরতে পারবো এতোটা তিসমার লেখকও আমি নিজেক আদৌ ভাবতে পারি না!

শুধু এটাই বলতে পারি, একটা প্রবল দাবী অবশ্যই দীপার চরিত্রের মধ্যে আছে, যে কারণে উপন্যাসটি পড়ার এতদিন পড়েও আমি তার কথা ভাবছি, লিখছি...

(*যেসব উপন্যাসে নারীকে গৃহপালিত জীব দেখিয়ে তার সোশ্যাল ইন্টার-একশনের পথ বন্ধ রাখা হয়, তা আমার ভালো লাগেনা কোনদিনই... সমরেশের লেখায় এমন কোনো উদাহরণ পাই নাই এখন পর্যন্ত।)

মন মাঝি এর ছবি

-

****************************************

রংতুলি এর ছবি

মন মাঝি ভাই, আপানার মন্তব্যটা যেহেতু আমাকে করা নয়, তাই আমার নাক গলানো বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু পোস্টটা যেহেতু আমার তাই সেদিক থেকে কিছু বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছি -

এক, লেখক হিসেবে সমরেশ মজুমদার কেমন বা লেখায় তার পছন্দের বিষয়বস্তু কি কি পোস্টটা কিন্তু তা নিয়ে নয়।

দুই, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দীপাবলীর সংগ্রাম কিন্তু নারীর প্রতি সমাজের সনাতন, প্রচলিত, চাপিয়ে দেয়া রীতিনীতিগুলোর বিরুদ্ধে এখানে বামপন্থা বা বামপন্থী আন্দোলন না জড়ানোই ভালো।

তিন, আপনার সমালোচনা যদি ঢালাওভাবে সমরেশের সব লেখা নিয়ে না হয়ে, নির্দিষ্ট দুয়েকটা উদাহরণ টেনে হতো, তাহলে আসলে আমার বুঝতে সুবিধা হতো। যদিও আমি এখানে সমরেশের সব লেখা ডিফেন্স করার ঠেকা নিয়ে বসিনি, তারপরেও আমার কোনো প্রিয় চরিত্র বা উপন্যাসের উপর যদি আঁচ আসে, তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করে দেখব। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো কিছুরই ঢালাও সমালোচনা বা প্রশংসা কোনোটারই পক্ষপাতী নই, এতে করে কারো কাজ/লেখার ঠিক ঠিক মূল্যায়ন/জাস্টিস হয়না।

শেষ, চরিত্র হিসেবে দীপাবলী অথবা উপন্যাস হিসেবে সাতকাহন আপনার কাছে কেমন বরং তা নিয়ে আলোচনা করি।

মন মাঝি এর ছবি

আপনি ঠিকই বলেছেন। নিজের করে ফেলা কমেন্টটা আবার পড়তে গিয়ে খুবই বিরক্ত লাগল। সমরেশের লেখার প্রতি আমার ব্যক্তিগত অপছন্দটা নিতান্তই অসুন্দর এবং খানিকটা খাপছাড়া ভাবে এসেছিল এখানে। তাই মুছেই দিলাম এটা। আশা ছিল আপনার চোখে পড়বে না। কিন্তু পড়েই যখন গেছে - দুঃখিত! হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হায়! হায়!! এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেছে!!! আমি তো মনমাঝির কমেন্টটাই পড়তে পাই নাই। আমাকে উদ্দেশ্য করে করা কমেন্ট আর আমিই পড়তে পেলাম না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রংতুলি এর ছবি

ব্যাপার না, আমাদের সকলের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে, সেটাই স্বাভাবিক। বিষয়টা যে আপনি নিজে থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন এটাই যথেষ্ট, মুছার প্রয়োজন ছিল না। যাইহোক আমার নাক গলানো টাইপ মন্তব্যের জন্যে আমিও দুঃখিত (কেমন করে মুছতে হয় জানিনা:()।

অঃ টঃ আপনাদের মত উদারমনা মানুষের জন্যেই বুঝি সচলের প্রতি আসক্তি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে... হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

দীপাবলি চরিত্রটি এমন একটি চরিত্র, যেটাকে শুধু প্রাণ দিয়েই অনুভব করা যায়। কোন চ্যানেল ঠিক মনে নেই, খুব সম্ভবত দেশ টিভিতে এটি নাট্যরূপে সম্প্রচারিত হয়েছিল কিংবা হচ্ছে। আমি ওটা দেখতে কখনও আগ্রহ প্রকাশ করিনি, জানিনা সেখানে সঠিকভাবে দীপাবলিকে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা। আমি উপন্যাসটি পড়ার সময় দীপাবলিকে যেভাবে কল্পনা করেছি, সেটা ভেবেই কখনও ধারাবাহিকটি দেখিনি।

আমিও অনেকদিন আগে উপন্যাসটি পড়েছিলাম, তবুও দীপার কথা ভালভাবেই মনে আছে- সেটি এমনই একটি চরিত্র।

বাংলা উপন্যাসের নিয়মিত পাঠক যারা, তাদের অবশ্যই এই উপন্যাস পড়া উচিৎ। দীপাকে বোঝার জন্যে, তার আশেপাশের পরিবেশকে চেনার জন্যে।

নাহিয়েন

রংতুলি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ নাহিয়েন। অনেকটা মনের কথাই বলে দিয়েছেন... দীপাবলী-কে নিয়ে বানানো নাটক বা মুভি কোনটাই আমি দেখিনি, তাই সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না। আসলে উপন্যাসের দীপাবলীকে বাস্তবে সিনেমা বা নাটকের পর্দায় তুলে ধরা সহজ কাজ নয়, তাই আমিও দেখার সাহস করিনি। উপন্যাসের দীপা আমার মনে যে জায়গা করে নিয়েছে আমি তা নিয়েই থাকতে চাই, কল্পনার পাতা উল্টে তাকে শুধু নিজের ভেতর অনুভব করতে চাই। হাসি

রাসিক রেজা নাহিয়েন এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও।

নাহিয়েন

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

এমন একটা পোস্ট দরকার ছিল

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রংতুলি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! হাসি

নীলম এর ছবি

ক্লাস এইটে পড়েছিলাম। সবে নিজের জীবনে 'না' এর বহরের সূচণা হয়েছে তখন। আমার মনেও তখন থেকেই গেঁথে গিয়েছে দীপা। ভালো লাগলো আপনার লেখা।

রংতুলি এর ছবি

দীপার সাথে কোথাও না কোথাও আমাদের সমাজের প্রতিটা মেয়ের মিল আছে, মনে গেঁথে না গিয়ে উপায় নাই! ভাবছি 'না এবং নারী' - এই শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়ে দিব... খাইছে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

চলুক ১ম পর্বটা সেই সময়ে খুব টেনেছিল, ২য় পর্ব ভাল লাগা টুকু নষ্টই করে দিয়েছিল বলা যায়। লেখা চলুক

রংতুলি এর ছবি

ইন্টারেস্টিং, প্রথম পর্বের দীপা কেন জানি আমাকেও বেশি টানে... হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনুদার সাথে একমত।
একসময়ে সমরেশের লেখা খুব টানত। এখন কেন জানি আর তেমন ভালো লাগেনা।
তবুও কিশোরী বয়সে পড়া দীপার জন্য একটা টান রয়ে গেছে। এখন আবার পড়ে দেখতে হবে কেমন লাগে। হাসি
তোমার সিরিজটা ভালো লাগছে আপু। চলুক। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।